চোখ ভেসে যায় জলে
লিখেছেন লিখেছেন শহর ইয়ার ২৫ এপ্রিল, ২০১৩, ০৩:৫৬:২৫ রাত
আবারও দুর্ঘটনা। আবারও অসংখ্য প্রাণহানি। সারি সারি লাশ। স্বজনদের আহাজারি। বাতাস ভারী হয়ে আসে। টিভি পর্দায় কিংবা অনলাইনে চোখ রাখতে পারি না। এ দৃশ্য সহ্য করার শক্তি নেই।
মাত্র কয়েক মাস আগেই ভয়াবহ অগ্নি দুর্ঘটনায় পাঁচ শতাধিক গার্মেন্টস শ্রমিকের প্রানহানি ঘটে। তারপরও সরকার, প্রশাসন কিংবা কোন কতৃপক্ষের হুশ নেই। একটি ফাটল ধরা ভবনে যারা শ্রমিকদের জোর করে ধরে এনে কাজ করায় তারা নরপিশাচ। তারা মানুষরূপী পশু।
বিদেশে আমাদের পরিচিতি বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, রাজনৈতিক হানাহানি আর দারিদ্র্য পীড়িত দেশরূপে। ইদানীং যুক্ত হয়েছে গার্মেন্টস কারখানায় অগ্নি দুর্ঘটনা আর ভবন ধ্বসের মত মারাত্মক দুর্যোগগুলি। সবকিছুই আল্লাহপাকের হাতে ছেড়ে দিয়ে আমাদের সরকার কিংবা প্রশাসন মহা লুটপাটে ব্যস্ত।
শিল্পোন্নত দেশগুলোতে প্রত্যেকটি কারখানায় কাজ শুরুর আগে বিভিন্ন কতৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হয়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সরেজমিন পরিদর্শন করে কারখানায় বিদ্যমান শ্রমিকদের সুবিধাদির বিষয়ে সন্তুষ্ট হলেই কেবল কাজ করার অনুমতি মিলে। এছাড়াও সময়ে সময়ে তাদের নিয়মিত পরিদর্শন আছেই।
বাংলাদেশের ষ্টান্ডার্ড অনুসারে আমরা রাতারাতি বিদেশের সাথে তুলনায় যেতে পারি না। তবে কারখানায় কাজ করার নিরাপত্তা বিধানের অতি আবশ্যিক বিষয়গুলো তো নিশ্চিত করে রাখতে পারি। এসব বিষয়ে তো কোন আপোষ করা যায় না।
কথাসাহিত্যিক সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর লালসালু উপন্যাসের নায়িকা জমিলা তার স্বামী ভন্ডপীর মজিদের অত্যাচারে হাতপা বাঁধা অবস্থায় ঝড়ের মুখে পড়ে মারা যায়। মৃত জমিলার একটি পা রাখা ছিল মজিদের ব্যবসার কেন্দ্রবিন্দু কথিত মোদাচ্ছের পীরের মাজারের উপর। লেখক অসাধু ভন্ডদের মুখোশ উন্মোচন করতে গিয়ে এভাবেই প্রতীকী লাথি হেনেছিলেন আমাদের ঘুনেধরা সমাজের দেয়ালে।
সাভারের দুর্ঘটনা স্থল থেকে সারি সারি লাশ বের হয়ে আসছে। কত তাজা প্রাণ অকুস্থলে ঝরে গেছে। একই রকম ঘটনা বার বার হচ্ছে। আমাদের মূল্যবোধহীন সমাজব্যবস্থা এসব ব্যাপারে নির্বিকার। অধিকারবন্চিত শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা পরিশোধ না করে এই শ্রমিকদের প্রতি রাষ্ট্র ও সমাজব্যবস্থা বরাবরই তাদেরকে শোষণ করছে। এ এক নির্মম পরিহাস।
ধ্বংসস্তুপের মাঝে চাপা পড়া এক শ্রমিক বোনের বেরিয়ে আসা নিথর পা দেখে সৈয়দ ওয়ালী উল্লাহর উপন্যাসের নায়িকার কথা মনে পড়ল। লালসালু ছিল একটি কল্পনা। আর পায়ে আলতা ও নুপুর পরা এই বোনটি বাস্তবে তার জীবনের মূল্যে আমাদের দেখিয়ে দিলেন কতটা মূল্যহীন তারা। এই সমাজ, এই রাষ্ট্র কখনোই তাদের জীবন ও শ্রমের মূল্যায়ন করবে না।
বিষয়: বিবিধ
১৬৮৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন