মুক্তিযুদ্ধ, আওয়ামীলীগ এবং মেজর জলিলের কিছু জ্বলন্ত প্রশ্ন

লিখেছেন লিখেছেন বঙ্গ বাবা ২৩ মার্চ, ২০১৩, ১২:৩৮:১৯ দুপুর

আশা করি সবাই একটু ধৈর্য ধরে পুরোটা পরবেন এবং শেয়ার করবেন-

মুক্তিযুদ্ধ এবং রাজনীতি নিয়ে চিন্তা করেন কিন্তু মেজর জলিল কে চিনেন না এমন মানুষ কমই পাওয়া যাবে।



মেজর জলিল ছিলেন এক সাহসী মুক্তিযোদ্ধা, একজন গুনি লেখক, চিন্তাবিদ, সুবিধাবাদী শোষক শ্রেণির বিরুদ্ধে বজ্রকন্ঠের উদাহরণ। ৯ নং সেক্টর কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালনরত অবস্থা থেকেই দেখেছেন সুবিধাবাদী চক্রের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নাম ভাঙ্গিয়ে লুটপাটের দৃশ্য। ভারতের লুটপাট আর শোষণ এর বিরুদ্ধে তিনি প্রথম বিদ্রোহ করেন।আর তার এই দেশপ্রেম মুলক সাহসী পদক্ষেপের খেসারত কি ছিল জানেন?

তিনি হন বাংলাদেশের প্রথম রাজবন্দি।

তার কয়েকটি উপন্যাস প্রবন্ধ সেদিন পড়ছিলাম। তাঁর বিখ্যাত প্রবন্ধ অরক্ষিত স্বাধীনতাই পরাধীনতা পড়ে মাথা প্রায় খারাপই হয়ে গেল বলা যায়।



তাঁর লেখার ধরন অনেকটা এরকম যে তিনি একটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করে কয়েকটি প্রশ্ন করবেন আর উত্তর ছেড়ে দিবেন পাঠকদের বিবেকের উপর।

তাঁর বই থেকে কয়েকটি চুম্বক অংশ আর প্রশ্ন তুলে ধরছি-

১।আমরা বিহারী নই, আমরা নই পাঞ্জাবী, আমাদের পরিচয় আমরা বাঙ্গালী; এই চেতনাবোধ এ জাগ্রত হয়েছিলো বাঙ্গালীর মন ও প্রাণ।এর ব্যাতিক্রম ছিল কেবল তারাই, যারা '৭০ এর নির্বাচনে আওয়ামীবিরোধী ভুমিকায় লিপ্ত হয়ে শোচনীয় ভাবে পরাজয় বরণ করেছিলো। তখন থেকেই তাদের মনে এই ধারণা বদ্ধমুল হয়ে উঠে যে, নির্বাচনে আওয়ামীলীগের অভূতপূর্ব বিজয়ের পেছনে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের কারসজি ছিল। অনেকে এ কথা প্রমানও করতে চেয়েছে যে, দেশ ভাগের পর যে সকল হিন্দুরা পূর্ববঙ্গ ছেড়ে পশিমবঙ্গে স্থায়ী ভাবে বাসের জন্য চলে এসেছিল তাদের বেশ একটি সংখ্যা বর্ডার পাড়ি দিয়ে মুজিবকে ভোট দেবার জন্য চলে আসে।এটা সত্য কি মিথ্যা তা আমার জানা নাই,কিন্তু-

#স্বাধীনতার এতদিন পরও এই অভিযোগ শুনতে অনেকের কাছে আজগুবি মনে হলেও, আজ পর্যন্ত ব্যাপারটি তলিয়ে দেখা হয় নি বা কেউ তাগিদও বোধ করেনি। আসলেই এমনটা হয়েছিলো কিনা?

#হলে তা কি স্বতঃস্ফূর্ত ভাবেই হয়েছিল নাকি পূর্বপরিকল্পিত?

#এ ধরণের পরিকল্পনার পেছনে আসল উদ্দেশ্য কি ছিল শুধু বিজয় কে নিশ্চিত করা,না আর সুদূরপ্রসারী কিছু?

#এটা কি তবে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতেরই মগজের খেলা ছিল, না আওয়ামী নেতৃত্ব এ সম্পর্কে সম্পূর্ণ ওয়াকেফহাল?

#স্বাধীনতার এতো বছর পরেও মনে এ প্রশ্ন উকি মারে এই কারণেই যে- ২৫ মার্চ ভয়াল রাত্রির হিংস্র ছোবলের সাথে সাথেই পূর্ব পাকিস্তানের অধিবাসী ও আওয়ামীলীগের সংসদ সদস্যরা কি করে পাকিস্তানের শত্রু হিসেবে পরিচিত ভারতে আশ্রয়ের জন্য ছুটে যেতে পারল?

#কোন সাহসে বা কোন আস্থার উপর ভর করেই বা তাঁরা দলে দলে ভারতের মাটিতে হুমড়ি খেয়ে পড়লো?

#তাহলে কি গোটা ব্যাপারটাই ছিল পূর্বপরিকল্পিত?

#স্বাধীনতা বিরোধী বলে পরিচিত ইসলামী দলগুলোর শঙ্কা ও অনুমান কি তাহলে ঠিক ছিল?

#যদি সত্য হয় তাহলে দেশপ্রেমিক কারা, আমরা মুক্তিযোদ্ধারা নাকি রাজাকার আলবদর হিসেবে পরিচিত তাঁরা?

২। সত্তরের শেষ এবং একাত্তুরের শুরুর সেই অগ্নিঝরা দিনগুলোতে পূর্বপাকিস্তানের সংগ্রামী জনগণের মাঝে বিজাতীয়দের প্রতি চরম ঘৃণা ও বিদ্বেষ পরিলক্ষিত হলেও ইসলাম ধর্মের প্রতি বিদ্বেষ মোটেও পরিলক্ষিত হয় নি, অথবা ধর্মহীনতা আমাদের পেয়ে বসেনি।তৎকালীন সময়ে কট্টর আওয়ামীলীগার বলে পরিচিত নেতাকর্মীদের মুখে "ধর্মনিরপেক্ষতার" নামগন্ধও শুনতে পাইনি।তৎকালীন পূর্বপাকিস্তানের শাসককুল পবিত্র ইসলাম ধর্মকে বিভিন্ন সময় তাদের হীন স্বার্থে ব্যবহার করেছে বিধায় তাদের বিরুদ্ধে সচেতন জনগন সোচ্চার ছিল বটে, তবে প্রকাশ্যে ইসলাম ধর্মের প্রতি কোন মহলই ঘৃণা বা বিদ্বেষ পোষণ করে নি।

#আমাদের মুক্তিযুদ্ধের পূর্বের ইসলাম ও পরের ইসলামের মধ্যে হঠাৎ করে কি ঘটে গেল যে কোন কোন মহল ইসলামের নাম শুনলে পাগলা কুকুরের মত খিচিয়ে উঠেন?



#যে দেশে শতকরা নব্বই জনেরও অধিক ইসলাম ধর্মের অনুসারী, সে দেশের এই করুন অন্ধ উম্মাদনার মধ্য দিয়ে ইসলাম ধর্মের নিকুচি করা কি আদৌ যুক্তিসঙ্গত?

#এই দুখজনক ও লজ্জাজনক অধ্যায়ের জন্য দায়ী কে বা কারা?

#বাস্তবতার অস্বীকৃতিই প্রতিক্রিয়াশীলতা নয় কি? অপরদিকে বাস্তবতার স্বীকৃতিই প্রগতির শর্ত ও দাবী নয় কি?



৩। "এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম; এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম-তোমাদের যার যা কিছু আছে তাই নিয়েই শত্রুর বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পর-ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তুলো"

উপরোক্ত বক্তব্যের মধ্য দিয়েই মূলত স্বাধীনতার যুদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

তবে এখানেই আরেকটি প্রশ্ন জাগে-

#জাতির জন্য স্বাধীনতা অর্জনই যদি শেখ মুজিবের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়ে থাকে তাহলে ৭ মার্চের অমন জ্বালাময়ী বক্তব্য প্রদানের পর তিনি কি করে শত্রু পক্ষের সাথে বৈঠকে বসার আশা পোষণ করেছিলেন?

#পাকিস্তান সেনাবাহিনীর জেনারেল সামরিক সরকার প্রধান ইয়াহিয়া খানের সংগে স্বাধীনতার ঘোষণার পর পুনরায় কেন শেখ মুজিব বৈঠকে বসতে চেয়েছিলেন?

#স্বাধীনতার যুদ্ধ ঘোষণাকারী শেখ মুজিবের কি ধরণের প্রত্যাশা ছিল ইয়াহিয়া খানের কাছ থেকে?

#যার যা আছে তাই নিয়ে জাতিকে পাকিস্তানি বাহিনির বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার নির্দেশ প্রদান করার পরে কোন ভরসায় জেনারেল ইয়াহিয়া খানের সাথে আপোষ রক্ষার আলোচনার টেবিলে বসার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন?

#তাহলে কি শেখ মুজিব স্বাধীনতা চাননি?

#তিনি কি চেয়েছিলেন পাকিস্তানি প্রতিনিধিদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে ক্ষমতার মসনদে পৌছতে?

#জাতিকে চূড়ান্ত ত্যাগের জন্য নির্দেশ দিয়ে তিনি ব্যাক্তিগত ভাবে কোন ত্যাগের প্রস্তুতি না নিয়ে ৭ মার্চ থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত কেনই বা শত্রুপক্ষের সংগে বৈঠকের চিন্তায় মগ্ন ছিলেন?



এখানেই খুজতে হবে শেখ মুজিবের নেতৃত্বে ব্যর্থতার কারণ।শ্রেণিগত দুর্বল চরিত্রের কারণে শেখ মুজিবের মধ্যকার দোদুল্যমানতা এবং সংশয়ই তাঁকে স্ববিরোধী ভুমিকায় লিপ্ত করেছে

তখনকার ছাত্র নেতৃত্বের চাপেই তিনি "এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম......." এধরণের ঘোষণা দিতে বাধ্য হয়েছিলেন

ইয়াহিয়া খানের সংগে এক বৈঠকে তিনি এটা প্রকাশ্যে বলেও ফেলেছিলেন-

"আমি যদি আপনার কথা মত কাজ করি তবে ছাত্র নেতারা আমাকে গুলি করবে, আর আমি যদি ছাত্রনেতাদের কথামত কাজ করি তবে আপনি আমাকে গুলি করবেন, বলুন তো এখন আমি কি করি?"


শেখ মুজিব তার অসহায় ও করুণ অবস্থাই তুলে ধরেছিলেন এই মন্তব্বের মধ্য দিয়ে।

সম্পূর্ণ বইটি এই লিংক থেকে ডাউনলোড করতে পারেন।





বিষয়: রাজনীতি

১৭১৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File