বগুড়ায় ২০ কোটি টাকার গাছ কেটে নিল আওয়ামী লীগের লোকজন
লিখেছেন লিখেছেন আমলক ১৭ মার্চ, ২০১৩, ১০:৪৪:২৫ রাত
বগুড়া ব্যুরো
নতুন বার্তা ডটকম
বগুড়া: বগুড়ায় সরকারি রাস্তার দুই পাশে লাগানো প্রায় দুই হাজার গাছ কেটে সাবাড় করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগের একাংশের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। এসব গাছের মূল্য প্রায় ২০ কোটি টাকা। বগুড়া-৫ আসনের আওয়ামী লীগের এমপির ভাইয়ের নেতৃত্বে এসব গাছ কেটে বিক্রি করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন গাছ পরিচর্যাকারী স্থানীয় বাসিন্দারা ।
জানা গেছে, গত কয়েক দিনে বগুড়ার ধুনট উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে প্রায় দুই হাজার গাছ কেটেছেন ওই সরকারদলীয় প্রভাবশালীরা। এতে গাছ পরিচর্যাকারীরা তাদের ৬০ শতাংশ মূল্য পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ নিয়ে স্থানীয় এমপি, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে স্মারকলিপি, মানববন্ধনসহ গাছ রক্ষায় আদালতে মামলা করেও শেষ রক্ষা হচ্ছে না।
২০ বছর আগে বগুড়ার ধুনট উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের সরকারি রাস্তায় সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্প (ডিআইডিপি) নামের একটি বেসরকারি সংস্থা এসব গাছ লাগিয়েছিল। তখন ৬০ ভাগ মালিকানার শর্তে গাছ পরিচর্যার জন্য স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে চুক্তি হয় ডিআইডিপির। শর্ত ছিল ২০ বছর পর গাছের মোট মূল্যের ৬০ ভাগ পাবে স্থানীয় পরিচর্যাকারী,২০ ভাগ পাবে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ এবং বাকি ২০ ভাগ পাবে ডিআইডিপি। এখন উদ্যোক্তা ডিআইডিপি ও পরিচর্যাকারীদের বঞ্চিত করে গাছগুলো বিক্রি করেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের একাংশের নেতাকর্মীরা। গাছের মালিকদের অভিযোগ, এ ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিচ্ছেন আওয়ামী লীগের এমপি হাবিবুর রহমানের ভাই রেজাউল করিম রেজা।
গাছ পরিচর্যাকারীরা জানান, গত ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ধুনটের মথুরাপুর ইউনিয়নের ৫৫৫টি গাছ কেটে সাবাড় করা হয়েছে। এরপর গতকাল শনিবার পর্যন্ত চিকাশী ইউনিয়নের ২০০, কালেরপাড়া ইউনিয়নের ১০০, এলাঙ্গী ইউনিয়নের ৩০০ এবং মথুরাপুরে আরো ৭০০ গাছ কেটেছেন সরকারদলীয় লোকজন।
ডিআইডিপির প্রকল্প ব্যবস্থাপক খন্দকার আতিকুর রহমান বলেন, “এসব গাছের মালিক স্থানীয় পরিচর্যাকারী, ইউনিয়ন পরিষদ ও ডিআইডিপি। কিন্তু গায়ের জোরে প্রভাবশালীরা এসব গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছেন। আমরা আদালতে মামলা করেও কোনো ফল পাচ্ছি না।”
এ বিষয়ে ধুনট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফিরোজ শাহ জানান, এর আগে উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে গাছ কাটা বন্ধ হয়েছিল। এখন আর সব রাস্তায় পাহারা দিয়ে গাছ কাটা বন্ধ করা সম্ভব নয়।
মথুরাপুর ইউপি চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান ফিরোজ জানান, এসব গাছের মালিকানা নিয়ে ডিআইডিপি ও পিইপি নামের দুটি সংস্থার মধ্যে দ্বন্দ্ব থাকায় তৃতীয় পক্ষ এসে গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছে। এতে করে ইউনিয়ন পরিষদ ও পরিচর্যাকারীরা বঞ্চিত হচ্ছেন।
ধুনট থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ জানান, কিছু কাটা গাছ উদ্ধার করা হয়েছে। তবে ডিআইডিপি ও পিইপি গাছের মালিকানা দাবি করায় জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে।
এ বিষয়ে ডিআইডিপির কর্মকর্তারা অভিযোগ করেন, গাছ লাগানোর সময় এই সংস্থার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা পরে পদত্যাগ করে নিজেই পিইপি নামে একটি সংস্থা গঠন করেন। এখন তিনি গাছগুলোর মালিকানা দাবি করছেন।
ডিআইডিপির উপদেষ্টা ব্রাদার উইলিয়াম ও জেলা মাঠ কর্মকর্তা আবদুল খালেক গাছ লাগানোর পর ওই সংস্থা থেকে পদত্যাগ করে পিইপি নামে এনজিও প্রতিষ্ঠা করেন। তারা এখন ডিআইডিপির গাছগুলো নিজেদের দাবি করায় সরকারদলীয় প্রভাবশালীরা এগুলো কেটে সাবাড় করছেন বলে দাবি করেন ডিআইডিপির বর্তমান কর্মকর্তারা।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক টি আই এম নুরুন্নবী তারেক বলেন, “সরকারি দলের প্রভাব দেখিয়ে যারা গাছ কাটছেন, তারা দলের সুনাম ক্ষুণ্ন করছেন। তবে এ বিষয়ে আমরা তদন্ত করে দেখছি কারা এসবের সঙ্গে জড়িত।”
স্থানীয় এমপির ভাই রেজাউল করিম রেজার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে গাছ কাটার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, তারা আইন মেনেই গাছ কাটছেন।
নতুন বার্তা/মোআ
বিষয়: বিবিধ
১১২৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন