আশ্রয়ের সন্ধানে

লিখেছেন লিখেছেন উম্মু রাইশা ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৩, ১০:৪৫:৩০ রাত

শায়লা ভেবে পাচ্ছিলনা সে কি করবে। সে ২০ বছরের একজন তরুনী।বাবা মারা যাবার পর সে মায়ের সাথে বোনের বাসায় থাকে। বাবা আজমল হোসেন সরকারি চাকুরে ছিলেন।মারা যাবার পর তারা একটু বিপদেই পড়ে গেছেন।কারন তার আজমল সাহেব তার সমস্ত টাকা পয়সা সম্পত্তি দানপত্র করে ছোট ভাইকে দিয়ে গিয়েছেন।

শায়লা ভাবে তার বাবা ছোটভাইকে কত ভালই না বাসতেন।ছোটভাই যখন যা চেয়েছেন দাবী মিটিয়েছেন। সরকারি চাকরিতে লোন নিয়ে ভাইকে প্রাইভেটে পড়িয়েছেন। কোনোদিন ভাইকে টিউশনীও করতে দেননি।তার মনে পড়ে ছোটচাচা আকমল দুদিন পরপর এসেই বাসায় বসে থাকতেন করুন মুখ করে। আজমল সাহেবের বিশ্বাস আকমল কখনো খাআপ কাজ করতে পারেননা।

ছোট চাচা যখন প্রাইভেটে ভর্তি হল বাবা তাকে এক সেমিষ্টারের সম্পূর্ন টাকা দিয়েছিলেন। শায়লা তখন ছোট দশ বছরের। তাও তার মনে আছে। ছোটচাচা বাসায় আসলেন একদিন মুখ কালো করে।বাবা বাসায় নেই। মার কাছেই এসেছেন।তাকে বিপদ থেকে উদ্ধার করতে হবে। কারন উনি সবটাকা তাস খেলে উড়িয়ে দিয়েছেন।আর ভাইকে জানানো যাবেনা। শায়লার মা খাদিজা তার গয়নার বাক্স এনে তার হাতে দিলেন।

শায়লার মা ছিল প্রচন্ড পতিভক্ত। তার স্বামী শুনলে কষ্ট পাবে সেজন্য একাজটা করেছেন। সে গ হনার বাক্স এখন থাকলে কাজ দিত। বাবা মারা যাবার পর এভাবে বোনের বাসায় থাকতে হতনা।

বাবার টাকাপয়সাগুলি চাইতে তারা ছোটচাচার কাছে গিয়েছিল।ছোটচাচা বিয়ে করে দাদিকে নিয়ে থাকেন। আকমল সাহেবকে তারা বললেন টাকাগুলি না দিলেও এটলিষ্ট গাজীপুরে যে জমিটা আছে তা যদি দিতেন। আকমল পরিষ্কার বলে দিলেন,

তোর বাবা অনেক লোন করেছে, এসব হাবিজাবি কথা।দাদী করুণ সুরে কাদতে কাদতে বলতে থাকেন

সইবেনারে এই টাকা তোর সইবেনা। দিয়ে দে যার টাকা তাকে।

মা তুমি চুপ কর।

দাদীর খুনখুনে কান্না ব্যাকগ্রাউন্দ মিউজিকের মত বাজতেই থাকে।

ওরা বুঝে যে লাভ হবেনা। তাই চলে আসে।শায়লা ভাবে যে আজকে যদি ইসলামি রাষ্ট্র থাকত, চাচা বাধ্য হত তাদের একটা আশ্রয় দিতে।বাবাই কি পারত তখন সব ভাইকে দিয়ে দিতে?

বাবা একটা কাজই ভাল করেছিলেন। নীতার বিয়েটা দি্যে গিয়েছেন।কিন্ত এখানেও সমস্যা।সুযোগ পেলে কেউ ছাড়েনা। দুলাভাই মুহিত আগে কখনই এরকম কিছু করেনি। ওকে দেখলেই বিশ্রী ইংগিত দেয়। শায়লা হোষ্টেলে কিছুদিন ছিল।সেসময় মুহিত প্রতিদিন এসে ওকে নানারকম প্রস্তাব দিত।শায়লা পরে মনে করল বাসায় মা ত আছে। তাই দুলাভাইয়ের বাসায় সে থাকার ডিসিশান নিল। তার মনে ছিল প্রত্যয় যে ভাল রেজাল্ট করতে হবে।শায়লা একদিন মাকে বলে বসে,

মা আমরা মামা সাথে কেন যোগাযোগ করিনা?

তোর বাবা বউয়ের শ্বশুরবাড়ির সাথে যোগাযোগ পছন্দ করতনা,তাই তোর বাবার জন্য ওদের সাথে মিশা কমিয়ে দিয়েছিলাম। এখন কোন মুখে যাই ওদের সামনে?

মা,বাবা ত আল্লাহ না।তার ভুল কথা তুমি শোনতা বলেই আজ আমাদের এত সমস্যা।

সংসারে শান্তির জন্য করতামরে মা

কত শান্ত পাচ্ছ এখন?

শায়লা ঠিক করে সে মামার বাসাতেই যাবে।একটু দেখে আসবে। এখন বিপদে পড়ে যেতে লজ্জা লাগলেও যেতে চায় সে।

মামা জামালের বাসা যাত্রাবাড়ি। সে একা একা যেয়ে বাসাতে বসে থাকে। কোনো কথাই সে বলেনা। জামাল তাকে দেখে একটু পড়েই বলে,

আমার বাসায় থাকবি মা? তোর বাবা মারা যাবার পর অনেকবার চেয়েছি আনতে। কিন্তু আমি গরীব মানুষ। তাই তোদের হয়ত ঠিকমত যত্ন হবেনা এইভেবে চুপ করে আছি।

শায়লার চোখ দিয়ে পানি গড়াতে থাকে। বলে,

মামি কিছু বলবেনা?

দাড়া তোর মামীকে ডেকে আনি। মামি এসেই বলেন,

একশর্তে আমার বাসায় থাকতে পারবে।

শায়লা চমকে মামীর দিকে তাকান।

তোমার মামার সাথে ঝগড়ার সময় আমার দলে থাকতে হে।

মামা সাথে সাথে বলে উঠেন,

আমার ভাগ্নি থাকবে তোমার দলে?

হ্যা, এখনই একটা ঝগড়ার কারনও ঘটেছে।

কি?

তুমি একটা ভাল কাজ করবা তার জন্য আমার পারমিশন লাগবে কেন?

শায়লার মন ভাল হয়ে যায়। সে সাথে সাথেই বলে উঠে

ঠিকই মামা, মামিই ঠিক।

বলেন

মামা সাথে সাথে বলেন

ষড়যন্ত্র, সব ষড়যন্ত্র

পনের বছর পর। শায়লা বিদেশ থেকে মামা আর মায়ের জন্য পাশাপাশি দুটা আ্যাপার্টমেন্ট কিনে দিয়েছে। গরমের ছুটিতে সে বাসায় এসেছে। দুই বাচ্চা আর জামাইকে নিয়ে। এমন সময় ছোটচাচা এসেছে তাদের বাসায়। তার আশ্রয়ের প্রয়োজন। ছেলের বউ তাকে বাসা থেকে বের করে দিয়েছে। শায়লা সেকথা শুনে হাসতেই থাকে।তার ভাল লাগে আল্লাহর এ খেলা।

বিষয়: বিবিধ

৩২৭৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File