কাজের মেয়ে সমাচার-১
লিখেছেন লিখেছেন উম্মু রাইশা ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ০২:২৪:০৫ রাত
বর্নালী আ্যপার্টমেন্টের দুটা ফ্লাটের বাসিন্দা একেবারে দুইরকম। হাফিয সাহেব পুরা ক্যাশ দিয়ে বাড়ি কিনেছেন, কোনও সুদের ধারেকাছে নেই। বাসায় থাকেন মা, বোন রুম্পা, স্ত্রী সিমি, মেয়ে মায়মুনা আর কাজের মেয়ে সুফিয়া। আর পাশের বাসায় থাকেন আসাদ সাহেব,তার কন্যা পাপড়ি,স্ত্রী শিরি আর কাজের ছেলে রফিক।আসাদ সাহেব আবার ধর্মকর্মের ধার ধারেনা।যা নিজের ঠিকমনে হয় তাই করেন। তাই দুই বাড়ির সমস্যার কোনো মিল থাকার কথা না,মিল একটা আছে ,তা পরে বলা যাবে।
হাফিয সাহেব মাসের বেতন পেলে কিছুটা নিজের জন্য রেখে বাকীটা মাকে দিয়ে দেন। অফিস থেকে বাসায় এসে প্রথমে রুম্পাকে ডাক দেন, তাকে কোলে নিয়ে বসান, হাতে মাঝে মাঝে কিছু দেন। আঠার বছরের রুম্পা খুব খুশী হয়ে যান। খাবার কিছু আনলে মা আর রুম্পা ভাগ করে খান,কখনো সিমি আর মায়মুনাকে ডাকেননা। সিমি হয়ত একদিন বলতে গিয়েছিল,তাতে হাফিয সাহেব পরিষ্কার বললেন,
আমার বোন যা খুশি করবে,তাকে কিছু বলবেনা, এটা আমাদের বাসা ও হয়ত মনে কষ্ট পাবে
আর মায়মুনা যে কষ্ট পায়
মায়মুনাকে বুঝতে হবে
ছয় বছরের বাচ্চাকে বুঝতে হবে? তুমি ওদের দাও ভাল, আমাদেরকেও দিতে পার
তাহলে মা যদি কিছু মনে করে
এত মনে করবে কেন, তোমার মেয়েকে কিছু দিলে মনে করবে কেন?
যা বুঝোনা তা নিয়ে কথা বলনা, এভাবে চলতে পারলে থাক,না পারলে চলে যাও।
সিমির দুচোখ জলে ভরে যায়। তাতে হাফিয সাহেবের কিছুই যায় আসলনা।একদিন হাফিয সাহেবকে মায়মুনার স্কুল থেকে টিচার কল করল
কি হয়েছে ম্যাডাম?
আপনার মেয়েকে আমরা একটা প্রশ্ন করেছিলাম ওর কোনো ইচ্ছা আছে কিনা । এইটুকু মেয়ে বলল, সে বাবার বোন হয়ে জন্মাতে চায় তাহলে বাবার কোলে বসতে পারত।
হাফিয সাহেব বাসায় আসলেন অগ্নিমূর্তি নিয়ে। সিমিকে সরাসরি বললেন,
এভাবে সংসার করা যাবেনা। সিমি অনেক কান্নাকাটি করে সংসার ভাংগা ঠেকায়। হাফিয সাহেব আবার তার কাজের মেয়ের ব্যাপারে অনেক উদার। সুফিয়াকে ঈদের সময় জামা কিনে দেন, ৬ সাত ঘন্টার বেশী কাজ করতে দেননা, ঈদের সময় উনি খালি মা, বোন আর সুফিয়ার জামা কিনেন। সিমি একদিন মিনমিন করে বলেছিল তার একটা শাড়ি লাগবে।পরিষ্কার বললেন,
তুমি এত ম্যাটারিলিয়েষ্টিক কেন?
আরেকদিন মায়মুনার একটা ঈদের জামা লাগবে বলায় উনি বললেন,
আমি জীবনে ঈদের জামা পাইনি,আমি চাই ও আমার মতই বড় হবে।
তাহলে রুম্পাকেও দিওনা, মায়মুনার বুঝি কষ্ট হয়না।
সিমি শেষপর্যন্ত ক্ষেপে যায়। তার আর এই ইসলামিক হাফিয সাহেবকে ভাল লাগেনা। মায়মুনাই একদিন বাবাকে বলে,
বাবা আমি যদই বাসার সব কাজ করে দিই তবে কি আমাকে একটি ঈদের জামা কিনে দিবে। হাফিয সাহেব অত্যন্ত ক্ষেপে যান,সিমি আর কান্নাকাটি না করে মায়মুনাকে নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে।
বিষয়: বিবিধ
৫০৭১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন