ডঃ মুহাম্মাদ ইকবাল, এক অসাধারণ প্রতিভাধর দার্শনিক এবং কবি-- ২য় কিস্তি
লিখেছেন লিখেছেন জয়নাল আবেদীন টিটো ২৪ এপ্রিল, ২০১৫, ০৩:০০:২০ রাত
মহাকবি ইকবালের উপর পারস্যের আধ্যাত্মবাদী সাধক জালাল উদ্দিন রুমীর ব্যাপক প্রভাব ছিল ।
তিনি চেয়েছিলেন, কোরআনের আলোকে মুসলিমদের আধ্যাত্মিকতার উন্মেষ ঘটাতে । সাইয়্যেদ আবুল আলা লিখেছেন, একজন মুসলমান ইউরোপে গিয়ে জড়বাদী সভ্যতার সাগরে ডুবতে থাকে আর ইসলাম থেকে বিচ্যুত হতে থাকে, আল্লামা ইকবালের বেলায় ঘটেছে এর উল্টো । তিনি যতই পাশ্চাত্য সভ্যতার গভীরে গিয়েছেন, ততই এর অন্তঃসারসশূন্যতা অনুধাবন করতে পেরেছেন, ততই দ্বীন ইসলামের তাৎপর্য উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়েছেন ।
মুহাম্মাদ ইকবাল একজন দার্শনিক, একজন কবি, একজন আইনবিদ হলেও তার মূল অবদান হল, শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে ঘুমিয়ে পড়া মুসলিমদের তিনি যরবে কলীমের আঘাতে জাগাতে চেয়েছেন । (রবিঠাকুরও "ওরে সবুজ, অরে অবুঝ। অরে আমার কাঁচা, আধমরাদের ঘা মেরে তুই বাছা " বলে জাগাতে চেয়েছেন । )
যরবে কলীম শব্দটি হয়ত আপনাদের কাছে কঠিন ঠেকছে । ভেঙ্গে বলছি । যরব ( অথবা উচ্চারণ দারব ) আরবী শব্দ; এর অর্থ আঘাত । কলীম হলেন আল্লাহ্র নবী মুসা কালিমুল্লাহ । হযরত মুসার হাতে একটি লাঠি ছিল । এ দিয়ে আঘাত করে তিনি নানারকম অলৌকিক কাজ করতে পারতেন । এই লাঠি কখনও অতিকায় সাপ হয়ে যেত । মিসরে নবুওতি মিশন শেষে আল্লাহ্র আদেশে তিনি তার জাতি বাণী ইসরাইলকে নিয়ে মিসর থেকে ফিলিস্তিনে হিজরত করবেন । এমন সময় সামনে সাগর পড়ল । আবার পেছন ফিরে দেখেন, ফেরাউন সৈন্য সামন্ত নিয়ে তাদের দিকে ধেয়ে আসছে । আল্লাহ্ ওহী ( প্রত্যাদেশ ) পাঠালেন, "তোমার হাতের লাঠি দিয়ে সাগরের বুকে আঘাত কর । সাগরের বুক চিরে তোমাদের জন্য পথ তৈরী হয়ে যাবে" । তাই হল । সাগরের বুক চেরা পথ দিয়ে মুসা নিরাপদ স্থানে চলে গেলেন ।
আল্লামা ইকবাল মনে করতেন, মরার মত ঘুমিয়ে থাকা মুসলমানদের জাগাতে চাইলে মুসা যে লাঠি দিয়ে আঘাত করে সাগরের বুক চিরে পথ তৈরি করেছিলেন, তেমন একটি লাঠি দিয়ে আঘাত করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই । তাই তিনি তাদের জাগাতে 'যরবে কলীম" নামে একটি কাব্য লিখেছেন ।
দর্শনে পিএইচডি করা আল্লামা ইকবাল কোরআনে উপর অসাধারণ পাণ্ডিত্য অর্জন করেছিলেন ।
একবার এক জ্ঞানী ব্যক্তি কিছু প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য তার কাছে যান । ইকবাল ততদিনে তার সব বই একপাশে সরিয়ে রেখেছেন । ওই প্রশ্নকর্তা যখন যে প্রশ্নই করেন না কেন, ইকবাল কোরআনের পাতা উল্টিয়ে উল্টিয়ে সে সব প্রশ্নের জবাব দিতে থাকেন । ভদ্রলোক আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করেন, ইকবাল শুধুমাত্র কোরআনের পাতা থেকেই তার সব প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন; অন্য কোন বইয়ের সাহায্য নেননি । দর্শন এবং কোরআনে কত গভীর ব্যুৎপত্তি থাকলে এমন আস্থার সাথে উত্তর দেয়া সম্ভব, ভেবে দেখেছেন !
R A Nicolson এবং A J Arbery ইকবালের কবিতার অনুবাদ করে পাশ্চাত্যে ছড়িয়ে দেন, এবং সেই অনুদিত কাব্যের মাধ্যমে তিনি পাশ্চাত্যে খ্যাতি অর্জন করেন । বক্তৃতা দেবার জন্য বিভিন্ন জায়গা থেকে তাকে আমন্ত্রণ জানানো হতে থাকে ।
আল্লামা ইকবাল ১৯৩১ সালে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে আমন্ত্রিত হন । সেখানে এক বক্তৃতায় তিনি বলেন-
"I would like to offer a few pieces of advice to the youngmen who are at present studying at Cambridge. ... I advise you to guard against atheism and materialism. The biggest blunder made by Europe was the separation of Church and State. This deprived their culture of moral soul and diverted it to the atheistic materialism. I had twenty-five years ago seen through the drawbacks of this civilization and therefore had made some prophecies. They had been delivered by my tongue although I did not quite understand them. This happened in 1907. ... After six or seven years, my prophecies came true, word by word. The European war of 1914 was an outcome of the aforesaid mistakes made by the European nations in the separation of the Church and the State"
১৯৩৩ সালে তিনি স্পেন যান । সেখানে আলহামরা প্রাসাদ দেখে অনেকক্ষণ কাঁদেন । প্রিয় হারানোর বেদনার মত সে কান্না যেন থামতে চাইছিল না ।
( তৃতীয় কিস্তি পরের বার )
বিষয়: বিবিধ
১৫১৬ বার পঠিত, ১১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আস সালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ.....
শ্রদ্ধেয়!
'ان من البيان لسحراط' কিছু মানুষের বক্তব্য-কথা-কাব্য-সাহিত্যের যাদুময় প্রভাব আপরকে উপলব্ধিতে নতুনমাত্রা যোগ করে! আর তা যদি হয় পুর্ণ সত্যের আলোকে তা তো অবশ্যই সোনায় সোহাগা!
আল্লামা ইকবাল তেমনিই একজন বিশ্ময়কর প্রতিভা! যার কাব্য-সাহিত্য ইসলাম ও মুসলিম সমাজ কে স্বীয় দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে অনুপ্রেরণা যুগায় নতুন করে! মহান রব ও বান্দার সম্পর্ক, বিশ্ব মানবতার সমুহ কল্যাণকর বিকাশে ইসলামের প্রয়োজনীয়তা জোড়ালো ভাবে তুলে ধরায় অনন্য উপমা তিঁনি!
আল্লামা ইকবালের দর্শন-কাব্য ব্যাপক অনুশীলনে কাংখিত ফল লাভ করবে আজকের অস্হির বিশ্ব!
একজন মহান ব্যক্তি সম্পর্কে সুন্দর উপস্হাপনায় অনেক ধন্যবাদ ও জাযাকুমুল্লাহু খাইরান!!
স্পেন সফরে তিনি বিখ্যাত কর্ডোভা মসজিদে দুই রাকাত নামাজ আদায় করেন। এটি সম্ভবত ৭০০ বছর এর মধ্যে সেই মসজিদে একমাত্র নামাজ। সাম্প্রতিক ভ্রমনকারিদের মুখে শুনেছি সেখানে এখন প্রত্যেক জায়গায় নামাজ নিষিদ্ধ সাইন বোর্ড লাগান হয়েছে। আল্লামা ইকবাল "কর্ডোভার মসজিদ" নামে তার একটি অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবিতা লিখেছেন।
সাপ্লিমেট দেবার জন্য অনেক ধন্যবাদ ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন