লুঙ্গিতে গাত্রদাহ কেন?
লিখেছেন লিখেছেন শহর ইয়ার ১৪ এপ্রিল, ২০১৩, ০২:২৪:১২ রাত
সম্প্রতি ঢাকার বারিধারা এলাকায় নিয়ম করা হয়েছে লুঙ্গি পরে কেউ সেখানে ঢুকতে পারবে না। রিকশাচালকদের বাধ্য করা হচ্ছে প্যান্ট বা পাজামা পরতে। বিদেশী কূটনৈতিক মিশনগুলো বারিধারাতে অবস্থিত হওয়ায় সেটা অভিজাত এলাকা হিসাবে পরিগণিত। এরসাথে দেশের আমলা-মন্ত্রী-ব্যবসায়ীসহ নব্যধনীদের প্রথম পছন্দের স্থান হিসাবেও বারিধারা শীর্ষে। এসব লুটেরা ধনিক শ্রেণীর বেশিরভাগই ঘুষ, স্মাগলিং ও বাটপারি করে বড়লোক হয়েছেন। এখন বারিধারায় বিদেশীদের সাথে না থাকলে তাদের প্রেষ্টিজ থাকে না।
কে কোথায় থাকবেন তা একান্তই তাদের পছন্দ ও সামর্থ্যের ব্যাপার। কিন্তু একটি স্বাধীন দেশে সর্বসাধারণের বহুল ব্যবহৃত পোশাক পরে তথাকথিত বড়লোকদের এলাকায় যাওয়া যাবে না এমন নিয়ম মানতে পারছি না। সাধারণত বিশেষ জায়গায় পোশাকের একটা কোড দেওয়া হয় যা না পরলে সেখানে যাবার নিয়ম নেই। হতে পারে সেটা কোন ক্লাব বা সংঘটন। কিন্তু একটি জনবহুল এলাকায় লুঙ্গি পরে যাওয়া যাবে না এটা কেমন কথা?
জাতি হিসাবে আমরা বাঙালী। গ্রামপ্রধান আমাদের এইদেশে পুরুষদের প্রায় প্রত্যেকেই কোন না কোন সময় লুঙ্গি পরিধান করেন। অনেকেই বাইরে বের না হলেও ঘরে ঠিকই লুঙ্গি পরেন। কারন লুঙ্গি পরে যারা অভ্যস্ত তারা জানেন এটা কতটা আরামদায়ক। আর আমাদের দেশের নিম্ন আয়ের মানুষেরা সব সময়ই লুঙ্গি পরিধান করেন। এতে কারো জাত চলে যায় না।
এমুহুর্তে মনে পড়ছে একটি দৃশ্যের কথা। ২০০৩ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ফাইনাল ম্যাচে অষ্ট্রেলিয়া বনাম শ্রীলংকার খেলা শুরুর পূর্বে আলোচনা অনুষ্টান দেখছিলাম ইএসপিএনে। সেখানে আলোচক হিসাবে ছিলেন শ্রীলংকার ৯৬ সালের বিশ্বকাপজয়ী দলটির অধিনায়ক অর্জুনা রানাতুঙ্গা। সেই অনুষ্টানে তিনি এসেছিলেন শ্রীলংকার জাতীয় পোশাক পরে। উর্ধাঙ্গে পান্জাবীর মত কোর্তা এবং নীচে লুঙ্গির ন্যায় একটি কাপড় পরে। এবং সম্ভবত খালি পায়ে ছিলেন। কতঠুকু দেশপ্রেম থাকলে একজন মানুষ সারাবিশ্ব দেখছে এরকম অনুষ্টানে এভাবে এসে হাজির হতে পারে!
বিদেশী পর্যটকরা কোন দেশে যখন বেড়াতে যায় তখন স্বভাবতই সে দেশের পোশাক-আশাক, চালচরণ ও খাদ্যাভ্যাস নিয়ে জানতে আগ্রহী হয়। তারা স্যুট টাই প্যান্ট পরা ভদ্রলোকদের আয়েশী জীবন দেখতে নিশ্চয়ই কোন দেশে যায় না। সেজন্যই প্রতিটি দেশ এবং জাতি তাদের ঐতিহ্য রক্ষায় সচেষ্ট থাকে। অষ্ট্রেলিয়ার আদিবাসী সম্প্রদায় এবং আমেরিকার রেড ইন্ডিয়ানরা এখনও তাদের পুরনো ঐতিহ্য ছেড়ে দিয়ে সাহেবদের দেশে পুরোপুরি সাহেব বনে যায় নি!
পরিশেষে লুঙ্গিতে যাদের গাত্রদাহ তাদের বলি লুঙ্গি পরা লোকগুলো মুক্তিযুদ্ধ করেছিল বলেই দেশ স্বাধীন হয়েছিল। সেই লোকগুলো আত্মত্যাগ না করলে বারিধারায় আজ অনেকেই বাড়ি করা দূরের কথা রিকশা চালক হয়ে সেখানে প্রবেশ করতে পারলেই নিজেকে ধন্য মনে করতেন।
সবাইকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা।
বিষয়: বিবিধ
১৪১৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন