বিয়ে,পাত্রী দেখা ও বিয়ের বিড়ম্বনা ।

লিখেছেন লিখেছেন সাদা পায়রা ১৯ এপ্রিল, ২০১৩, ০৩:১৪:৫৪ রাত



কথায় আছে, জন্ম-মৃত্যু আর বিয়ে এই সব নাকি একেবারে ওপর থেকে নির্ধারিত। তাই বলে হাত পা গুটিয়ে বসে থাকবেন তা হলে বিয়ে আপনাকে করতে হবে না । বিয়ে নামক দিল্লি কা লাড্ডু আপনার কপালে ঝুট-বেনা । আপনি যদি আপনার জীবনকে পরিপূর্ণ করতে চান, আপনি যদি আপনার জীবনটা অন্য কারো সাথে ভাগাভাগি করতে চান তা হলে বিয়ে নামক লাড্ডু আপনাকে খেতেই হবে। দিল্লির লাড্ডু যত সহজে হাতের কাছে পাওয়া যায় বিয়ের জন্য উপযুক্ত পাত্র ও পাত্রী অত সহজে পাওয়া যায় না। বিয়ে হল দ্বীনের অর্ধেক। এটি জীবনে নেয়া সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলোর একটা। তাই সম্ভাব্য জীবনসঙ্গীর ব্যাপারে, তার আচার-আচরণ সম্পর্কে, দ্বীনের ব্যাপারে তার অবস্থান, তার চরিত্র সম্পর্কে যতটুকু সম্ভব খোঁজ নেয়া ভালো। আর তার স্বভাব, ব্যবহারের সাথে অপরজনের মিলবে কিনা, এটা নিয়ে চিন্তাভাবনার প্রয়োজন আছে।

জীবনসঙ্গী পছন্দ করার আগে একটা কথা মাথায় রাখা প্রয়োজন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:

“চারটি বিষয়কে সামনে রেখে মেয়েদেরকে বিয়ে করা যেতে পারে: তার ধন সম্পদ, তার বংশমর্যাদা, তার রূপ-সৌন্দর্য ও তার ধর্মপরায়নতা। এক্ষেত্রে ধর্মপরায়ন স্ত্রী লাভে বিজয়ী হও, তোমার হাত কল্যাণে ভরে যাবে।” [বুখারী ও মুসলিম] - [৫]



তা ছাড়া বিয়ের জন্য বয়স ও একটা গুরুত্ব পূর্ণ । কেমন বয়সের ছেলে ও মেয়েকে বিয়ে করা উচিৎ তাও একটা গুরুত্ব পূর্ণ বিষয় । আমার মতে ২৫-৩০ এর মধ্যে ছেলেদের আর ২০ থেকে ২৫ এর মধ্যে মেয়ে দের বিয়ে করে ফেলা উচিত। আর স্ত্রীর সাথে বয়সের গ্যাপ যতই কম হয়, তত ভালো, তত বেশী বুঝাপড়া হবে আপনাদের। ভালোভাবে সংসার করার জন্য মেন্টাল বয়সটা কাছাকাছি হওয়া অনেক টা জরুরী।

আপনি সারাটি জীবন আপনার গুরত্ত পূর্ণ সময় কে বিক্রি করে টাকা ও ক্যারিয়ারের পিছনে ঘুরলেন ,আপনি টাকা ও পেলেন ক্যারিয়ার ও পেলেন , কিন্তু ওই টাকা ও ক্যারিয়ার বিক্রি করে আপনি সময় কে কিনতে পারবেন না। কেন বললাম এই কথা টা? এই কথা টা বলার একটা কারণ আছে। আমাদের সমাজে এখন একটা অসুস্থ প্রচলন চলছে বিয়ে করতে হলে ছেলে ও মেয়ে কে প্রতিষ্ঠিত হতে হবে। নিজের পায়ে নিজেকে দাড়াতে হবে ।

দেরীতে বিয়ে করার এক অসুস্থ কালচার চলছে আমাদের সমাজে। একটা ছেলে অনার্স মাস্টার্স শেষ করে একটা ভাল চাকরি পেতে পেতে বয়স ৩০ এর কোঠা পেরিয়ে যাচ্ছে। তার উপর আছে হাতে কিছু নগদ টাকা করি রেখে তার পর বিয়ের জন্য বলার ঝামেলা। পাত্রী খোঁজার ঝুট ঝামেলার কথা নাই বললাম। এই ভাবে করতে করতে বয়স কখন যে ৩৫-৩৭ এ ঠেকে তা সে নিজেও জানে না। এবার বাচ্চা নেওয়ার পালা তাও ৪০ গিয়ে ঠেকে!!! এবার আপনাদের কাছে প্রশ্ন ??? ৪০ এ আপনার বাচ্চা হলে ২০ বৎসর পর আপনার বয়স ৬০ তখন আপনার প্রথম বাচ্চার বয়স হবে ২০। সে হয় তো বা অনার্স ১ম বর্ষে অথবা ২য় বর্ষে থাকবে। আর আপনার তখন আরাম আয়েশ করার ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও আপনাকে জীবিকার তাগিদে হন্নে হয়ে মাথার ঘাম পায়ে পেলতে হবে। কারণ তখন ও পুরো পরিবার আপনার মুখের দিকে চেয়ে থাকবে।

আরও একটা কথা না বললেই নয় বাবা-মাও বিয়ের বিষয়টা কে গুরুত্বের সাথে নেন না। তারাও ভাবেন আগে ছেলে প্রতিষ্ঠিত হউক তার পরে বিয়ে, তা ছাড়াও ফ্যামিলিকে কিছু দিতে হবে এই রকম অদ্ভুত চিন্তা ভাবনাও রয়ে যায় ।



আমাদের আজকের সমাজের একটি দু:খজনক বাস্তবতা হলোঃ বিয়ে মানি ঝাকঝমক কোন অনুষ্ঠান। লাখ লাখ টাকার খরচের বাজেট । এই লাখ লাখ টাকার জোগান দিতে লক্ষ লক্ষ যুবক আজ বিবাহের নাম নিতেও ভয় পায়। এভাবে অনৈসলামিক আর অপসাংস্কৃতিক কালচার আমাদের যুব সমাজকে বিবাহের ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করছে। মেয়ে ও ছেলের ফ্যামিলির একটু দায়িত্বশীল ভূমিকায় অনেক কম খরচে বিয়ের কার্য সম্পাদন করা যায়।



এবার আশি মুল আলোচনায়,

“পাত্রী দেখা ও বিয়ের বিড়ম্বনা”-- আজ থেকে ৩ বৎসর আগে আমার কাজিনের জন্য পাত্রী দেখতে উঠে পরে লেগেছে আমার সকল আত্মীয় স্বজন । ছেলে সফটওয়্যার প্রকৌশলী, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লেখা পরা করেছে, তা ছাড়া সরকার থেকে বেস্ট ফ্রিল্যান্সার অফ দা ইয়ার এর এওর্য়াড পাওয়া। এই রকম ছেলের জন্য কেনই বা ঝাঁপিয়ে পড়বেন আত্মীয় স্বজন। তা ছাড়াও ছেলে যেমন ভদ্র তেমনি ইসলামিক মাইন্ডের। এই সব বিশেষণ গুলো যেন কাল হয়েছে তার। ৩ বৎসরে পাত্রী দেখেছে অনেক কিন্তু সুপাত্রী আর মিলল না। কোন মেয়েকে যদি আমাদের পছন্দ তা হলে মেয়ের কন্ডিশন থাকে মেয়ে কখনও ঢাকার বাহিরে যাবেনা। আমার কাজিন আবার কন্ডিশন নিয়ে বিয়ে করতে নারাজ। আবার কোন মেয়েকে যদি পছন্দ হয়ে থাকে তা হলে খোঁজ খবর নিয়ে দেখা যায় মেয়ে ৪ বৎসর ধরে প্রেম করে, মা বাবা জানে না। প্রেম করা মেয়েদের ও সে বিয়ে করতে নারাজ। আবার কোন মেয়ের জীবনবৃত্তান্ত দেখেই বাদ দিয়ে দে সমবয়সী হওয়ার কারণে। তার কথা মেয়ের সাথে আমার বয়সের পার্থক্য থকতে হবে কম পক্ষে ৩ বৎসর। এই ভাবেই কেটে যাচ্ছে ৩ টা বৎসর। সুপাত্রী নামক কণের মঙ্গলের মত অজানা থেকে যাচ্ছে আজও,আর সাথে সাথে তার পরবর্তীদের বিয়ের ঘণ্টা বেজে যাচ্ছে At Wits' End At Wits' End At Wits' End। আমি অবশ্য তাকে এই বলে সান্তনা দেই আল্লাহ বলেছেন ।

সুচরিত্র নারী সুচরিত্র পুরুষের জন্যে এবং সুচরিত্র পুরুষ সুচরিত্র নারীর জন্যে...” [সূরা নূর; ২৪:২৬]

এই ছড়াটি এক বন্ধুর পোস্ট এ কমেন্ট করে বন্ধুর অনুরোধে ডিলিট করে দেই,কারণ বন্ধুর ভাই ,বোন,মা দেখে যদি অন্য কিছু ভেবে বসেন ।

“ ছেলে এখন যুবক হয়েছে, বিয়ের বয়স যাচ্ছে বেড়ে ।

বিয়ের কথা শুনলে মা, লাঠি নিয়ে আসছে তেড়ে।

কোন ভাবে বুঝবেনা সে, বিয়ে আমার করা চাই।

বয়স আমার পাগলা ঘোড়া, বিয়ে ছাড়া উপায় নাই। “

একটি দুটি কোরআনের আয়াত দিয়ে শেষ করছি - আল্লাহ সুবনাহানাহু ওয়া তায়া’লা কুরআনে সূরা নিসার ৩ নম্বর আয়াতে বলেন,

'মেয়েদের মধ্যে থেকে যাদের ভাল লাগে তাদের বিয়ে করে নাও দুই, তিন, কিংবা চারটি পর্যন্ত। আর যদি এরূপ আশঙ্কা কর যে, তাদের মধ্যে ন্যায় সঙ্গত আচরণ বজায় রাখতে পারবে না, তবে, একটিই।’

আর যদি বিয়ে করতে কোন সমস্যা থাকে তাহলে আল্লাহ বলছেন-

যারা বিবাহে সামর্থ্য নয়, তারা যেন সংযম অবলম্বন করে যে পর্যন্ত না আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাব-মুক্ত করে দেন।(২৪:৩৩)

বিষয়: বিবিধ

৫২৯৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File