রক্ত দিন জীবন বাঁচান, রক্ত দেওয়ার সাথে সাথে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জানুন ।

লিখেছেন লিখেছেন সাদা পায়রা ০২ মে, ২০১৩, ০৩:৪৬:১১ রাত



কোন প্রাণীর রক্ত সাদা ? এই প্রশ্ন টা হয়ত ছেলে বুড়ো সবাই জানি । টিকটিকি, আরশোলার রক্ত সাদা হয়। হিমোগ্লোবিন নামক রঞ্জক পদার্থের জন্যে রক্ত লাল হয়। হিমোগ্লোবিন না থাকলে রক্ত সাদা হয়। মানুষের শরীরে হিমোগ্লোবিন নামক রঞ্জক পদার্থ আছে বলে মানুষের রক্তের রং লাল হয়। ধনী গরীব ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার রক্তের রং ই এক, লাল রং । এর মধ্যে নেই কোন কালারের বিভেদ। শুধু একটু পার্থক্য আছে রক্ত গ্রুপ বা (ব্লাড গ্রুপ বা ব্লাড টাইপ) । রক্ত গ্রুপ হল কার রক্ত কাকে দান করা যাবে তার উপর নির্ভর করে করা রক্তের প্রকারভেদ। এটি আসলে নির্ভর করে রক্ত কোষগুলির কোষপর্দায় উপস্থিত অ্যান্টিজেনগুলির ধরণের উপর। মানবদেহে রক্ত অপরিহার্য। দেহের কোষে কোষে অক্সিজেন ও পুষ্টি উপাদান পৌঁছে দেওয়া, কার্বন ডাই-অক্সাইড এবং অন্যান্য বর্জ্য ফিরিয়ে আনা, হরমোন, লবণ ও ভিটামিন পরিবহন, রোগ প্রতিরোধ, এমনকি দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ—সবকিছুতেই রক্তের রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।এই সবের কোন একটি কাজের ঘাটতি হলে, কোন একটির অভাব হলে অথবা রক্তের ঘাটতি হলেই প্রয়োজন হয় অন্যের রক্ত। অন্যের রক্ত শিরার মাধ্যমে রোগীর দেহে প্রবেশ করিয়ে তথা রক্ত পরি সঞ্চালন করে রুগীর দেহে রক্তের স্বাভাবিক প্রবাহ ঠিক রাখা হয় । তাছাড়া দুর্ঘটনা, রক্তবমি, পায়খানার সঙ্গে রক্তপাত, প্রসবকালীন রক্তক্ষরণ ইত্যাদির সময় ও প্রয়োজন হয় রক্তের । শল্যচিকিৎ সার সময়ও সম্পূর্ণ রক্তের প্রয়োজন হয়।



এক ব্যাগ রক্ত আবারও ফিরিয়ে দিতে পারে একজন মৃত্যুপথযাত্রীকে এই সুন্দর ধরণিতে। সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ ৪ মাসের বিরতিতে নিয়মিত রক্ত দিতে পারেন।রক্ত দেওয়া যেমন মহৎ কাজ তেমন সওয়াবেরও কাজ । পবিত্র কোরআনের সূরা মায়েদার ৩২ নং আয়াতে আছে, ‘একজন মানুষের জীবন বাঁচানো সমগ্র মানব জাতির জীবন বাঁচানোর মতো মহান কাজ।’ রক্ত দানে সওয়াবের সাথে সাথে আপনার শরীরের জন্য কত গুলো উপকারী কাজ ও সেরে ফেলছেন । রক্তদান করার সঙ্গে সঙ্গে আপনার শরীরের মধ্যে অবস্থিত ‘বোন ম্যারো’ নতুন কণিকা তৈরির জন্য উদ্দীপ্ত হয়। রক্তদানের ২ সপ্তাহের মধ্যে নতুন রক্তকণিকা জন্ম হয়ে এই ঘাটতি পূরণ করে। আর বছরে ৩ বার রক্ত দানকারীর শরীরে লোহিত কণিকাগুলোর প্রাণবন্তটা বাড়িয়ে দেয়। নিয়মিত রক্ত দানকারীর হৃদরোগ ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি অনেক অংশে কমে যায় । নিয়মিত রক্তদানের মাধ্যমে আপনি জেনে যাচ্ছেন বিনা খরচে আপনার শরীরে বড় কোন ধরনের রোগ আছে কিনা। যেমন : হেপাটাইটিস-বি, হেপাটাইটিস-সি, সিফিলিস, এইচআইভি (এইডস) ইত্যাদি।সাথে মানসিক আত্মতৃপ্তি তো আছেই।



জীবনরক্ষার অন্যতম উপায় এই রক্ত পরিসঞ্চালন আবার কখনো তৈরি করতে পারে জটিলতা।তাই মনে রাখা প্রয়োজন, রক্তের অভাব ও অনিরাপদ রক্ত দুটিই জীবনের জন্য সমান হুমকি। তাই রক্তের বিকল্প শুধু রক্ত নয়, বরং ‘নিরাপদ রক্ত’ হওয়া চাই ।

রক্ত দিতে চাইলে রক্ত দাতাকে অবশ্যই নিচের তথ্যগুলো জানতে হবে:

১। বয়স ১৮ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে হতে হবে ।

২। যেকোনো সুস্থ, সাবালক ব্যক্তি রক্ত দান করতে পারেন। তবে ওজন হতে হবে কমপক্ষে ৫০ কেজি বা ১১০ পাউন্ড।

৩। রক্ত দাতার রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ, পালস ও শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকতে হবে

৪। শ্বাস-প্রশ্বাস-জনিত রোগ, চর্মরোগ, , রক্ত বাহিত রোগের বাহক, এছাড়াও, হৃদরোগ, ক্যান্সার, রক্তক্ষরণ জনিত সমস্যা, ডায়াবেটিস, হেপাটাইটিস-বি, এইডস, যক্ষ্মা, সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত রোগীরা অন্যদের রক্ত দিতে পারবেন না।

৫। গর্ভাবস্থায় রক্ত দান করা যাবে না।

৬। রক্ত দেবার ২৪ ঘণ্টা পূর্বে এলকোহল পান করলে রক্ত দান করা যাবে না। পান করার ২৪ ঘণ্টা পর রক্ত দিতে পারেন।তবে এলকোহল পানকারী ব্যক্তির কাছ থেকে রক্ত না নেওয়াই ভাল ।

৭। এন্টিবায়োটিক ওষুধ খাবার অন্তত ৭ দিন পর, সম্পূর্ণ সুস্থ হলে তারপর রক্ত দান করা যাবে।



রক্ত দেওয়ার আগে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে যা আমার বাস্তব অবিজ্ঞতা ও বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত ।

১। আগের রাতে ভাল ভাবে ঘুমাতে হবে। ঘুম ভাল না হলে রক্ত দান থেকে বিরত থাকুন ।

২। সকালে ভাল ভাবে নাস্তা করুন।রক্ত দানের কয়েক ঘণ্টা পূর্বে নাস্তার পর্ব শেষ করুন । যখনি রক্ত দিবেন ভরা পেটে রক্ত দিবেন। ভরাপেটে খাওয়ার ৩০ থেকে ৬০ মিনিট পরে রক্ত দেয়া ভালো। ক্যাফেইন যুক্ত পানীয় ( চা , কফি) খাবেন না। বেশী চর্বিযুক্ত খাবার খাবেন না।

৩। রক্ত দানের পূর্বে পর্যাপ্ত পানি পান করুন।

৪। ডিলে ডালা হাল্কা সুতির পোশাক পড়ুন ।



রক্ত দানের পর রক্ত দাতাকে নিম্নোক্ত বিষয় গুলো পালন করা উচিত।

১। রক্ত দানের পর পর্যাপ্ত তরল পান করুন অন্তত ৪ গ্লাস স্যালাইন, ফলের রস ইত্যাদি।

২। রক্তদানের পর ২০-৩০ মিনিট বিশ্রাম নিতে হবে এবং পরবর্তী চার ঘণ্টা পর প্রচুর পানীয় গ্রহণ করতে হবে। কমপক্ষে ৫ ঘণ্টা ধূমপান থেকে বিরত থাকা উচিত।

৩। রক্ত দেওয়ার পর মাথা ঘুরলে শুয়ে পড়ুন, এবং পা মাথার চেয়ে উঁচুতে রাখুন ( পায়ের নীচে একটি বালিশ দিন)।

৪। রক্তদানের পরপরই শ্রমসাধ্য বা ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করা থেকে বিরত থাকা উচিত।

৫। প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন ।

রক্তদান খুবই স্বাভাবিক বিষয়। অনেকে রক্ত দেওয়ার আগে ও পরে ভীষণ নার্ভাস হয়ে পড়েন। এটা মোটেও ঠিক নয়। বরং মনে রাখা উচিত, আপনার দেওয়া রক্তের মাধ্যমেই বেঁচে উঠছে কোন মুমূর্ষু প্রাণ।তাই নিজে নিয়মিত রক্ত দান করুন এবং সবাইকে রক্ত দানে উদ্বুদ্ধ করুন। রক্ত যে কারোরই যেকোনো সময় প্রয়োজন হতে পারে—এ কথা মনে রেখে আমরা যদি এখনই প্রস্তুতি নিয়ে রাখি, তবে রক্ত পরি সঞ্চালনের সমস্যা, রক্তের প্রাপ্যতা সঙ্কট থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

বিঃ দ্রঃ আমি কোন ডাক্তার না কিন্তু এই পোস্ট টি লিখতে অনেক গুলো ইংরেজি ও বাংলা অনলাইন পোস্ট এর সহায়তা নিতে হয়েছে। এই পোস্ট টি লিখার কারণ।গত দুই দিন পূর্বে আমি একজন কে রক্ত দেই । রক্ত দেওয়ার কিছুক্ষণ পর আমি কিছু সময়ের জন্য সেন্স লেস হয়ে যাই। সেন্স লেস হওয়ার জন্য কিছু কারণ ছিল । রক্ত দেওয়ার আগের রাত ২-৩ ঘণ্টা ঘুমিয়েছি। সকালের নাস্তা খাওয়ার ১০ মি. পর রক্ত দেই। এবং বিশ্রামের পরিমাণ টা ছিল খুবি কম । তা ছাড়া প্রচণ্ড পরিমাণ গরম পরছিল। রক্ত দেওয়াটাও আমার প্রথম ছিল না। এর পূর্বেও কয়েক বার রক্ত দেই। কিন্তু এমন হয় নি । তাই সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষে এই পোস্ট টি দিচ্ছি। আমার মত কেও যেন এই রকম পরিস্থিতির শিকার না হয় । সবাই যেন সুস্থ ভাবে রক্ত দিয়ে মুমূর্ষু রুগীর জীবন বাঁচায় ।

বিষয়: বিবিধ

৪৭৮৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File