ইণ্ডিয়ার পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিংকে অপসারণ করা হলে কেন ? তাতে আমাদের কী লাভক্ষতি ?
লিখেছেন লিখেছেন জয়নাল আবেদীন টিটো ৩০ জানুয়ারি, ২০১৫, ০৩:১৮:৫৩ রাত
গতকাল ২৯শে জানুয়ারী, ২০১৫, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তার দেশের পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং কে সরিয়ে সুব্রানিয়াম ( অথবা সুব্রহ্মণ্যম ) জয়শংকরকে ওই পদে নিয়োগ দিয়েছেন । এ নিয়ে বাংলাদেশের পত্র পত্রিকা, টেলিভিশন এবং ফেসবুকে হর্ষ প্রকাশ করা হচ্ছে । ভাবখানা এই যে, আমাদের দেশের একজন শত্রুকে যেন তার পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে ! আসলে সুজাতা সিংকে তার পদ থেকে সরানোর পর তিনি সরকারী চাকুরী থেকে অবসর (আরলি রিটায়ারমেন্ট ) নিয়েছেন ।
নিশ্চিত জেনে রাখুন সুজাতা সিংকে আমাদের, অর্থাৎ বাংলাদেশীদের সুবিধার জন্য অপসারণ করা হয় নি । তাকে অপসারণ করার কারণগুলো হচ্ছে--
এক) ভারত এখন সারা বিশ্বে সুপার পাওয়ার হওয়ার স্বপ্নে বিভোর । তাদের লক্ষ্য নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হওয়া । অ্যামেরিকা, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, চীন এবং ফ্রান্স-- এই পাঁচটি দেশ এখন নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য । ভারত তার তিনদিকে তিনটি বৈরী দেশের সাথে মোকাবেলা করতে রীতিমত হিমশিম খাচ্ছে । তাই, যেভাবেই হোক, তাদেরকে এখন নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য হতে হবে এবং শত্রুদেশকে পরাভূত করে রাখতে হবে । যেদেশে এইডস এবং হেপাটাইটিস রোগের বিস্তৃতির হার বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশী, যে দেশের প্রায় ৫০% মানুষ স্যানিটারি লেট্রিনের অভাবে উন্মুক্ত স্থানে মলত্যাগ করে, যেদেশে কৃষিঋণ শোধ করতে না-পেরে প্রতিবছর এক লাখ কৃষক আত্মহত্যা করে, যে দেশে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশী সংখ্যক দরিদ্র লোকের বাস, সে দেশের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হওয়ার এবং সুপার পাওয়ার হওয়ার আকাঙ্ক্ষা চাট্টিখানি কথা নয় ।
সুব্রানিয়াম (সুব্রহ্মণ্যম) জয়শংকর ২০১৩ সাল থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইণ্ডিয়ার রাষ্ট্রদূত ছিলেন । তিনি ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে তার দেশে আসতে রাজি করিয়েছেন এবং এনেছেন । ভারত নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হতে চাইলে আমেরিকা তাদেরকে সমর্থন দিবে-- এ কথা বারাক ওবামার মুখ দিয়ে বের করেছেন । অথচ, নরেন্দ্র মোদি যখন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, তখন তার রাজ্যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় দুই হাজার মুসলমান নিহত হন । রাজ্যের পুলিশ পর্যন্ত মুসলিম নিধনে জড়িয়ে পড়ে । সারা বিশ্বে রটনা রটে, তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সেই মুসলিম নিধনে উস্কানী দিয়েছেন । অ্যামেরিকা নিজের মত তদন্ত করে নরেন্দ্র মোদীর জড়িত থাকার প্রমাণ পায়, এবং সেদেশে নরেন্দ্র মোদীর প্রবেশ নিষিদ্ধ করে । গত এক যুগে নরেন্দ্র মোদী আমেরিকায় ঢুকতে পারেননি । অপরদিকে অ্যামেরিকা এবং ভারত, উভয়দেশের সাথে চীনের বৈরি সম্পর্ক রয়েছে । সুব্রানিয়াম (সুব্রহ্মণ্যম) জয়শংকর অত্যন্ত দক্ষতার সাথে আমেরিকাকে বুঝাতে সক্ষম হন, চীনকে মোকাবেলা করতে চাইলে, ভারতেকে তাদের সাথে রাখতেই হবে; অন্যথায় শুধু আমেরিকার পক্ষে চীনকে মোকাবেলা করা সম্ভব নয় । অ্যামেরিকা এই যুক্তি খুব ভালাভবে গ্রহণ করেছে । এছাড়া, ইণ্ডিয়া আমেরিকার সম্পর্ক উন্নয়নে সুব্রানিয়াম (সুব্রহ্মণ্যম) জয়শংকরকে অত্যন্ত ইতিবাচক ভূমিকা রাখেন ।
দুই) সুব্রানিয়াম ( সুব্রহ্মণ্যম ) জয়শংকর ২০০৭ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত চীনে ভারতের রাষ্ট্রদূত হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন । সাম্প্রতিক দিনগুলোতে ভারত তার প্রতিবেশী দেশ চীনের সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন করতে চাইছিল; কিন্তু সুজাতা সিং সে কাজটি করতে পারছিলেন না ( তিনি শুধু বাংলাদেশেই মাতাব্বরী করতে সফল হয়েছেন ) । নরেন্দ্র মোদী আশা করছেন, দক্ষ কূটনীতিবিদ হিসাবে সুব্রানিয়াম (সুব্রহ্মণ্যম) জয়শংকরকে চীনের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারবেন । সম্পর্ক ভাল হলে সীমান্তে যুদ্ধের আশংকা কমবে । অযথা অর্থব্যয়ের পরিমাণটাও কমে আসবে ।
তিন) ইদানিং পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং-এর সাথে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সম্পর্ক খুব একটা ভাল যাচ্ছিল না । নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর ইসরাইলের সাথে ইণ্ডিয়ার সম্পর্ক গাঢ় হতে থাকে । কিন্তু সুজাতা সিং আন্তর্জাতিক এক সেমিনারে একটি বক্তব্য দেবার সময় ইসরাইলের বিপক্ষে কয়েকটি কথা বলে ফেলেন । এটা জানতে পেরে মোদী অসন্তুষ্ট হন । জাতিসংঘ উদ্বাস্তু বিষয়ক কমিশনের নির্বাচনে ইসরাইল প্রার্থী হয়েছিল । মোদী চেয়েছিলেন, ইণ্ডিয়ার ভোটটি ইসরাইলের পক্ষে পড়ুক । কিন্তু সুজাতা সিং ইসরাইলকে ভোট দেননি । এতে নরেন্দ্র মোদী বেশ নাখোশ হন ।
নরেন্দ্র মোদী চেয়েছিলেন গত সেপ্টেম্বরে জাপান সফরে যেতে । সুজাতা সিং সে সফরের ব্যবস্থা করতে পারেননি । এসব কারণে দুজনের মধ্যে সম্পর্ক ছিল খুবই শীতল । সব মিলিয়ে নরেন্দ্র মোদী তার দেশের পররাষ্ট্র সচিবকে অপসারণ করার একটা সুযোগ খুঁজছিলেন । পররাষ্ট্র মন্ত্রী সুষমা স্বরাজ যখন চীন সফরে গিয়েছেন, এই সুযোগে সুজাতা সিং কে সরিয়ে দেয়া হল ।
আমার মতে সুজাতা সিং কে অপসারণের কারণ এই তিনটি । ইণ্ডিয়া বাংলাদেশ সম্পর্ক এখানে বিবেচনায় আনা হয়নি ।
বিষয়: বিবিধ
১৫২৫ বার পঠিত, ১৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
খুব সংক্ষেপে যদি বলি, তাহলে বলব, অর্থ, স্বার্থ, জ্বালানী তেল, অন্যের ভূমি দখল -- এগুলো বিশ্ব রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করছে ।
যদি ভাল কিছু হয় - ভারতের শুভবুদ্ধির উদয় হয় যে
স্থিতিশীল বাংলাদেশই ভারতের জন্য ভালো।
অস্থিতিশীল বাংলাদেশ ভারতের উত্তর পূরবান্চলের সমস্যাকে আরো প্রকট করে তুলবে।
তাদের নিজেদের স্বার্থেই বাংলাদেশকে তার নিজস্ব গতিতে চলতে দেওয়া ভালো।
A PHP Error was encountered
Severity: Notice
Message: Undefined offset: 10348
Filename: views/blogdetailpage.php
Line Number: 917
"> মুক্তিযুদ্ধের কন্যা লিখেছেন : ভারত বাংলাদেশকে তালেবানের প্রজনন ক্ষেত্রে বানাবে। আল্লার উপরে এখন ভারতের অবস্থান। মুমিন মুসলমানরা আল্লা আল্লা করে দেখেছে কোন কাম হয় না। এখন নিরুপায় মুমিনরা এর ওর হাতে পায়ে ধরে ধান্ধাবাজীর তালে আছে।এ ছাড়া লোকে বলে হাজার হাজার 'র'-এর অনুচর এদেশে কিলবিল করছে ।
ভারত ইসলাম ও বাংলাদেশের চরম দুশমন!
ওদের প্রতিটা কর্মকান্ডের পিছনে শুধুই স্বীয় স্বার্থই কাজ করে!
সুজাতা সিংয়ের অপসারণে বেহদ খুশি হওয়ার কিছুই নেই!
বিশ্লেষণ মুলক সুন্দর উপস্হাপনার সাথে সহমত আমাদেরও!
জাযাকুমুল্লাহু খাইরান শ্রদ্ধেয় ভাইয়া!!!
সঠিক বলেছেন শ্রদ্ধেয় ভাই!
আর অতীব দুঃখের বিষয় হল- মুসলিম সমাজে আজ এই বিষয়েই দৈন্যতা ও উদাসীনতা সব চেয়ে বেশী!
আল্লাহ মহান মুসলিমদের হেফাযত করুন!আমিন!!
জাযাকুমুল্লাহু খাইরান!!!
A PHP Error was encountered
Severity: Notice
Message: Undefined offset: 10348
Filename: views/blogdetailpage.php
Line Number: 764
বর্তমানে যাকে ফরেন সেক্রেটারী নিয়োগ করা হয়েছে সে হচ্ছে দরুণ একজন সফল কুটনৈতিক এবং ভারতীয় স্বার্থ আন্তর্জাতিক অঙ্গণে স্বার্থকভাবে তুলে ধরতে পেরেছে। হয়তো বাংলাদেশকে ধীরে ধীরে ল্যান্ডিয়ানদের করদ রাজ্য বানানোর ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী এবং সফল নাটকের স্ক্রীপ্ট ও দক্ষ পরিচালনার ব্যাপারে আশাবাদী হয়েই গুজরাটের নর ঘাতক নরাধম মোদি সাহেব বিখ্যাত বুদ্ধিজীবি সুব্রানিয়ামের ছেলে সৃব্রানিয়াম জয়শংকরকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
সুতরাং সুজাতা সিংয়ের পতনের ফলে এবং নতুন দক্ষ ঝানু আরেক কুটনৈতিককে ফরেন সেক্রেটারী হিসেবে নিয়োগ দেয়াতে আমাদের খুশী হওয়ার কিছু নেই। মনে রাখতে হবে শত্রু কিছুটা কম চালাক হলে যেমন আমাদের সুবিধা বেশী তেমনি বেশী চালাক হলে আমার তার চালবাজীর ফান্দে আটকে যাওয়ার আশংকাও বেশী।
মন্তব্য করতে লগইন করুন