বর্ণবাদ বিরোধী লন্ডনের নটিংহিল কার্ণিভাল

লিখেছেন লিখেছেন শহর ইয়ার ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ১২:২৬:৩৭ রাত



লন্ডনের পশ্চিমপ্রান্তে নটিংহিলগেট এলাকায় গত প্রায় অর্ধ শতাব্দী জুড়ে আয়োজিত হচ্ছে নটিংহিল কার্ণিভাল। এটা ইউরোপের অন্যতম বৃহৎ পথ উৎসবের মর্যাদা পেয়েছে। প্রতি বছর পনের থেকে বিশ লাখ লোক এই উৎসবে যোগ দেন। গত ২৫ ও ২৬ আগষ্ট ছিল উৎসবের দিন।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যুক্তরাজ্যে ক্যারিবিয়ান ইমিগ্রান্টদের সংখ্যা ব্যাপকভাবে বেড়ে গেলে বিভিন্ন স্থানে বর্নবাদী হামলা পাল্টা হামলার সূচনা হয়। এরকম দাঙ্গা্-হাঙ্গামার ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বেড়ে যায়।যুক্তরাজ্যে কালোদের উপর সাদাদের বর্ণবাদী আক্রমনের কারনে ১৯৫৮ সালে এক ভয়াভহ বর্নবাদী দাঙ্গার ঘটনা ঘটে। এর কারন ছিল মূলত সাদা কালোর মিশ্রণ।

সুইডিশ তরুনী মাবৃতি ১৯৫৫ সালে লেখাপড়ার জন্য যুক্তরাজ্যে আসেন। এখানে এসে তিনি পরিচিত হন রেমন্ড মরিসন নামে এক ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান চিত্রকরের সাথে। পরিচয় থেকে প্রণয়, তারপর বিয়ে। কিন্তু একজন কালো তরুনের সাথে শ্বেত রমনীর এই সম্পর্ক ভাল চোখে দেখেনি তৎকালীন সমাজ।



একদিন ট্রেন ষ্টেশনে তর্কের জের ধরে কয়েকজন সাদা তরুন তার উপর হামলা চালায়।তাকে কালোদের বেশ্যা বলে গালি দেয়া হয়। পুলিশ বর্ণবাদী তরুনদের গ্রেফতারের পরিবর্তে তার স্বামীকে গ্রেফতার করে। এর প্রতিবাদে সে এলাকায় শুরু হয় রায়ট বা দাঙ্গা।

এ পরিপ্রেক্ষিতে ক্যারিবিয়ান অ্যাক্টিভিস্ট ক্লাউদিয়া জোনস স্যান্ট প্যানকার্স এলাকায় বর্ণবাদ বিরোধী এক ইনডোর উৎসবের আয়োজন করেন ১৯৫৮ সালে। তবে একই সময়ে যুক্তরাজ্যের নটিংহাম এলাকায় আরেকটি বর্ণবাদী দাঙ্গার সূত্রপাত ঘটে। পরের বছর থেকে আফ্রোক্যারিবিয়ানদের দাবি ও অধিকার আদায়ে জোরালো ভূমিকা নেয়ার জন্য এই কার্নিভাল নিয়মিত আয়োজিত হতে থাকে। ১৯৬৫ সালে ইনডোর পেরিয়ে রাস্তায় আয়োজিত হতে থাকে এই কার্নিভাল।

এই পথ উৎসবের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে ক্যারিবিয়ান ঐতিহ্যবাহী নাচ গানের মাধ্যমে সেলিব্রেট করা। বিভিন্ন আকর্ষনীয় ও বৈচিত্রময় পোশাকে সেজে কালো রমনীরা আসেন। রাস্তায় চলে অর্ধনগ্ন মেয়েদের উদ্দাম নৃত্য। সাথে মদ্যপ ছেলেদের উশৃংখল ঠেলাঠেলি। তবে এটা এই উৎসবের পুরো চিত্রটা তুলে ধরেনা।



এখানে আসেন সব বয়সের মানুষ। আর ক্যারিবিয়ানরা আসেন উৎসবের পোশাকে। বিগত কয়েক শতাব্দী ধরে কালোদের উপর যে নিপীড়ন ও অত্যাচার চালিয়েছে শ্বেতরা, তার প্রতিবাদেই নিজেদের ঐতিহ্যবাহী পোশাকে নিজ সংস্কৃতি তুলে ধরেন তারা বহির্বিশ্বের কাছে। ঝাকজমকের আতিশয্যে পুরনো বেদনা ভুলে থাকতে চান বেঁচে থাকার আনন্দে।



পশ্চিম লন্ডনের এই এলাকায় আমার কর্মস্থল বিগত তিন বছর থেকে। তবে কাজের ব্যস্ততায় কার্নিভালে যাওয়া সম্ভব হয় না। এ বছর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে করেই হোক যেতে হবে কার্ণিভালে। লাঞ্চ বিরতির সময়টা অফিসে সাধারণত ঘুমিয়ে কাটাই। এ বছর না ঘুমিয়ে চলে গেলাম সেই কার্নিভালে। ঘন্টাখানেক ছিলাম সেখানে। দেখুন নটিংহিল কার্নিভালের কিছু ছবি।













বিনোদনে উৎসাহী ছিল পুলিশ সদস্যরাও





রঙের বাহার



ছবিগুলো গুগল থেকে নেয়া।

বিষয়: বিবিধ

১৩৭০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File