পর্দা ও পুরুষ
লিখেছেন লিখেছেন উম্মু রাইশা ১১ নভেম্বর, ২০১৩, ১০:৩৬:৫৩ রাত
মিতা ভেবে পাচ্ছিলনা সমস্যা কি তার একার হয়। সে ১২ বছরের একটা মেয়ে। তার মায়ের ধারনা উনি প্রগতিশীল। মিতার বড়বোন পলিকে নিয়ে চিন্তা হয়না তার। চিন্তা মিতা কে নিয়েই। যে কোনো জিনিষ নিয়েই মিতা অনেক ভাবে।
চাচাত ভাই সোহাগ প্রায়ই বাসায় বেড়াতে আসেন। উনি ঢাকায় থাকেন। ক্লাস টেনে পড়েন।পলি পড়ে নাইনে। সোহাগ আসলে বাসায় একটু আনন্দ শুরু হয়ে যায়। গল্পের ডালি খুলে সবাই। কিন্তু সমস্যা হয় মিতার। সোহাগ ভাই খুবই হ্যান্ডসাম, কথাবার্তায় খুবই স্মার্ট। মিতার পড়ায় মন বসেনা,তার অস্হির লাগে। সোহাগ ভাই মাঝে আঝে এসে তার মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দিয়ে যায়। মিতা শুধু পড়া না,কোনো কিছুই করতে পারেনা। অথচ তারা তেমন কথাও বলেনা। আবার সোহাগ ভাই চলে গেলে মিতার আর কোনো সমস্যা হয়না।
মিতা ভাবে মা ত অনেক বড় তাই তার সমস্যাটা বুঝবেন। তাই সোহাগ ভাই একবার চলে গেলে মিতা রান্নাঘরে মায়ের কাছে ঘুরঘুর করতে লাগল।
কি ব্যাপার,কিছু বলবি?
মিতা মায়ের দিকে তাকাল। সোহাগ যখনই আসে চাচীর জন্য গিফট নিয়ে আসেন। তারই একটা শাড়ি পড়ে খুশীতে ঝলমল করতে করতে রান্না করছেন মা।
ইয়ে, আম্মা,সোহাগ ভাইকে নিয়ে একটা কথা
মা সাথহে সাথে চমকে তাকান,
কি?
উনাকে বলতে পার একটু কম আসতে,
কেন?
আমার অসুবিধা হয়
কি অসুবিধা?সোহাগ কি খারাপ ছেলে?
না না, তা নয়, আমারই অসুবিধা হয়
দেখ মিতা,তাকে বড় ভাইয়ের মত দেখবি,মনটাকে বড় কর
মিতার হঠাৎ মনে হতে থাকে তার মন কি ছোট। তাহলে তার কেন অস্হির লাগে? পলি আপার মনটা মনে হয় বড়,সেত ঠিকমতি কাজটাজ করে, আবার সোহাগ ভাইয়ের সাথে ঘন্টার পর ঘন্টা গল্প করে। মিতা আসলে একটা বোকা মেয়ে।পলিআপার কাছে যায় সে। আপা বলে,
শোন কালকে একটু দর্জির দোকানে যাবি? মেহেদী ট্রেইলার্স, আমার পরীক্ষা না হলে আমিই যেতাম।
মিতা রাজী হয়ে গেল। এই দোকানের দর্জি কঠিন মাওলানা। কখনই তার দিকে তাকায়নি মিতা। কিন্তু আজকে সে একটা ভুল করে পাচ টাকার নোট বেশী দিয়ে ফেলেছে।
আপা ,আপনার নোট। শুনে চমকে তাকাতেই মাওলানার চোখে চোখ পড়ে গেল। মাওলানা সাথে সাথে চোখ সরিয়ে নিল। কিন্তু মিতা যেন আর নড়তেই পারছিলনা। কি সুন্দর কাজলটানা চোখ, দাড়ি অদৃশ্য হয়ে গেল।
সারাটা পথ অস্হির থাকল মিতা।বাসায় এসে ও কাজ করতে পারছেনা। পলি আপা তাকে দেখেই বলল'
কি, মাওলানার চোখ দেখছিলি?
মানে?
খুব সুন্দর,তাইনা? মন অস্হির করে।
আপা,তোমারও মন অস্হির হয়?
আমিও মানুষ,কিন্তু তোর মত এত ভাবিনা, যখন মন অস্হির
হয়, হয়, আবার একটু পড়ে নিজেকে সামলে ফেলি, আবার দরকার মনে পড়লে পাচ টাকা বেশী নিয়ে যাই দেখার জন্য।
মানে?
আরে,তুই কি গাধা নাকি? আমরা সব বান্ধবীই তাই করি।আর শোন এগুলি নিয়ে বেশী ভাববিনা। আমাদের অনেক বড় হতে হবে। সোহাগের মত লোককে এখন ভাল লাগবে,তাকে দিয়ে জীবন চলবেনা।
মিতার মনে হয় এটা ঠিক না। ওর এই মন অস্হির হওয়াটা ভাল লাগেনা। কিন্তু মাকে সে কিছুই বুঝাতে পারেনা। মা আবার ওকে প্রতিদিন তাকেএক ঘন্টা জোর কররে হিন্দী সিনেমা দেখায় আর বিজ্ঞের মত বলবেন,
হিন্দী সিনেমা দেখে মন ফ্রেশ করে আবার পড়তে বসবি
কিন্তু মিতার মন ফ্রেশ হয়না,তার মনে হয় শুধু একবার যদি আমির খান তার দিকে চেয়ে হাসত। তার কষ্ট হতে থাকে।
শেফালী একটি প্রচন্ড ইসলামিক পরিবারের মেয়ে। তাকে নিশ্চয় কাজিনের সাথে একা থাকতে হয়না, হিন্দী ছবিও দেখতে হয়না, যে কষ্ট আর অস্হিরতার মধ্যে মিতাকে যেতে হয় তা থেকে শেফালী মুক্ত। সে রাগের সাথে শেফালীকে দেখতে থাকে।
বিষয়: বিবিধ
১৯৪৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন