রাজাকারদের নিয়ে কথা আত্মপক্ষ এবনে গোলাম সামাদ
লিখেছেন লিখেছেন জানাজানি ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০৯:৩২:১১ রাত
রাজাকার শব্দটা আমরা এখন যথেষ্ট শুনতে পাচ্ছি। কিন্তু শব্দটার অর্থ আমাদের অনেকেরই জানা নেই। আমার এক বন্ধু বললেন, ‘রাজাকার’ শব্দটি এসেছে আরবি ভাষা থেকে। আরবিতে রাজাকার বলতে বোঝায় ‘সহায়তাকারী’। ধর্মীয় অর্থে রাজাকার বলতে বোঝায় হজরত মুহাম্মদ সা:কে যারা মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করতে সহায়তা করেছিলন, তাদের। কিন্তু এই উপমহাদেশে রাজাকার শব্দটা প্রথম ব্যবহৃত হয় ১৯৪৮ সালে নিজাম শাসিত হায়দ্রাবাদ রাজ্যে। নিজাম শাসিত হায়দ্রাবাদে একদল মুসলিম তরুণ একত্র হয়ে রাজাকার বাহিনী গড়েন। তারা চান হায়দ্রাবাদকে একটি পৃথক স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে টিকিয়ে রাখতে। আর চেয়েছিলেন হায়দ্রাবাদ সেনাবাহিনীকে (নিজামের সেনাবাহিনী) যুদ্ধে সহায়তা করতে। তাই তারা নিজেদের নাম দিয়েছিলেন সহায়তাকারী বা রাজাকার। রাজাকারদের সমর্থন করেন সে সময়ের ভারতীয় কমিউনিস্টরা। কারণ, তারাও চাচ্ছিলেন হায়দ্রাবাদকে একটি পৃথক স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে। কেননা, সে সময় তারা ভাবছিলেন, রাজাকারদের সহায়তায় তারা হায়দ্রাবাদে ক্ষমতা দখল করতে সক্ষম হবেন। হায়দ্রাবাদকে কেন্দ্র করে সারা ভারতে ঘটানো যেতে পারবে কমিউনিস্ট আধিপত্য। কিন্তু তাদের এই অভিপ্রায় বাস্তবায়ন হতে পারেনি। ভারতের সেনাবাহিনী ১৯৪৮ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর হায়দ্রাবাদ আক্রমণ করে এবং দখল করে নেয় ১৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে। এই যুদ্ধে প্রাণ দেন বহু রাজাকার। হায়দ্রাবাদে রাজাকারের সংখ্যা ছিল দুই লাখের কাছাকাছি। হায়দ্রাবাদ রাজ্যের জনসমষ্টির প্রধান ভাষা ছিল তেলেগু। হায়দ্রাবাদের যে অঞ্চলের মানুষ প্রধানত তেলেগু ভাষায় কথা বলেন, তাকে উল্লেখ করা হতো তেলেঙ্গানা বলে। ব্রিটিশ আমলে তেলেগু প্রদেশ বলে কোনো প্রদেশ ছিল না। হায়দ্রাবাদের বাইরে তেলেগুভাষীরা বাস করতেন তদানীন্তন মাদ্রাজ প্রদেশে। ১৯৫৬ সালে মাদ্রাজ প্রদেশের তেলেগুভাষী ও হায়দ্রাবাদের তেলেঙ্গানা অঞ্চলকে একত্র করে গঠন করা হয় অন্ধ্রপ্রদেশ; প্রাচীন দক্ষিণ ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশের নাম অনুসারে, যা শাসন করতেন বিখ্যাত সাতবাহন রাজারা। যারা গড়ে তুলেছিলেন একটা উন্নত সভ্যতা। কিন্তু বর্তমানে তেলেঙ্গানা হতে চাচ্ছে একটা পৃথক প্রদেশ। আবার সেখানে শোনা যাচ্ছে রাজাকারদের উত্তরসূরিদের নেতৃত্বের কথা।
বাংলাদেশে ১৯৭১ সালে রাজাকার বা সহায়ক বাহিনী কারা করেছিলেন, সে সম্বন্ধে আমাদের ধারণা স্বচ্ছ নয়। তবে মনে হয়, রাজাকার শব্দটাই এসেছিল হায়দ্রাবাদের অনুসরণে। এ দেশে রাজাকাররা চেয়েছিলেন পাক বাহিনীর সহযোগিতা করে ভারতীয় বাহিনী প্রতিরোধ করতে। রক্ষা করতে চেয়েছিলেন সাবেক পাকিস্তান রাষ্ট্রের অখ তাকে। ১৯৭১ সালে ১৬ ডিসেম্বর পাক বাহিনী ভারতের সেনাবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। এদের সংখ্যা নাকি ছিল ৯৩ হাজার। কেউ কেউ বলেন ৯০ হাজার। এদের নিয়ে যাওয়া হয় ভারতে। পরে ১৯৭২ সালের ৩ জুলাই হয় ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সিমলা চুক্তি। এই চুক্তি অনুসারে পাক বাহিনীর সবাইকে মুক্তি দেয়া হয়। কাউকেই বিচার করা হয় না যুদ্ধাপরাধী হিসেবে। বাংলাদেশের কোনো প্রতিনিধিকে সিমলা সম্মেলনে ডাকা হয়নি। কারণ, পাক বাহিনী আত্মসমর্পণ করেছিল কেবল ভারতীয় বাহিনীর কাছে। পৃথকভাবে বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনীর কাছে নয়। ১৯৭১-এর যুদ্ধ তাই চিহ্নিত হয় পাক-ভারত যুদ্ধ হিসেবে। এতে বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের কোনো অবদান স্বীকৃতি পেতে পারেনি।
যুদ্ধাপরাধ কথাটা প্রথম বিশেষভাবে শোনা যায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর। যুদ্ধাপরাধকে সাধারণত ভাগ করা হয় তিন ভাগে : ১. শান্তির বিপক্ষে ষড়যন্ত্র (Crimes against peace); ২. প্রথাগত যুদ্ধাপরাধ (Conventional war crimes) ও ৩. মানবতাবিরোধী কার্যকলাপ (Crimes against humanity)। শান্তির বিপক্ষে ষড়যন্ত্রের মধ্যে পড়ে এক দেশ কর্তৃক অপর দেশের বিপক্ষে যুদ্ধের ষড়যন্ত্র। ইন্দিরা গান্ধী ১৯৭১ সালের ২৪ জুলাই ভারতের পার্লামেন্টে বলেন, ভারত বাংলাদেশের পাশে দাঁড়াবে। তার এই ঘোষণাটি ব্যাখ্যা করা যেতে পারে শান্তির বিপক্ষে ষড়যন্ত্র হিসেবে। পাক বাহিনীকে কিভাবে হানাদার বাহিনী বলা যেতে পারে। কারণ, পূর্ব পাকিস্তান ছিল সাবেক পাকিস্তানের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত অংশ। পাকবাহিনী সেখানে ছিল সমগ্র পাকিস্তান বাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় সেনাবাহিনী হিসেবে। জার্মান নাৎসি বাহিনীর সাথে পাকবাহিনীর তুলনা করা যায় না। যদিও বাংলাদেশের বাম রাজনীতিকেরা এ রকম একটা তুলনার কথা টেনে আনতে চাচ্ছেন। প্রথাগত যুদ্ধাপরাধের মধ্যে পড়ে, বন্দী শত্রুর সাথে দুর্ব্যবহার এবং বন্দী অবস্থায় তাদের হত্যা করা। বাংলাদেশে ইপিআর বাহিনীতে অনেক অবাঙালি চাকরি করতেন। যাদের বন্দী করে হত্যা করা হয়েছিল। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রসঙ্গে উঠতে পারত এই অপরাধেরও বিচার করার কথা। মানবতাবিরোধী অপরাধের ক্ষেত্রে আসতে পারত নির্বিচারে নিরস্ত্র অবাঙালি, বিশেষ করে বিহারিদের হত্যার প্রসঙ্গ। এসব কথা বিবেচনায় নিয়ে ভারত সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার না করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিল। এ ব্যাপারে কিছুটা আভাস পাওয়া যায় পিলু মোদি (Piloo Mody) লিখিত Zulfi my friend নামক বইতে। পিলু মোদি ছিলেন জুলফিকার আলী ভুট্টোর একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং ভারতের স্বতন্ত্র পার্টির নেতা। তিনি সিমলা চুক্তির সময় উপস্থিত ছিলেন সিমলা শহরে। আর জুলফিকার আলী ভুট্টোকে প্রদান করেছিলেন শলাপরামর্শ।
আমাদের দেশে এখন রাজাকারদের বিচার করা হচ্ছে। সেটা নিয়ে জাগছে অনেকের মনে প্রশ্ন। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা গোলাম আযমের কাছে চেয়েছিলেন দোয়া। কিন্তু গোলাম আযম এখন রাজাকার হিসেবে অভিযুক্ত হয়ে করছেন হাজতবাস। কী করে হঠাৎ গোলাম আযম রাজাকার হলেন, সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে অনেকেরই মনে। অনেকে বলছেন, জামায়াতে ইসলামী যদি বিএনপির সাথে জোট না বেঁধে ১৯৯৬ সালের মতো আওয়ামী লীগের সাথে জোটবদ্ধ থাকত, তবে রাজাকারদের বিচারের প্রশ্ন উঠতে পারত না। দেশে এখন হচ্ছে জামায়াতের বিচার। ঠিক রাজাকারদের বিচার নয়। শাহবাগ চত্বরের সমাবেশে বলা হচ্ছে, রাজাকারদের ফাঁসি চায়। বলা হচ্ছে, এই জনসমাবেশ স্বতঃস্ফূর্ত। কিন্তু এতে দেখা যাচ্ছে পুলিশ ও র্যাবকে বিশেষভাবে পাহারা দিতে। সমাবেশ ঘটতে পারছে পুলিশ ও র্যাবের ছত্রছায়ায়। একে তাই আর যা-ই বলা যাক, স্বতঃস্ফূর্ত জনসমাবেশ বলা চলে না। সব দলকে দেয়া হচ্ছে না সভা সমাবেশ করার সুযোগ। যদি দেয়া হতো তবে তারাও তাদের সমাবেশে যথেষ্ট জনসমাগম ঘটাতে পারতেন বলেই অনুমান করা চলে। সবাইকে দেয়া হচ্ছে না সমাবেশ করার সমান সুযোগ-সুবিধা। এটাকে আর যা-ই বলা যাক গণতন্ত্রের অনুকূল হিসেবে চিহ্নিত করা চলে না।
‘প্রজন্ম’ শব্দটা হয়ে উঠছে যথেষ্ট গোলমেলে। তরুণ প্রজন্ম বলতে ঠিক কী বুঝতে হবে, আমাদের কাছে তা স্পষ্ট নয়। কারণ, গড়পড়তা ৩০ বছর সময়কে ধরা হয় একটি প্রজন্ম। আজকে যারা তরুণ, অতীতে তারা ছিল শিশু। আর ভবিষ্যতে হয়ে পড়বে অতরুণ। শেষে প্রৌঢ় ও বৃদ্ধ। একটা দেশের জনসংখ্যায় তরুণরাই সব নয়। এর মধ্যে থাকে নানা বয়সের মানুষ। কোনো দেশেই কেবল তরুণ প্রজন্মকে নির্ভর করে দেশ চলে না। নানা প্রজন্মের ওপর নির্ভর করেই চলতে হয় একটি দেশকে। একটি গণতান্ত্রিক দেশের জনমত বলতে বোঝায় নির্বাচকম লীর মতামতকে। কিন্তু শাহবাগ চত্বরে জমেছে নাবালকদের ভিড়। যাদের নেই কোনো ভোটাধিকার। তাদেরকে চিৎকার করতে শোনা যাচ্ছে রাজাকারদের ফাঁসি চাই বলে। এদের এই দাবিকে আর যা-ই বলা যাক, জনমতের অভিব্যাপ্তি বলে ধরা যেতে পারে না।
জনমত হলো অনেক চিন্তাভাবনার ফল। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের থাকে বিভিন্ন নীতি। যাকে নির্ভর করে গড়ে ওঠে জনমত। জনমত আর জনতার অভিমত সমার্থক নয়। সমার্থক নয়, গণতন্ত্র (Democracy) ও জনতাতন্ত্রের (Mobocracy) ধারণা। আমরা বাংলাদেশে কী চাচ্ছি? গণতন্ত্র না জনতার তন্ত্র। বাংলাদেশে গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে জাগছে উৎকণ্ঠা। এ যাবৎ ১৯৭১-এর যুদ্ধ নিয়ে যত বই লেখা হয়েছে তার মধ্যে শর্মিলা বসুর ডেড রেকনিং বইটি যথেষ্ট খ্যাতি পেয়েছে। এই বইতে এক জায়গায় বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালে পাকিস্তান জেল থেকে ছাড়া পেয়ে শেখ মুজিব যান লন্ডনে। সেখান থেকে বিমানে করে বাংলাদেশে ফেরার পথে সহযাত্রীদের তিনি জিজ্ঞাসা করেন, রাজাকার বলতে কী বোঝায়? কারা এদের গঠন করেছিল। শেখ মুজিব দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়ে রাজাকারদের বিচার করার কথা ভাবেননি। কিন্তু তার কন্যা এত দিন পরে বিশেষভাবে ভাবছেন, রাজাকারদের বিচার করে ফাঁসি দেয়ার কথা। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার খুবই ক্ষুব্ধ হয়েছে কাদের মোল্লাকে ফাঁসি না দিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়ার জন্য। কিন্তু বিচার হতে হয় আইনের ভিত্তিতে। বিচারকের কাছে যা সঙ্গত মনে হয়েছে, তারা সেই রায় দিয়েছেন। আইনের ফাঁক ছিল। রাষ্ট্রপক্ষের ছিল না সুপ্রিম কোর্টে আপিল করার সুযোগ। আইনের সংশোধন এনে এখন তাই সেই সুযোগ সৃষ্টি করা হচ্ছে। কিন্তু একটি কথা মনে রাখা দরকার, খুব সহজে আইন বদলালে অথবা ঘনঘন আইন বদলালে আইনের পবিত্রতার প্রতি মানুষ আস্থা হারায়। যেটা বিচারব্যবস্থার জন্য কল্যাণবহ হয় না। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে কী হবে আমরা জানি না।
কাদের মোল্লার সাক্ষীরা যথেষ্ট পরস্পরবিরোধী কথা বলেছেন। এর ফলে যদি তিনি সুপ্রিম কোর্টে ছাড়া পেয়ে যান, তখন শাহবাগ চত্বরে কি একইভাবে জনসমাবেশ ঘটানো হবে? আমরা জানতাম, বিচারাধীন মামলার ব্যাপারে কোনো অভিমত দেয়া চলে না। কিন্তু আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী বলছেন, তার ছুটে যেতে ইচ্ছা হচ্ছে শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে। যেখানে জনতা বলছে, কাদের মোল্লা ও অন্যান্য বিচারাধীন জামায়াত নেতার ফাঁসি চায়। এদের ফাঁসি না দিলে তারা ঘরে ফিরবে না। প্রজন্ম চত্বর নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ভারতের নাগরিক কবীর সুমন সেখানে গান গাইছেন গিটার বাজিয়ে। ক’দিন আগে (১০.০২.২০১৩) ভারতের পররাষ্ট্রসচিব রঞ্জন মাথাইকে ঢাকায় এসে বলতে শোনা গেল, তিনি শাহবাগ মোড়ে জনতার সমাবেশ দেখে উৎফুল্ল বোধ করছেন। শাহবাগ চত্বরের সমাবেশ নিয়ে তাই জনমনে সৃষ্টি হতে পারছে নানা সংশয়।
আমি একজন অতি বৃদ্ধলোক। আমার তারুণ্য বহু দিন আগের ঘটনা। আমার কাছে মনে হচ্ছে তরুণ প্রজন্ম কথাটা হয়ে উঠেছে খুবই বিভ্রান্তিকর। কারণ, আমি টেলিভিশনে দেখতে পাচ্ছি, বয়সের ভারে ন্যুব্জ ব্যক্তিকেও শাহবাগ চত্বরে এসে বিবৃতি প্রদান করতে। এরাও কি হঠাৎ করে হয়ে উঠেছেন বয়স কমিয়ে তরুণ প্রজন্ম। আর চিন্তা করছেন, তরুণদের মতো একইভাবে একই সূত্রে? সেটা আমি করতে পারছি না।
তরুণ সব দলেই আছে। যারা শিবির করছে, রাস্তায় ঢলে পড়ছে পুলিশের গুলি খেয়ে, তারাও কম তরুণ নয়। সব তরুণ একভাবে চিন্তা করছে না। আমার কাছে শিবিরের ছেলেরাও তরুণ প্রজন্মেরই অংশ। তাদেরও আছে বিশেষ স্বপ্ন; বিশেষ আদর্শবাদ। যার জন্য তারাও মৃত্যুভয় উপেক্ষা করে করছে আন্দোলন। আমরা তাদের সাথে একমত না হতে পারি, কিন্তু তাদের আদর্শনিষ্ঠাকে অশ্রদ্ধা করতে পারি না। জাহানারা ইমাম ১৯৭১-এ তার সন্তানকে হারিয়েছেন। তিনি এখন শহীদ জননী হিসেবে সারা দেশে প্রখ্যাত। কিন্তু আমার কাছে সব মায়ের সন্তানই সমান। যারা শিবির করে প্রাণ হারাচ্ছে, তাদের মায়েরাও যে অশ্রুপাত করছেন না তা নয়। আমি কোনো মায়ের কোলই এভাবে খালি হওয়ার পক্ষে নই। আমাদের প্রজন্মের সাথে বর্তমান প্রজন্মের ফারাক অনেক। আমাদের সময়ও ছাত্ররাজনীতি ছিল। কিন্তু তখন ছাত্ররা ছিল অনেক গণতন্ত্রমনা। একদল ছাত্র আর একদল ছাত্রকে চাইত না রাজনৈতিক কারণে খুন করতে যেতে। বর্তমানের মতো মতবিরোধ অতি সহজেই পরিণত হতো না শত্রুতায়।
বর্তমানে ছাত্রদের হাতে যেভাবে বিশ্বজিৎ ও রাব্বির মৃত্যু হলো, সেটা আমাদের প্রজন্মের কাছে ছিল অকল্পনীয়। আমাদের সময় ছাত্ররা মেতে ওঠেনি টেন্ডার ও চাঁদাবাজিতে। ছাত্ররাজনীতি ছিল অনেক ভদ্ররাজনীতি। আর পেছন দিকে তাকিয়ে মনে হয়, আমি যখন তরুণ ছিলাম, তখন রাজনীতি ছিল অনেক গৌরবোজ্জ্বল। এখন যা আর নেই। আমরা এখন প্রগতির কথা অনেক শুনছি। কিন্তু মনে হচ্ছে তরুণ মনে এসেছে অনেক দুর্গতি। যেটার অপনয়ন বাঞ্ছিত।
লেখক : প্রবীণ কলামিস্ট
বিষয়: বিবিধ
২৯৭৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন