পুলিশের খপ্পরে একজন ব্লগার ও প্রসঙ্গ কথা

লিখেছেন লিখেছেন শহর ইয়ার ২৬ জুলাই, ২০১৩, ০২:২৩:৪৬ দুপুর



পুলিশ বাহিনীর গুণকীর্তন করে বানানো ফেসবুকের একটি পেজে মন্তব্য করেছিলেন টুডে ব্লগের একজন ব্লগার । পুলিশের দূর্নীতি চাপিয়ে রাখতে কিংবা দেশের অন্যসব পেশাজীবি মানুষের দূর্ণীতির তুলনা করে পুলিশ বাহিনীকে সাধু রূপে উপস্থাপন করে বানানো এই পেজে একটি নিতান্তই সাধারণ কমেন্ট করেছিলেন সেই ব্লগার যিনি মজাদার মন্তব্যের জন্য এসবিতে নানা নামে পরিচিত ছিলেন । হয়তো বা মন্তব্যের আগে মহান (!) পুলিশ ভাইদেরকেও তার নাতি মনে করেছিলেন। এখানেই ঘটে বিপত্তি।

সেই ব্লগার ভাইয়ের মন্তব্যের যেসব পাল্টা মন্তব্য এসেছে সেসব শুধু অশোভনই নয়, সভ্য সমাজে উচ্চারণযোগ্যও নয়। যারা এসব মন্তব্য করেছেন তারা জনগনের ট্যাক্সের টাকায় প্রতিপালিত পুলিশ বাহিনীর সদস্য। একটি সরকারী বাহিনীর সদস্যরা যখন সামাজিক মাধ্যমে (অন রেকর্ড) এমন অশোভন মন্তব্য করতে পারেন তখন তাদের হাতে দেশের মানুষের কী হাল হতে পারে তা সহজেই বোধগম্য।

এ প্রসঙ্গে কয়েক বছর আগের একটি ঘটনার কথা মনে পড়ছে।

চারদলীয় জোট সরকারের প্রথমদিকে যখন র‍্যাব গঠন করা হয় তখন চৌকষ বাহিনী হিসাবে তাদের একটি আলাদা ইমেজ ছিল। র‍্যাবে মূলত: সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সদস্যদের আধিক্য ছিল বেশি। পুলিশ থেকে নামকাওয়াস্তে কিছু সদস্য নেয়া হয়েছিল। তখন র‍্যাবের সদস্যরা বিভিন্ন স্থানে অসৎ পুলিশ সদস্যদের ঘুষ গ্রহনে হাতেনাতে ধরে তৎক্ষনাৎ চড় থাপ্পড়সহ কান ধরে উঠবস করাতো। পত্রিকায় এসব সংবাদ দেখে অনেকেই পুলকিত হতেন।

বিগত তত্বাবধায়ক সরকারের সময়কার ঘটনা। বাসে একদিন উত্তরা থেকে মহাখালী যাচ্ছি। বিশ্বরোডের কাছাকাছি একজন পকেটমার হাতেনাতে ধরা পড়ল। ব্যস, আর যায় কোথায়। ভাল করে উত্তমমধ্যম দেয়া হল তাকে। একদিকে গণধোলাই চলছে আর বাস এগিয়ে যাচ্ছে। কাকলী মোড়ে বাস সিগনালে আটকা পড়ল। বাসের ভিতরকার হট্রগোল দেখে টহলরত কয়েকজন পুলিশ এগিয়ে এল। ঘটনা শুনে পুলিশ বলল ওকে আমাদের হাতে ছেড়ে দিন। এই বলে পকেটমারের এক হাত ধরে টান দিল।

বাসের উত্তেজিত জনতা পকেটমারের অন্যহাতে ধরে বলল, না, ওকে আমরা পুলিশদের হাতে দেব না। পুলিশরা একটু পরই টাকা খেয়ে ছেড়ে দেবে। যেখানে আর্মি দেখব সেখানেই ওকে আমরা ছাড়ব। সেই পকেটমারকে নিয়ে পুলিশের সদস্য আর বাসের প্যাসেন্জারদের মধ্যে অনেকক্ষণ টানা-হ্যাচড়া চলল। শেষমেষ পুলিশ হাল ছেড়ে দিয়ে বাস থেকে নেমে গেল। একটু সামনে গিয়ে রাস্তায় যখন যৌথবাহিনীর সদস্যদের দেখা গেল তখনই সেই পকেটমারকে ওদের হাতে সোপর্দ করে হয়েছিল। বস্তুত: পুলিশের ইমেজ সাধারণ মানুষদের কাছে কী রকম নীচে নেমে এসেছে তা বুঝানোর জন্য এ ঘটনাটিই যথেষ্ট।

এ প্রসঙ্গে আমার এক বন্ধুর কাছে শুনা একটি গল্প বলতে চাই। এটি অবশ্য ট্রাফিক পুলিশদের নিয়ে। এক ব্যস্ত রাস্তার মোড়ে ট্রাফিক পুলিশ মোটরসাইকেল আরোহীদের থামাচ্ছে আর ঘুষ নিয়ে ছেড়ে দিচ্ছে। ঘুষ নেয়ার জন্য আশা করি ট্রাফিক পুলিশদের বাহানা আপনাদের বুঝিয়ে বলতে হবে না। কাগজ দেখি, হেডলাইট বাঁকা কেন, হেলমেট (পিছনের যাত্রীর) কোথায়, কালো ধোঁয়া বের হচ্ছে কেন এরকম অনেক ইস্যু। আমার বন্ধুর এক পরিচিতজন একবার পড়েছিলেন এ রকম ফাঁদে। ঘুষখোর ট্রাফিক পুলিশদের খপ্পরে পড়লে আপনার সবকিছু ঠিক থাকলেও টাকা না দিলে রেহাই মিলবে না। তা জানা থাকায় সেই ব্যক্তিটি জিজ্ঞেস করলেন, টাকাটা কার কাছে দিতে হবে।

ব্যস্ত এলাকায় প্রকাশ্য দিবালোকে ট্রাফিক পুলিশ টাকা নিতে একটু ইতস্তত: বোধ করছিল। আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে বলল ঐ চায়ের দোকানে দিয়ে আসুন। দোকানীও দূর থেকে সেটা চেয়ে দেখছিল। যাই হোক কাছে গিয়ে মোটর সাইকেল আরোহী সেই দোকানীকে বলল, উনি আপনার কাছ থেকে একশ টাকা নেয়ার জন্য বলেছেন। চায়ের দোকানী মনে করেছিল হয়তো তাই হবে। সবাই তো টাকা দিয়ে যাচ্ছে এরকম করে টাকা নেয়ার কথা তো কেউ বলছে না। আর পুলিশ দাঁড়িয়ে আছে সামনেই। তাই সে একশ টাকা বের করে দিল। টাকা নিয়ে মোটর সাইকেল আরোহী মূহুর্তেই লাপাত্তা হয়ে গেল।ঘুষখোর ট্রাফিক পুলিশের জন্য সেটা ছিল একটা মোক্ষম চপেটাঘাৎ।

পুলিশ আর ঘুষ নিয়ে এত কাহিনী প্রচলিত আছে যে কারনে দুটি শব্দ একটি আরেকটির পরিপূরক হয়ে গেছে। তবুও দূর্ণীতি আর ঘুষ নিয়ে পুলিশের সাফাই গেয়ে ফেসবুকে পেজ বানানো সেইসব অপকর্মকে বৈধতা দেয়ার একটা প্রয়াস ছাড়া আর কী বলা যায়!

(অনুমতি না নেয়ায় সেই ব্লগার ভাইয়ের নিক উল্লেখ করলাম না )।

বিষয়: বিবিধ

১৭৬৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File