সাবধান, সামনে পুরুষমানুষ
লিখেছেন লিখেছেন উম্মু রাইশা ১০ এপ্রিল, ২০১৩, ০১:৩৬:৫৯ রাত
সিমি বড় হয়েছে ক্যান্টনমেন্টে।নয়নাভিরাম পরিবেশ দেখে সে অভ্যস্ত।পাখীদের কলকাকলিতে মুখরিত। ছোট থাকতে বাচ্চাদের সাথে খেলেদেলে ভাল দিন কেটে যাচ্ছিল, যতদিন না মায়ের কাছ থেকে পূরুষমানুষ সম্পর্কে সম্মক জ্ঞান লাভ না করল।
জাহরা আন্টি একদিন এসে মাকে বললেন তার স্বামীর চরিত্রহীনতার কথা। উনি এসেছেন পরামর্শের জন্য। উনার হাসবেন্ড তার প্রেমিকার সাথে হোটেলে রাত কাটান। সেটা উনার টেনশান না, উনার টেনশান হল স্বামীটা দ্বিতীয় বিয়ে না করে ফেলেন।
আপা, পুরুষমানুষ এদিক সেদিক করেই,কিন্তু যদি বিয়ে করে ফেলে।মা তাকে নানাভাবে বুঝিয়ে বিদায় করার পর দশ বছরের সিমি মাকে ধরল।
মা,এদিক সেদিক মানে কি?
মারে পুরুষমানুষের স্বভাব এটা, বড় হলে বুঝবি। সিমি না বুঝেই বলল,
আম্মু, আব্বুত এদিক সেদিক করেনা।
তোর আব্বু পুরুষমানুষ হল নাকি?
একথাটা সিমি বুঝতে পারেনা। বড় হয়ে সে ভেবেছে মাকে জিজ্ঞেস করবে আব্বু পুরুষমানুষনা হলে আমরা ৪ ভাইবোন এলাম কিভাবে? লজ্জায় সে জানতে চায়না।
মা তাকে বুঝায় পুরুষমানুষ একটা শয়তানের জাত।
তার গোটা দুনিয়া ছোট হয়ে যেতে লাগল। পুরুষ জুজুর ভয়ে তার সুন্দর দৃশ্যগুলি আর সুন্দর লাগেনা।পাখিদে কলকাকলির মধ্যে কুডাক শুনতে পায়। মনে পড়ে কোচিং ক্লাসে যাওয়ার সময় সে রিক্সাভাড়া দিতে পারতনা বলে এক মাইল একা হেটেই যেত। আর দোয়া পড়ত
হে আল্লাহ, বাঘ ভাল্লুক সামনে আসুক অসুবিধা নাই, পুরুষমানুষ যেন সামনে না আসে।আর জানেনত যেখানে বাঘের ভয়, সেখানেই সন্ধ্যা হয়।
একদিন দেখা গেল আর্মির একজন গাইড। বয়স্ক। দেখেই সিমি কান্না শুরু করে দিল।
কোথায় যাও মা? মা! এ শব্দটা শুনে সিমির কান্না থেমে গেল। গড়গড়িয়ে বলতে লাগল'
আংকেল আমার টাকা নাই, তাই হেটেই যেতে হয়। উনি সিমিকে বাসায় পৌছে দিলেন। উনি কি তাহলে পুরুষমানুষ না?সিমি ভেবে পায়না।
দশ বছর পর। সিমির বিয়ে হয়েছে। বিয়ের প্রথম রাত থেকেই তার ভয় তার হাসবেন্ড আবার দ্বিতীয় বিয়ে করবে না ত? মায়ের কাছ থেকে তার ধারনা হয়েছে পুরুষমানুষ মাত্রেই দ্বিতীয় বিয়ে করার জন্য ছোকছোক করে। সেদিন বাসায় আসলেন তাহমিনা ভাবী। দশ বছর ধরে তার বাচ্চা হয়না। শ্বাশুড়ি দ্বিতীয় বিয়ে দেবার জন্য ছেলেকে চাপাচাপি করতেই ছেলে কেদে ফেলেছে। বউকে বলেছে মায়ের কথায় কিছু মনে না করতে।তাই?
আপনার জামাই কি পুরুষমানুষ না?
একথা বললেন কেন?
পুরুষমানুষ মাত্রেই ত ২য় বিয়েরজন্য পাগল।
কে বলেছে? ডাক্তার বলেছে, বাচ্চা না হবার সমস্যাটা আমারই।
হুম, তাহলে চারিদিকে পুরুষমানুষের এত আকাল, কেউত২য় বিয়ে করতে চায়না।
সিমির বাচ্চা হবে।এখনই সে অস্হির হয়ে গেল বাচ্চা হবার পর ৪০ দিনের কথা ভেবে। স্বামীটি যদি এই সময়ে হাতছাড়া হয়ে যায়। বাচ্চা হবার ২দিন পর সে রাতে বারবার স্বামীকে চেক করে, ফেসবুকে নাই ত? ইমেইলের পাসওয়ার্ড জেনে দিনের মধ্যে দশ বার স্বামীর ইমেইল চেক করে। কিছুই পায়না।
একদিন সিমির বুঝ হয় যে মা যা বলেছিল তা সব সত্য নয়। ভাল খারাপ ছেলে মেয়ে যেকেউ হতে পারে। হায় যদি সে আগে বুঝতে পারত তাহলে এত মানসিক কষ্টে জীবন কাটাতে হতনা।
বিষয়: বিবিধ
৩৩৩২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন