কাঠের থালা-বাটি

লিখেছেন লিখেছেন যুমার৫৩ ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১১:১৬:১৬ সকাল



মূল ভাষাঃ ইংরেজি

মূল লেখকঃ অজ্ঞাত

অনুবাদঃ যুমার৫৩

বুড়ো মানুষটা থাকতেন তার ছেলে, ছেলের বৌ আর চার বছরের নাতিটাকে নিয়ে। বার্ধক্য এই বুড়ো দাদুর চোখগুলোকে করে দিয়েছিলো ঘোলাটে, হাত দু'টো তার কাঁপতো সবসময়, আর প্রতিটি পদক্ষেপ ছিলো টলমলে।

পুরো পরিবার একসাথে ডিনার খেত, ডাইনিঙ টেবিলটায় বসে। কিনতু কাঁপাকাঁপা হাত আর ক্ষীণ দৃষ্টি নিয়ে খাবার খেতে খুব কষ্ট হতো বুড়োদাদুটার। চামচ-কাঁটা থেকে মটরশুঁটি কিংবা মাংসের টুকরো গড়িয়ে পড়তো মেঝেতে। টেবিলক্লথটা নিত্যদিন নোংরা হতো হাত ফসকে পড়ে যাওয়া ঝোল-সুরুয়া দিয়ে। সেদিনতো পানি খেতে গিয়ে কাঁচের গেলাসটা ফেলে দিয়ে বিরাট ঝামেলাই করে বসলেন দাদু।

এমন ঘটতো নিত্যদিনই। ছেলে আর ছেলের বৌ মহাবিরক্ত হয়ে উঠলো দিন দিন। "নাহ, বাবাকে একটা আলাদা ব্যবস্থা করতে হবে", -- বললো ছেলে। "কতোখানি দুধ ফেলে দিলেন সেদিন...", সায় দিয়ে বললো ছেলের বৌ।

"আর রোজ রোজ টেবিলক্লথ নোংরা করেন, মেঝে নষ্ট করেন...." বললো দুজনে।

"ওনাকে আর কাঁচ-সিরামিকের থালায় খেতে দেয়া যাবেনা..." বললো দুজনে।

কাজেকাজেই ছেলে আর ছেলের বৌ মিলে ঘরের কোণায় আলাদা একটা টেবিল বসালো বুড়ো বাপের জন্যে। ওখানে বুড়োমানুষটা একা একা বসে খানা খায়। আর বাকি পরিবার বসে ডিনার টেবিলে -- মজা করে গল্প করতে করতে, হাসতে হাসতে ডিনার খায় তারা। আর দাদু যেহেতু কিছু কাঁচের বাসন ভেঙে ফেলেছিলেন, তাই এবার থেকে তাকে দেয়া হলো কাঠের থালা-বাটি আর কাঠের চামচ।

চার বছরের নাতিটা দূর থেকে দেখতো দাদুর চোখে টলমল করছে পানি। নিঃশব্দে দাদুর দিকে তাকিয়ে থাকতো সে।

একদিন সন্ধ্যায়, বাবা বাড়ি ফিরে দেখলো তার চার বছরের ছোট্ট বাচ্চাটা একগাদা কাঠের টুকরো নিয়ে খেলা করছে।

"কী খেলছো বাবা?" - মিষ্টি গলায় শুধালে স্নেহময় বাপ।

" বাবা আমি তোমার জন্য আর মামণির জন্য কাঠের বাসন-কোসন বানাচ্ছি। যখন আমি বড় হব, তোমাদেরকে এই কাঠের থালা-বাটিতে খেতে দেব।" -- নিষ্পাপ শিশু হাসিমুখে উত্তর দিয়ে আবার খেলায় মনোযোগী হয়ে উঠলো।

প্রচণ্ড আঘাতে নিস্তব্ধ হয়ে গেলো বাচ্চার বাবা-মা। তাদের গাল বেয়ে নেমে এলো চোখের পানি। কিচ্ছুই বলতে পারলোনা স্বামী-স্ত্রী, কিনতু বুঝলো কী অন্যায় তারা করেছে।

সেই সন্ধ্যায় বুড়ো লোকটার ছেলেটা কোমলভাবে হাত ধরে বাবাকে ফিরিয়ে আনলো ডিনার টেবিলে। পুত্রবধু আদর করে ভালো থালা-বাটিতে খাবার বেড়ে দিলো শ্বশুরকে।

এরপর থেকে বুড়োদাদুকে নিয়ে সবাই একসাথেই ডিনার করতো। দাদুর হাত ফসকে আগের মতোই ঝোল-সুরুয়া গড়িয়ে পড়তো, আগের মতোই কাঁপা হাতে পানি খেতে দিয়ে গেলাসটা ফেলে দিতেন তিনি। কিনতু আর কখোনই ছেলে কিংবা ছেলের বৌ তাঁর ওপরে অসনতুষ্ট হয়নি।

বিষয়: সাহিত্য

১৪৫০ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

360243
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ দুপুর ১২:৫৯
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ রাত ০১:২২
298589
যুমার৫৩ লিখেছেন : আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।
360250
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ দুপুর ০১:৫২
গাজী সালাউদ্দিন লিখেছেন : ওহ, অসাধারণ লাগল। অনুবাদটা ছোট, বেশ সহজবোধ্য কিন্তু তার অন্তর্নিহিত ভাব প্রতিটা মানুষের হৃদয়কে দারুণভাবে নাড়া দেয়ার মত।

আরও বেশি বেশি করে অনুবাদ করে সুন্দর প্রাঞ্জল ভাষায় আমাদের সামনে পরিবেশন অনুরোধ থাকল।
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ রাত ০১:২৩
298590
যুমার৫৩ লিখেছেন : উতসাহ দেয়ার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ।
360263
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ দুপুর ০৩:৩৯
পললব লিখেছেন : ভালো লাগলো। ধন্যবাদ
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ রাত ০১:২৩
298591
যুমার৫৩ লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File