অটিষ্টিক সোনামনিরা
লিখেছেন লিখেছেন উম্মু রাইশা ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৩, ১০:২৬:০৯ রাত
আখদানের সাথে দুএকটা থেরাপী সেন্টারে যাই প্রতিদিনই। সেখানে সব ধরনের অটিষ্টিক বাচ্চাদের সাথে দেখা হয় আমার। ওদের মিষ্টি মধুর কান্ডকারখানা দেখে আমরা মাবাবারা হাসি, আবার মায়াও লাগে। তারই কিছু ঘটনা শেয়ার করব এখানে।
অটিষ্টিক বাচ্চারা খুব নিয়ম মেনে চলতে চায়। কোনো কিছু নিয়মের বাইরে দেখলে তারা খুব অস হায় হয়ে যায়। একদিন একজন ভদ্রলোক এলেন অটিজম সেন্টারে। তার মাথায় কোনো চুল নাই। আট বছরের জ্যাকব তাকে দেখে একদম অবাক হয়ে গেল। তার ধারনা মানুষ মাত্রই মাথায় চুল থাকবে। তাই সে মাকে বলল,
মা দেখেছ, ইনার মাথায় একটাও চুল নাই।
আমরা সবাই একটু বিব্রত। ভদ্রলোক সাথে সাথে ই বুঝে ফেললেন জ্যাকবের সমস্যাটা। হেসে দিয়ে বললেন,
তাই ত আমার মাথায় একটাও চুল নাই।জ্যাকব দেখলাম মাকে আবার জিজ্ঞাসা করছে,
মা ওর চুলগুলি কোথায় গেল?
এবার আমরা সবাই হাসলাম। ভদ্রলোকও বললেন
তাই ত আমার চুলগুলি কোথায় গেল?
কোনো কোনো বাচ্চা দেখা যেত আমার স্কার্ফের ভিতর হাত দিত। ওরা নিশ্চিত হতে চাইত যে আমার চুল আছে কিনা। এখানে সব মাবাবাই বুঝে সমস্যাগুলি তাই কেউ কোনো বাচ্চার কান্ড কারখানায় রাগ করতনা।
একজন চাইনিজ বাচ্চা দেখলাম আমার কাছে এসে বলল
This is a mommy. Please say hi mommy.
আরেকজন বাংলাদেশী বাচ্চা সামারা। সে কারোবাসায় গেলেই বাথরুমে যাবে প্রথমে।তারপর সাবান শ্যাম্পু নিয়ে খেলবে। আবার যাবার সময় এগুলি দুহাতে নিয়ে যাবে। আমার বাসা থেকে একবার দুটা শ্যাম্পু দুহাতে শক্ত করে ধরে নিয়ে যাচ্চে।ভাবী কিছুতেই হাত থেকে নিতে পারছেনা। আমি বারবার বলছি ভাবীকে যে কোনো অসুবিধা নাই। ভাই ভাবী দুজনেই বিব্রত। তাদের স হজ করার জন্য আখদানের আব্বু বলল,
আরে ভাই, শিখাবেন দামী জিনিষ ধরতে,তা না দুটাকা দামের সাবান শ্যাম্পু। দামী জিনিষ ধরলেও ত বুঝতাম কাজের হয়েছে। সবাই হেসে দিল।
আখদানের নিয়ম হল সেন্টার টেবিলে কোনোও শোপিস রাখা যাবেনা। কোনো বাসায় গেলেই সেন্টার টেবিলের জিনিষ টান মেরে ফেলে দিবে। ওর সেন্টারে ওকে একটা প্রোগ্রাম শিখাচ্ছিল,
get your shoes। থেরাপিষ্ট জুতা লুকিয়ে রাখে, আখদানকে খেলতে দিয়ে, তারপর তাকে জুতা আনতে বলে। আখদান করে কি থেরাপিষ্ট জুতা লুকানোর সময় খেলা বাদ দিয়ে বিভিন্ণভাবে মাথা উচু করে চোখ দিয়ে বুঝার চেষ্টা করে কোথায় লুকানো হচ্ছে।আর থেরাপিষ্ট টের পেলে আবার ওকে খেলার জন্য ভুলায়। আর আমরা হাসি। আখদান কে ওরা বলে great sneaker, বাংলায় ভাল চোর?
এই অটিজম কমিউনিটিতেও দেখি বিশ্বাসী অবিশ্বাসী দুই দল। একদল বিশ্বাস করে ছেলে বা মেয়ে ভাল হয়ে যাবে আরেকদল তা কোনোদিন বিশ্বাস করেনা। আল্লাহর করুনায় প্রথম দলের অনেক বাচ্চাকেই সুস্হ হয়ে যেতে দেখেছি। তখন দ্বিতীয় দল সাথে সাথেই কমেন্ট করে যে তারা অটিষ্টিকই ছিলনা। দ্বিতীয় দলের মানুষগুলি এত ষ্টাবোর্ন অচিন্তানীয়। তাদেরবাচ্চাদের অনেক সময় দেখা যায় জিআই বা গাটের সমস্যায় ভুগছে,কিন্তু তারা কিছু করবেনা।ডাক্তার বলেছে যে অটিজম ভাল হবেনা ব্যস তারা এটা ধরে নিয়ে শুধুমাত্র থেরাপী করবে। আমি দেখেছি যে প্রথম দলের লোকই বেশী
নীচে একজন অটিষ্টিক শিশুর ক্লাসওয়ার্ক দিলাম। ওকে বলা হয়েছে নীচের শব্দগুলি ক্রমানুসারে সাজাও। ও এক্সাক্টলি তাই করেছে:
বিষয়: বিবিধ
১৫৯৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন