ডানষ্টেন হোটেল
লিখেছেন লিখেছেন শহর ইয়ার ১৩ অক্টোবর, ২০১৩, ০৯:২৯:২১ রাত
ভ্রমণার্থীদের জন্য ভিন্ন স্থানে গমণ আর হোটেলে অবস্থান একইসূত্রে গাঁথা। পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় স্থানগুলোতে ভ্রমণে হোটেলে অবস্থানই সবচেয়ে নিরাপদ ও সুবিধাজনক। এজন্যই বিশ্বের বিভিন্ন বিখ্যাত পর্যটন নগরীগুলোতে হোটেল ইন্ডাষ্ট্রির রমরমা বাণিজ্য!
বিভিন্ন ছোটখাটো ট্যুরে ভ্রমণে গিয়ে দেশবিদেশের অনেকগুলো হোটেলে অবস্থান করেছি।এর মাধ্যমে পরিচিত হয়েছি বিভিন্ন দেশের পর্যটক ও সাধারণ মানুষের সাথে। জানার সুযোগ হয়েছে অনেক বিষয়ে। অনেকের সাথে আবার বন্ধুত্বও হয়ে গেছে। যেখানে ছিলাম সে স্থানটিও মনে স্থায়ী রেখাপাত করেছে। তবে ডানষ্টেন হোটেলে আমার একদিনের অবস্থানকালীন সময়ের প্রতিটি মূহুর্ত স্মরণীয় হয়ে থাকবে আজীবন।
উচ্চ মাধ্যমিকে পড়াকালীন সময়ে পাঠ্যবই ছাড়া ছাপার অক্ষরে যা দেখতাম তাই পড়তাম। অনার্সে থাকাকালীন সময়েও এই ধারা অব্যাহত থাকে। হুমায়ুন আহমেদের বই ছিল হট কেক। কিছু বই কিনতাম আর কিছু বন্ধুদের কাছ থেকে ধার করে পড়তাম। এভাবে আমার বইগুলোও ধার দিতাম। একদিন একটি ম্যাগাজিনে দেখলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী একটি ব্যতিক্রমধর্মী চিঠি লিখেছেন।প্রতীকি এই চিঠিটি নবনীর উদ্দেশ্যে হিমুর। এর কয়েকটি লাইন ছিলো অনেকটা এরকম:
নবনী,
কৃষ্ণপক্ষ ছিল তখন, নিশিথীনি প্রথম প্রহর। আকাশ জোড়া মেঘ। সব ভয় আর বিপদকে উপেক্ষা করে তুমি এসেছিলে গৌরিপুর জংশনে।আমাদের শাদা বাড়ী হল সেখানে। .....ময়ুরাখ্খীতে বসে আমার আপন আধাঁর এ তোমাকে শুনিয়েছিলাম মিসির আলীর অমীমাংসিত রহস্য। নীল জোছনায় বসে আশাবরীতে তুমি আমায় ডেকেছিলে ছুটির নিমন্ত্রনে। হোটেল গ্রেভার ইনে হয়েছিল আমাদের সাজানো বাসর।
অনেক লম্বা সেই চিঠির মাহাত্ব্য আশা করি বুঝতে পেরেছেন। এর প্রতিটি লাইনে বর্ণিত হয়েছে নন্দিত লেখক হুমায়ুন আহমেদের কয়েকটি বইয়ের নামে। তবে এখানে সেই পুরনো কাসুন্ধি ঢালার কারনটা ভিন্ন। রূপক এই চিঠিটির একটি লাইন অনূদিত হয়েছে এই নগন্য ব্লগারের ব্যক্তি জীবনে।
ডানষ্টেন হোটেলটি একটি ভিক্টোরিয়ান ফেসেড ফোর ষ্টার হোটেল। স্কটল্যান্ডের এডিনবরা শহরের কেন্দ্রস্থলে এর অবস্থান।পুরনো আভিজাত্যের সাথে আধুনিক ষ্টাইল এর সমন্বয়ে হোটেলের অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জা অত্যন্ত মনোরম এবং দৃষ্টিনন্দন।রুমের প্রতিটি কর্ণারে রয়েছে মৃদু আলো ছড়ানোর জন্য আলাদা বাতি। কোন সেন্ট্রাল লাইট নেই। চারদিকে পিনপতন নীরবতা। যে দুই একজন স্টাফ আছেন তাদের চলাফেরা অন্ধকার রাতে চলা বিড়ালের মতই শব্দহীন। এমন পরিবেশে নিজেকে মফস্বলের কোন বাড়িতে শহর থেকে বেড়াতে আসা বেশ গুরুত্বপূর্ণ আত্মীয় মনে হয়!
গুরুত্ব কিছুটা হলেও যে ছিল না তাও নয়। এই হোটেল একরাত থাকার ব্যবস্থাটি করে দিয়েছিলেন আমার স্ত্রীর বড় বোন ও দুলাভাই আমাদের জীবনের নতুন চলার পথের প্রথম উপহার হিসাবে। নিকাহ অনুষ্টানটি হয়েছিল গত আগষ্টে এডিনবরার একটি ইন্ডিয়ান রেষ্টুরেন্টে। সেখানে সংক্ষিপ্ত আনুষ্টানিকতার পরে আমরা চলে আসি ডানষ্টেন হোটেলে। আর আমার সাথে যারা এসেছিলেন, আমার আপা, দুলাভাই, তাদের ছেলেমেয়ে এবং ভাইয়া, তারা চলে যান লন্ডনে।
ডানষ্টেন হোটেলের রিশিপশনিষ্ট আমাদের অভিনব সাজশয্যায় দেখে জিজ্ঞেস করলেন, আজ কি তোমাদের কোন বিশেষ দিন? আমার স্ত্রী বেশ উৎফুল্লভাবেই উত্তর দিলেন, আমরা আজ বিয়ে করেছি। বেশ খুশি হয়ে সেই মহিলা বললেন তোমাদের বিবাহিত জীবন সুখী এবং চিরস্থায়ী হোক এই কামনা করছি। আমরা তাকে ধন্যবাদ জানালাম। আমাদের লাগেজ সেই রিশিপশনিষ্ট মহিলা নিজেই দ্বিতীয় তলায় এসে দিয়ে গেলেন।
রুমে এসে মহান আল্লাহ পাকের শোকরিয়া আদায় করে দুই রাকাত নামায পড়ে নিলাম। আমার স্ত্রীও নামাজ পড়লেন। অনেকক্ষণ সময় নিয়ে তেলাওয়াত করলেন। তারপর দোয়া দুরুদ পড়লেন। সোবহানআল্লাহ। আমরা সিদ্বান্ত নিয়েছিলাম রাতের খাবার হোটেলের রেষ্টুরেন্টেই খাবো। সে মোতাবেক সেখানে গিয়ে স্কটল্যান্ডের ঐতিহ্যবাহী একটি মাছের খাবার অর্ডার করলাম। আমার স্ত্রী রেষ্টুরেন্টের ওয়েটারের সাথে কথা বলে নিশ্চিত হয়ে নিলেন এই খাবারটি পুরোপুরি হালাল।
রেষ্টুরেন্টে খাবারের অর্ডার দেয়ার কিছুক্ষণ পরেই আমার স্ত্রীর বড় বোন ও বড় ভাই নিয়ে এলেন বক্সভর্তি খাবার। চিকেন ও মিট কারী, তান্দুরী চিকেন, কাবাব, মাছ, সব্জি কিছুই বাকি নেই। একেই বলে জামাই আদর! আমরা খাবারগুলো রেখে দিয়ে তাদের বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানালাম। কিছুক্ষণ আমাদের সাথে থেকে শুভরাত্রি জানিয়ে তারা বিদায় নিলেন।
রেষ্টুরেন্টে বসে খাবার খাচ্ছি আর আর ছবি তুলছি। আমাদের পাশের টেবিলে ছিলেন বয়স্কা দুই মহিলা। কানাডা থেকে এসেছেন এডিনবরায় বেড়াতে। কৌতুহলী হয়ে তারাও জিজ্ঞেস করলেন, এনি অকেশন ফর য়্যু? আমরা বললাম আজই আমরা বিয়ে করেছি। দুইজনেই আমাদের উইশ করলেন তোমাদের বিবাহিত জীবন চিরস্থায়ী হোক। আমরাও তাদেরকে ধন্যবাদ জানালাম।
টুডে ব্লগে অনিয়মিতভাবে মাঝে মাঝে লিখি। কারো কারো কাছে আমার নিক হয়তো পরিচিত। পরিচিত-অপরিচিত সকলের কাছেই নব জীবনের ঊষালগ্নে দোয়া চাইছি। মহান আল্লাহ পাক আমাদের সবার মনের আশা পূরণ করুন, আমিন। যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপে অবস্থানরত সকল ব্লগার ভাই-বোনদের আমার বিয়ের অনুষ্টানে যোগ দেয়ার অগ্রিম আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। এছাড়াও বিশ্বের যেকোন স্থান থেকে যে কেউ আসতে পারেন। বিয়ের তারিখ আগামী ২৯শে ডিসেম্বর এডিনবরায় এবং বৌভাত ১লা জানুয়ারী লন্ডনে। স্থান পরে জানাবো। সবাই আসবেন!! ঈদ মোবারক!!!
বিষয়: বিবিধ
২১৬৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন