‘কোন মা আর তার ছেলেকে ছাত্রলীগ করতে পাঠাবে না’

লিখেছেন লিখেছেন আমলক ১০ এপ্রিল, ২০১৩, ০২:১৭:৩০ দুপুর



http://www.bdtomorrow.net/newsdetail/detail/41/19717

খুনের তিন মাস পার হয়ে গেলেও চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক আবদুল মালেক জনি’র খুনীদের কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এর মাঝে আবার জনির স্বজনদের হুমকিধমকি দিয়ে এবং থানায় ‘বিতর্কিত’ জামিননামা দাখিল করে ঘটনার দায় থেকে পার পাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে আসামীরা।

অভিযোগ উঠেছে, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী কয়েকজনের আশ্রয়-প্রশ্রয় থাকায় এবং খুনীরা ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকায় পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করছেনা। আওয়ামী লীগ নেতাদের ‘অদৃশ্য’ চাপের কারণেই পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করতে পারছেনা।

এ অবস্থায় কার্যত হতাশা ও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক সাহাবউদ্দিন সাকিব বাংলানিউজকে বলেন, ‘দিনেদুপুরে হামলা করে আমাদের আহবায়ককে খুন করা হয়েছে। অথচ আমরা কোন বিচার পাচ্ছিনা। এভাবে হলে তো কোন মা আর তার ছেলেকে ছাত্রলীগ করতে পাঠাবে না। কোন মা আর তার ছেলেকে রাজনীতি করতে পাঠাবে না।’

গত ৪ জানুয়ারী নগরীর আন্দরকিল্লায় চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগ অফিসে ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচীতে সংগঠনের বিবদমান এক গ্রুপের কর্মীদের হামলায় গুরুতর আহত হন আহবায়ক আব্দুল মালেক জনি। আহত জনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৮ জানুয়ারী রাতে মারা যান।

ঘটনার পরদিন জনি’র ছোট ভাই আবদুল মাজেদ চৌধুরী রুবেল বাদী হয়ে ৯ জন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে কোতয়ালী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার আসামীরা হলেন, আবু শাহাদত মো. সায়েম, ফরহাদুল আলম, মহিউদ্দিন মহি, আবু জাহেদ, মো. শামীম, মনির উদ্দিন, কফিল উদ্দিন, মো. দোবান প্রকাশ নোমান এবং মো. ফারুক। মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও ১০থেকে ১২ জনকে আসামী করা হয়।

কিন্তু গত তিনমাসেও মামলার এজাহারভুক্ত কোন আসামীকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কোতয়ালী থানার এস আই মো.কামরুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, ‘আসলে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে আমাদের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়েই বেশি দৌঁড়াতে হচ্ছে। মামলার স্বাভাবিক তদন্ত কিংবা আসামী গ্রেপ্তারের বিষয়ে আমরা তেমন মনযোগ দিতে পারছিনা। এরপরও জনি হত্যা মামলার আসামীদের অবস্থান নির্ণয়ের চেষ্টা চলছে।’

তবে পুলিশের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রে জানা গেছে, মামলার বেশ কয়েকজন আসামী ঘটনার পর মাসখানেক পলাতক থাকলেও পরে তারা সবাই নগরীতে এবং নিজ নিজ এলাকায় ফিরে আসে। প্রত্যেক আসামীই রাজনৈতিক কর্মকান্ডেও অংশ নিতে শুরু করে। এমনকি তাদের দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের একজন প্রভাবশালী নেত্রী এবং অপর একজন সাংসদের সঙ্গে বিভিন্ন কর্মসূচীতে দেখা যাওয়ার পর মূলত পুলিশ আসামীদের গ্রেপ্তারে নিস্ক্রিয় হয়ে পড়েন।

নিহতের ছোট ভাই ও মামলার বাদি আব্দুল মাজেদ চৌধুরী রুবেল বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা শুনেছি, দলীয় লোকদের কেউ কেউ আসামীদের আশ্রয় প্রশ্রয় দিচ্ছেন। তাদের চাপের কারণে পুলিশ কিছু করতে পারছেনা। আওয়ামী লীগের কোন নেতার কাছ থেকে কোন সহযোগিতা আমরা পাচ্ছিনা। শুধুমাত্র ছাত্রলীগের নূরুল আমিন আর সাকিব ভাই আমাদের বিষয়ে একটু আন্তরিক।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে নগর পুলিশের উদ্ধর্তন এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, ‘খুনের মামলার আসামী যখন সাংসদের সঙ্গে কিংবা বড় কোন নেতার সঙ্গে রাজনৈতিক কর্মসূচীতে থাকে, তখন সেই আসামীকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে পুলিশের উপর দৃশ্য-অদৃশ্যভাবে নেতিবাচক চাপ সৃষ্টি হয়। মামলার স্বাভাবিক তদন্তে তখন বাধা সৃষ্টি হয়।’

আসামীদের গ্রেপ্তারে রাজনৈতিক কোন চাপ আছে কিনা জানতে চাইলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই কামরুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, ‘ভাই সব তো বুঝেন। শুধু এতটুকু লিখেন, আসামীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছি।’

নিহতের ছোট ভাই আব্দুল মাজেদ চৌধুরী অভিযোগ করেন, আসামীরা এলাকায় ফিরে আসার পর মামলা তুলে নিতে তাকে, তার ভগ্নিপতি এবং বোনের শ্বশুড় বাঁশখালীর সাধনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খোন্দকার মোহাম্মদ ছমিউদ্দিনকে কয়েক দফা টেলিফোনে হুমকি দেন।

সর্বশেষ গত ১৭ মার্চ ছমিউদ্দিনকে টেলিফোনে হত্যার হুমকিও দেয়া হয়। তিনি এ বিষয়ে নগরীর চান্দগাঁও থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।

এরপর গত ১৪ মার্চ আসামী আবু শাহাদত মো. সায়েম, মহিউদ্দিন মহি, আবু জাহেদ, মো. শামীম ও কফিল উদ্দিন হাইকোর্টের বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ও বিচারপতি শেখ মো: জাহাঙ্গীর হোসাইন এর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ থেকে চার সপ্তাহের আগাম জামিন পেয়েছেন মর্মে একটি নথি কোতয়ালী থানা পুলিশের কাছে জমা দেন। কিন্তু পুলিশ সেটি গ্রহণ করেননি।

তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই কামরুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, ‘জামিনের কাগজপত্র আমার কাছে সঠিক প্রক্রিয়ায় আসেনি। আদালত থেকেও কিছু পাঠানো হয়নি। বিতর্কিত বিষয় হওয়ায় আমি সেগুলো গ্রহণ করিনি। পুলিশের খাতায় আসামীরা এখনও পলাতক হিসেবেই আছেন।’

নিহতের ভাই রুবেল জানান, সার্বিক বিষয় নিয়ে তাদের পরিবারের পক্ষ একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হবে। এতে জনির হত্যাকারীদের আশ্রয়-প্রশ্রয়দানকারী আওয়ামী লীগ নেতানেত্রীদের মুখোশ উন্মোচন করা হবে বলে তিনি জানান।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান এ বিষয়ে পরে বক্তব্য দেবেন বলে জানান।

উৎসঃ Banglanews24

বিষয়: বিবিধ

১০৮৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File