ক্যামোফ্লাজ মিডিয়ায় আন্দোলনের চিত্র
লিখেছেন লিখেছেন শহর ইয়ার ০৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫, ০৯:৪১:২৪ রাত
২০ দলীয় জোটের অবরোধ কর্মসূচীতে অবরুদ্ধ পুরো দেশ। কিন্তু বাংলাদেশের প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় এর রেশ সামান্যই। পত্রিকা পড়লে মনে হবে কিছু সন্ত্রাসী অরাজকতা করছে। টিভি দেখলে মনে হবে দেশের সবকিছু ঠিক আছে। মাঝখান থেকে কিছু বোমাবাজ পেট্রোল বোমা মেরে জনজীবনকে ব্যাহত করছে। এরা সরকারবিরোধী সন্ত্রাসী।
এই মিডিয়াগুলোতে কখনোই দেখবেন না একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীন অবাধ, সুষ্ঠুও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য দেশের বেশিরভাগ জনগোষ্ঠীর আশা-আকাংখা পূরণের নিমিত্তেই এই আন্দোলন একটি অনির্বাচিত ও অবৈধ সরকারের বিরুদ্ধে। একটি ন্যায্য আন্দোলনকে এরা সন্ত্রাসী কার্যক্রম হিসাবে নিরলস প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছে। আন্দোলনের সপক্ষে কোথাও হয়তোবা বিশাল মিছিল হয়েছে। এরা সেটা প্রচার করবে না। এরা প্রচার করবে কোথায় কোন বাসে আগুন লেগেছে (অবশ্যই নিন্দনীয়) সেই সংবাদ। এরা প্রকাশ করবে না সেই আগুনটি কে দিয়েছে। সেটা কী আসলেই হরতাল অবরোধের সমর্থনকারীরা, নাকি অবরোধকারীদের নামে প্রোপাগান্ডা চালাতে সরকারের এজেন্টরা?
মিডিয়ার নামে বর্তমানে যা হচ্ছে বাংলাদেশে তা এক কথায় সরকারী এজেন্ডা বাস্তবায়ন। সরকার কী চায় তা জেনে নিয়ে সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন। এরা আসলে সরকার বা আওয়ামীলীগের দালাল। এই মিডিয়াগুলোর সাহায্য নিয়েই সরকার ৫ই জানুয়ারীর সেই বিতর্কিত নির্বাচনের বৈতরনী পার হয়েছে। এখন একটি সার্বজনীন আন্দোলনের বিরুদ্ধে প্রচারনা চালাচ্ছে এই দলকানা মিডিয়াগুলোই।
প্রিন্টমিডিয়ায় আজ যেসব পত্রিকাগুলো সরকারের জামাই আদরে রয়েছে, একটু লক্ষ্য করলে দেখবেন এগুলো কিন্তু প্রতিষ্ঠা পেয়েছে বা একই রকম জামাই আদরে ছিল বিএনপির সেই ৯১-৯৬ কিংবা চারদলীয় জোটের ২০০১-০৬ আমলেও। প্রথম আলোর প্রতিষ্টা ২০০৮ সালে ভোরের কাগজ ভেঙে। তখন প্রচার সংখ্যায় শীর্ষে ছিল জনকন্ঠ যেটি বিএনপির আগের আমলে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। চারদলীয় সরকারের বিভিন্ন আনুকূল্য পেয়ে প্রথম আলো ফুলে-ফেপে উঠেছিল। তাদের তখনকার নীতি ছিল সরকারের একপ্রস্ত প্রশংসা করলে স্কেল দিয়ে মেপে সরকার বিরোধীদের প্রশংসা কিংবা সরকারের বিরুদ্ধে যায় এমন কথাও বলত। এরা ছিল সত্যিকার অর্থেই বর্ণচোরা।
শেখ হাসিনা সরকারের যাবতীয় প্রোপাগান্ডা প্রকাশের অন্যতম সহযোগী কালের কন্ঠ এবং সমকাল দুটিরই আবির্ভাব চারদলীর সরকারের শাসনামলে। এরমধ্যে সমকাল প্রকাশ হয়েছে সরাসরি হাওয়া ভবনের আনুকূল্যে। তৎকালীন শাসকদলের অদূরদর্শী এরকম একেকটি ভূমিকার জন্য আজ তারা কোন রকমের অনুতাপ করেন কিনা তা জানার উপায় নেই। তবে যারা নিরপেক্ষ সংবাদের পাঠক ও দর্শক তাদের জন্য তা অবশ্যই এক যন্ত্রণাদায়ক মর্মপীড়ার কারন হয়ে দেখা দিয়েছে।
এমবেডেড জার্ণালিজম বা ইয়েলো জার্ণালিজম বা হলুদ সাংবাদিকতা বাংলাদেশে এখন তার স্বর্ণযুগ অতিক্রম করেছে। সেটা সম্ভব হচ্ছে তাদের মনপুত: একটি অবৈধ, অনির্বাচিত ও স্বৈরাচারী সরকার ক্ষমতায় থাকার জন্য। মিডিয়ার এরকম নির্লজ্জ সমর্থন থাকলে কে জানে হয়তোবা স্বৈরাচারী এরশাদ এখনো বাংলাদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকতেন!
প্রাণিজগতে কিছু প্রাণী পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে তাদের রং পরিবর্তন করে কিংবা পরিবর্তিত হয়। গাছের পাতার রংয়ের সমান সবুজ কিছু সাপ দেখবেন যেগুলো নড়াচড়া না করলে আপনি বুঝবেন না এখানে কিছু আছে। নিজের খাবার শিকার কিংবা শত্রুর হাত থেকে রক্ষা পাবার জন্য এরা এরকম পরিবর্তিত হয়েছে। ঘোলা পানিতে দেখবেন বোড়া সাপ যা সহজে চোখে পড়েনা। এরকম ঘিরগিটি, প্রজাপতিসহ বিভিন্ন রকমের কীটপতঙ্গের ক্ষেত্রে এরকম দেখা যায়। এই অবস্থাকে ক্যামোফ্লাজ বলা হয়। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে আমাদের দেশের কিছু প্রতিষ্টিত মিডিয়া বিশেষ সময়ে এরকম পশুর মত বেচে থাকে। আর যারা রং বদলায় না তারা বন্ধ হয়ে যাওয়া মিডিয়াগুলোর মত পরিণতি বরণ করে।
বিষয়: বিবিধ
১৩১৩ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন