আমি ও তুমি (একটি বাস্তবিক সমকালীন ইসলামিক তর্ক)
লিখেছেন লিখেছেন বঙ্গ বাবা ১০ ডিসেম্বর, ২০১৩, ০১:১৮:০২ রাত
তুমিঃ ইসলামী আন্দোলন করো ভাল কথা, কিন্তু বেশি বেশি যেয়ো না। সময় এমনি তেই খারাপ
আমিঃ কি আর করার! ইসলামী আন্দোলন মানেই পরীক্ষা, অত্যাচার নির্যাতন। মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় নাই।
তুমিঃ হুম। এই কারনেই সাবধানে থাকতে হবে। বেশি বাইরে না যাওয়াই ভালো। আর এখন আপাতত টাখনুর নিচে প্যান্ট পড় আর দাড়ি ফালায় দাও। বুঝই তো!!!
আমিঃ লাভ কিরে ভাই?? আল্লাহ চাইলে এম্নিতেই ধরা খাব। শুধু শুধু ইসলামের নিয়ম ভাঙ্গার কি দরকার।আর যদি খাইও ধরা আশা করি আল্লাহ কবুল করে নিবেন। আফটার অল, ইসলামের বিধান মানার কারনেই তো ধরা।
তুমিঃ আরে মিয়া!! তোমাকে কি আমি বলেছি বিধান ভঙ্গ করতে। দাড়ি না রাখা বা টাখনুর নিচে প্যান্ট না পড়া মানেই তো ইসলাম অস্বীকার করা না। আর তাছাড়া, টাখনুর কথা বলা হয়েছে যে, গর্ব করে চল না আর টাখনুর নিচে পড় না। তুমি গর্ব না করলেই তো হয়।
আমিঃ ভাইরে ভাই। যুক্তির কিন্তু কোন শেষ নাই। কিন্তু দেখেন, আমাদের চেয়ে আমাদের নবীদের উপর কি কম নির্যাতন হয়েছে। উনারা কি তখন সাবধানতার নামে সব ছেড়ে দিয়েছেন নাকি? সাবধান থাকা ভাল।কিন্তু তাই বলে এতো ভয় পেলে হবে নাকি?
তুমিঃ আরে মিয়া ভয়ের জন্য না। ধরা খাইলে গিয়া ইসলামিক কাজ করবা কেমনে? বরং সংগঠনেরই ক্ষতি। এর চেয়ে বরং সাবধানে থেকে কাজ করো। পরে, আল্লাহ না করুক কি নাকি এক্সিডেন্ট বাঁধায় বস। পুরা ক্যারিয়ার নষ্ট হবে। আল্লাহ তো আর তোমাকে যুক্তিহীন আবেগের বসে ইসলামী আন্দোলন করতে বলে নাই।ফ্যামিলিরও তো একটা হক আছে তাই না। পড়ে ফ্যামিলি কে খাওাবা? এইসব ব্যাপার এখন থেকে না বুঝলে হবে?
আমিঃ দেখেন, আমার যেটা মনে হয় যে আমার বাবা আমাকে পড়ালেখা করাচ্ছেন তাঁর কষ্টের উপার্জনের টাকা দিয়ে। অতএব, এই পড়ালেখা করাটা আমার নিকট আমানত স্বরূপ যার খেয়ানতের কারনে মুনাফিক হয়ে যেতে হবে। কিন্তু আমাদের সমস্যা, আমরা এইসব যুক্তি দেখিয়ে পড়াশুনা আর ক্যারিয়ারের দোহাই দিয়ে খালি বকে যাই যে, "আগে পড়ালেখা করে ভালো জায়গায় যাই তারপর সংগঠন"
তুমিঃ তো এতে ভুলের কি দেখলা? তুমি ভালো রেজাল্ট করলে সংগঠনেরই ভালো। ভালো জায়গায় জব করলে, বিজনেস করলে সংগঠনেরই ভালো না? আসলে তোমাদের সমস্যাই এটা। যারাই এসব জায়গায় যায়, তাঁরাই পড়ালেখায় অমনোযোগী হয়ে যায়।
আমিঃ দেখেন আপনার কথা যে ভুল তা না। আমাদের অনেকেই পড়ালেখা কে গুরুত্ব কম দেই। কিন্তু তাই বলে তো আপনি পড়ালেখাকে ইসলামী আন্দলনের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে পারেন না। আমরা কিন্তু জতই বড় বড় কথা বলি, আলটিমেটলি দেখা যায়, পড়ালেখা করি এই ধান্দায় যে ভালো জব করে ভালো কামাবো, দেশের বাইরে যাব হেনতেন... কিন্তু হাদিসে স্পষ্ট আছে যে ইহকালকে পরকালের চেয়ে গুরুত্ত দেওয়া যাবে না।অতএব পড়াশুনা আর চাকরি যাই করি না কেন, তা ইসলামী আন্দোলনের চেয়ে অধিক গুরুত্ব দেওয়া যাবে না, আবার পড়াশুনা একেবারেই ছেড়ে দেয়া যাবে না। আর আমার মনে হয়, কেও এতো বেশি কাজ করে না যে, তাঁর পরালেখার ক্ষতি হয়ে যাবে। বরং দেখা যায় বেহুদা কাজেই তাঁর বেশি টাইম লস হয়।
তুমিঃ এখন বলতেসো আরকি, পড়ে গিয়ে অর্থনৈতিক প্রবলেমে পড়লে ইসলামিক কাজ যাবে গোল্লায়। তখন দেখবা খালি টাকার পিছনে ছুটবা।
আমিঃ এখানেই তো সমস্যা। আমরা বড় বড় কথা বলে পড়ে গিয়ে ভুগি। আরে টাকা কামান যাবে না এমন তো না। কিন্তু তাই বলে টাকার সাগর লাগবে তাও না। কিন্তু আমাদের ইমান দুর্বল বলেই লকচক্ষুর ভয়ে টাকা টাকা করি। সিমপ্লি কেও বুঝতে চায় না যে, আমাদের নবি (সা) কি কম সম্মানিত ছিল? অথচ দুঃখ দুর্দশা কি তাঁর ছিল না? উনি তো ইচ্ছা করলেই প্রচুর টাকার মালিক হতে পারতেন? এমন না যে এরজন্য তাকে ইসলামিক কাজ বাদ দিয়ে টাকা উপারজন করতে হত। তাঁর স্ত্রীর (খাদিজা) কাছ থেকে তো অঢেল সম্পত্তি পেয়েছিলেন। সম্ভ্রান্ত কুরাইশ বংশের হওয়ার সুবাদেও তিনি ধন সম্পত্তির মালিক হতে পারতেন। মুসলিম জাহানের নেতা হিসেবে যেই পরিমান উপঢৌকন তিনি পেয়েছেন তা থাকলেও আরকিছু লাগতো না।কিন্তু তাঁর অবস্থা চিন্তা করেন!! কি পরিমান হত দরিদ্র ছিলেন!! খাবার অভাবে নিজের শিরস্ত্রাণ বিনিময় করেছিলেন এক ইহুদির সাথে। মৃত্যুর সময় ঘরে নাকি খাবার কিছুই ছিল না। কতই বা গরিব হতে পারে মানুষ,তাই বলে এই অবস্থা??
তুমিঃ হুমম। সবই মানলাম। কিন্তু তোমার কথা অনুযায়ী মুসলিমরা বড়োলোক হতে পারবে না। আসলে সমস্যা কি জানো? এই ধরনের অদূরদর্শী চিন্তার কারনেই মুসলমানদের আজ এই অবস্থা। গোঁড়ামি আসলে আমাদের মধ্যে একটু বেশি।
আমিঃ আমি জানিনা। কোন বেসিসে এই কথা গুল বললেন। মুসলিমরা বড়োলোক হতে পারবে না এটা তো বলি নাই। যদি তাই হত তাহলে এই হাদিস আসতো না "কেবল দুই শ্রেণির লোকদের হিংসা করা যাবে, তাঁদের একদল হচ্ছে যাদের ধন আছে এবং তা ইসলামের কাজে ব্যয় করে"
ধন সম্পত্তি আল্লার একটা রহমতও বলতে পারেন পরীক্ষাও বলতে পারেন। কারন আল্লাহ দেখবেন এই বিপুল সম্পত্তি আপনি কোন কাজে লাগিয়েছেন। আর গোরামির কথা যেটা বললেন। আমাদের মুসলমানদের করুন অবস্থার কারন গোঁড়ামি না, বরং অতি মাত্রায় আতলামি আর ইসলামকে যথেচ্ছা নিজের সম্পত্তি মনে করে নেওয়া। যতক্ষণ এর নিয়ম নীতি আমার চিন্তাধারার অনুকুল ততক্ষন ঠিক, আমার চিন্তার বিপরীত কিছু পেলেই আমরা তা বর্জন করি আর নিজেদের মত বানিয়ে নাই, বিদাত করি। ফিতনা ফাসাদ তৈরি করি যা কিনা হত্যার চেয়েও গুরুতর। আপনিই দেখেন, সব ঠিক সুদ ঘুষের কথা আসলে ইসলাম মানা আমাদের জন্য কঠিন হয়ে যায়।দাড়ি আর টাখনুর উপর প্যান্ট পরার কথা আসলেই তা খ্যাত হয়ে যায়। স্কুল কলেজে কোএডুকেট বাদ দিতে বললেই মৌলবাদী গালি দেয়া হয়। মেয়েদের পর্দার কথা বললে, মূর্তি প্রতিকৃতি পরিহার করার কথা বললেই চরমপন্থি হয়ে যায়। ইসলামিক শরিয়া অনুযায়ী শাস্তির বিধান শুনলেই খেপে উঠে যে ডিক্যাপিটেট করা যাবে না, হাত কাটা যাবে না, পাথর মারা যাবে না। এসব অমানুষিক। অথচ কাঠিন্য না দেখালে মানুষ খারাপ কাজ করে যাবেই। এইসব আধো আধো ইসলাম প্র্যাক্টিসিং করার কারনেই এতো বিবাদ।আমি ওর নিয়ম মানি না।ও আমার নিয়ম মানে না। এই মাজহাব ভাল,অইটা খারাপ। এই দল বেদাতি, ওই দল কুফরি। আপনিই দেখেন আমাদের দেশের কয়টা মন্ত্রী ইসালামিক লাইফ ফলো করে, অথচ বেশিরভাগই মুসলিম। আর এদেরকে আমরাই ক্ষমতায় আনি। জালেমদের বিরুদ্ধে কোন প্রতিবাদ করি না, যার কারণে হাদিস অনুযায়ী আল্লাহ আমাদের উপর আরেক জালেম জাতি বসিয়ে দিবেন।
তুমিঃ যাকরে ভাই। কথা একদিক থেকে অন্য দিকে হাটা দিসে। থাকো তুমি তোমার মত... আসলে বেশি পড়ে জেনে তোমার মাথা গেসে...।
এই হল আমাদের বর্তমান অবস্থা। ক্যারিয়ার আর জাগতিক সহায় সম্পত্তির জন্য আমরা ইসলামকে প্রাধান্য দেই না অথচ এইসব কাজের পিছনে আমরা ইসলামকেই টেনে আনি। আসলে আমরা কোন নিয়তে কি করছি সেটা আল্লাহই ভালো জানেন। ইন্না রাব্বাকা আলা কুল্লি শাইয়িন কা'
দির
বিষয়: বিবিধ
১৮৭৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন