পুলিশ কেন টার্গেট
লিখেছেন লিখেছেন আমলক ০৭ মার্চ, ২০১৩, ০৮:৩১:০৯ সকাল
নিয়মিতভাবে রাজনৈতিক সহিংসতার শিকার হচ্ছে পুলিশ। হরতাল, বিক্ষোভ কিংবা যে কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে দুর্বৃত্তদের প্রধান টার্গেটেই থাকছেন এই বাহিনীর সদস্যরা। সম্প্রতি রাজনৈতিক সহিংসতার বলি হয়ে এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে সাতজন পুলিশ মারা গেছেন। গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৩৬ জন। পুলিশ কেন এত টার্গেট হচ্ছে? এ বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে অপরাধ বিশেষজ্ঞদের। উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এই বাহিনীর সাবেক ও বর্তমান অনেক ঊধর্্বতন কর্মকর্তা। তাদের অনেকেই বলছেন, অতীতে বর্তমানের চেয়ে আরও খারাপ পরিস্থিতিতেও পুলিশ এমন হামলার শিকার হতো না। রাজনৈতিকভাবে এই বাহিনীকে যথেচ্ছ ব্যবহারই অন্যতম কারণ। প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য পুলিশের যথার্থ প্রশিক্ষণের অভাব রয়েছে। আবার কেউ কেউ বলছেন, একটি মহল মনে করছে পুলিশকে আঘাত করলেই সরকারের টনক নড়বে। দাবি আদায় করা সহজ হবে।
চারটি কারণ উল্লেখ করে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, প্রথমত পুলিশ বাহিনীর জনবল কম ও যথাযথ প্রশিক্ষণের অভাব, দ্বিতীয়ত রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে যথেচ্ছ ব্যবহার, তৃতীয়ত সরকার ও এই বাহিনীর মধ্যে সমন্বয়হীনতা এবং চতুর্থত রাজনৈতিক সমস্যাগুলো রাজনৈতিকভাবে সমাধান না করে পুলিশ বাহিনীকে দিয়ে গুলি চালিয়ে সমাধান খোঁজা। এসব কারণে একটি গোষ্ঠী পুলিশের ওপর চড়াও হচ্ছে। আবার লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের নামে বিরোধী দলও এ থেকে সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করছে।
আইন বিশেষজ্ঞ ড. শাহ্দীন মালিক বলেন, বহু বছর ধরে এই বাহিনীতে নিয়োগ, পদোন্নতি ও বদলিতে মেধা বাদ দিয়ে বাণিজ্য হচ্ছে। একই সঙ্গে দলীয় বিবেচনা ও অন্যান্য বিষয় এ বাহিনীতে প্রাধান্য পাওয়ার কারণে নৈতিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ছেন বেশির ভাগ পুলিশ সদস্য। তাদের দক্ষতাও উচ্চমানের নয়। আক্রমণের মুখে তারা পিছপা হতে বাধ্য হচ্ছেন। সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক আবদুল কাইয়ূম বলেন, সরকার পুলিশ বাহিনীকে ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে এত অত্যাচার, নির্যাতন চালিয়েছে যা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। এ ছাড়া অতি উৎসাহী কিছু পুলিশ কর্মকর্তার কর্মকাণ্ডের খেসারত দিচ্ছেন পুরো বাহিনীর সদস্যরা। গত চার বছরে পুলিশকে দিয়ে সরকার বিএনপির মতো শান্তিপ্রিয় দলকে মাঠে নামতে দেয়নি। ইউটিউবে সাধারণ মানুষকে নির্বিচারে গুলি করার দৃশ্যের বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, এভাবে মানুষ খুন করার প্রশিক্ষণ তো দেওয়া হয় না পুলিশকে। তাহলে এরা কারা? এসব দৃশ্য দেখার পর পুলিশের প্রতি মানুষের আর আস্থা থাকার কথা নয়। কী ধারণা জন্মাবে পুলিশের ওপর? কিছু দলীয় ক্যাডারের অতি উৎসাহী পুলিশ কর্মকর্তাকে তো সাধারণ মানুষও দেখেছে। অপরাধবিজ্ঞানী ড. আবদুল হাকিম সরকার বলেন, রাজনীতির মধ্যে সন্ত্রাস ঢুকে পড়ার কারণে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে কিছু কমন বিষয়ে দেশের স্বার্থেই সব রাজনৈতিক দলের উচিত একটি প্লাটফর্মে নিয়ে আসা। নইলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার মহাসচিব অ্যাডভোকেট সিগমা হুদা জানান, সাধারণ মানুষের কাছে পুলিশকে এভাবে বিতর্কিত করে কোনো লাভ আছে সরকারের? আজ মানুষ পুলিশের কাছে যেতে ভয় পায়। কিছু পুলিশ সদস্যের অতি উৎসাহী ভূমিকাই এই বাহিনীকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। অতি উৎসাহী পুলিশ সদস্যদের চিহ্নিত করে তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করা দরকার। নইলে সরকারের ভাবমূর্তি আরও খারাপ হয়ে যাবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের অনেক কর্মকর্তা বলেছেন, পুলিশের কিছু অতি উৎসাহী সদস্যের কারণেই বিপদে পড়ছে গোটা বাহিনী। তাদের অনেকে সরকার পরিবর্তন হওয়ার আগেই তো বিদেশে পাড়ি জমাবেন। বর্তমান সরকারও তো একসময় বিরোধী দল হবে। রাষ্ট্রের কথা চিন্তা করেই এ বাহিনীকে প্রশ্নবিদ্ধ করা সরকারের উচিত নয়।
বিষয়: বিবিধ
১১৩০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন