‘গণহত্যা’ জানাতে কূটনীতিকদের জামায়াতের চিঠি
লিখেছেন লিখেছেন আমলক ১৯ মার্চ, ২০১৩, ০৩:৩২:৩৫ দুপুর
http://www.rtnn.net//newsdetail/detail/1/1/60688
নিজস্ব প্রতিবেদক
আরটিএনএন
ঢাকা: ঢাকায় কর্মরত সব দেশের কূটনৈতিকদের কাছে দেয়া এক চিঠিতে পুলিশের বিরুদ্ধে গণহত্যা, রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন ও নারী নিপীড়নের অভিযোগ করেছে জামায়াতে ইসলামী।
গত ১৫ মার্চ জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমীর মকবুল আহমদ স্বাক্ষরিত এ চিঠিতে সাম্প্রতিক সহিংসতা, গণহত্যা, পুলিশের নিষ্ঠুরতা কথা বিস্তারিত উল্লেখ করে ‘গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষা’র আন্দোলনে কূটনীতিকদের কাছে সমর্থন চায় জামায়াত।
ইংরেজি ভাষায় লেখা ১২ পৃষ্ঠার এ চিঠিতে জামায়াত কর্মীদের উদ্দেশ্যে পুলিশের গুলিবর্ষণ, গুলিতে জামায়াত কর্মীর রাস্তায় পড়ে থাকা ও গুলিতে নিহতদের ছবি ব্যবহার করা হয়েছে।
সরকার ও পুলিশ বিরোধী অভিযোগের পক্ষে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ বিভিন্ন মানবাধিকর সংগঠন ও গণমাধ্যমে প্রচারিত ছবি ও খবরের ইউআরএল ব্যবহার করেছে জামায়াত।
চিঠিতে জামায়াত সম্প্রতি পুলিশের ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করে বলেছে, ‘পুলিশ বাহিনীর সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড দেখে মানবিকতা কান্নায় ফেঁটে পড়ছে। তাদের কর্মকাণ্ড দিন দিন মানবিকতার সীমা অতিক্রম করে যাচ্ছে।’
পুলিশ চিরাচরিত ঐতিহ্য, আইন ও মানবাধিকার লঙ্ঘন করে নারীদের অধিকার নষ্ট করছে। কোনো রকম অভিযোগ ছাড়াই পর্দানশীল নারীদের গ্রেপ্তার করছে এবং রিমান্ডে নিচ্ছে। তাদের হাত থেকে বয়স্ক এবং অন্তঃসত্ত্বা নারীরাও রেহাই পাচ্ছে না।
এই পর্যন্ত শতাধিক মানুষকে পুলিশ গুলি করে হত্যা করছে এবং বহু লোক মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে, যোগ করা হয় চিঠিতে।
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহজোট ক্ষমতায় আসার পর থেকেই আমরা অব্যহতভাবে দমননীতি, হয়রানি ও অত্যাচারের শিকার হচ্ছি, যোগ করা হয় চিঠিতে।
দেশে আইনের শাসন, গণতন্ত্র ও জনগণের সাংবিধানিক অধিকার নেই দাবি করে চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘গত ৫৩ মাসে জামায়াত-শিবিরের ২২ হাজার জন নেতা-কর্মীকে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে।’
রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করায় চারশ’ নেতাকর্মী মারাত্মকভাবে আহত হয়েছে। সারা দেশ ২১ হাজার মামলায় পাঁচ লাখ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে।
দেশের বিভিন্ন স্থানে সরকার সমর্থকরা জামায়াতের অফিসগুলো হয় আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া দিয়েছে না হয় ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে। শিবির কর্মীদের ধরে থানায় নিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।
চিঠিতে জামায়াত দাবি করে, ‘দেশসহ সারা বিশ্বে জামায়াত ইসলামের সম্পর্কে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। আমাদের অবস্থান পরিষ্কার করতেই এই চিঠি। আমরা সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। তারা পরিকল্পিতভাবে আমাদের দলের এবং দলের নেতাকর্মীদের নামে কুৎসা রটাচ্ছে।’
সরকার ও সরকার সমর্থকরা গণমাধ্যম ও সরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের ওপর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে তার মাধ্যমে আমাদের দল ও দলের নেতা ব্যাপারে জনগণের মধ্যে নেতিবাচক ভাবমূর্তি সৃষ্টির চেষ্টা করছে।
সংখ্যালঘুদের ওপর জামায়াতের অত্যাচারের অভিযোগের জবাবে চিঠিতে দলটি নিজস্ব অবস্থান স্পষ্ট করতে বলেছে, ‘জামায়াত বাংলাদেশের একটি নিবন্ধিত দল এবং বাংলাদেশ পথ চলা থেকে শুরু করে জাতীয় সংসদে আমাদের প্রতিনিধিত্ব আছে। সারা দেশে আমাদের নানা কর্মকাণ্ড চলমান। কিন্তু আমাদের বিপক্ষে দেশের কোথাও কোনো সংখ্যালঘু নাগরিকের ওপর অত্যাচারের অভিযোগ নেই। আমরা সন্ত্রাসবাদে বিশ্বাস করি না।’
জামায়াত গণতন্ত্রের প্রতি পূর্ণ আস্থাশীল এবং তা রক্ষা করতেও বদ্ধপরিকর। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে আমরাই অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছি, যোগ করা হয় চিঠিতে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালকে ব্যবহার করে জামায়াতকে নির্মূলের চেষ্টার অভিযোগ করে দলটি চিঠিতে দাবি করেছে, ‘সরকার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য এই আদালত প্রতিষ্ঠা করেছে এবং জামায়তকে নির্মূল করার জন্য তা ব্যবহার করছে। আমাদের দলের নেতাকর্মীদের অবৈধভাবে আটক রেখেছে এবং নিজেদের ইচ্ছে মতো রায় দিচ্ছে।’
এ কারণে দলের নায়েবে আমীর দেলওয়ার হোসাইন সাঈদীর রায়ের পর দেশব্যাপী প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে উল্লেখ করে জামায়াত দাবি করে প্রতিবাদ থামাতে সরকার গণহত্যার পথ বেছে নিয়েছে।
এছাড়া চিঠিতে সরকার কর্তৃক দলের কেন্দ্রীয় অফিসসহ শাখা অফিসগুলো বন্ধ করে দেয়ার কথা বলার পাশাপাশি সম্প্রতি বিএনপি অফিসে পুলিশি অভিযানের কথাও বলা হয়েছে।
এ ব্যাপারে চিঠিতে লেখা হয়েছে, ‘সরকার প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে বিরোধী দল বিএনপির অফিসে নজিরবিহীন অভিযান চালিয়েছে। ভাঙচুর করা হয়েছে অফিসের আসবাবপত্র, ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে অফিসে থাকা দলের কাগজপত্র এবং বিনা নোটিশে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবসহ দলের ১৫৭ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
এই ঘটনাকে অযৌক্তিক ও অগণতান্ত্রিক আখ্যা দিয়ে চিঠিতে বলা হয়েছে, একটি গণতান্ত্রিক দলের অফিসের এই ধরনের অভিযানই প্রমাণ করে সরকার বিরোধীপক্ষকে নির্মূল করতে চায়।
সরকার যে জামায়াতসহ কোনো বিরোধী দলকে সভা-সমাবেশ করতে দিচ্ছে না সে কথাও উল্লেখ করেছে চিঠিতে।
বিষয়: বিবিধ
১১৮৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন