রুবির সাফল্য
লিখেছেন লিখেছেন রাবেয়া রোশনি ১৭ মার্চ, ২০১৩, ১০:০৬:৪২ রাত
রুবির হাজারও কষ্ট আনন্দের অশ্রুতে পরিণত হলো আজ । রাতদিন অতিবাহিত করে এগিয়ে চলেছে জীবন যুদ্ধে রুবি । তবুও থেমে নি তার পথ চলা । আর এই যুদ্ধে রুবিকে সর্বদা সহযোগিতা করেছে সামিরা । তাই সামিরারও আনন্দের কমতি নেই । আছে অনেক উচ্ছ্বাস ও ভাল লাগা । কারণ রুবির এস এস সি পরীক্ষার রেজাল্ট দিয়েছে আজ । যথেষ্ট ভাল রেজাল্ট করেছে সে ।
রুবির চোখে আনন্দ, মুখের এক চিলতে হাসি । সামিরার স্বপ্নের পথে এক ধাপ করে রুবির এগিয়ে চলা । সব কষ্ট আজ নিমিষেই অম্লান হয়ে গেছে রুবির ।
আজ থেকে পাঁচ বছর আগে সামিরার সাথে দেখা হয় রুবির । রুবি তখন মাত্র পঞ্চম শ্রেণি পাস করল । পরিবারের অর্থকষ্ট ছিল প্রকট । তাই পড়াশুনার ইচ্ছা থাকলেও ভর্তি হতে পারছে না রুবি ।
ও একটা কথা বলে রাখা ভাল । রুবির মা রহিমা বেগম কিছুদিন যাবত সামিরাদের বাসায় কাজ করছেন । এই সামান্য আয় দিয়ে সংসার চালান অনেক দায় । তবুও মেয়েকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়িয়েছেন । আর পারছে না । তাই রুবির আম্মা সামিরার আম্মুকে নিজের অপারগতার কথা খুলে বলেন । নেই কোনো ভাবাবেগ; সহজ সরল ভঙ্গিমায় অপকটে বলতে থাকেন ।
রুবিসহ ওরা তিন বোন । কি করব আর ! মেয়েদের বাবা অনেক আগেই চলে গেলেন আমাদের ছেড়ে । তাই এই তিন মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে সব কষ্ট সহ্য করি । বড় মেয়ে রুবি অনেকে মেধাবি তার শিক্ষকরাও একই কথা বলেন । তাছাড়া রুবির পড়ার প্রতি অনেক আগ্রহ রয়েছে ।
তিন মেয়ে নিয়ে টানাপোড়নের সংসার, দুবেলা দুমুঠো ভাতের জন্য সারদিন হন্য হয়ে ঘুরি । প্রতিনিয়ত জীবনের সাথে সংগ্রাম করে যাচ্ছি। শুধু মেয়েদের নিয়ে একটু বেঁচে থাকার তাগিদে । কোথাও একটু ঠাই নেই। সেখানে মেয়েকে পড়ালেখা করানো আমাদের জন্য সাঁঝে না ।
রহিমা বেগমের সব কথা খুব মনোযোগ দিয়ে শুনলেন সামিরার আম্মু। মাঝে মাঝে তার দিকে তাকালেন । ওহ কত কষ্ট হচ্ছে কথা বলতে! তা দেখে সামিরার আম্মুর হৃদয়টা কেঁপে উঠল । সঙ্গে সঙ্গে বললেন আচ্ছা আপা আমি আমার মেয়ের সাথে কথা বলি । তারপর আপনাকে জানাবো । আপনি কোনো চিন্তা করবেন না।
সামিরার আম্মু সামিরাকে সব খুলে বলেন । সামিরা তো বলে উঠল , তাহলে আম্মু সামিরাকে আমাদের বাসায় রেখে দাও। আম্মুও তাই শুনতে চেয়েছে । তাতে আমি অনেক খুশি হয়েছি । তারপর রুবি কে নিয়ে আশা হলো । তাকে দেখে অনেক আপন মনে হলো । আমি নিজেই ওকে নিয়ে স্কুলে ভর্তি করে দিই ।
এরপর থেকে রুবি সকাল বিকাল মায়ের কাজে সহযোগিতা করে । আর রাতে আমার কাছে পড়তে বসে । পড়াতে গিয়ে বুঝতে পারি ও অসম্ভব মেধাবী । শুধু তাই নয় মুখস্থ শক্তি অনেক ভাল । সহজে কোনো কিছু বুঝতে পারে ; পড়াশুনার প্রতি যথেষ্ট মনযোগ রয়েছে । এক কথায় অসাধারণ মেয়ে । হাসি খুশি প্রাণ চঞ্চল থাকে সর্বদা । অল্প কিছুদিনের মধ্যে ও পরিবারের সবার মন কেড়ে নেয় । সবাই তার প্রতি অনেক আন্তরিক । এরপর থেকে রুবির পথ চলা বিরামহীন ভাবে চলতে থাকে...............।
ভাবনার জগতে ছেঁদ পড়ল রুবির কথায় । আপু তোমার জন্য একটা ছোট্ট উপহার আছে । কেন উপহার ? কারণ, আজ এই পর্যায়ে আসার সব অবদান আপু তোমার জন্য।
সামিরা বলল, রুবি এই এগিয়ে আসার পিছনে আমি না ; বরং তুমিই । তোমার ইচ্ছা একাগ্রতা , অধ্যবসায় তোমার এই সফলতা । এছাড়া তোমার মায়ের অবদান রয়েছে অনেক । এর মাঝে কিছু মানুষ শুধু তোমাকে সঠিক পথ দেখিয়ে দিয়েছে । আর আমি সেই দায়িত্ব
পালন করেছি মাত্র ।
কি উপহার? দেখি , আরে অনেক সুন্দর তো ! তুমি এত টাকা পেয়েছ কোথায় ?
জান আপু আমি অনেক দিন ধরে টাকা জমিয়েছি । আমার পছন্দের মানুষকে কিছু জিনিস দেওয়ার জন্য । তাই এই বইগুলো ক্রয় করলাম।
আচ্ছা ঠিক আছে আমি তোমার উপহার সানন্দে গ্রহণ করলাম । তবে আমি কোনো বিনিময় নেওয়ার জন্য পড়াই নি । কারণ আমি চাই জ্ঞানের আলোয় ভরে উঠুক তোমার জীবন । আর সেই আলো ছড়িয়ে দিবে সবার মাঝে । যাদের কাছে এখনো শিক্ষার আলো পোঁছায় নি ; এমন গরিব মানুষগুলোর মাঝে সবার আগে তুমি ছড়াবে আলো ।
দোয়া করো আপু তোমার সব চাওয়া গুলো যেন পূরণ করতে পারি । এই প্রত্যাশা আগামির জন্য। আর তুমি পাশে থাকলে অবশ্যই পারব । ইন শা আল্লাহ !!
বিষয়: বিবিধ
১৪৩২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন