মুসআব বিন উমায়ের রাদিঃ তাঁর যে ছবি আমি এঁকেছি হৃদয়ে...........
লিখেছেন লিখেছেন তারাচাঁদ ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ০৬:০০:০৯ সন্ধ্যা
মুসআব বিন উমায়ের ছিলেন আল্লাহর রাসুলের (সা.) সবচেয়ে প্রিয় এবং শীর্ষস্থানীয় সাহাবীদের একজন । আমার মনে হয়, তিনি যদি আরো চল্লিশ বছর বেঁচে থাকতেন, তাহলে তিনি হতেন খলীফা, মহাদেশ বিজয়ী ইসলামী বীর এবং সবচেয়ে বেশী হাদীস বর্ণনাকারীদের অন্যতম । কিন্তু ওহুদের যুদ্ধে এই গোলাপ গুলটি ঝরে যাওয়ায়, আমরা আবুবকর, উমর, আলী, খালিদের (রাদি.) কাছ থেকে যে ধরণের খেদমত পেয়েছি, তার কাছ থেকে সে ধরণের খেদমত পাইনি ।
আমার হৃদয়ে মুসআব বিন উমায়েরে যে চিত্র আছে, তা হলঃ
১) মুসআব বিন উমাইর ছিলেন অত্যন্ত হ্যাণ্ডসাম
আরবের সবচেয়ে সুদর্শন ব্যক্তি ছিলেন রাসুল মুহাম্মদ (সা.) । উম্মে মা'বাদ নবীজির চেহারার যে বর্ণনা দিয়েছেন, শুধু এটুকু পড়লেই বুঝা যায় তিনি কত অনুপম সুন্দর ছিলেন। তাঁর চেহারার সাথে মুসআব বিন উমাইরের চেহারার বেশ মিল ছিল । পরিচ্ছন্ন পোষাক আর সদাহাস্যময় চেহারা মুসআবের সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে দিত । নবীজি এবং মুসআবের চেহারার সাদৃশ্য ছিল বলে ওহুদ যুদ্ধের সময় এক কাফের এসে মুসআবকে মুহাম্মদ (সা.) ভেবে ভুলক্রমে হত্যা করে ।
২) মুসআব ছিলেন উত্তম ভাষা এবং বাচনভঙ্গির অধিকারী
আরবে সবচেয়ে শুদ্ধভাষী ছিলেন রাসুল মুহাম্মদ (সা.) । তিনি কথা বলতেন সঠিক, মার্জিত এবং চমৎকার শব্দ চয়ন সহকারে (কোরআনের ভাষায় 'কাওলান সাদিদা', ৩৩ আহযাবঃ ৭০ ) । তিনি যখন বালক ছিলেন, তখন অচেনা মানুষগুলোও তার কথা শুনে তার দিকে তাকিয়ে থাকত আর ভাবত, এই ছেলেটি কে ? এমন সুন্দর ভাষায় কথা বলে ?
হযরত আবু বকরও ছিলেন শুদ্ধভাষী । তিনি একবার আশ্চর্য হয়ে নবীজিকে জিজ্ঞেস করলেন, "আপনি তো আমাদের মাঝেই বড় হয়েছেন । তাহলে আপনি অমন সুন্দর ভাষায় চমৎকার করে কথা বলে কেমন করে ? "আল্লাহর রাসুল স্মিত হেসে বললেন, "আমার উপর কোরআন নাযিল হয় না !"
মুসআব বিন উমায়েরও ছিলেন ঠিক তেমনি । তার মুখের ভাষা এবং কথা বলার ভঙ্গিমা ছিল চমৎকার । জন্মগত যোগ্যতা তো ছিলই, তারপর মুরশিদের (নবীজির) সংসর্গে থেকে থেকে সদগুণ আরও বহুগুণ বেড়ে গিয়েছিল । এই কোয়ালিটি তাকে দায়ী হিসাবে সাফল্য দান করেছিল ।
আমাদের মধ্যে যারা দাওয়াতী কাজ করেন, তাদের উচিত রাসুলের এই সুন্নাতের দিকে মনযোগী হওয়া ।
৩) মুসআব বিন উমায়ের চিলেন একজন সুরভিত পুরুষ
সুগন্ধি ছিল আল্লাহর রাসুলের সবচেয়ে প্রিয় জিনিষের একটি । তিনি কোন রাস্তা অতিক্রম করে গেলে সেখানে ছড়িয়ে থাকা সুঘ্রাণ শুঁকে মানুষ বুঝতে পারত, একটু আগেই মহামানব এই রাস্তা দিয়ে গেছেন । মুসআব বিন উমায়েরও ছিলেন একই রকম । তিনি কোন রাস্তা দিয়ে হেঁটে গেলে সেই রাস্তার বাতাস সুরভিত হয়ে থাকত । নবীর যোগ্য অনুসারী যে !
রাসুলভক্তদের উচিত সবদিক দিয়ে রাসুলের অনুসরণ করা, মুসআব বিন উমায়েরও ঠিক তা-ই করতেন । হযরত ওমরের মত মানুষও বলতেন, কেউ যদি সুগন্ধি কেনার পেছনে তার আয়ের একতৃতীয়াংশও ব্যয় করে ফেলে, তবু তা অপচয় হবে না ।
আজকাল যাদের শরীর এবং মৌজা দূর্গন্ধযুক্ত থাকে, তাদের দেখলে হযরত মুসআব বা উমর (রাদি.) নিশ্চয়ই খুব রাগ করতেন ।
৪) ত্যাগ ও কুরবাণীর অনুপম উদাহরণ
মক্কায় মুসআব ছিলেন সবচেয়ে সৌখিন ব্যাক্তি । তার পরনে থাকত মিহিসুতার সবচেয়ে দামী পোষাক । হিজরতের এক বছর পূর্বে নবীজি তাকে দাওয়াতী কাজের জন্য মদীনায় পাঠান । তিনি দাওয়াতী কাজ এবং নওমুসলিমদের প্রশিক্ষণ দানে এতটাই ব্যস্ত হয়ে পড়েন যে, নিজের জন্য আয়-রোজগার করার সময় বের করতে পারতেন না ।
( বাড়ী বাড়ী ঘুরে দাওয়াতী কাজ করেন, পথে পথে ঘুরে দাওয়াতি কাজ করেন... দ্বীনি কাজ আগে, দুনিয়া শেষভাগে, এ-ই ছিল তার ব্রত)।
এই কঠিন অবস্থার মাঝেও স্মিত হাসি তার মুখ থেকে বিলীন হয়নি । কেনই বা হবে ? আল্লাহর তরে নিজেকে বিলিয়ে দেয়ার মত পরম আনন্দ, পরম সৌভাগ্য আর কী হতে পারে আল্লাহকে যারা বেসেছে ভাল / দুঃখ কি আর তাদের থাকতে পারে
একজন প্রকৃত মু'মিন দেখে আল্লাহর নূর দিয়ে । তার সামনে যে ওহী নাযিল হত, সেই ওহীর জ্ঞান তার জীবনের লক্ষ্যকে বদলে দিয়েছিল । আল্লাহর জমীনে আল্লাহর দ্বীন কায়েম করে তাঁর সন্তোষ অর্জনই তার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য হয়ে দাঁড়াল । ওহীর বাণী তার চোখের সামনে থেকে সব পর্দা সরিয়ে দিয়েছিল । এক অলৌকিক আলোয় তিনি দেখতে পেয়েছেন, আখেরাতের তুলনায় এই দুনিয়ার আভিজাত্যের মূল্য একটি মাছির পাখার সমানও নয় ।
৫)আল্লাহর রাসুলের (সা.) সাহাবীদের মধ্যে তিনি ছিলেন দাওয়াতী কাজে সবচেয়ে বেশী পারদর্শী ।
নবুওতের একাদশ বছরে মক্কায় হজ্জ করতে এসে ছয়জন লোক ইসলাম গ্রহণ করে । পরবর্তী বছর আরও কিছু লোক এসে ইসলাম গ্রহণ করে এবং মদীনায় একজন দায়ী কাম প্রশিক্ষক পাঠানোর জন্য নবীজিকে অনুরোধ করে । আল্লাহর রাসুল মুসআব বিন উমায়েরকে মদীনায় দায়ী এবং দ্বীনের প্রশিক্ষক হিসাবে পাঠান । দাওয়াতী কাজে অসাধারণ দক্ষ মুসআব মাত্র এক বছরের মধ্যে মদীনার প্রতিটি ঘরে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে দেন । মদীনার সিংহভাগ মানুষ তারই আহবানে ইসলাম কবুল করে ।
৬) সংলাপ এবং কনফ্লিক্ট ম্যানেজমেন্টে তার দক্ষতা ছিল ঈর্ষণীয় ।
উন্নত নৈতিকতা এবং মানবিক বোধের অধিকারী মুসআব স্বল্পদিনেই মদীনাবাসীর মন জয় করে নেন । উসাইদ বিন হুদাইর এবং সা'দ বিন মুয়াজ ছিলেন স্ব স্ব গোত্রের নেতা । তারা তখনও ইসলাম গ্রহণ করেননি । উসাইদ লক্ষ্য করলেন, তরুণরা ক্রমে ক্রমে মুসআবের ভক্ত হয়ে ইসলাম গ্রহণ করছে । এভাবে চলতে থাকলে উসাইদের দলে আর কেউ থাকবেনা । তাই তিনি মুসআব বিন উমায়েরকে মদীনা হতে বের করে দেয়ার সুযোগ খুঁজতে লাগলেন ।
একদিন উসাইদ দেখলেন, মুসআব কয়েকজন নওমুসলিমকে ইসলামের দারস দিচ্ছেন । উসাইদ সেখানে নাঙ্গা তলোয়ার নিয়ে হাজির হলেন । উত্তেজিত কণ্ঠে বললেন, ''আপনি কেন আমাদের মাঝে এসেছেন ? আমাদের দূর্বলদেরকে বোকা বানানোর জন্য ? আপনি যদি আপনার জীবনকে মূল্যবান মনে করে থাকেন, তাহলে এক্ষুণি চলে যান ।" উসাইদের উত্তেজনার জবাবে মুসআব শান্তভাবে বললেন, "আপনি কি একটু বসে আমাদের কথা শুনবেন ? আপনার যদি পছন্দ হয়, তাহলে আপনি গ্রহণ করবেন; আর যদি পছন্দ না-হয় তাহলে গ্রহণ করবেন না ।" উসাইদ ভাবলেন, তিনি তার গোত্রের সবচেয়ে বুদ্ধিমান মানুষ । তাকে বোকা বানানো সহজ কাজ নয় । এই ভেবে তিনি মুসাইবের কথা শোনার জন্য বল্লম গেড়ে বসে পড়লেন । মুসআব তাকে ইসলাম সম্বন্ধে বুঝালেন, কোরআনের কিছু আয়াত পড়েও শোনালেন । কিছুক্ষণ পর মুসআব লক্ষ্য করলেন শান্তিময় এক অলৌকিক আভায় উসাইদের চেহারা উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে । উসাইদ বললেন, "আঃ কত উত্তম ! কতই না চমৎকার ! এই দ্বীন গ্রহণ করতে চাইলে কী করতে হবে ?" মুসআব বললেন, খুব ভাল করে গোসল করুন, এবং পোষাক আশাক পাক সাফ করে আসুন । উসাইদ গোসল করে পাকপবিত্র পোষাক পরে আসলেন, কালেমায়ে শাহাদাত পাঠ করলেন, এবং দু'রাকাত নামাজ পড়লেন । তারপর তিনি বললেন, "আমার পেছনে একজন লোক আছে, তিনি যদি আপনার অনুসারী হন, তাহলে তার গোত্রের আর কেউ পেছনে পড়ে থাকবে না । আমি এখনি তাকে আপনার কাছে পাঠিয়ে দিচ্ছি । তিনি হলেন সা"দ বিন মুআয । তারপর তারা দুজনে মিলে গেলেন সা'দ বিন মুআযের কাছে । সা'দ উসাইদের চেহারায় আলৌকিক প্রভা দেখেই বুঝতে পারলেন, 'উল্টা ঘটনা ঘটে গেছে' । তখন মুসআব এবং উসাইদ উভয়ের উপস্থাপনায় সা'দ তার দলবল সহ ইসলাম গ্রহণ করেন ।
অল্প সময়ের সংলাপে ইসলামের ঘোর শত্রু ইসলামের জন্য প্রাণ উৎসর্গকারী দা্যীতে পরিণত হলেন ।
৭) মুসআব ছিলেন, অত্যন্ত স্মার্ট, প্রফুল্লচিত্ত, সদাহাস্যময়, এবং পরিচ্ছন্ন পোষাক পরিহিত ব্যক্তি।
ড.মুহাম্মদ আল হাশিমী আল হামিদী ( তিউনিসিয়ায় জন্ম, লণ্ডনের বিখ্যাত মিডিয়াম্যান এবং আন্তধর্মীয় সংলাপের উদ্যোক্তা ) তার Muhammad (SM) for the Global Village বইয়ে মুসআবের যে ছবি একেঁছেন, তাতে দেখা যায়, মুসআব ছিলেন, অত্যন্ত স্মার্ট, প্রফুল্লচিত্ত, সদাহাস্যময়, উত্তমভাষী, উত্তম এবং পরিচ্ছন্ন পোষাক পরিহিত ব্যক্তি। তিনি যখন কোন রাস্তা দিয়ে হেঁটে যেতেন, তখন তার স্মার্টনেসের জন্য, তার প্রফুল্লচিত্তের জন্য মানুষ তার দিকে তাকিয়ে থাকত । তার এই গুণগুলো মাদীনার মানুষদেরকে আকৃষ্ট করত । মুখের ভাষায়, চমৎকার আচরণে, বুদ্ধিদীপ্ত চাহনীতে, রূঢ়তার জবাব যৌক্তিক অথচ কোমল ভাষায় দেবার দক্ষতায় তিনি ছিলেন আদর্শ । আল্লাহর রাসুল তার এই গুণ খুব পছন্দ করতেন ।
ড. মুহাম্মাদ আলী আল হাশিমী (সিরিয়ায় জন্ম, বিখ্যাত ইসলামিক স্কলার ) তার The Ideal Muslim বইয়ে একজন মুসলিমের নিজের প্রতি কর্তব্য --এই অধ্যায়ের শুরুতে লিখেছেন, "ইসলাম চায়, একজন মুসলিম নিজেকে এমনভাবে অন্যের কাছে উপস্থান করুক, যাতে তাকে খুব সহজেই তার বাহ্যিক রূপ (appearance), তার পোষাক, মার্জিত আচরণ, উত্তম কর্মের মাধ্যমে আলাদা করে চেনা যায় । তিনি যে মহান বাণীকে বয়ে বেড়াচ্ছেন, তিনি নিজেই হবেন এর এক অনুপম উদাহরণ । ( মূল বইয়ের ভাষাটা এরকমঃ Islam wants the Muslim to stands out among people, readily distinguished by his appearance, dress, decent behavior and good deeds, so that he will be a good example and worthy of great message that he brings to people.)
# আল্লাহর রাসুল একবার কিছু সাহাবীকে দাওয়াতী কাজে পাঠাচ্ছিলেন । তখন তিনি তাদেরকে উপদেশ দিতে গিয়ে বললেন, "তোমরা তোমাদের ভাইদের কাছে যাচ্ছ । কাজেই তোমরা তোমাদের হাওদাগুলো ঠিক করে নাও, এবং তোমাদের পোষাকগুলো ঠিক করে নাও, যেন তোমরা লোকদের মধ্যে সর্বোত্তম পোষাকধারী এবং সর্বোত্তম চেহারার অধিকারী হয়ে যাও । নিশ্চয়ই আল্লাহ অশ্লীলতা এবং কদর্যতাকে পছন্দ করেন না (.....make sure that you are dressed well, so that you will stand out among people like an adornment, for Allah does not love ugliness ) (দেখুন রিয়াদুস সালেহীনে ৭৯৮ নম্বর হাদীসের শেষাংশ )
# একজন মুসলিম তার দ্বীনি দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যতই ব্যস্ত থাকুন না কেন, তিনি কখনোই নিজেকে অবজ্ঞা বা উপেক্ষা করেন না । কারণ একজন মানুষের বাহ্যিক রূপকে তার ভেতরের স্বভাব থেকে আলাদা করা যায় না । মার্জিত এবং মনোহর বাহ্যিক রূপ একজন মার্জিত এবং অভিজাত মানুষের অপরিহার্য উপাদান । এ উপায়েই একজন মুসলিমের উচিত অন্যদেরকে আল্লাহর পথে আহবান করা । (The true Muslim does not neglect himself, no matter how busy he is with his Islamic responsibilities, because outward appearance of a man can not be separated from his inner nature. A refined and pleasant appearance befits a noble and decent essence: this is how the Muslim who is to call others to Allah should be.)
একজন স্মার্ট মুসলিম তার দেহ মন আত্মার চাহিদার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করেন । প্রত্যেকেটি অংশের যে হক বা অধিকার, সে অংশকে তিনি তা দেন ।
এত লম্বা উদাহরণ দেবার উদ্দেশ্য হল, একজন প্রকৃত মুসলিম --যিনি তার দ্বীনি দায়িত্ব পালন করেন, তার বাহ্যিক রূপ কী হবে, তা আল্লাহর রাসুল আমাদের কাছে স্পষ্ট করে দিয়েছেন । মুসআব বিন উমায়ের (রাদি.) নিজে এরই বাস্তব উদাহরণ ছিলেন । আর আল্লাহর রাসুল মানুষ চিনতে কখনো ভুল করেননি ।
৮) মুসআবের অসাধারণ শৌর্য এবং সাহসের অধিকারী
। ওহুদের যুদ্ধে মুসআবকে ডান বাহুর কমাণ্ডার বানানো হয় । তিনি মুসলিম বাহিনীর পতাকা ধারণ করেন । যুদ্ধের এক পর্যায়ে মুসআবের ডান হাত কেটে ফেলা হয় । তিনি বাম হাত দিয়ে পতাকাকে ধরে রাখেন । তারপর তার বাম হাতও কেটে ফেলা হয় । তখন তিনি গলা দিয়ে বুকের সাথে সেই পতাকাকে আঁকড়ে ধরে রাখেন । তবুও সেই পতাকাকে ভুলুন্ঠিত হতে দেননি । এমতাবস্থায় ইবনে কামিয়া নামের এক নরাধম এসে তাকে শহীদ করে দেয় ।
মুসআব বিন উমায়েরের মত একই চেতনার উত্তরসূরী ইসলামী আন্দোলনের নেতাগণ আজও তাদের কর্মীদের এই শিক্ষা দেন, "ইসলামের যে পতাকা আমরা ধরে রেখেছি, আমাদের ডান হাত কেটে দেয়া হলে বাম হাতে দিয়ে সে পতাকাকে আঁকড়ে ধরব । আমাদের বাম হাত কেটে দেয়া হলে দুই বাহু দিয়ে বুকের সাথে সে পতাকাকে আঁকড়ে ধরে রাখব; তবুও শরীরে একবিন্দু রক্ত থাকতে ইসলামী আন্দোলনের পতাকাকে ভূলুন্ঠিত হতে দেবনা "।
৯) মুসআব এবং তার স্ত্রী হামনা উভয়ই উভয়কে প্রচণ্ডভাবে ভালবাসতেন । আল্লাহর রাসুল (সা.) যখন ওহুদের যুদ্ধ থেকে ফিরছিলেন, তখন পথে হামনা বিনতে জাহাশের সাথে দেখা । নবীজি তাকে তার ভাই আবদুল্লাহ বিন জাহাশের মৃত্যুসংবাদ দিলেন । হামনা বললেন, ''ইন্নালিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজিউন । আমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই'' ।
তারপর তাকে তার মামা হামযা'র মৃত্যুসংবাদ দেয়া হল । হামনা বললেন, "'ইন্নালিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজিউন । আমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই''
তারপর তাকে তার স্বামী মুসআব বিন উমাইর-এর মৃত্যুসংবাদ দেয়া হল । হামনা চিৎকার করে কেঁদে উঠলেন । হামনার প্রিয়হারা আর্তনাদের ধ্বনি আল্লাহর রাসুলকেও বেদনাপ্লুত করে দিল । নবীজি বললেন, একজন স্বামী তার স্ত্রীর কাছে সবচেয়ে বেশী আপন, The husband is extremely dear to the wife. ( আমি যখন এই লেখা লিখছি, তখন মুসআবের মৃত্যু আমাকেও কাঁদিয়েছে )।
যিনি নিজেকে আদর্শ মুসলিম হিসাবে গড়তে চান,
যিনি নিজে একজন দায়ী,
যিনি দাওয়াতী কাজের প্রেরণালাভের জন্য একজন স্মার্ট এবং সদাপ্রফুল্ল আদর্শ ব্যক্তির চিত্র খোঁজেন,
যিনি আল্লাহর জমীনে আল্লার দ্বীন প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেন,
তাঁর জন্য মুসআব বিন উমায়ের জীবনে উত্তম আদর্শ রয়েছে । কারণ, মুসআব ছিলেন উসওয়ায়ে হাসানা মুহাম্মদ (সা.) -এর অনুকরণে গড়ে উঠা মানুষ । চেহারায়, ব্যক্তিত্বে, বিচক্ষণতায়, শৌর্যে, বীর্যে, ধৈর্যে, ঔদার্যে, বীরত্বে, স্মার্টনেসে, বুদ্ধির দীপ্ততায়, সৌরভে, ত্যাগে, কুরবাণীতে, তিনি নিজকে আল্লাহর রাসুলেরই অনুকরণে গড়ে তুলে ছিলেন । এই 'মিল' এতটাই ছিল যে হত্যাকারী নিজেই মুহাম্মাদ (সা.) ভেবে মুসআবকে হত্যা করেছিল ।
যাদের পোষাক থাকে ময়লা, শরীর এবং মৌজা দূর্গন্ধযুক্ত, চুল থাকে কাকের বাসার মত এলোমেলো, তাদের সাথে খবীসের মিল থাকতে পারে; আল্লাহর রাসুল বা তার প্রিয় সাহাবীদের সাথে কোন মিল নেই । এমন লোক একজন দায়ী তো দূরের কথা, সাধারণ মুসলিম হিসাবেও অযোগ্য ।
যারা ভীরু, কাপুরুষ, কথায় এবং কাজে যাদের মিল নেই, জালিমের সামনে সত্য উচ্চারণে যারা দ্বিধান্বিত, যারা যাদের বিশ্বাস অথবা কর্ম মুনাফেকীর চিহ্ণ বহন করে, তাদের জন্য মুসআব বিন উমায়েরের জীবনে কোন আদর্শ নেই ।
বিষয়: বিবিধ
৬৯১৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন