শাহবাগের সমাবেশে সেই বাপ্পাদিত্য ও ছাত্রলীগের হুমকি : মাহমুদুর রহমানকে খতম ও পিয়াস করীম আসিফ নজরুলের চামড়া তুলে নেয়া হবে।- দৈনিক আমার দেশ হতে সংকলিত।

লিখেছেন লিখেছেন ক্যাপ্টেন জন ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ১০:৪৭:৪৭ রাত

শাহবাগের সমাবেশ থেকে গতকাল বিকালে আমার দেশ সম্পাদক, পাঠকনন্দিত কলামিস্ট মাহমুদুর রহমান, বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী ড. পিয়াস করীম ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের শিক্ষক অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুলকে হুমকি দেয়া হয়েছে। মাহমুদুর রহমানকে খতম করে দেয়া এবং পিয়াস করীম ও আসিফ নজরুলের পিঠের চামড়া তুলে নেয়ার হুমকি দেয়া হয়।

গতকাল বিকালে আয়োজিত গণজাগরণের মঞ্চে বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রীর সভাপতি ও ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবরের ভয়ঙ্কর খুনি বাপ্পাদিত্য বসু বলেন, ‘আমার দেশ সম্পাদক আপনাকে বলছি, শাহবাগ আন্দোলন নিয়ে আর একটা উল্টাপাল্টা কথা লিখলে আপনাকে খতম করা হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমার দেশ, নয়া দিগন্ত, সংগ্রাম ও দিগন্ত টিভি বন্ধ করতে হবে। এসব গণমাধ্যম দেশের শত্রু আর রাজাকার কুলাঙ্গারদের সহযোগী। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে বিশ্বাসীরা এসব গণমাধ্যম বর্জন করে এগুলোর সাংবাদিকদের প্রতিহত করুন।’ বাপ্পাদিত্য বসুর বক্তব্যের প্রায় পুরো অংশজুড়ে ছিল মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার ও তাকে খতম করে দেয়ার হুমকি।

বাপ্পাদিত্যর পর কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ বক্তব্যে বলেন, ‘রাজাকারদের সহযোগী আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের চামড়া আমরা তুলে নেব। আমার দেশ আমাদের আন্দোলনের বিরুদ্ধে মনগড়া রিপোর্ট করছে।’ এ সময় তিনি মাহমুদুর রহমানের উদ্দেশে সমাবেশস্থলের দর্শক-শ্রোতাদের কাছে প্রশ্ন রাখেন ‘মুক্তিযোদ্ধাদের বাংলায় রাজাকারদের সহযোগীদের এত সাহস হয় কী করে?’

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম বলেন, ‘টিভি চ্যানেলের টকশো অনুষ্ঠানে কিছু কুলাঙ্গার শাহবাগ আন্দোলনের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করছে।’ বক্তব্যে ছাত্রলীগের ওই নেতা ড. পিয়াস করীম, অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুলের নাম উল্লেখ করে বলেন, ‘সাবধান করে দিচ্ছি, শাহবাগ আন্দোলন নিয়ে আর উল্টাপাল্টা কথা বললে আপনাদেরও নির্মূল করা হবে। আপনাদের পিঠের চামড়া থাকবে না।’

গতকাল শাহবাগের মঞ্চে আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের পিঠের চামড়া তুলে নেয়ার হুমকি দিয়ে আরও বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ছাত্রলীগ সভাপতি মেহেদি হাসান মোল্লা, সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক, ছাত্র নেতা সাদেকুর রহমান, ছাত্র ঐক্যফোরামের আহ্বায়ক সোহান সোহরাব, ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হাসান তারেক, বিপ্লবী ছাত্র সংহতির সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল হাসান প্রমুখ। এ সময় মঞ্চে অন্যদের মধ্যে ভাষাসৈনিক আহমদ রফিক, হালিমা খাতুন, আওয়ামীপন্থী সাংস্কৃতিক সংগঠক নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ও আওয়ামীপন্থী শিক্ষক অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন, লেখক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, অধ্যাপক ড. আবুল বারকাতসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামী লীগ সমর্থিত আরও কয়েক শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন। তারা কেউ দেশের বিশিষ্ট সম্পাদক, কলামিস্ট ও বুদ্ধিজীবীকে খতম এবং তাদের পিঠের চামড়া তুলে নেয়ার হুমকি দেয়া বক্তব্যের প্রতিবাদ করেননি। সমাবেশ সঞ্চালনা করেন সাংবাদিক অঞ্জয় রায়। এতে সভাপতিত্ব করেন কথিত ব্লগার ডা. ইমরান এইচ সরকার।

ভয়ঙ্কর খুনি বাপ্পাদিত্য বসু : ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর মানুষ খুনের পর লাশের ওপর নৃত্য করেছিল যে খুনি, সেই হলো বাপ্পাদিত্য বসু। ২৮ অক্টোবর রাজধানীর পল্টনে জামায়াত-শিবির কর্মীদের লগি-বৈঠা দিয়ে নির্মমভাবে হত্যার পর তাদের লাশের ওপর নৃত্য করেছিল সে। ২৮ অক্টোবর জামায়াতের ডাকা সমাবেশের প্রস্তুতিকালে একদল চরমপন্থী তার নেতৃত্বে হামলা চালায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে ছাত্রত্ব বাতিল হয়ে গেছে এ খুনির। ২০০৫-২০০৬ সালে ছাত্রমৈত্রীর কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক, একই সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক ছিল সে। ২০০৬-২০০৭ সেশনে ছাত্রমৈত্রীর কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ছিল সে। বর্তমানে সে ওয়ার্কার্স পার্টির ছাত্র সংগঠন ছাত্রমৈত্রীর কেন্দ্রীয় সভাপতি। হঠাত্ ব্লগার বনে গিয়ে গণমাধ্যম বন্ধের হুমকির পাশাপাশি এবার দেশের দুঃসাহসী এক সম্পাদককে খতম করার প্রকাশ্য হুমকি দেয়। এর আগে ৮ ফেব্রুয়ারি ব্লগার পরিচয়ে বাপ্পাদিত্য শাহবাগের সমাবেশে ভিন্নমতের গণমাধ্যম বন্ধের হুমকি দেয়।

জানা যায়, যশোরের বাম-চরমপন্থীদের নিয়ে একটি বিশাল জঙ্গি গ্রুপ রয়েছে বাপ্পাদিত্য বসুর। ওই গ্রুপটি যশোর অঞ্চলে খুন-লুটপাটের সঙ্গে জড়িত। মাদকাসক্ত বাপ্পাদিত্য আর্থিক টানাপড়েনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর চুরি ছিনতাই শুরু করে বলেও অভিযোগও রয়েছে। ছাত্রত্ব বাতিল হয়ে যাওয়ার পর প্রকাশ্য রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকলেও চরমপন্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে শুরু করে। যশোর জেলার সদর উপজেলার রুপদিয়া গ্রামে একটি সাধারণ পরিবারে ১৯৮৩ সালের ২১ আগস্ট তার জন্ম। ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়াকালে বামপন্থী রাজনীতির সঙ্গে জড়ায় সে। এরপর গড়ে ওঠে চরমপন্থীদের সঙ্গে তার সখ্য। ২৮ অক্টোবর পল্টনে লগি-বৈঠার তাণ্ডবের পর এলাকার মানুষ তাকে চিনতে শুরু করে। বেশিরভাগ মানুষই তাকে চেনে ২৮ অক্টোবরের খুনি হিসেবে।

জানা যায়, যশোর অঞ্চলে এখন আর আগের মতো সুবিধা করতে পারছে না চরমপন্থীরা। তাই বাপ্পাদিত্যের মতো দুষ্কৃতকারীরা অন্যান্য অঞ্চলের চরমপন্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছে।

বিষয়: রাজনীতি

১২৪৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File