জাতিসংঘে মানবাধিকার পরিস্থিতি গোপন করছে সরকার

লিখেছেন লিখেছেন আমলক ১৭ এপ্রিল, ২০১৩, ০৩:২৬:২১ দুপুর

http://www.rtnn.net//newsdetail/detail/1/3/62378#.UW5ojUrVFqQ

ঢাকা (আরটিএনএন): ‘বিশ্ববাসীর কাছে’ বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি সরকার গোপন করছে বলে অভিযোগ করেছে হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশ।

বুধবার সকালে ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটি’র (ডিআরইউ) ভিআইপি লাউঞ্জে ‘জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির পর্যালোচনা এবং হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশ’র প্রত্যাশা’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করা হয়।

আগামী ২৯ এপ্রিল জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদে উপস্থাপনের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ সরকারের পর্যালোচনামূলক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির প্রকৃত চিত্র গোপন করা হয়েছে।

তবে জাতিসংঘের সর্বজনীন পুনর্বীক্ষণ পদ্ধতি’র (ইউপিআর) আওতায় বেসরকারি প্রতিবেদনে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়েছে। এই প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে কয়েকটি মানবাধিকার ও নাগরিক সংস্থার সমন্বয়ে গঠিত ‘হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশ’।

সরকারি প্রতিবেদনের পাশাপাশি জাতিসংঘের নির্দেশিত উপায়ে এই প্রতিবেদনটিও একই সময়ে মানবাধিকার পরিষদে জমা হবে।

হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশ’র আহবায়ক ও আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আশক) নির্বাহী পরিচালক সুলতানা কামাল আজকের সংবাদ সম্মেলনে বেসরকারি প্রতিবেদনের চুম্বক অংশ তুলে ধরেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১২ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে ৪৬২ টি। গুম হয়েছেন ১৫৬ জন, যার মধ্যে মাত্র ২৮ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।

অন্যদিকে জাতিসংঘে উপস্থাপনের জন্য তৈরি করা প্রতিবেদনে বাংলাদেশ সরকার এসব বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ডের কথা অস্বীকার করেছে উল্লেখ করে সুলতানা বলেন, সরকারের দিচ্ছা থাকলেই এসব হত্যাকান্ড বন্ধ করা সম্ভব।

সুলতানা বলেন, সীমান্ত হত্যাকান্ড বন্ধ করার ব্যাপারে ভারত বরাবরই প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছিল। এরপরও তা বন্ধ করেনি ভারত। ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১২ সালের জুন পর্যন্ত ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ’র গুলিতে ২৭০ জন নিরীহ বাংলদেশি সীমান্ত হত্যার শিকার হয়।

কারা পরিস্থিতির ব্যাপারে বলা হয়, বাংলাদেশের কারগারগুলোর মোট ধারণ ক্ষমতা ৩০ হাজার ৬৩০ জন। অথচ ২০১২ সালের মে মাস পর্যন্ত এক পরিসংখ্যানে দেখা যায় যে বাংলাদেশের কারাগারগুলোতে মোট বন্দীর সংখ্যা রয়েছে ৭২ হাজার ৩ জন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, এরফলে বন্দীরা মানবেতর জীবন যাপনে বাধ্য হচ্ছে। তারা সেখানে শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে অহরহ।

এসব ঘটনা মানবাধিকার নিশ্চিত করার বিষয়ে সরকারের ব্যার্থতাকেই আরও নগ্নভাবে তুলে ধরে, বলেন তিনি।

বিরোধীদলের সভা সমাবেশে সরকারের বাধা দেয়া ও গণগ্রেপ্তার, নানা নাগরিক ও শ্রমিক আন্দোলনে বাধা দিয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘণ করা হচ্ছে। এছাড়া আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে সরকারের নেতিবাচক মনোভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করে হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশ।

তবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু করা, খাদ্য নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য সেবা, শিক্ষার অধিকার ও নারীর অধিকারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের পরিবর্তনগুলোকে ইতিবাচক বলে উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে।

সংবাদ সম্মেলনে আলোচনায় অংশ নিয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সরকার মানবাধিকারের বিষয়টি চেপে গেলেও আমরা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডেলে তা তুলে ধরবো। যা বাস্তব ঘটনা, তা-ই প্রতিবেদনে তা তুলে ধরছেন বলেও দাবি করেন তিনি।

তিনি বলেন, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন সরকারই গঠন করেছে। তবে, একে কাজ করতে হবে সরকারের বাইরে এসে। এ কমিশনকে আমরা সব রাজনীতির উর্ধ্বে দেখতে চাই।

মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার সাথে জড়িত আইন শৃংখলা-রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে রাজনৈতিক প্রভাব রয়েছে। এতে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার কাজ ব্যাহত হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন ড. ইফতেখারুজ্জামান।

তিনি বলেন, প্রতিটি নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের অস্থিরতার সৃষ্টি হয়। এ পরিস্থিতিতে মানবাধিকার চরমভাবে লঙ্ঘিত হয়।

‘নাগরিক উদ্যোগে’র প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন বলেন, আমাদের প্রতিবেদনে বাংলাদেশের সত্যচিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এতে বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ডের যেই চিত্র উঠে এসেছে, তা উদ্বেগজনক। অথচ সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তা অস্বীকার করছে।

তিনি বলেন, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন কিছু বিষয়ে সরকারের সাথে সমঝোতা করছে। তবে কিছু বিষয়ে স্বচ্ছতা রয়েছে।

মানুষের জন্য ফাউণ্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, তৃণমূল থেকে তথ্য নিয়ে নিয়ে সত্য তুলে ধরার জন্য তারা প্রতিবেদন তৈরি করেন।

আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং বলেন, সরকার পার্বত্য ভূমিকমিশন গঠন না করায় আদিবাসীরা জমির ওপর তাদের অধিকার হারাচ্ছে। এছাড়া শান্তি চুক্তিও সরকার যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করছে না বলে অভিযোগ করেন তিনি।

বিষয়: বিবিধ

১০০৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File