ইকো বারবার
লিখেছেন লিখেছেন উম্মু রাইশা ২৯ জুন, ২০১৩, ১২:১০:৪৫ রাত
সীমার দাদি ছালেহা বেগম বছরে একবার সীমাদের বাসায় বেড়াতে আসেন। এসে সবাইকে অতিষ্ঠ করে ফেলেন। সীমার মা রীমা তিন বাচ্চা নিয়ে থাকেন। সময় দিতে পারেননা। ছালেহা বেগমের খাবার দাবার রেডী করেই বাচ্চাদের নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। গল্প করার সময় নাই। সীমার আব্বা শওকত সাহেব বাসয় আসলে বুড়ি তাই অভিযোগের থালা খুলে বসেন।
শওকত সাহেব অবশ্যই পাত্তা দেননা। মাঝে মাঝে রীমাকে বলেন
একটু টাইম দিলেই ত পারো।
আমি আসলে বেশী সময় করতে পারিনা। তবে উনার যা যা লাগে করে দেই।
বুড়া মানুষ কয়দিন আর বাচবে?
চেষ্টা করে সময় হয়না। বাচ্চাদের স্কুলে দিয়ে রান্না করে ঘর গুছিয়ে সব ঠিকঠাকমত করতে না করতেই ওদের আসার সময় হয়ে যায়। তারপর একে এক কোচিং সেন্টারে,আরেকজনকে প্রাইভেটে দিতে না দিতে সময় শেষ।
শওকত সাহেব বুঝেনন আর মাকে বুঝান। ছালেহাবেগম গুন গুন করে কাদেন,
হায়রে শওকত তোরও কি সময় নাই?কিন্তু মায়ের প্যানপ্যানানি শুনতে তার ভাল লাগেনা।
রীমা তাও মাঝে মাঝে ছালেহা বেগমের কথা শুনার জন্য বসে।ছালেহা বেগম বলে
হাসিবের (আরেক ছেলে)একদিন এত বড় ঘা হয়েছিল ,সারারাত জেগে পরিষ্কার করছিলাম। সেই হাসিব এখন আর আমার কথা শুনেন। বলে কাদতে থাকেন। রীমা বুঝায়
মা আপনি আপনার দায়িত্ব পালন করেছেন,তারজন্য কিছু আশা করা ঠিকনা। আমিত চাই আমার ছেলেমেয়েরা ভাল থাকুক,আমার কথা তাদের ভাবতে হবেনা।
ছালেহা বেগম আসলে কাজ বেড়ে যায় রীমার। গ্রামের মানুষ বাথরুম ব্যব হার করতে পারেননা। ফ্লাশও করতে পারেননা।রীমা ঘ্যান ঘ্যান করে সীমার সামনে। শ্বাশুড়িকে কিছু বলেননা।
ছালেহা বেগম ক্লাস টু পাশ। উনি নিজেকে শিক্ষিত মনে করেন। এটা নিয়ে ছেলের বউরা হাসাহাসি করে। আর ৫০ এর উপর বয়স হবার পরও উনি রংগীন চকচকে শাড়ি পছন্দ করেন। কেউ হাল্কা কালারের কিছু দিলেই মুখ কালো করে বলেন
আমি কি বুড়া হয়ে গেছি?
সীমা ডাক্তার হয়েছে আরদুইভাই ইন্জিনিয়ার।সবাই আমিরিকাতে চলে এসেছে।রীমা ছিল ম্যাট্রিক পাশ,এজন্য সীমারা তাকে কখনো ছোট করেনি। কিন্তু রীমার ই কমপ্লেক্স হতে থাকে। সে সীমার জন্য একজন বিএ পাস ছেলে দেখেছিল। কিন্তু সীমা রাজী হয়নি। বলেছে,
মা আমার আ্যডজাষ্ট হবেনা।
কেন বিএ পাশ কি শিক্ষিত না?আমি কি শিক্ষিত নই? সীমা অবাক হয়ে যায়,একথাগুলিই কি দাদী বলেছিল বা বলত?মা কেন দাদীর মত হয়ে যাচ্ছে?
সীমার ভাই শাকিল নিজে পছন্দ করে বিয়ে করতে চায়। মা চায়না এটা।মেয়েটা খারাপ না। কিন্তু মায়ের ধারনা ইন্জিনিয়ার মেয়ে তার কথা শুনবেনা। কিন্তু আল্টিমেট এখানেই বিয়ে হয়ে গেল। মায়ের আক্ষেপ শুনল সীমা,
হায়রে শাকিল, তোরে না আমি সারা রাত জেগে গা মুছে দিয়েছি টাইফয়েডের সময়। সব ভুলে গেছিস।
সীমা চমকে উঠে। একথাগুলি সে আগে কোথায় শুনেছে। হ্যা, দাদীর মুখে।মা নাবলেছিল আমরা খুশী হলেই হবে,তার কথা ভাবতে হবেনা।
সীমার আমিরিকায় যাবার পরের কথা। রীমা এসেছেবেড়াতে। এখানে বাথরুমে ওযু করতে পা বেসিনে উঠাতে হয় বা বাথটাবে উঠতে হয়।রীমা তা করেননি।উনি মগে পানি নিয়ে মেঝেতে ঢেলেছেন। সীমা এসে মেঝে দেখল,কিন্তুতারবিরক্তি লাগলনা,বরং চোখ বেয়ে পানি পরতে লাগল। আজ যদি সে ধৈর্য না ধরে ইকো তার জীবনেও ফিরে আসবে। সে রীমাকে দুইহাতে জড়িয়ে ধরে।
বিষয়: বিবিধ
১৪৮৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন