জীবনের বিবর্ণ রং

লিখেছেন লিখেছেন রাবেয়া রোশনি ০২ এপ্রিল, ২০১৩, ০৭:১৯:৩৬ সন্ধ্যা



মনের মাঝে কখনো কালো মেঘের ছায়া নেমে আসে কখনও বৃষ্টি নামে আবার কখনও বসন্তের রোদ ঝলমল করে। এ সব প্রতিনিয়ত চলছে । মানুষ যেমন বিচিত্রময় তেমনি মানুষের মনও বিচিত্রময়।

মানুষের জীবনটা রঙ্গিন সপ্নের মতো । রংধনুর মতো আলো ছড়ায় জীবনের প্রতিটি পদে পদে। এই রঙ্গিন জীবনটা কখনও বিবর্ণ হয়ে যায় ; কখনও অসুন্দর হয়ে পড়ে নিজেদের কিছু ভুলের কারণে । অজ্ঞতার কারণে সব কিছু হয়ে যায় এলোমেলো ।

মানুষ প্রকৃতি নির্ভর । তাই প্রকিতির ছবিগুলো নিজেদের মনের ক্যানবাসে ভেসে ওঠে। কখনও তা হাতের তুলিতে রঙ্গিন হয়ে ওঠে ।

এই তুলি দিয়ে ছবি আঁকে অনেকেই । কেউ শখের বসে , কেউ বা অভ্যাসগত। কেউ প্রকৃতির প্রেমে নিজেদেরকে উজাড় করে দেয় ।

তেমনি আমিও ছবি আঁকতাম । এখন আর হয়ে ওঠে না।

এক সময় ছবি আঁকা আমার ভীষণ পছন্দের ছিল । স্কুল জীবনে চিত্র অংকন প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করে অনেক পুরষ্কার পেয়েছি ।

এসব আঁকা আঁকিতে ছিল রাহা খুব ভাল । সে অনেক সুন্দর ছবি আঁকত । প্রতিযোগিতায় ওর সাথে পরিচয় হয় । এর পর থেকে বেড়ে ওঠা। জানতে পারি ও আমার এলাকাতেই থাকে ।

স্কুলে যাওয়া আসার সময় দেখা হত আমাদের । দুজনে ছবি আঁকা নিয়ে কথা বলি । তার ছবিগুলো ছিল মায়ায় ভরা । আবাগ, অনুভূতি সবটাই ছিল ওর ছবির মাঝে । আমি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকি । কি অপরূপ সৌন্দর্যের লিলা , যেন বাস্তব কোনো ঘটনা দেখছি । রঙ্গিন তুলি দ্বারা ফুটিয়ে তুলত কোনো বাস্তব চিত্র। যা আমাকে অনেক মোহিত করত।

ছবি আঁকায় যেমন ও পারদর্শী তেমন ছিল অন্যান্য কাজেও।

রাহা খুব হাসিখুশি প্রাণ চঞ্চল মেয়ে ছিল । সহজে আড্ডা জমিয়ে রাখতে পারত। সবাইকে মাতিয়ে তুলত। ওর এই গুণের কারণে সবাই ওকে অনেক পছন্দ করত। সবার সাথে অল্পতেই মিশে যেত ।

পড়ালেখার ব্যস্ততায় আমাদের দেখা সাক্ষাত কমে যায় । মাঝে মাঝে দেখা হলেও তেমন কথা হত না । কেমন আছিস ? কেমন যাচ্ছে সব কিছু? এর বেশি কিছু না ।

প্রায় এক বছর যাবত ওর সাথে দেখা নেই । ভাবছি হয়ত অন্য কোথাও চলে গেছে । পারিবারিক কারণে অনেক সময় পড়াশুনার স্থান পরিবর্তন হয়। কালের বিবর্তনে আমার অনেক বান্ধুবীকে হারিয়েছি । পড়াশুনার নিমিত্তেই অনেক সময় চলে যেতে হয় অন্যত্র । তাই ওকে নিয়ে এই রকম ভাবাটা স্বাভাবিক ।

না, আমার ধারনা ভুল ! ও তো এখানেই আছে ! তাই তো ! হঠাৎ একদিন ওর সাথে দেখা। রাস্তা দিয়ে কোথাও যাচ্ছে । আমি ও মুখমুখি । কেউ কিছু বলছি না। আমার মনে হলো ও রাহা । কিছুটা সন্দেহ হচ্ছিল। তারপর ও যখন বলল কেমন আছিস রোশনি? তখন নিশ্চিত হলাম।

ওকে দেখে মনে হলো কেমন জানি উদ্ভান্ত। হতাশার চাপ চেহারার মধ্যে। মনে হচ্ছে খুব চিন্তিত। এখন আর আগের মতো উচ্ছ্বাস নেই। চঞ্চলতাও নেই । আজ সেই চিরচেনা মুখের হাসি বিলীন হয়ে গেছে। কেন এই পরিবর্তন? কি হয়েছে তার? কোনো সমস্যা? এই রকম অনেক প্রশ্ন আমার মনে উকি দিচ্ছে ।

- আমি প্রশ্ন করলাম এতদিন কোথায় ছিলি?

কোনো উত্তর নেই । নেই কোনো ভাবাবেগ । একটা দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে বলল, তোর সাথে কিছু কথা আছে। যদি সময় থাকে তাহলে চল কোথাও গিয়ে বসি । দুজন হাঁটতে হাঁটতে পাশে ডিসি হিলে গিয়ে বসি ।

রাহার মনের গহীনে লুকিয়ে থাকা কথা গুলো বলতে থাকে – কলেজে সেকেন্ড ইয়ারে পড়াকালীন পরিচয় হয় সজীবের সাথে । সজীব অনার্স ৩য় বর্ষের ছাত্র ।

এভাবে শুরু হয় রাহার জীবনের নতুন এক অধ্যায় । না বলা কথাগুলো অকপটে শেয়ার করে দুজন দুজন কে । অন্য এক অনুভূতি । মনে হচ্ছে সজিব হলো রাহার সব চেয়ে আপন কেউ। এক সময় তা বাস্তবে পরিণত হলো । সময়ের ব্যবধানে একে অপরের প্রতি ভাল লাগা শুরু হয়। এ কোন মায়ায় জড়িয়ে গেছে রাহা; কখনও ভাবতেও পারে নি । ভাববে-ই বা কেন । জীবনের পরম সুখ, একটু ছায়া, নিরাপদ আশ্রয়, সাপোর্ট সবটাই পাচ্ছে সজিবের কাছে।

সময়ের গতির সাথে পাল্লা দিয়ে তাদের ভালা লাগাও বাড়তে থাকে । আসতে আসতে তা রূপ নেয় ভালবাসায় । ভালবাসার যে টান, আবেগ, উচ্ছ্বাস, অনুভূতি কিছুই তারা মিস করতে চায় নি । হারাতে চায় নি একে অপরকে । আবেগ সব সময় তাদের পিছু নেয় । তাই তো বাস্তবতার কথা না ভেবে আবেগের বসবতি হয়ে এক সময় দুজন পালিয়ে বিয়ে করে ।এইভাবে চলতে থাকে নদীর স্রোতের ন্যায় তাদের জীবন



কিছুদিন পর যোগ হয় ঘটনার ভিন্ন মাত্রা । তাদের মধ্যে দেখা দেয় মন মালিন্য। ঝগড়া তো নিত্য সঙ্গী । কি আর করা । দীর্ঘদিনের ভালবাসা যেন নিমিষেই শেষ। এখন আর জোয়ার নেই । বঙ্গোপসাগরে জোয়ার-ভাটা থাকলেও তাদের ভালবাসায় এখন শুধু ভাটা-ই রয়েছে । রাহার চেহারায় সেই চাপ লক্ষ করা যায় । অসহায় চোখ জোড়া এখন খুঁজে বেড়ায় সেই সুন্দর রঙ্গিন জীবন।

আমাদের সমাজে অসংখ্য রাহা এই ভাবে অকালে ঝরে পড়ছে। যার কোনো ইয়ত্তা নেই।

বিষয়: সাহিত্য

৪১৯৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File