ভারতের আউটলুক সাময়িকীর প্রতিবেদন : হাসিনাকে আবার ক্ষমতায় আনার কৌশল চূড়ান্ত করছে ভারত : হিন্দুদের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় কখনও জড়ায়নি জামায়াত

লিখেছেন লিখেছেন আমলক ১৪ মার্চ, ২০১৩, ১০:৫১:৪৭ সকাল

ভারতের বহুল প্রচারিত আউটলুক সাময়িকীতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হাসিনাকে আরেকবার ক্ষমতায় আনার কৌশল চূড়ান্ত করছে ভারত। প্রতিবেদনে জামায়াত সম্পর্কে বলা হয়েছে, ভারতীয় ও পশ্চিমা গণমাধ্যম বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে মৌলবাদী দল বললেও হিন্দুদের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় কখনও জড়ায়নি এই দলটি। সংসদের ৮০টি আসনে জামায়াতের ভোট খুবই গুরুত্বপূূর্ণও বলে মন্তব্য করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

আউটলুকের চলতি সংখ্যায় ‘দ্য মনস্টার ব্রেথস এয়ার’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘জামায়াতকে নিয়ে আমেরিকার উদ্বেগ খুবই স্পষ্ট। ভারতের সমর্থনপুষ্ট গণতান্ত্রিক ও সেক্যুলার দলগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক রাখার জন্য নয়া দিল্লি জেঁচে আমেরিকাকে উপদেশ দিলেও তা আমলে নেয়নি ওয়াশিংটন। বরং ওয়াশিংটন যুদ্ধাপরাধের বিচারে অনিয়ম নিয়ে প্রশ্ন তুলে ঢাকাকে (বাংলাদেশ সরকারকে) বলেছে, যুদ্ধাপরাধের বিচারে মানবাধিকার লঙ্ঘন সহ্য করা হবে না। খালেদা জিয়াকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনার গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে জামায়াতকে দেখছে ওয়াশিংটন। তবে এ অবস্থার মধ্যেই ভারত শেখ হাসিনাকে আরেকবার ক্ষমতায় আনার কৌশল চূড়ান্ত করছে।’

প্রণব মুখার্জির বাংলাদেশ সফরকালে তার সফরসঙ্গী এসএনএম আবদির লেখা প্রতিবেদনে বলা হয়, জামায়াতকে মৌলবাদী দল বলা হলেও দলটি হিন্দুদের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় জড়ায়নি। বাংলাদেশে হিন্দুরা অর্থনৈতিকভাবে নিষ্পেষিত হলে এখানে তাদের জীবন নিরাপদ।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘বাংলাদেশের জামায়াত সম্পর্কে সবচেয়ে বড় যে কথা বলা যায়, তা হলো শুধু ধর্মের কারণে দলটি হিন্দুদের হত্যা করেনি। সত্য কথা বলতে কি, ভারতের হিন্দুত্ববাদী দানবীয় সংগঠনগুলো ভারতের মুসলিমদের টার্গেট করলেও এখানেই জামায়াতের তাত্পর্য। এটাই হলো জামায়াত সম্পর্কে সহজ সত্য।’

প্রতিবেদনে বলা হয়, তবে ভারতীয় ও পশ্চিমা গণমাধ্যম এবং শাহবাগের আন্দোলনকারীরা অব্যাহত জামায়াতকে দানব হিসেবে চিত্রিত করে চলেছে। সাম্প্রতিক সহিংসতায় জামায়াতের যে ৮৪ জন নিহত হয়েছে, তারা মূলত নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতেই মারা গেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, এমনকি ঢাকায় ভারতের কূটনীতিকরা অথবা হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারাও বলতে পারেননি যে শুধু ধর্মীয় কারণে বাংলাদেশে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কোনো হিন্দুকে হত্যা করা হয়েছে কিনা। বিএনপি-জামায়াতের সমর্থকরা হিন্দুদের হত্যা করলেও তা শুধু রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণেই ঘটেছে। তাদের হিন্দু হিসেবে টার্গেট করা হয়নি। বরং আওয়ামী লীগকে সমর্থন করার কারণে হিন্দুদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। এটাকে পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল ও সিপিআই’র (এম) কর্মীদের মধ্যকার রাজনৈতিক সহিংসতার সঙ্গে তুলনা করা যায়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, যদিও হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্যপরিষদের একজন মুখপাত্র দাবি করেছেন, চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে একজন প্রবীণ হিন্দু পুরোহিতকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তবে ঢাকায় ভারতীয় হাই কমিশন জোর দিয়ে বলেছে, ওই হত্যার সঙ্গে ধর্মের কোনো সম্পর্ক ছিল না। অন্যদিকে অবাক করা ব্যাপার হচ্ছে, গত ডিসেম্বরে হিন্দু বিশ্বজিত্ দাসকে আওয়ামী লীগের লোকেরাই ঠাণ্ডা মাথায় নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করেছে। যদিও বিশ্বজিত্ কোনো দলের কর্মী ছিল না।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে হিন্দুরা তলোয়ারের নিচে বাস করছে না। তবে তাদের জীবন পুষ্পশয্যাও নয়। তারা অর্থনৈতিক সঙ্কটে নিষ্পেষিত। তাদের ঘরবাড়ি, দোকানপাট ও জমিজমা দখল করার জন্যই তাদের ভারতে চলে যেতে বাধ্য করা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, জামায়াত বিএনপির একটি গুরুত্বপূর্ণ মিত্র। জামায়াতের ভোট ৮০টি আসনে জয়ের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জামায়াতকে মৌলবাদী দল বলা হলেও নির্বাচন কমিশনের শর্ত পূরণের জন্য দলটির সংবিধান থেকে ‘আল্লাহর আইন’ প্রতিষ্ঠার কথা বাদ দিয়েছে। শুধু তাই নয়, ভারতের হিন্দুত্ববাদী নেতা সুষমা স্বরাজ, স্মৃতি ইরানী, মীনাক্ষী লেখি, নির্মলা সীতারমনের মতো নারী নেত্রীরা জেনে খুশি হবেন যে, দলটি মহিলাদের জন্য ৩৩ শতাংশ পদ সংরক্ষিত রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

বিষয়: বিবিধ

৯৬০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File