ত্বকী হত্যাকান্ডে দুই দিনেই মিডিয়ার ইউ-টার্ন: নতুন ইস্যু মিরাজের হত্যা?

লিখেছেন লিখেছেন আমলক ১১ মার্চ, ২০১৩, ০৮:৪৫:১১ রাত

কিউ শিশির, নিউজমিডিয়াবিডি.কম, ঢাকা, ১১ মার্চ : সোমবারের পত্রিকাগুলোর প্রধান খবর হচ্ছে বিশিষ্ট সঙ্গীত পরিচালক বুলবুল আহমেদের ছোট ভাইয়ের রহস্যজনক মৃত্যু, নারায়নগঞ্জে নিহত আওয়ামী লীগ নেতার ছেলের হত্যাকান্ডের ফলোআপ। দেশের উদ্ভুত পরিস্থিতির ভয়াবহতা ও আশংকাজনক পরিণতি নিয়ে কিছু বিশেষ সংবাদ ও টেস্টে ক্রিকেটে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ম্যাচে আশরাফুল ও মুশফিকুর রহিমের রেকর্ড পার্টনারশীপ। প্রথম আলোর প্রধান শিরোনাম ‘খুনের পর খুন, দেশজুড়ে আতংক’, আমার দেশ এর প্রধান শিরোনাম ‘এক মাসে সাংবাদিক নির্যাতনের রেকর্ড, সমকালের ‘ওদের পাশে দাড়ান: আ.লীগ প্রতিরোধ গড়তে পারেনি’, কালের কণ্ঠের ‘আতংকিত মানুষ তাকিয়ে আছে দুই নেত্রীর দিকে: প্রয়োজন যুদ্ধাপরাধের বিচার ও তত্ত্বাবধায়ক ইস্যুর মীমাংসা’। বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রধান শিরোনাম হল- ‘সহিংসতা ঠেকাতে ব্যর্থ প্রশাসন’ ইত্যাদি।

প্রথমে বুলবুল আহমেদের ছোট ভাইয়ের রহস্যজনক মৃত্যু প্রসঙ্গে আসা যাক। রোববার গভীর রাতে আহমেদ মিরাজ নামক ওই ভদ্রলোককে কে বা কারা শ্বাসরোধে হত্যা করে বনানীতে রেললাইনের পাশে ফেলে রেখে যায়। ঘটনাটির সংবাদ পরিবেশনে মঙ্গলবারের সব পত্রিকার সুর প্রায় একই। সবাই বুলবুল আহমেদের বরাত দিয়ে এ ঘটনার জন্য জামায়াত-শিবিরকে দায়ী করেছে। বুলবুল আহমেদের ধারণা, তিনি গোলাম আযমের যুদ্ধাপরাধ বিষয়ক একটি মামলায় তার বিরুদ্ধে স্বাক্ষী দিয়েছেন, তাই জামায়াত তার ভাইকে হত্যা করেছে। একটি দুর্ঘটনার পর ভুক্তভোগীর কাছে এমন সন্দেহ আসা অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে মিডিয়ার দায়িত্ব হল এধরনের বক্তব্য ছাপাতে লাগামহীন না হওয়া। ভুক্তভোগীর বক্তব্যের পাশাপাশি অভিযুক্তের বক্তব্য দেয়া। না হলে পরবর্তীতে এ ঘটনার তদন্ত মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হতে পারে। এতে অনেক সময় মুল দোষীর পার পেয়ে যাওয়ার পথ তৈরি হয়। ফেসে যায় দোষ না করা কেউ। অথবা কেউই ধরা পড়ে না, মাঝখান থেকে বিচার না পেয়ে ঢুঁকরে কাঁদে বিচারপ্রার্থী।

আহমেদ মিরাজের হত্যার খবর নিয়ে সোমবারের সব পত্রিকার প্রতিবেদনগুলোর মুলকথা ছিল, গোলাম আযমের বিরুদ্ধে সাক্ষী হওয়ার জন্যই তিনি খুন হয়েছেন। প্রথম আলো, কালের কণ্ঠ, ইত্তেফাক, সমকাল, বাংলাদেশ প্রতিদিন, ইনকিলাবসহ অন্য সবাই একই কথা বলতে চেয়েছে। ব্যতিক্রম ছিল আমার দেশ। তাদের প্রথম পাতায় এ সংক্রান্ত তিন কলামের খবরের শিরোনাম ‘সঙ্গীত পরিচালক বুলবুলের ভাইয়ের রহস্যজনক মৃত্যু: সুরতহাল রিপোর্টে নারীঘটিত বিষয়ের ইঙ্গিত’। ওই প্রতিবেদনে সুরতহাল রিপোর্টে বিস্তারিত বিবরণ পড়লে ‘নারী ঘটিত ব্যাপার’টি আরও স্পষ্ট হয়।

প্রশ্ন হল- অন্যান্য পত্রিকাগুলো কি এই সুরতহাল রিপোর্ট দেখেনি? একটা পত্রিকা পেলে অন্যদের জন্য পাওয়া কঠিন কিছু না, বরং অস্বাভাবিক। তাহলে ‘জামায়াত কানেকশনের’ ধারণার পাশাপাশি কেন পত্রিকার প্রতিবেদনে এই ব্যাপারটি উঠে এল না? এমন সাংবাদিকতা কি প্রশ্নবিদ্ধ নয়?

একই ধরনের আরেকটি মজার ব্যাপার আছে সোমবারের পত্রিকাগুলোতে। গত শুক্রবার রাতে নারায়নগঞ্জে আওয়ামী লীগ নেতার ছেলে খুনের পর পরের দিনের পত্রিকাগুলোর ‘জামায়াতি হুজুগ’ ছিল চোখে পড়ার মতো। প্রথম আলো থেকে শুরু করে দেয়ালে টাঙ্গানো পত্রিকা পর্যন্ত সবাই একবাক্যে জামায়াত-শিবিরকে দায়ী করেছিল এঘটনার জন্য। কিন্তু রোববার নিহত ত্বকির বাবা ও স্থানীয় এমপি সারাহ বেগম কবরীর সাংবাদিকদের সাথে বলা কিছু কথার জবাবে সোমবারের বেশিরভাগ পত্রিকা নীরব! তবে প্রথম আলো তাদের দু’দিন আগের ‘জামায়াতি হুজুগ’ থেকে বেরিয়ে এসে আজকের সংবাদের শিরোনাম দিয়েছে- ‘সন্দেহের তীর একটি পরিবারের দিকে’। অনুসন্ধানী ওই প্রতিবেদনে উঠে এসেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের কথাবার্তা। তারা হত্যাকান্ডের জন্য দুষছেন স্থানীয় এক প্রভাবশালী আওয়ামী রাজনৈতিক পরিবারকে।

এদিকে রোববার ত্বকিদের বাসায় তার বাবা ও এমপি করবী সাংবাদিকদের সাথে দীর্ঘক্ষণ এ ঘটনা নিয়ে যা আলাপ করেছেন, তার বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরে আমার দেশ এর করা রিপোর্টের শিরোনাম –‘সরকারি মদদপুষ্ট মহলকে দায়ী করলেন ত্বকীর বাবা’। শেষের পাতায় ছাপা হওয়া প্রতিবেদটিতে রাফিউর রাব্বির স্পষ্ট ইঙ্গিত আওয়ামী ওই পরিবারটির দিকে।

কিন্তু মজার ব্যাপার হল, কিছু পত্রিকা করবী ও রাব্বির এই বক্তব্যকে পাশ কেটে গেছে। সমকাল তাদের শেষের পাতার প্রতিবেদনের শিরোনাম করেছে ‘ওই পরিবারের মদদপুষ্ট’ কিছু ব্যবসায়ীর হত্যাকান্ডের বিচার দাবিতে করা সমাবেশের বক্তব্য থেকে। কবরীর ভিন্ন কিছু বক্তব্য ছাপালেও ‘প্রভাবশালী পরিবার’ প্রসঙ্গ এড়িয়ে গেছে।

এখন বড় একটি প্রশ্ন জাগা খুবই স্বাভাবিক। সেটি হচ্ছে ত্বকী হত্যাকান্ডের মতো মিরাজ হত্যাকান্ডেও কয়েকদিন পর হুজুগে মিডিয়াগুলোকে আবার এমন লুকোচুরি করতে হয় কিনা?

কালের কণ্ঠের শিরোনামটি খুব তাৎপর্যপুর্ণ- ‘আতংকিত মানুষ তাকিয়ে আছে দুই নেত্রীর দিকে: প্রয়োজন যুদ্ধাপরাধের বিচার ও তত্ত্বাবধায়ক ইস্যুর মীমাংসা’। গত কয়েকদিন ধরে উদ্ভুত পরিস্থিতিকে আমলে না নিয়ে মিডিয়াগুলোর একপেশে ভুমিকা থেকে এখন অনেকে বেরিয়ে আসতে চাচ্ছে। দুই পক্ষকে সতর্ক করতে তারা ব্যস্ত হচ্ছেন। এটি শুভ লক্ষণ।

বিষয়: বিবিধ

১১৭২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File