আমাদের মিডিয়া ও আমরা

লিখেছেন লিখেছেন সাদা পায়রা ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০৮:২৪:০৪ রাত

মিডিয়া একটি শক্তি শালী যোগাযোগের মাধ্যম এই জিনিসটা হয় তো আমরা সবাই জানি ,

মাধ্যম (ইংরেজি: Media) বা মিডিয়া পরিভাষাটি দিয়ে যোগাযোগের সমস্ত ধরনের পন্থাকে বোঝানো হয়, যেগুলির সাহায্যে কোন বার্তার স্থানান্তর সম্ভব। এগুলি প্রাকৃতিক বা কৃত্রিম হতে পারে।

প্রচলিত ভাষায় মাধ্যম বা মিডিয়া বলতে সাধারণত গণমাধ্যম (ইংরেজি Mass media) বোঝানো হয়, যার সাহায্যে দ্রুত বিপুলসংখ্যক জনগণের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করা যায়।

বর্তমান যুগে প্রধান প্রধান মাধ্যমগুলি হল:

• পোস্টার বা বিজ্ঞাপন, যাতে পেশাজীবী লেখকেরা বিজ্ঞাপন লিখনের নানা কলাকৌশল খাটান।

• প্রকাশনা বা মুদ্রণ শিল্প, যাতে পেশাজীবী কর্মীরা সাংবাদিকতার বিভিন্ন কৌশল কাজে লাগান।

• বেতার, শব্দ-ভিত্তিক মাধ্যম, যেখানে বেতার সাংবাদিকেরা কাজ করেন।

• টেলিভিশন, যেখানে চলন্ত ছবি ও শব্দের মাধ্যমে বার্তা স্থানান্তর করা হয়।

• ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব, যা ইন্টারনেট-কে কাজে লাগিয়ে পৃথিবীর যেকোন প্রান্তে বার্তা পৌঁছে দিতে পারে।

• চলচ্চিত্র

• সঙ্গীত

আমরা সাধারণত মিডিয়া বলতে প্রিন্ট মিডিয়া,ইলেকট্রনিক্স মিডিয়া, ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব, বা ইন্টারনেট কে জানি।আজ আমাদের দেশে অনেক গুলো প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক্স মিডিয়া আছে । মিডিয়ার দিক থেকে আমরা আজ অনেক পরিপূর্ণ।

কিন্তু আজ আমাদের দেশের মিডিয়া গুলুতে শুরু হয়েছে তথ্য সন্ত্রাস বা মিডিয়া সন্ত্রাস । মিডিয়া বা তথ্য সন্ত্রাস বাংলাদেশে বেশ আলোচিত। বেশীরভাগ মিডিয়া এই কলম সন্ত্রাসের সাথে জড়িত থাকলেও হাতে নাতে ধরা পড়ে খুব কম। মিডিয়ার তথ্য সন্ত্রাস বা মিডিয়া সন্ত্রাস ক্যান্সার এর মত আজ আমাদের সমগ্র জাতিকে গ্রাস করছে।গণমাধ্যম ছাড়া আমাদের জীবন অসম্ভব অর্থাৎ বলা চলে এটি আমাদের জীবনকে অনেকখানি নিয়ন্ত্রণ করছে। গণমাধ্যম যেমন নিয়ন্ত্রণ করছে গণমানুষের জীবন যাপন তেমনি গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করে এর মালিক। বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলোর জন্য এই কথাটি আরো বেশি প্রযোজ্য। এমনকি সরকারি টেলিভিশন তো বটেই বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলোও আজ নিয়ন্ত্রিত হয় মালিকের অদৃশ্য হাতের ছোঁয়ায়। এসব জায়গায় এমন কোন সংবাদ বা অনুষ্ঠান প্রচার করা হয় না যা তার মালিকের বিপক্ষে যায়। এমনকি সাংবাদিকদেরও কাজ করতে হয় মালিকের চোখের ইশারায় যা রুদ্ধ করে দেয় সাংবাদিকদের স্বাধীনতার পথ অন্যকথায় তা হরণ করে গণমানুষের তথ্য অধিকার। আমাদের দেশে মিডিয়ার মালিকানা পূর্বে ছিল ব্যক্তি মালিকানায় তবে বর্তমানে এই ধারার অনেক পরিবর্তন এসেছে। বর্তমানে বেশিরভাগ মিডিয়া অংশীদারী মালিকানা বা যৌথ মালিকানায় পরিচালিত হচ্ছে। এর ফলে তাদের মধ্য থেকেই হচ্ছে সম্পাদক, চেয়ারম্যান, বা এমডি। ফলে আগে তাদের কতৃত্ব ছিল তার চেয়ে এখন আরো বেড়ে গেছে, সেই সাথে বেড়ে গেছে ব্যবসায়িক সূলভ মনোভাব। ফলে দিন দিন তারা হয়ে পড়ছে স্বার্থবাদী আর জনবিচ্ছন্ন একটি মাধ্যমে । তাদের মধ্যে থাকছে না কোন দায়িত্ববোধ এতে সাধারণ জনগন সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

বাংলাদেশের বেসরকারি টেলিভিশন ও তার মালিকানা:

টেলিভিশনের যাত্রা শুরুর সময়টি খুব বেশি দিনের নয়। ১৯২৬ সালে জন বেয়ার্ডের টেলিভিশন আবিষ্কারের পরে ১৯৩০ সালে ন্যাশনাল ব্রডকাস্টিং করপোরেশন এবং বৃটিশ ব্রডকাস্টিং করপোরেশন যথাক্রমে নিউইয়র্ক এবং লন্ডনে টিভি স্টেশন স্থাপনের মধ্য দিয়ে টেলিভিশনের পথচলা শুরু হয়। ১৯৩৬ সালের নভেম্বর মাসে বিবিসি আলেকজান্দ্রা প্রসাদ থেকে সর্বসাধারণের জন্য সম্প্রচার শুরু করে। এটিই ছিল বিশ্বের প্রথম সার্থক টেলিভিশন স¤প্রচার।বাংলাদেশে প্রথম টেলিভিশন স¤প্রচার শুরু হয় ১৯৬৪ সালের ডিসেম্বরে।

সত্যিকারের সাংবাদিকদের হাত থেকে বাংলাদেশে ব্যাবসায়ী / শিল্পপতিদের হাতে সর্বোপরি কর্পোরেট হাউজগুলির নিয়ন্ত্রণে মেইনস্ট্রিম মিডিয়ার নিয়ন্ত্রন কিভাবে চলে গেছে বা যাচ্ছে নিচে তার কিছু উদাহরন দেয়া হলো। দু-একটি ব্যাতিক্রমও এখানে আছে। তবে কতদিন থাকবে তাই এখন দেখার বিষয়। তাই স্বাভাবিকভাবে শিল্পপতি/ব্যাবসায়ীদের ব্যাবসায়িক স্বার্থই যে অন্য যেকোন কিছুর চাইতে বেশী গুরুত্ব রাখবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। পাঠক / শ্রোতা / দর্শক অথবা দেশের স্বার্থ এখানে গুরুত্বপূর্ণ নয়।

পত্রিকার সম্পাদক বা টিভির বার্তা প্রধান এর সদিচ্ছাও মূখ্য নয় বরং ফাইন্যান্সার এর ইচ্ছাই মূখ্য। যারা এখনও কোন মিডিয়ার নিয়ন্ত্রণ নিতে পারেন নি তাদের চেষ্টা হলো একটা নিজের মিডিয়া প্রতিষ্ঠা । আর তা না হলে পুরোনো মিডিয়াগুলির মাঝ থেকে যেকোন একটির নিয়ন্ত্রণ নেয়া। আর একারনেই প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন নাটক পর্দার আড়ালে বা সামনে ঘটে চলেছে ।

বর্তমান অবস্থার কিছু নমুনা নিচে দেয়া হলো :

বসুন্ধরা গ্রুপ: আহমেদ আকবর সোবহান

দৈনিক কালের কন্ঠ

দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন

সময় টিভি

The Daily Sun

banglanews24.com


ট্রান্সকম গ্রুপ:
লতিফুর রহমান

দৈনিক প্রথম আলো

The Daily Star

ABC Radio


হা-মীম গ্রুপ:
এ.কে.আজাদ

দৈনিক সমকাল

Chennel24


র্যাংগস গ্রুপ:
রউফ চৌধুরী

দৈনিক সকালের খবর


ইউনিক গ্রুপ:
নুর আলী। আরও আছে পিএইচপি গ্রুপ

দৈনিক আমাদের সময়

(এই পত্রিকাটির মালিকানা নিয়ে মামলা জটিলতা চলছে, সম্ভবত নাইমুল ইসলাম খানের নিয়ন্ত্রনে এখন এই পত্রিকাটি)


বেক্সিমকো গ্রুপ:
সালমান এফ. রহমান

The Daily Independent

Independent TV

bdnews24.com

দৈনিক মুক্তকন্ঠ (অধুনালুপ্ত)


গ্লোব-জনকন্ঠ গ্রুপ:
আতিকুল্লাহ খান মাসুদ

দৈনিক জনকন্ঠ


ডেসটিনি গ্রুপ:


দৈনিক ডেসটিনি

দৈনিক অপরাধকন্ঠ

বৈশাখী টিভি


এইসআরসি গ্রুপ:
সাইদ হোসেন চৌধুরী

দৈনিক যায়যায়দিন


কর্ণফুলী গ্রুপ:
সাবের হোসনে চৌধুরী

দৈনিক ভোরের কাগজ

দৈনিক দিনের শেষে

Desh TV


স্কয়ার গ্রুপ:
স্যামসন এইচ. চৌধুরী

মাছরাঙ্গা টিভি

(একটি দৈনিক পত্রিকার কথাও ইদানিং শোনা যাচ্ছে)


বেঙ্গল গ্রুপ:


RTV


দিগন্ত মিডিয়া :
মীর কাশেম আলী

দিগন্ত টিভি

দৈনিক নয়াদিগন্ত


এটিএন গ্রুপ:
মাহফুজুর রহমান

এটিএন বাংলা

এটিএন নিউজ

বিজয় টিভি (চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র মহিউদ্দিনের নামে ইস্যুকৃত লাইসেন্স বর্তমানে এটিএন এর সহায়তায় সম্প্রচারের অপেক্ষায় )

এটিএন স্পোর্টস (নতুন এই চ্যানেল এর কথা ইদানিং শোনা যাচ্ছে)


জেমকন গ্রুপ:
কাজী শাহেদ আহমেদ

দৈনিক আজকের কাগজ (অধুনালুপ্ত)


যমুনা গ্রুপ:
/ নুরুল ইসলাম বাবুল

দৈনিক যুগান্তর


ইত্তেফাক গ্রুপ:
আনোয়ার হোসেন মন্জু

দৈনিক ইত্তেফাক

সাপ্তাহিক রোববার

The New Nation


নিটোল গ্রুপ:
আবুল মাতলুব আহমেদ

দৈনিক জাগরন (বাজারে আসার পথে)


গাজী গ্রুপ:
গাজী গোলাম দস্তগীর

GTV


কামাল আহমেদ মজুমদার

মোহনা টিভি


মোসাদ্দেক আলী ফালু

NTV

ইমপ্রেস গ্রুপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক : ফরিদুর রেজা সাগর

Chennel-আই

আবদুস সালাম

একুশে টিভি

আহমেদুল কবীর

দৈনিক সংবাদ

এনায়েতুর রহমান বাপ্পী

Chennel 9

Chairman: Syeda Mahbuba Akhter wife of retired Major General Syed Shafayetul Islam, son of former acting president of wartime provisional government Syed Nazrul Islam. Also the younger brother of LGRD minister and Awami League general secretary Syed Ashraful Islam

মোজাম্মেল বাবু

Chennel ৭১

S.A. Channel :

S.A. Channel (Pvt.) Ltd is a sister concern of S.A. Paribahan,

Salauddin Ahmed

এ.এস.এম. বাহাউদ্দিন

দৈনিক ইনকিলাব

সাপ্তাহিক পূণিঁমা

শেখ ফজলুল করিম সেলিম

দৈনিক বাংলার বাণী (অধুনালুপ্ত)

ফেরদৌস আহমেদ কোরেশী

দৈনিক দেশবাংলা

কমান্ডার সোপ : মোহাম্মদ জাকারিয়া খান

দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকা

মতিউর রহমান চৌধুরী

দৈনিক মানবজমিন

মাহমুদুর রহমান

দৈনিক আমার দেশ

সুপারস্টার গ্রুপ

barta24.net

টেলিলিংক গ্রুপ

দৈনিক গনকন্ঠ

বাংলাদেশে এখন বেশীর ভাগ কাগজ ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার মালিক বড় বড় ব্যবসায়ী গ্রুপ গুলো। এসব গ্রুপ তৈরী হয়েছে জনগণের সম্পদ লুন্ঠন করে। লুন্ঠিত সম্পদ রক্ষা করার জন্যে তাঁরাই মিডিয়ার মালিক হয়েছেন। ৮৩ সালে যে উদ্যোক্তা ব্যান্ক প্রতিস্ঠা করতে দশ লাখ টাকা জোগাড় করতে পরতেন না বা পারেননি সে উদ্যোক্তাই এখন একাই এক হাজার কোটি টাকা দিয়ে ব্যান্ক প্রতিস্ঠা করতে চান। এসব কর্পোরেট হাউজই এখন সরকার ও গণতন্ত্রকে নিয়ন্ত্রন করতে চায়। সাংবাদিকরা অনায়াসেই এসব হাউজের কাগজ ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াতে চাকুরী করে যাচ্ছেন। সম্পাদকদের বেতন বাড়ি গাড়ি সহ লাখ দেশেকে উঠে গেছে। কিছু কিছু সম্পাদক নিজেরাও কাগজের শেয়ার পাচ্ছেন। কবি সাহিত্যিকরাও এসব কাগজে আনন্দে চাকুরী করছেন। এক কাগজ অন্য কাগজের বিরুদ্ধে লিখে চলেছে। মালিক যা বলছে সাংবাদিকরা তাই লিখে যাচ্ছেন। আমি এমন কথা বলছিনা যে, চাকুরী করে সাংবাদিকরা মন্দ কাজ করছেন। তাঁরা শ্রমজীবী মানুষ জীবিকার জন্যে কারখানার মালিকের নির্দেশেই কাজ করবেন। নিয়মিত বেশী বেশী মুজুরী পাওয়াই সাংবাদিকদের লক্ষ্য। দেশে এখন বহু কাগজ আছে যারা অনেক সময় বুঝে অথবা না বুঝে বাংলাদেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে কথা বলে। কিসে বাংলাদেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণ হতে পারে সে ব্যাপারেও সংবাদপত্র গুলোও একমত হতে পারেনা।

একজন সাংবাদিক যা মুখে আসে তা লেখতে পারেন না কারণ তিনি জাতির বিবেক । আর সাংবাদিকতায় নিয়ম বা ইথিক্স বলতে কিছু আছে । কিন্তু এ দেশের সাংবাদিকদের নিজস্ব বিবেক বা বিচার বোধ বলতে কিছু নেই । ওদের মগজটা টাকায় বিক্রি হওয়া ।

“এবার মিডিয়ার মালিক হতে যাচ্ছেন সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন। জানা গেছে, ইতোমধ্যে তার ঘনিষ্ঠ এক আত্মীয় কিনে নিয়েছেন একটি ইংরেজি দৈনিকের ডিকারেশন । এর অর্থায়নও তিনি করেছেন। এখন আবুল হোসেন একটি স্যাটেলাইট চ্যানেল ও একটি রেডিও লাইসেন্স পাওয়ার জন্য জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। “

সুত্র http://www.dailynayadiganta.com/new/?p=110556

তাহলে বলুন এই দেশের মানুষ সত্য কথা টি জানবে কি করে । যারা আজ নিজ নিজ জায়গায়ে বিতর্কিত তারা কি করে এই দেশের মানুষ কে আসল তথ্য জানতে দিবে । আজ আমরা সকলে তাদের তথ্য সন্ত্রাস বা মিডিয়া সন্ত্রাসে আক্রান্ত ।

লেখায় সাহায্য নেওয়া হয়েছে:

http://www.somewhereinblog.net/blog/pressclub/29139473

http://www.dailynayadiganta.com/new/?p=110556

http://en.wikipedia.org/wiki/Channel_9_(Bangladesh)

বিষয়: বিবিধ

২৬০৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File