এডিনবরার উৎসবে
লিখেছেন লিখেছেন শহর ইয়ার ১২ আগস্ট, ২০১৪, ১১:২৬:২৫ রাত
স্কটল্যান্ডের রাজধানী এডিনবরায় প্রতি বছরের আগষ্ট মাস জুড়ে চলে ফেষ্টিভাল। প্রায় ৬৭ বছর ধরে চলে আসছে এই আন্তর্জাতিক উৎসব। বিশ্বের বিভিন্ন স্থানের হাজার হাজার পর্যটকের আগমন ঘটে এই উৎসবে। একই সাথে সমাগম হয় বিশ্বের নেতৃস্থানীয় সাংষ্কৃতিক কলা কুশলীর।
এডিনবরা শহরের ঐতিহাসিক স্থানগুলো জুড়ে বসেছে এই মেলা। ওয়েভারলি ষ্টেশনের কাছে প্রিন্সেস ষ্ট্রিট থেক শুরু হয়ে শহরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থান রয়েল মাইলস পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকায় চলছে এই পথ উৎসব। নানা তালের বাদ্য বাজিয়ে ঝকমারি পোশাক আর অদ্ভুত অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে দর্শকদের মনোরন্জনের প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত প্রতিটি ভ্রাম্যমান শিল্পী কলাকুশলীরা। এর মধ্যে আছেন জাদুকর, সার্কাসবিদ, কৌতুকশিল্পী, শারীরিক কসরত প্রদর্শনকারী, সংগীত শিল্পী, বংশীবাদক ও বিভিন্ন রকমের মুখোশ পরিধানকারীসহ অন্যরা।
খোলা স্থানে আকর্ষনীয় মিউজিকের মাধ্যমে চলে লোকজন জড়ো করার প্রক্রিয়া। আমাদের দেশে ফেরিওয়ালা কিংবা হকাররা যেমন রাস্তায় বিভিন্ন কায়দায় লোকজন জড়ো করে তাদের উদ্দেশ্য সিদ্ধি করে, অর্থাৎ সর্বরোগের মহৌষধ কিংবা পণ্য বিক্রি করে। ফাঁকতালে তাদের লোকজন পকেটও কাটে! এখানেও তেমনি লোকজন জড়ো করার প্রক্রিয়া একটাই। তবে এদের উদ্দেশ্য সমাগতদের নির্মল বিনোদন প্রদান। যদিও পকেট কাটার বিষয়টি এরাও মনে করিয়ে দেয়।
এডিনবরার এই উৎসবে ফ্রি বিনোদনের এসব কলাকুশলীরা বিশ্বের বড় বড় মেলাগুলোতে অংশগ্রহন করেন। আর আয়োজকদের কাছ থেকে নেন বড় অংকের পারিশ্রমিক। পারফরমেন্স দেখিয়ে যা পান সেটা তাদের বকশিস। এখানে দর্শকরা বিরক্ত কিংবা বিব্রত হন এরকম কিছু দেখা যায়না তাদের কাছ থেকে। তবে নির্মল আনন্দ কিংবা মজা করার জন্য দর্শকদের স্বত:স্ফূর্ত অংশগ্রহন থাকেই! কেউ সামনে বা পিছন দিয়ে হেঁটে গেলে আর উপায় নেই। তাকে নিয়ে মজা করবেই!
রাস্তা কিংবা খোলা স্থানের উন্মুক্ত আনন্দদানের পাশাপাশি আছে বিভিন্ন রকমের ইনডোর ইভেন্ট। এর মধ্যে আছে বিভিন্ন রকমের কৌতুক অভিনয়, সার্কাস ও জাদু প্রদর্শনী। দশ পাউন্ডের একটি টিকেট কেটে একটি কৌতুক শোঁতে উপস্থিত হয়েছিলাম। কৌতুক শিল্পী একজন মহিলা। তার জীবনে কীভাবে প্রেম এল, বাবা মা কী ভূমিকা নিলেন, সমাজে সমকামীদের সম্বন্ধে কিরকম ধারণা পোষন করা হয় আর কী হওয়া উচিত সে সম্পর্কে কিছু তুলনামুলক বক্তৃতা করলেন!
সাথে তার জীবনের প্রথম ব্রা এর মাপ কিভাবে দিয়েছিলেন এই কথাগুলো একটু আকর্ষনীয়ভাবে বললেন। আশেপাশের দর্শকরা সবাই যেভাবে উচ্চস্বরে হো হো করে হাসছিলো তাতে বলা যায় এটা আনন্দদায়ক ছিল। তবে আমি বার বার ঘড়ি দেখছিলাম কখন এই শো শেষ হবে।
উৎসবের এই সময়টা এডিনবরা শহর লোকজনের কোলাহলে লোকারণ্য হয়ে উঠে। এই সুযোগে এখানকার ব্যবসা বানিজ্যও বেশ রমরমা হয়। লন্ডনের কিছু এলাকায় সারা বছরই পর্যটকদের আনাগোনায় মুখরিত থাকে। যেমন পিকাডেলী সার্কাস, লেষ্টার স্কোয়ার। উৎসবের এই সময়টা এডিনবরা শহরেও বেশ জমজমাট হয়। এছাড়াও বর্শবরণ উপলক্ষে এখানে আরেকটি বড় উৎসব হয় প্রতিবছরের শেষ সপ্তাহে। যেটা হগমেনি ফেষ্টিভাল নামে পরিচিত।
উৎসবের আয়োজন বাদ দিলেও সারা বছরই যাতে পর্যটকরা নিবিঢ় আতিথেয়তা পান সেদিকেও কতৃপক্ষ সদা তৎপর। এডিনবরার বিভিন্ন মোড়ে দেখা যায় কিছু সুসজ্জিত লোক স্কটিশ জাতীয় পোশাক পরিধান করে বাঁশি বাজাচ্ছে। এদের বলা হয় ব্যাগ পাইপার। ট্যুরিষ্টদের বিনোদন প্রদানই যাদের একমাত্র লক্ষ্য। কিন্তু এতসব করেও এডিনবরা বিশ্বের অন্যান্য রাজধানী শহরের মত সগৌরবে উজ্জ্বল হতে পারছে না। বড় গাছের নীচে যেমন ছোট গাছগুলো শিকড় গঁজাতে পারে না, তেমনি স্কটল্যান্ডের এডিনবরাকেও লন্ডনের সৌকর্যের কাছে বেশ ম্লানই মনে হয়।
বিষয়: বিবিধ
১৫১৫ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
রয়্যাল ফ্যামিলি Stampede-2011 এ আসা উপলক্ষ্যে সে বছর দেখতে গিয়েছিলাম। ছবিগুলো শেয়ার করলাম।
ধন্যবাদ আপনাকে। ভাল লাগল
মন্তব্য করতে লগইন করুন