ডঃ মুহাম্মাদ ইকবালঃ এক অসাধারণ প্রতিভাধর দার্শনিক এবং কবি -- ১ম কিস্তি
লিখেছেন লিখেছেন জয়নাল আবেদীন টিটো ২৩ এপ্রিল, ২০১৫, ১২:৩৫:১৫ দুপুর
১৮৫৭ সালে এ উপমহাদেশে দুটি অমোচনীয় দুঃখজনক ঘটনা ঘটে- যার ধারাবাহিকতায় আমাদের জাতি পরাধীনতার শিকলে আটকে যায় ।
সিপাহী বিদ্রোহের মধ্য দিয়ে বাংলার প্রথম স্বাধীনতা আন্দোলন শুরু হয় ।
অন্যদিকে ইংরেজদের হাতে মোগল সাম্রাজ্যের পতন হয় ।
সিপাহী বিদ্রোহ নামে পরিচিত বাংলার প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম ব্যর্থ হওয়ায় এবং একই বছরে সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফরের পরাজয়ের মাধ্যমে পুরো উপমহাদেশ ইংরেজদের দখলে চলে যায় । ফলে, ধনী মুসলমানগণ দারিদ্র্যের কারণে পরিণত হন ভিস্তিওয়ালা এবং কাঠুরিয়াতে ।
মোগল সাম্রাজ্যের পতনের বিশ বছর পর পরাধীন ভারতে ১৮৭৭ সালের ৯ই নভেম্বর পাঞ্জাবের শিয়ালকোটে মুহাম্মাদ ইকবাল জন্মগ্রহণ করেন । তার পিতা শেখ নুর মুহাম্মাদ নিজে উচ্চ শিক্ষিত ছিলেন না, কিন্তু, তার পুত্রের উচ্চশিক্ষার কোন ত্রুটি করেননি । তিনি তার শিশুপুত্রকে শিক্ষা দেবার জন্য আরবীর অধ্যাপক সাইয়েদ মীর হাসানকে গৃহশিক্ষক নিযুক্ত করেন । হাই স্কুল পাশ করার পর মুহাম্মাদ ইকবাল ভর্তি হলেন লাহোর সরকারী কলেজে ।
লাহোর সরকারী কলেজ থেকে আরবী, ইংরেজী এবং দর্শন নিয়ে মুহাম্মাদ ইকবাল বিএ পরীক্ষায় ব্রিলিয়ান্ট রেজাল্ট করেন । ১৮৯৯ সালে পাঞ্জাব ইউনিভার্সিটিতে প্রথম স্থান অধিকার করে এমএ পাশ করার পর লাহোর সরকারী কলেজেই শিক্ষক নিযুক্ত হন । এখানে এসে তিনি তার শিক্ষক টি ডব্লিও আর্নল্ড ( থমাস উইলিয়াম আর্নল্ড )-কে তার ফ্রেন্ড, ফিলসফার এবং গাইড হিসাবে পান । এই টি ডব্লিও আর্নল্ড -ই ( অত্যন্ত শ্রদ্ধা পোষণ করছি এই মহান শিক্ষকের প্রতি ) মুহাম্মাদ ইকবালের জীবনে অত্যন্ত প্রভাব বিস্তার করেন এবং উচ্চ শিক্ষার জন্য উতসাহিত করেন ।
আপনারা জানেন, এই টি ডব্লিও আর্নল্ড' কে ?
উইলফ্রেড কেন্টওয়েল স্মিথ নামের ইসলাম বিদ্বেষী এক প্রফেসর একটি নতুন তত্ত্ব আবিস্কার করেন, "ইসলামের বিজয় হয়েছে তরবারির মাধ্যমে । নবী মুহাম্মাদ (সা) এক হাতে তলোয়ার আর অন্য হাতে কুরআন নিয়ে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করেন ।"
এমন সময়ে, যখন মুসলিমদের মধ্য থেকে এসব অপপ্রচারের জবাব দেবার মত উপযুক্ত মানুষ পাওয়া যাচ্ছিল ছিল না-- তখন এগিয়ে আসেন টি ডব্লিও আর্নল্ড । তিনি ছিলেন লাহোর সরকারী কলেজের দর্শনের প্রফেসর, এবং পরবর্তীতে পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে ওরিয়েন্টাল স্টাডিজ বিষয়ের ডীন । তিনি অনেক গবেষণা করে, অনেক উপাত্ত ঘেঁটে, সারা বিশ্বের মুসলিম বসতির ইতিহাস পর্যালোচনা করে একটি বই লিখেন The Preaching of Islam" । তিনি প্রমাণ করেন, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়ার মত এমন পৃথিবীর অনেক দেশ আছে, যেখানে কোন মুসলিম সেনাদল কখনই যায়নি । শুধুমাত্র প্রচারের জোরেই সে সব দেশে ইসলামের বিস্তার ঘটেছে । এর কারণ বিশ্লেষণ করে তিনি বলেন, কোরআনের নির্দেশনা অনুসারে মুসলিমরা একটি মিশনারী জাতি । প্রত্যেক মুসলিমই একেক জন মিশনারি । মুসলিমদের আবির্ভাবের উদ্দেশ্য নিয়ে কোরআন বলেছে, " উখরিজাত লিন নাস, তা'মুরুনা বিল মারুফ, ওয়া তানহাওনা আনিল মুনকার" "তোমাদের আবির্ভাব করা হয়েছে মানবজাতির কল্যাণের জন্য । তোমরা মানব জাতিকে সৎ কাজের আদেশ দাও এবং অসৎ কাজ থেকে নিষেধ কর " । এই আদেশের কারণে একেক জন মুসলিম যেখানে গিয়েছে, সেখানে মুসলিম মিশনারি হিসাবে কাজ করেছে ।
ইসলামের শক্তির উৎস, আল জিহাদ --এই দুটি বইয়ের লেখক সাইয়্যেদ আবুল আলা টি ডব্লিও আরনল্ডের লেখা The Preaching of Islam বইয়ের ভূয়ুসী প্রশংসা করেছেন, এবং সেখান থেকে রেফারেন্স দিয়েছেন ।
প্রায় একই সময় মুসলিমদের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের জবাব দিতে জাস্টিস আমীর আলী লিখেছিলেন The spirit of Islam.
শ্রদ্ধেয় শিক্ষক টি ডব্লিও আর্নল্ড'ই মুহাম্মাদ ইকবালকে উচ্চশিক্ষার জন্য পাশ্চাত্যে যেতে দারুণভাবে প্রভাবিত করেন । কাজটা খুব সহজ ছিল না । কারণ ইংরেজদের দেশে পড়তে যাওয়া তো দুরের কথা, তাদের হাতে রাজ্য হারিয়ে মুসলমানগণ ইংরেজদেরকে অত্যন্ত ঘৃণার চোখে দেখতেন । ইংরেজদেরকে তারা ডাকতেন ফিরিঙ্গি নামে । ইংরেজদের চালচলনকে তারা বলতেন ফিরিঙ্গিপনা । যাই হোক, টি ডব্লিও আর্নল্ড অনেক বুঝিয়ে সুজিয়ে মুহাম্মাদ ইকবালকে স্কলারশিপের ব্যবস্থা করে ইংল্যান্ড পাঠান । স্কলারশিপটা অবশ্য ইকবাল তার মেধার জোরেই পেয়েছিলেন । সেখানে গিয়ে ১৯০৭ সালে ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটি থেকে তিনি ব্যারিস্টার এট ল' পাশ করেন । তার পর তিনি যান জার্মানিতে । মিউনিখের লুডিগ ম্যাক্সিমিলান ইউনিভার্সিটি থেকে তিনি Development of metaphysics in Persia বা পারস্যে আধ্যাত্মিকতার উন্মেষ-- শীর্ষক থিসিস লিখে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেন ।
১৯৩০ সালে পুত্র জাবিদ ইকবালের সাথে মহাকবি আল্লামা ইকবাল
(চলবে)
বিষয়: বিবিধ
১৪৬৭ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
জাযাকাল্লাহ..
বড় পোস্ট পড়তে অনেকেরই অনাগ্রহ!
তাই এটাকে কয়েক পর্বে ভাগ করে পোস্ট করতে অনুরোধ করছি!
ফেসবুকে যা লিখেছিলাম, এটা তার কিঞ্চিৎ সংশোধিত রূপ ।
ব্লগে এবং ফেসবুকে আপনাদের মত 'আয়না' থাকা সৌভাগ্যের ব্যাপার । ভুল ত্রুটি ধরিয়ে সংশোধন করে দেন, এটা কি কম পাওয়া !
আপনি যা বলেছেন, এবার তাই হবে ।
জাজাকাল্লাহু খাইরান কাছিরান ।
এক শতাব্দী পার হলেও তার কবিতা আমাদের জন্য পাথেয় হয়ে আছে ।
পড়ার জন্য এবং মন্তব্য করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ ।
একটি ছোট তথ্য তিনি পিএইচডি করার পর বার পুনরায় লন্ডন এ ফিরে গিয়ে বার এট-ল করেন।
সৈয়দ মির হাসান সম্পর্কেও কিছু তথ্য দিলে ভাল হতো। তার সম্পর্কে আল্লামা ইকবাল এর বক্তব্য ছিল "আমি নিজেই তার জিবন্ত রচিত গ্রন্থ"।
ইকবাল বিষয়ে কোন রেফারেন্স বই আমার হাতের কাছে নেই । তাই আমি নিশ্চিত করে বলতে পারছি না, তিনি পিএইচডি আগে করেছিলেন নাকি বার এট ল' আগে করেছিলেন ।
সৈয়দ মীর হাসান সম্বন্ধে আরও তথ্য সংগ্রহ করতে পারলে উপস্থাপন করতে পারব ।
পড়া এবং মন্তব্য করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ ।
ইসলামের চির কল্যাণকামিতা বরাবরই প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা হয়েছে বিদ্বেষ প্রসূত মনন দ্বারা!
অহেতুক এই অন্ধ বিদ্বেষ যৌক্তিক ভাবে যারা মোকাবেলা করেছেন তাদের অন্যতম মহাকবি আল্লামা ইকবাল!
মহান এই মনিষী কে নিয়ে ধারাবাহিক উপস্হাপনায় 'জাযাকাল্লাহু খাইরান' জানাচ্ছি!!
পরবর্তি পোষ্টের অপেক্ষায় থাকলাম।
মন্তব্য করতে লগইন করুন