দি পার্ক বেঞ্চ (অনুবাদ গল্প)

লিখেছেন লিখেছেন যুমার৫৩ ০৬ মার্চ, ২০১৬, ০৯:৫৯:১৩ সকাল



মূল লেখিকা: অজ্ঞাত

মূল ভাষা: ইংরেজি

দি পার্ক বেঞ্চ

পার্কের এককোনায় ঝাঁকড়া ডালপালাওয়ালা সেই বুড়ো উইলো গাছটার নিচে পরিত্যক্ত বেঞ্চিটায় বসলাম আমি, যদি বই পড়ে মনটা একটু শান্ত হয়। দুনিয়ার ভারি বোঝা আমার ভ্রুকুটি-ভরা ব্যর্থ জীবনটাকে যেন শুধুই মাটিতে পিষে ফেলতে চাইছে।

কিন্তু শান্তি পাবার যো নেই! ঐ দেখ কোথা থেকে একটা পিচ্চি এসে হাজির, চোখেমুখে তার ছুটোছুটি করার ক্লান্তির ছাপ।

পিচ্চিটা ঠিক আমার সামনে এসে দাঁড়ালো - মাথাটা তার একটু নিচের দিকে নামানো, আর দারুন উত্সাহে বললো সে, "আপু এই ফুলটা তোমার জন্য।"

তার হাতে একটা ফুলই বটে, কিন্তু কী শোচনীয় অবস্থা ! পাঁপড়িগুলো সব বিবর্ণ-মলিন হয়ে গেছে। চাচ্ছিলাম যে পিচ্চিটা যেন তার মরা ফুলটা নিয়ে তাড়াতাড়ি কেটে পড়ে, তাই মুখে একটা কৃত্রিম হাসি দিয়েই অন্যদিকে ঘুরে বসলাম। কিন্তু পিচ্চিতো সরে না! বরং আমার পাশে এসে বেঞ্চিটায় বসে পড়লো। আর ফুলটা নিজের নাকের কাছে ধরে দারুন উত্তেজনা নিয়ে বলল," কী সুন্দর সুঘ্রাণ, দেখতেও নিশ্চয়ই ফুলটা খুব ভালো হবে। সেজন্যই এ ফুল আমি তুলেছি। নাও আপু, ফুলটা তোমার জন্যে।"

ওফ, ধ্যাত ঐ আগাছা ফুলটাতো আধমরা, রংচটা। কিন্তু না নিলেতো পিচ্চি নড়বেনা! তাই কী আর করা, ফুলটা নিতে গেলাম ওর হাত থেকে আর বললাম, "হুমম এমন ফুলইতো খুঁজছিলাম....।" ঠিক তখনই ঠিকমতো নজর পড়লো বাচ্চাটার চোখের দিকে.... বাচ্চাটা আসলে অন্ধ!!

আমার কণ্ঠস্বর কেঁপে গেলো, চোখের কোণে জমে ওঠা পানি ঝলসে উঠলো রোদের আলোয়। "তুমি সবচে' সুন্দর ফুলটাই আমার জন্য তুলেছো, অনেক অনেক ধন্যবাদ তোমাকে।"

"ইউ আর ওয়েলকাম" মিষ্টি হেসে বললো সে, আর ছুটে চলে গেলো খেলতে আবার। ও কি জানে কী গভীর প্রভাব ও রেখে গেলো আমার ওপর? স্তম্ভিত হয়ে বসে বসে ভাবলাম - ও কী করে টের পেলো ঐ গাছের নিচের বেঞ্চিটায় এক দুঃখবিলাসি, আত্মযাতনাবিলাসি, চির-অভিযোগকারিণী নারী বসে রয়েছে?

হয়তো ঈশ্বর ওকে দিয়েছেন সত্যিকারের অন্তর্দৃষ্টি। ওর অন্ধ চোখদুটো দিয়েই আমি যেন দেখতে পেলাম আমার জীবনের প্রকৃত সমস্যাটা আসলে কোথায়। আমি কেবল এই হতচ্ছাড়া দুনিয়াটার বিরুদ্ধেই অভিযোগ করে চলেছি, অথচ খেয়াল করে দেখিনি যে, সমস্যার মূল কারণ আমি নিজেই। চোখ থাকতেও আমি জীবনের সৌন্দর্যটাকে খুঁজে দেখতে চেষ্টা করিনি, উপলব্ধি থাকতেও জীবনের প্রতিটি একান্ত মুহূর্তকে মূল্যায়ন করতে পারিনি। শপথ নিলাম আজ থেকে দুনিয়াটাকে ভিন্ন চোখে দেখবো।

নেতিয়ে পড়া ফুলটাকে নাকের কাছে তুলে ধরলাম আমি, সুন্দর একটা গোলাপ ফুলের মনকাড়া খুশবু আমার হৃদয় ভরিয়ে দিলো। প্রশান্তিভরা হাসিমুখ নিয়ে সামনে তাকিয়ে দেখি, বাচ্চাটা আরেকটা ফুল তুলে নিয়েছে - এগিয়ে যাচ্ছে আমার মতো আরো একটা বিষণ্ন মানুষের জীবনটাকে চিরতরে বদলে দিতে।

বিষয়: সাহিত্য

১২৫৬ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

361580
০৬ মার্চ ২০১৬ সকাল ১১:০৯
গাজী সালাউদ্দিন লিখেছেন : খুব সহজ সরল ভাষায় অনুবাদ করেছেন, পড়ে খবই ভালো লেগেছে। ধন্যবাদ জনাব
০৭ মার্চ ২০১৬ সকাল ১১:০৮
299725
যুমার৫৩ লিখেছেন : উতসাহ দেয়ার জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ।
361588
০৬ মার্চ ২০১৬ দুপুর ১২:২৭
আফরা লিখেছেন : আসলেই কিছু মানুষ আছে এরা কোন কিছুকেই পজেটিভ নিতে পারে না , সব কিছুতেই কোন না নিগেটিভ দিক বের করবেই । এ কারনে এদের মনের মাঝে সব সময় হতাশা থাকে এবং এরা কখনো সুখী হতে পারে না । এটা আসলে তাদের স্বভাব আবার এটা একটা রোগ ।

ধন্যবাদ ।
০৭ মার্চ ২০১৬ সকাল ১১:১০
299726
যুমার৫৩ লিখেছেন : কেউ বলে "গ্লাসটা অর্ধেক পূর্ণ", কেউ বলে "গ্লাসটা অর্ধেক খালি"।
361592
০৬ মার্চ ২০১৬ দুপুর ০১:০৪
দ্য স্লেভ লিখেছেন : সুন্দর গল্প
০৭ মার্চ ২০১৬ সকাল ১১:১০
299727
যুমার৫৩ লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File