নষ্ট-ভ্রষ্টের কাজ মুক্তিযুদ্ধ নয়

লিখেছেন লিখেছেন আমলক ১৯ মার্চ, ২০১৩, ১১:৫৩:১২ সকাল



http://www.bd-pratidin.com/?view=details&type=single&pub_no=1035&cat_id=2&menu_id=8&news_type_id=1&index=0

শুনেছিলাম সত্যের কল বাতাসে নড়ে। কবে নড়বে জানি না। কিন্তু এখন পদে পদে দেখছি অসত্যের কল বাতাসে নড়ছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের কোর্ট থেকে সমন পেয়েছিলাম বীর মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমীন মজুমদার মহীউদ্দীন খান আলমগীরকে রাজাকার বা রাজাকার কমান্ডার বলায় ক্ষুব্ধ হয়ে দণ্ডবিধি ৫০০ ধারায় মামলা করেছিলেন। আরজিতে দেখলাম বয়স ৫৭। তাতে মুক্তিযুদ্ধের সময় তার বয়স দেখা যায় সাড়ে ১৩ বা ১৪। আর সার্টিফিকেট দিয়েছেন এক প্রতিমন্ত্রী ও সচিবের। কোর্টকে স্পষ্ট বলে এসেছি, কোনো প্রতিমন্ত্রী বা সচিবের সার্টিফিকেটে মুক্তিযোদ্ধা হওয়া চলবে না। এসব ভুয়া। মুক্তিযোদ্ধা হবে হয় বঙ্গবীর আতাউল গণি ওসমানীর, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারদের এবং কাদেরিয়া বাহিনীতে আমার স্বাক্ষরে। প্রধানমন্ত্রী হলেই বেগম হাসিনা বা বেগম খালেদা জিয়ার স্বাক্ষরে মুক্তিযোদ্ধা হয়ে রাষ্ট্রের সুযোগ-সুবিধা লুট করা যাবে, তা চলবে না। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা রাষ্ট্রের সম্মান, তারা হবে জাতির তাজ, ভণ্ডরা নয়। মাননীয় বিচারককে দেখার জন্য পাকিস্তান সরকারের গেজেট নিয়ে গিয়েছিলাম। বই-পুস্তক নিয়েছিলাম দেওয়ার জন্য। তিনি বলেছেন, তার কোনো কিছুই গ্রহণ করার আইনানুগ এখতিয়ার নেই। বাদী নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা দাবি করছে অথচ মুক্তিযুদ্ধের সময় মহীউদ্দীন খান আলমগীর ছিলেন পাকিস্তানি হানাদারদের দোসর, সে অর্থে রাজাকার। মুক্তিযোদ্ধা হয়ে রাজাকারের পক্ষ নেয় কি করে? তাই দণ্ডবিধি ৫০০ ধারায় তার এ মামলার কোনো অধিকার নেই। কারণ সে শারীরিক-মানসিক কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত নয়। সে মহীউদ্দীন খান আলমগীরের গোত্রভুক্তও নয়। তাই তার ক্ষুব্ধ হওয়ার যুক্তিসঙ্গত কোনো কারণ নেই। সেই হেতু এ মামলা অচল। হয় মামলাটি খারিজ করে দিন অথবা আমায় জেলে পাঠিয়ে দিন। আদালত জেলে পাঠাতে অপারগতা প্রকাশ করেন। আমাকে জামিন প্রার্থনা করতে বললে আমি আমার অপারগতা প্রকাশ করি। শেষে নিজ জিম্মায় আমাকে মুক্ত থাকতে বলেন। আমি আমার জিম্মাতে আদালত ত্যাগ করতে আপত্তি জানাই। পরিশেষে বিজ্ঞ বিচারক আদালতের জিম্মায় স্ত্রীর হেফাজতে বাড়ি পাঠিয়ে দেন। আমি তাতে খুশি হতে পারিনি। একজন রাজাকারকে রাজাকার বলায় আদালতে মামলা হতে পারে এটা অভাবনীয়। আমার কাছে আয়ুব-ইয়াহিয়া থেকে শুরু করে কুষ্টিয়ার রাজাকার চিকন আলী একই সমান। চিকন আলী বললাম এই জন্য, '৭৩-৭৪-এ কুষ্টিয়ার জজকোর্টে রাজাকার চিকন আলীর ফাঁসি হয়। তখন এখনকার মতো প্রচার মাধ্যম ছিল না। থাকলে কত ছবি দেখা যেত। চিকন আলীর যখন ফাঁসির আদেশ হয়, তখন সে আদালতে অট্টহাসি হাসছিল। সবাই যখন তাকে জিজ্ঞেস করে, হাসছো কেন? সে বলেছিল, হাসছি বড় দুঃখে। আমার তো ফাঁসি হলো। কিন্তু যে বিচারক বিচার করে ফাঁসি দিল, সে-ই তো আমায় রাজাকারে ভর্তি করেছিল। তার বিচার কবে হবে? তার শাস্তি কি হবে? মহীউদ্দীন খান আলমগীরের ব্যাপারটাও এখন তাই হয়েছে। কী মধু আছে তার মধ্যে। সবাই জানে মহীউদ্দীন খান আলমগীর একজন সিএসপি। পাকিস্তান প্রশাসনে সিএসপি হিসেবে যা করার, কোনো অংশে অনেক বেশিই করেছেন। ছোট রাজাকারের ফাঁসি হয়, বড় রাজাকার মন্ত্রিত্ব করে। কোর্টকে আমি বলতে চেয়েছি, কোর্ট যথার্থই বলেছে, 'পরবর্তী শুনানিতে সব দলিল-দস্তাবেজ কোর্টকে দিতে পারবেন। কোর্ট নিশ্চয়ই সেগুলো আমলে নেবে।' আমার ঘরকুনো লাজুক ছেলে দীপও কোর্টে গিয়েছিল। কোর্ট থেকে আসার সময় অসংখ্য সাংবাদিক ঘিরে ধরেছিলেন। কী আর বলব? বলেছি, 'ছোট রাজাকারদের গাড়িতে পতাকা তুলে বিএনপি যে অপরাধ করেছে, বড় রাজাকারের গাড়িতে পতাকা তুলে আওয়ামী লীগ তার চেয়ে শতগুণ বেশি অপরাধ করেছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় যেভাবে ডিসি, এপিসি, সিওদের দ্বারা পাকিস্তানি হানাদাররা পূর্ব পাকিস্তানকে কব্জায় রাখতে চেয়েছিল, বর্তমান সরকার ঠিক তেমনি 'সন্ত্রাস ও নাশকতা প্রতিরোধ কমিটি' গঠন করে একইরকম কাজ করছে। কোর্টকে বলেছি, ১৯৭১ সালে মহীউদ্দীন খান আলমগীরের দেশ ছিল পাকিস্তান, তার প্রেসিডেন্ট ছিল ইয়াহিয়া খান। আমার দেশ ছিল বাংলাদেশ, আমার প্রেসিডেন্ট ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। পাকিস্তানি হানাদাররা আমার দেশ দখল করে রেখেছিল। ২৬ মার্চ থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত নিরন্তর যুদ্ধ করে রক্ত ঝরিয়ে পাকিস্তান হানাদারদের পরাজিত করে বাংলাদেশকে হানাদার মুক্ত করেছি। সেদিন আমি ছিলাম একজন শ্রেষ্ঠ দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধা। পাকিস্তানের দোসর মহীউদ্দীন খান আলমগীর ছিলেন একজন মাঝারি মাপের রাজাকার। কোর্ট কোনো জবাব দেননি। আগামী তারিখে দেবেন বলেছেন।

দয়াময় পরম প্রভুর সঙ্গে হজরত মূসা (আ.) দিদারের সুযোগ ছিল। তিনি বহুবার দয়াময় আল্লাহর সঙ্গে দিদার করেছেন। সেই মহান মূসা নবীর সময়ের ঘটনা। এক ওলি-এ-কামেল শুধু আল্লাহর জিকির-আশকার করে জীবনের সিংহভাগ সময় কাটিয়ে দিয়েছিলেন। তার সমাজের, দেশের জন্য কোনো ধ্যান, জ্ঞান ছিল না। শুধু স্রষ্টাপ্রেমে পাগল থাকতেন। ৪০ বছরের অধিক তিনি পাক পরোয়ার দেগার আল্লাহর ধ্যানে কাটিয়েছেন, কোনো দিকে তাকাননি। কোনো পাপ তাকে স্পর্শ করেনি। লোভ-লালসার ধারেকাছে যাননি। সে সময় তার থেকে বড় কোনো আল্লাহভক্ত ওলি ছিল না। হজরত মূসা (আ.)ও জানতেন তাই সম্মান করতেন। বয়োজ্যেষ্ঠ ছিলেন বলে নবীকে তুমি বলে সম্বোধন করতেন। একদিন প্রিয় মূসা নবী তার আস্তানার কাছ দিয়ে যখন আল্লাহর দিদারে যাচ্ছিলেন তখন তাকে ডেকে স্নেহের সুরে জিজ্ঞেস করেন, 'হে মূসা, তোমার কত সুবিধা। তুমি চাইলেই দয়াল প্রভুর সঙ্গে দিদার করতে পার। জীবন তো প্রায় শেষ। আল্লাহ ছাড়া কাউকে প্রভু মানি নাই। আল্লাহর ধ্যানে সারাজীবন কাটিয়ে দিলাম। নিশ্চয়ই পরম প্রভু আল্লাহ বেহেশতে কোথাও না কোথাও একটু জায়গা দেবেন। বড় সাধ জাগে দয়াময় আল্লাহ তাঁর কোন বেহেশতে একটু জায়গা দেবেন, যদি বেঁচে থাকতে জানতে পারতাম জীবনের একটা আশ মিটত।' ওলি-এ-কামেলকে পয়গম্বর মূসা (আ.) কথা দেন তিনি নিশ্চয়ই পরম দয়াময় আল্লাহর কাছে তার ইচ্ছে জানাবেন এবং ফেরার পথে জানিয়ে যাবেন। ওলি-এ-কামেলের আস্তানা থেকে হজরত মূসা (আ.) প্রভুর দিদারে যান। দিদারের শেষ পর্যায়ে ওলির কথা আল্লাহর দরবারে পেশ করেন। পাক পরোয়ার দেগার পরম প্রভু দয়ালু আল্লাহ মূসা নবীকে জানিয়ে দেন, 'সেই ওলির জায়গা বেহেশতে নয়, দোজখে নির্ধারিত। তিনি দোজখে স্থান পাবেন।' আল্লাহর নবী মূসা (আ.) ফেরার পথে বড় ভারাক্রান্ত হয়ে পড়েন। ভাবতে থাকেন সারাজীবন যিনি আরাধনা করেছেন, আল্লাহর জিকির-আশকার করে রাতের পর রাত কাটিয়েছেন, সেই মানুষের স্থান যদি জাহান্নামে হয় তাহলে সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে। তাদের স্থান কোথায় হবে। কিসের আশায় তারা ইবাদত-বন্দেগি করবেন। তাই দুঃসংবাদটি দিতে মন সায় দিচ্ছিল না। তাই ফেরার পথে তিনি অন্য রাস্তা ধরেছিলেন। ওলি-এ-কামেল বহু বছর সাধনা করে সিদ্ধ হয়েছিলেন। অনেক কামিলিয়াতি আয়ত্ত করেছিলেন। তাই দিদার শেষে মূসা (আ.) যে অন্য পথে যাচ্ছিলেন তা তিনি দেখতে পেয়ে রুহানি শক্তি বলে মূসা নবীর সামনে হাজির হন। ওলি-এ-কামেলকে দেখে হজরত মূসা (আ.) বড় বিস্মিত ও চিন্তিত হয়ে পড়েন। তিনি কি করে দুঃসংবাদটি দেবেন। ওলি-এ-কামেল জিজ্ঞেস করেন, 'কি হে মূসা, পালিয়ে যাচ্ছ যে? খারাপ খবর তাই না? আল্লাহ আমাকে দোজখে দেবেন? আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ আমায় দোজখে দিয়ে খুশি হলে তোমার চিন্তা কি? আল্লাহর খুশিই আমার খুশি। আমি তো সারা জীবন তাঁর খুশিই চেয়েছি। তুমি এত চিন্তায় পড়েছ কেন? দয়াময় প্রভু যা করেন তাতেই আমি খুশি।' মূসা (আ.) চলে যান। ওলি-এ-কামেল আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করতে জায়নামাজে বসেন, 'হে আমার দয়াময় প্রভু, আজ আমার বড় বিপদ, বড় দুর্দিন। আমি যে সারাজীবন তোমার ইবাদত বন্দেগি করেছি সেই ইবাদত বন্দেগির খাতিরে দয়াময় প্রভু তুমি এই বিপদে আমায় সাহায্য কর। তুমি কথা দিয়েছ, ইমানদারের ইবাদতের মূল্য তুমি দেবে। আমার কোনো ইবাদত যদি তুমি গ্রহণ করে থাক তাহলে আমার এই বিপদে তুমি আমায় দয়া কর, সাহায্য কর।' আল্লাহ ভক্ত ওলি-এ-কামেলের প্রতি তাঁর অনুগ্রহ ছিল অসীম। আল্লাহ তাকে কথা দেন, 'তোমার ইবাদতের মূল্য আমি দেব। তোমার এই বিপদে তুমি যা চাইবে তাই মঞ্জুর করব।' ওলি-এ-কামেল চোখের পানিতে বুক ভাসিয়ে দয়াময়ের কাছে প্রার্থনা করেন, 'হে আমার প্রভু, তুমি কথা দিয়েছ_ আমার ইবাদতের মূল্য তুমি দেবে। দয়াময় প্রভু তুমি কোনো কথার নড়বড় কর না। আমার সারাজীবনের ইবাদতের ফল হিসেবে আমার দেহটা তুমি এমন বিশাল ও বিরাট করে দাও যাতে সব দোজখ ভরে যায়। তাতে আর তিল ধরার জায়গা না থাকে। সারা দুনিয়ার পাপী তাপী সবাইকে তোমার যাতে বেহেশতে স্থান দিতে হয়।' দয়াময় আল্লাহ ওলি-এ-কামেলকে কথা দিয়েছিলেন তার কথা তিনি মঞ্জুর করবেন। তিনি সঙ্গে সঙ্গে আবার হজরত মূসা (আ.)কে ডাকেন। আল্লাহতায়ালা তাকে বলেন, 'মূসা, এই মুহূর্তে তুমি তোমার ওলির কাছে যাও। গিয়ে বল আমি তাকে এই মুহূর্ত থেকে বেহেশতের সবচেয়ে ভালো জায়গায় তার স্থান নির্ধারণ করেছি।' দয়াময় পাক পরোয়ার দেগার আল্লাহর কথা শুনে মূসা (আ.) বিস্মিতভাবে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন, 'হে আমার প্রভু, একটু আগে যাকে আমি বলে এলাম তার স্থান দোজখে। আবার গিয়ে এখনই যদি বলি তাকে বেহেশতে জায়গা দেওয়া হয়েছে_ কে আমার কথা বিশ্বাস করবে? আমি তো বড় খেলো হয়ে যাব। এমনিতেই সমাজে ঠেটা হিসেবে আমার নাম আছে। এরপর তো সাধারণ মানুষ আমায় মিথ্যেবাদী বলবে। কেন আমাকে এমন অপবাদে অপবাদী করবেন?' দয়াময় আল্লাহ তাকে বলেন, 'তোমার সংবাদ পেয়ে বিচলিত কামেল আমার দরবারে প্রার্থনা করতে বসে। সে তার ইবাদতের মূল্য হিসেবে যা চাইবে তাই দিতে প্রতিশ্রুতি দিই। সে কি চেয়েছে জান? সে বলেছে আমি যাতে তার দেহটা এত বড় বিপুল-বিশাল করে দিই, যাতে তার একার দেহে সব দোজখ ভরে যায় আর সারা জাহানের পাপী তাপী সবাইকে বেহেশতে স্থান দিতে বাধ্য হই। ওই ওলি-এ-কামেল সারাজীবন সে তার নিজের জন্য কেঁদেছে, প্রার্থনা করেছে। কিন্তু এই প্রথম সে অন্যের জন্য কেঁদেছে। তাই তার কান্না আমি মঞ্জুর করেছি। তার জন্য বেহেশতের সম্মানিত স্থান নির্ধারণ করেছি। তুমি গিয়ে সংবাদটা তাকে জানিয়ে দাও।'

প্রিয় পাঠক, সময় হাতে ছিল না। প্রায় ৫০ বছর আগে ধর্মীয় গ্রন্থে ঘটনাটি পড়েছিলাম যতটুকু স্মৃতিতে ছিল তাই তুলে ধরলাম। নিজের জন্য কাঁদলে দয়ালু প্রভু হাসেন, অন্যের জন্য চোখে পানি এলে আল্লাহর আরশ টলমল করে। জীবনে বহু গালাগাল শুনেছি, অপমান সহ্য করেছি, কিছুই বলিনি। কিন্তু আজ স্বাধীনতার ওপর, মুক্তিযুদ্ধের ওপর, মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর অমন আঘাত নীরবে সহ্য করব না। পিতৃসম বড় ভাই সংসদে গালাগাল করেছেন, আমি মেনে নিয়েছি। চিহ্নিত রাজাকার মহীউদ্দীন খান আলমগীরকে মন্ত্রী বানানো হয়েছে। আমি শুধু চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছি। কিন্তু সে দিন গণজাগরণ মঞ্চের তথাকথিত নেতা ইমরান এইচ সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের যে বিশেষণে বিশেষিত করেছেন, পাকিস্তানি হানাদাররাও মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের অত নিম্নমানের বিশেষণে বিশেষিত করেননি। নষ্ট-ভ্রষ্টরা কখনো মুক্তিযুদ্ধ করে না। মুক্তিযোদ্ধা হতে দেশপ্রেমের প্রয়োজন হয়। আর দেশপ্রেম ইমানের অংশ। ইমানদার ছাড়া কোনো বেইমান মুক্তিযোদ্ধা হতে পারে না। নষ্ট-ভ্রষ্টরা লুটতরাজ করে, চাঁদাবাজি করে, হাইজ্যাক করে, তারা কখনো রক্ত দেয় না বরং রক্ত নেয়। গত পরশু গণজাগরণের তথাকথিত নেতা জনাব ইমরান এইচ সরকার যে ঔদ্ধত্যের পরিচয় দিয়েছেন ক্ষমা প্রার্থনা করে তার বক্তব্য প্রত্যাহার না করলে তার পরিণতি ভয়াবহ হবে। মনে হয় তিনি ইতিহাস পড়েননি। পঞ্চাশের দশকে গণঅভ্যুত্থানে ইরাকের বাদশাহ নুর-ই-সাঈদের রাজপ্রাসাদ যখন জনতা দখল করে নেয় তখন নুর-ই-সাঈদকে টুকরো টুকরো করে ছিঁড়ে ফেলেছিল। ১৯৫১ সালে লাহোরে কায়েদে মিল্লাত লিয়াকত আলী খানকে অাঁততায়ী গুলি করে হত্যা করেছিল। জনতা সেই অাঁততায়ীকে ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করেছিল। মথুরার মহারাজ উগ্রসেনের অবাধ্য পুত্র কংসরাজের কারাগারে বাসুদেবের ঔরসে দেবকীর পেটে শ্রীকৃষ্ণের জন্ম। যিনি গোকুলে মা যশোদার কোলে লালিত-পালিত হন। সেই শ্রীকৃষ্ণ একদিন মামা কংসরাজকে দুই পায়ে ধরে টেনে ছিঁড়ে ফেলেছিলেন। কংসরাজের দেহ মাটিতে পড়লেই আবার তাজা হয়ে যেত, জীবন ফিরে পেত, কংসরাজের এই গোপন তথ্য শ্রীকৃষ্ণ ছাড়া আর কেউ জানতেন না। তাই কংসকে দু'পায়ে ধরে লম্বালম্বি ফেড়ে মাটিতে পড়তে দেননি। অনন্তকালের জন্য শূন্যে ছুড়ে দিয়েছিলেন। আমি সাবধান করতে চাই সরকারকে, সাবধান করতে চাই অভিনেতাদের। যথেষ্ট হয়েছে, ইসলামবিদ্বেষী, রাসূলবিদ্বেষী তৎপরতা এ দেশের মুমিন মুসলমানরা মেনে নেননি। মুক্তিযোদ্ধাদের সম্পর্কে অমন কটূক্তি দেশবাসী কিছুতেই মেনে নেবে না। মুক্তিযুদ্ধ কোনো নবাব, জমিদার করেনি, তাদের সন্তানেরা করেনি। মুক্তিযুদ্ধ করেছে খেটে খাওয়া আপামর জনসাধারণ এবং তাদের সন্তান-সন্ততিরা। বেসামরিক ব্যক্তি হিসেবে একমাত্র বীরউত্তম খেতাব পাওয়ার পরও সেই খেতাবের মর্যাদা সরকার রক্ষা করেনি বরং সংসদে নিজের মায়ের পেটের ভাইকে দিয়ে নিন্দাবাদ শুনিয়েছেন, গালাগাল করিয়েছেন। রাজাকারকে মন্ত্রী বানানোয় প্রতিবাদ করায় কোর্টে পাঠিয়েছেন। অনেক কিছু সহ্য করেছি। এখনো সংশোধন না হলে মরণপণ করে রাস্তায় নামব। হয় জয়, না হয় মৃত্যু। তাই সময় থাকতে সতর্ক হওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।

বিষয়: বিবিধ

১০৬৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File