বেশীর ভাগ বাঙ্গালী কি বাচাল, নিন্দুক, পরচর্চাকারী ??
লিখেছেন লিখেছেন জয়নাল আবেদীন টিটো ০১ নভেম্বর, ২০১৪, ০৯:৩০:০৩ রাত
আমাদের রেলমন্ত্রী ৬৭ বৎসর বয়সে গতকাল প্রথম বিয়ে করেছেন । এ নিয়ে ফেসবুকে ক্ষোভ, হাহাকার, ঠাট্টা, মশকরা চিৎকার চলছে ।
যারা ক্ষুব্ধ হয়েছেন, তাদের প্রতিক্রিয়া দেখলে মনে হয়, রেল মন্ত্রী বোধহয় তাদের বাগদত্তাকে জোর করে তুলে নিয়ে বিয়ে করে ফেলেছেন । আর যারা ঠাট্টা মশকরা করছেন, তাদের কথা শুনলে মনে হয়, মন্ত্রী তাদের বড় বোনকে বিয়ে করে নতুন দুলাভাই হয়েছেন । অনেকেই অশ্লীল মন্তব্যও করেছেন; তাদের মন্তব্যে নিশ্চয়ই শয়তানের খুশি হয়ে তাদের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়েছে । মেডিকেল ফিজিওলজি সম্পর্কে অজ্ঞরা কলকাতা হারবালের ছবি, ভায়াগ্রার ছবি দিয়ে নিজের মনের অশ্লীল রূপ তুলে ধরেছেন । ৬৭ বৎসর বয়স হলেই একজন মানুষ 'অকর্মণ্য' হয়ে পড়েন, এ তথ্য তারা কোথায় পেয়েছেন ?
বিয়ে মানুষের একটা প্রয়োজন । আত্মভোলা মানুষের জন্য আরও বেশী । যে (পুরুষ) নাইতে, খাইতে, ওষুধ খেতে, পরিচ্ছন্ন থাকতে ভুলে যায়, 'স্ত্রী' তাঁর জন্য অতিপ্রয়োজনীয় । বার্ধক্যের উদাসীন অবস্থায় যে (ব্যক্তি) স্ত্রী-হারা হয়, সে ব্যক্তি বেশীদিন বাঁচে না । শরৎচন্দ্রের 'বড়দিদি' উপন্যাসে আত্মভোলা সুরেন্দ্রনাথের মত মানুষের সংখ্যা পৃথিবীতে বিরল নয় ।
বিয়ে করা সমস্ত নবীদের সুন্নাত । বিয়ে মানুষের দ্বীনের অর্ধেক পূর্ণ করে দেয় । মন্ত্রী মহোদয় তো নিজেকে ধর্মহীন বলে ঘোষণা দেননি, বা ব্যভিচারে লিপ্ত হতে চাননি ! সুন্নাত মোতাবেক বিয়ে করেছেন । মাস তিনেক আগে তিনি খুশি হয়ে ঘোষণা দিয়েছেন, "মেয়ে ধার্মিক, বোরখা পরে" ।
এখন প্রশ্ন হল,
বিয়ে করে মন্ত্রী কি কোন অশ্লীল কাজ করেছেন ?
ভদ্র মানুষের রুচি বিরোধী কাজ করেছেন ?
ইসলাম বিরোধী কাজ করেছেন ?
আপনার আমার বাড়াভাতে ছাই দিয়েছেন ?
এই বিয়ে নিয়ে এত কূটমন্তব্য, অশ্নীল বাক্যবাণের আদৌ কোন প্রয়োজন ছিল ?
এ ধরনের মন্তব্য করে দুনিয়া বা আখেরাতের কোন কল্যাণ হয়েছে ?
মোটেও না ।
এধরণের মন্তব্য মানুষের ব্যক্তিত্বের, সম্মানের হানি ঘটায় । কারও যদি ব্যক্তিত্ব, আত্মসম্মানবোধ না-থাকে তাহলে তার সাথে আমার কোন কথা নেই ।
যারা আল্লাহ্ এবং আখেরাতের জবাবদিহিতায় বিশ্বাসী, তাদের জেনে রাখা উচিত, প্রতিটি মন্তব্য, দুই ঠোঁট দিয়ে উচ্চারিত প্রতিটি কথাই লিখে রাখা হচ্ছে । কিয়ামতের কঠিন দিনে এই অশ্লীল কথাগুলোর সন্তোষজনক জবাব না-দিয়ে কেউ এক পা-ও নড়তে পারবে না । আর সন্তোষজনক জবাব দিতে না-পারলে নিজের উপার্জিত নেকী অন্যকে ( এখানে পড়ুন, মন্ত্রী মহোদয়কে) দিয়ে দেওলিয়া হতে হবে ।
আল্লাহ্র রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলালিহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি বড়দের শ্রদ্ধা করে না, সম্মান করে না, ছোটদের স্নেহ করে না, সে আমাদের (মুসলমানদের) অন্তর্ভুক্ত নয় । এই হাদিসটি এতটাই মশহুর যে, এর রেফারেন্স দেবার প্রয়োজন নেই ।
৬৭ বৎসর বয়স্ক মন্ত্রী কী বয়সে আপনার আমার চেয়ে বড় নন ? অনেকের বাবার চেয়েও বড় । তাহলে কেন জাহেলের (মূর্খের) মত এমন কটু মন্তব্য করে আল্লাহ্র রাসুলের অবাধ্যতা করা হচ্ছে ? কারণ, বেশীর ভাগ মানুষের অপ্রয়োজনীয় কাজে এত বেশী ব্যস্ত যে, তারা তাদের আদব আখলাখ পরিশুদ্ধ করার সময় পায় না । ফাজলামোতে তাদের যত আগ্রহ, আত্মশুদ্ধিতে, জিহবার শুদ্ধিতে এর সামান্য পরিমাণ আগ্রহও নেই । তাই, বেশীর ভাগ বাঙ্গালী বাচাল, নিন্দুক, পরচর্চাকারী ।
যারা মন্ত্রীর বিয়ের কারণে বড়দের জন্য সম্মানহানিকর মন্তব্য করেছেন, অশ্লীল মন্তব্য করেছেন, তাদেরকে অনুরোধ করছি, আপনারা আপনাদের স্ট্যাটাস এবং মন্তব্য মুছে ফেলুন, এবং আল্লাহ্র কাছে তাওবা করুন । অন্যথায়, আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসুলের অবাধ্য হওয়ার কারণে, পরকালে আল্লাহ্র কাছে কঠিন জবাবদিহির জন্য প্রস্তুত থাকুন ।
বিষয়: বিবিধ
১৫৯৮ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সোশ্যাল মিডিয়ায় কিছু মানুষের কমেন্ট দেখে সত্যি তাজ্জব হয়ে গেলাম। মানুষ এতটা নীচ কিভাবে হয় যে একটা হালাল সম্পর্ক মেনে নিতে পারে না? আর এ কাজে দুঃখজনক ভাবে এগিয়ে আছে জামাতপন্হীরা।
সহমত সুন্দর মতামতধর্মী লেখনীতে!
বৈষয়িক স্বার্থচিন্তায় বিরোধীপক্ষের সামান্য ক্ষুত ধরার ধান্ধায় আজকের সমাজ! রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে যে কোন ভাবেই ঘায়েল করার হীন কৌশল ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের মধ্যেও ঢুকে গেছে!
চিন্তাশীল উপস্হাপনায় অনেক ধন্যবাদ ও জাযাকুমুল্লাহু খাইরান হে শ্রদ্ধেয়.....!!
ইসলামী আদব কায়দা একটি অসাধারণ সুন্দর জিনিষ । সাধনা করে এ ধন অর্জন করতে হয় ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন