একজন দাড়িওয়ালা পাত্র
লিখেছেন লিখেছেন উম্মু রাইশা ১০ জানুয়ারি, ২০১৪, ০৯:২৫:০৫ রাত
ঘনসবুজ অরন্যঘেরা গাজীপুরে একটা ফ্লাটের নীচ তলায় থাকে শায়লারা। দুবোন একভাই। শায়লা ঢাকা ইউনিভার্সিটি তে ফিজিক্স ডিপার্টমেন্টে পড়ে। ওদের ফ্যামিলিতে বড় আপা নাহিদের ইনফ্লুয়েন্স অনেক বেশী। নাহিদ বিবাহিত,এক সন্তানের মা।শায়লার বাবা আর্মি থেকে অবসর নিয়েছে।আলাভুলা মানুষ।সংসারে থেকেও মন নেই। তাই ফ্যামিলির ডিসিশান গুলি মা আর নাহিদ মিলেই নেয়। বাবাকে কিছু কেউ বলেওনা
নাহিদদের উপরের ফ্লাটে থাকেন কর্নেল হামিদ আংকেল। উনার ওয়াইফ সামিরার ভাবসাব একটুও কর্নেলের ওয়াইফের মত না। খুবই মিষ্টি করে কথা বলেন। এ স্বভাবটা হয়েছে উনার একটা শখের জন্য।উনি হলেন সফল ঘটক। এজন্য উনি কোন টাকাপয়সা নেননা। কিন্তু উনার কথা কেউ ফেলতে পারেনা। নীচের ফ্লাটে একজন বিয়ের উপযুক্ত মেয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন আর উনি চুপ থাকবেন?
উনি একজন পাত্র নিয়ে আসলেন। বুয়েটের মেরিন থেকে পাশ করা । উনারই একজন আত্মীয়। বারবার বলছিলেন,
খুব ভাল ছেলে আমি জানি তাকে। উনি নাহিদকেই সব কথা বলএন,বুঝে ফেলেছেন এ সংসারে নাহিদই প্রধান। নাহিদ জানতে চাইছিল,এ ছেলের ত স হজেই বিয়ে হবার কথা,এতদিন পড়ে আছে কেন? ৩০ বছর বয়স।
ওর দাড়ি আছে।কেউ ওকে বিয়ে করতে চায়না।
শায়লা ইউনিভার্সিটিতে যাবার পর একটু হুজুর হতে শুরু করেছে।মাথায় কাপড় এখনো দেয়না,বাট দেবার জন্য মনটাকে রেডি করছে।একটা ভয় দেখিয়ে রেখেছে তার মা। মাথায় কাপড় দিলে দাড়িওয়ালা ছাড়া বিয়ে হবেনা। এখনো তার মন কোনো দাড়িওয়ালাকে মেনে নিতে রেডি হয়নি। কিন্তু সে আল্লাহকে সবার উপরে স্হান দিতে চায়। তাই নাহিদের কাছে ছেলের কথা শুনে আমতা আমতা করে দেখা করতে রাজী হয়ে গেল।
ছেলে মেয়ের দেখা হবে ঢাকার একটা বাসায়।সামিরা আন্টিরএকজন আত্মীয়র বাসায়। শায়লা ধরেই নিয়েছে ছেলের সাথে কথা বলার সময় কেউ সামনে থাকবে।ও ভাবছিল ছেলে হুজুর বা ইসলামিক মাইন্ডের। কিন্তু দেখা গেল ব্যাপারটা সেরকম কিছু না। ছেলে একাই রইল তার সাথে এক রুমে।ছেলের নাম আবীর।
আপনি দাড়ি রেখেছেন কেন?শায়লা ভাবছিল সুন্নতের কথা শুনলে তার শান্তি লাগবে।
আমারভাল লাগে তাই।
মানে?
দাড়ি রাখতে আমারভাল লাগে। বিয়ের পর কেউ আমার দাড়িতে হাত বুলিয়ে দিবে।আমার মজা লাগবে।
শায়লা অবাক হয়ে একদমম চুপ হয়ে গেল। আবীর বকবক করেই চলছে।শায়লার কোনো কিছু ভাল লাগবেকিনা এসব নিয়ে তার কোনো মাথা ব্যথা নাই। আবীর সরাসরি বলে ফেলল শায়লাকে যে তার তাকে পছন্দ হয়েছে।শায়লা জানতে চাইল,
কেন আমাকে বিয়ে করতে চান?
তাহলে আমি আমার বন্ধুকে বলতে পারব যে দাড়ি রেখে ও ভাল বিয়ে করা যায়।
নাহিদ রাতে শায়লা কে নিয়ে বসল।
আপু, আমার তাকে পছন্দ হয়নি।
তোর পছন্দের কথা জানতে চাইনি, ছেলের তোকে পছন্দ হয়েছে কিনা জানতে চাচ্ছি।
শায়লা অবাক হয়ে নাহিদের দিকে চেয়ে রইল।মায়ের কাছে গেল।
মা, আমার তাকে পছন্দ হয়নি।
তুইনা হুজুর হবি, দাড়িওয়ালা দেখে হুজুর হওয়া বাদ হয়ে গেল।
কেউ তার কোনো কথাই কানে নিলনা। শায়লা শেষে বলল যে সে আবার ছেলের সাথে কথা বলতে চায়।একটা কিছু ছেলের নেগেটিভ বের করতে হবে যাতে নাহিদ আপা রাজী না হয়।
আপনার টাকা পয়সা কেমন?
দেখ, আমি একটা চাকরি করি, গ্রামে টাকা দিতে হয়। টাকাপয়সা বেশী আমি তোমাকে দিতে পারবনা, তবে ভালবাসায় ভরিয়ে দিব।
একথা শুনে শায়লা একটু হাসল। সে বুঝেছে নাহিদকে কি বলতে হবে।
বিষয়: বিবিধ
৩৭৪৫ বার পঠিত, ৩৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
দাঁড়িওয়ালা হলেও ছেলে কিন্তু বুয়েট থেকে পাশ করা মেরিন ইন্জিনিয়ার । শীপে শীপে সীতে সীতে ঘুরবে । প্রচুর টাকা বেতন ।
তাই শায়লা চেয়েছিল এরকম কিছু একটা
'' আপনার টাকা পয়সা কেমন?
দেখ, আমি একটা চাকরি করি, গ্রামে টাকা দিতে হয়। টাকাপয়সা বেশী আমি তোমাকে দিতে পারবনা, তবে ভালবাসায় ভরিয়ে দিব।''
কিন্তু ছেলের এ কথা শুনে তো তার মাথা নষ্ট হবার যোগাড়
০ বাবা সামরিক অফিসার (অবঃ) , আলাভোলা টাইপের মানুষ - উনি কি ডিওএইচএস পর বাসা পান নি ? নাকি গাজীপূরে ডিওএইচএস আছে ?
০ ২ বোন ১ ভাই । বড় বোনটি বিবাহিতা , ভাইয়ের কোন খবর বলা হয় নাই - মানে ফ্যামিলির অবস্থা যে '' টাকা পয়সা কোন ব্যাপারই না '' এরকম অবস্থা না ।
০ ঢাবির ছাত্রী । হয় আসা যাওয়া করে না হয় হোস্টেলে থাকে - সেটাও '' টাকা পয়সা ব্যাপারই না '' এরকম না ।
টাকা পয়সা ব্যাপার না হলে ২য় সাক্ষাতে ছেলের কাছে টাকার কথা জিজ্ঞেস করলো কেন ?
ফ্যামিলি যে খুব স্বচ্ছল যার জন্য বলতে পারে '' টাকা পয়সা ব্যাপার না '' এরকম না । সেই ফ্যামিলিতে থেকে শায়লার কাছে কেন '' টাকা পয়সা কোন ব্যাপার না '' হবে ?
ডালমে জরুর কুছ কালা হ্যায়
@ রাইশা ম্যাম :
আমার বুদ্ধি যে কম এটা আমিও মানি ।
কম বুদ্ধি হলে শিখার কিছু থাকে , বেশী বুদ্ধি হলে তাল গোল পাকিয়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে ।
ছেলে গ্রামে তার বাবা মায়ের প্রতি টাকা পাঠাতে চেয়েছে যে বাবা মা তাকে গ্রামের পরিবেশ থেকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ , শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপিঠে পাটানোর জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে গেছেন - আল'হামদুলিল্লাহ । বাবা মার জন্য সে যে টাকা পাঠাতে চেয়েছে তা তো শায়লার ভাইও করতো এবং এটাই হওয়া উচিত ।
কিন্তু শায়লার তো চাই আবীরের টাকা ভোগ করার একচ্ছত্র অধিকার । আবীর টাকা যদি গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয় এবং যদি বলে তাকে টাকা পয়সা বেশী দিতে পারবে না - তাহলে শায়লার তাকে বিয়ে করার উদ্দেশ্যটাই কি ?
আবীর বেঁচে গেছে , কারণ শায়লা ঢাবির মেয়ে । আর যে মেয়ের কাছে ভালবাসার চেয়ে টাকা বড় সে যে টাকা বেশী দেখলে তাকে ছেড়ে আর কারও দিকে সরে যাবে তা তার নিশ্চয়তা নেই ।
আপু আমারও দাড়ি আছে --আপনার লেখার কথার মত যেন হয় আমার ক্ষেত্রে -- দোয়া করবেন
আপু আমি --
নাস্তিক টাইপের।
ইহাও স্টাইল ।
মেয়েরা মুখে ধার্মিক ছেলে চাই বললেও মনে মনে টাকা পয়সাওয়ালা ছেলেই চায় যেটা রাইশা আপু তার গল্পে সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন ।
আর ছেলেদের মধ্যে এরকম লুকোছাপা নেই , তারা স্ট্রেট ফরোয়ার্ড । । কথা সম্পূর্ণ না বলে বা মিক্সড কথা বলে বা বানিয়ে কথা বলে - পরে তা দিয়ে পানি ঘোলা করে মাছ শিকার করা ছেলেদের স্বভাব পরিপন্থী ।
লেখাটির জন্য ধন্যবাদ ০----
মন্তব্য করতে লগইন করুন