পাদকর্ম, বয়স্কা উট, যৌনসম্মতি এবং সামান্য ভুল
লিখেছেন লিখেছেন জয়নাল আবেদীন টিটো ০২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০৯:০৭:২৫ রাত
এক. কবি আবদুস সাত্তার সাপ্তাহিক বিক্রমে নিয়মিত লিখতেন । সে লেখায় অতীতের স্মৃতি এবং জীবনের অভিজ্ঞতা গুলো তিনি পাঠকদের সামনে তুলে ধরতেন । 'বিক্রমের' কোন এক সংখ্যায় তিনি লিখেছেন, তারা প্রায়ই ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর কাছে লেখা-প্রার্থনা করতেন । কারণ, বড়দের লেখা ছাপলে অখ্যাত পত্রিকাগুলোও পাঠকপ্রিয়তা পায় । যাই হোক, একবার কবি আবদুস সাত্তার একটি সদ্য-প্রকাশিত পত্রিকা নিয়ে ড. শহীদুল্লাহ'র কাছে গেলেন । উদ্দেশ্য, ড. শহীদুল্লাহকে তার লেখা দেখানো । তো, ড. শহীদুল্লাহ সাহেব পত্রিকাটির দিকে কিছুক্ষণ চোখ বুলিয়ে শুধালেন, "জায়নামাজে কেউ পাদকর্ম করে নাকি ?" আবদুস সাত্তার জিজ্ঞাসু নেত্রে তাঁর দিকে তাকালেন । ড. শহীদুল্লাহ বললেন, "আমি লিখেছিলাম, জায়নামাজে যখন পা দিলাম । আর তোমরা ছাপিয়েছ, জায়নামাজে যখন পাদিলাম...... জায়নামাজে দাঁড়িয়ে কেউ পাদকর্ম করে ?" আবদুস সাত্তার তাকে বুঝালেন, কম্পোজিটরের ভুলে 'পা'-এর সাথে 'দিলাম' যুক্ত হয়ে গেছে ।
( পাঠকবর্গ আপনারাই বলুন, জায়নামাজে পা দিলাম, আর পাদিলাম এটা কি সামান্য ভুল ? )
দুই. দ্বিতীয় ঘটনাটিও কবি আবদুস সাত্তারের । রাতের বেলায় পত্রিকা ছাপতে দেবার আগ-মুহূর্তে তিনি একটি খবরের শিরোনাম "পূর্ব পাকিস্তান থেকে ছয়জন বয়স্কাউট পশ্চিম পাকিস্তানে যাচ্ছে" লিখে কম্পোজিটরের কাছে দিলেন । বয়স্কাউট কি জিনিষ, কম্পোজিটর তা বুঝতে পারলেন না । তিনি ভুল 'সংশোধন' করে দিলেন । পরদিন পত্রিকায় ছাপা হল, পূর্ব পাকিস্তান থেকে ছয়জন বয়স্কা উট পশ্চিম পাকিস্তানে যাচ্ছে" । পত্রিকায় এ খবর দেখে পাঠকদের চক্ষু ছানাবড়া !
( পাঠক, আপনারাই বলুন, বয়স্কাউট আর বয়স্কা উট, দুটি কি খুব বড় ভুল ? 'স্কা' না-হয় একটু এদিক ওদিক হয়ে গেল ! এ জন্য রাগ করতে হবে ?)
তিন. এবনে গোলাম সামাদ তখন 'পালাবদলে' নিয়মিত কলাম লিখতেন । তিনি একবার তার এক লেখা দেখে ভীষণ লজ্জিত হলেন । তার লেখাটিতে বার বার লেখা হয়েছে 'যৌনসম্মতি' । পত্রিকার পরের সংখ্যায় তিনি অত্যন্ত বিনয়ের সাথে লিখলেন, তার লেখার কয়েক জায়গায় লিখেছিলেন 'মৌনসম্মতি' ।কীভাবে তার মৌনসম্মতির স্থলে যৌনসম্মতি হয়ে গেছে তিনি বুঝতে পারছেন না । তিনি যে কথাটি বলেন নি, তা হল, কম্পোজিটর এটাকে 'যৌনসম্মতি' বানিয়ে ছেড়েছে ।
ড. এবনে গোলাম সামাদ বিনয়ী মানুষ । তিনি কম্পোজিটরের উপর রুষ্ট না-হয়ে পাঠকদের কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন ।
বিষয়: বিবিধ
১৮১৯ বার পঠিত, ১৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মাটির লাঠি শক্ত একটি বস্তু কিন্তু কোন কাজের না ..... .....
তবে দীপুমনি পাদিবেন না লিখে নাই।
লিখেছে পুত করে
২/ ডিগ্রী ক্লাসে পড়ার সময় আমাদের তৎকালীন ইংরেজীর প্রফেসর জনাব গোলাম ফোস্তফা স্যার (জি. এম. স্যার নামেই অধিক পরিচিত এবং অত্যন্ত রশিক ছিলেন) কোন একদিন হঠাৎ ক্লাসে ঢুকেই ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশ্য জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে জানতে চাইলেন- দেখি বলতো আজ আমি তোমাকে খাওয়াবোএর ইংরেজী কি হবে? দু'য়েকজন ছাত্র সম্ভবত সঠিক উত্তর দিয়েছিল। কিন্তু যখন মেয়েদের বেঞ্চের দিকে ইংগিত করে জিজ্ঞাসা করলেন তখন হঠাৎ এক ছা্ত্রী উত্তর দিতে দাড়িয়ে গেলেন। ছাত্রীর উত্তর (সে বলেছিল- Today I eat you) শুনে যারা এর অর্থ বুঝতে পেরেছে তারাতো হাসতে হাসতে পেটের নাড়িভূড়ি বের হয়ে যাওয়ার অবস্থা। কিন্তু যারা তাৎক্ষণিক এর অর্থ বুঝতে পারেননি তারা তো হা করে শুধু তাকিয়েই আছে। হাসারও সুযোগ হলো না তাদের।
এটার সঠিক ইংরেজীটা কি সেটাও বলে দিন। আমার মতো যারা জানে না তার জানতে পারলো। কি বলেন?
"সেই সত্য, যা রচিবে তুমি" ।
এই ধরনের শব্দের অপপ্রয়োগ এর ইংরেজি "স্পুনারিজম" শব্দটি চালু হয়েছিল অক্সফোর্ডের এক অধ্যাপডক ডিন স্পুনারের নাম থেকে যিনি নাকি প্রায় এভাবে শব্দের উল্টাপাল্টা করে ফেলতেন।
এবনে গোলাম সামাদ সাহেবের ঘটনাটা নিয়ে আমি নিজেই বিভ্রান্তিতে পরে গিয়েছিলাম। কারন লেখার বিষয়ের সাথে শব্দটির কোন মিল ছিলনা। পরের সংখ্যা চিঠিতে সামাদ সাহেব এই সংশোধনি দেন এবং সম্পাদক ও দুঃখ প্রকাশ করেন। এই ধরনের ছাপার ভুল কে "ছাপাখানার ভুত এর কাজ" বলা হয়।
শুধু লেখার ক্ষেত্রে নয়,আচার-আচরণেও ভূল শব্দ প্রয়োগ অনেক বিরম্বনা সৃষ্টি করে!
কথা-বার্তায় ভূল সম্পর্কে কে শেষও করে দেয় কখনও কখনও!
সতর্কতা কাম্য!!
মন্তব্য করতে লগইন করুন