শেখ হাসিনাকে নিয়ে কটূক্তির জন্য শাস্তি : রাসুল (সা.) অবমাননাকারীদের বাহবা!

লিখেছেন লিখেছেন ফয়সাল ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০৯:৪৪:৫৭ সকাল

সামাজিক যোগাযোগ সাইট ও ব্লগে মহান আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুল (সা.), কোরআন, হাদিসসহ ইসলামের বিরুদ্ধে কটূক্তিপূর্ণ লেখালেখির জন্য সংশ্লিষ্ট ব্লগারদের বিরুদ্ধে সরকার এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। অথচ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বাবা শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে উক্তির জন্য তাত্ক্ষণিক শাস্তি দেয়া হয়েছে অনেককে। এ নিয়ে জনমনে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র ক্ষোভ। তারা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছেন, এক দেশে দু’রকম নীতি কেন হবে? শেখ হাসিনাকে কটূক্তির জন্য শাস্তি আর নবীজীকে (সা.) কটূক্তি করার জন্য কেন বাহবা?

উল্লেখ্য, ব্লগে ইসলামবিদ্ধেষী স্বঘোষিত নাস্তিক ব্লগারদের লেখালেখি নিয়ে দেশজুড়ে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা ফুঁসে উঠছেন।

ওই নাস্তিক চক্রটিই ব্লগার অ্যান্ড অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট নেটওয়ার্কের ব্যানারে শাহবাগে বিভিন্ন দাবিতে চলমান আন্দোলনের মূল আয়োজক। তাদের একজন আহমেদ রাজীব হায়দার গত শুক্রবার দুর্বৃত্তদের হাতে খুন হওয়ার পর স্বাভাবিকভাবেই তার ব্লগের প্রতি সাধারণ ব্লগারদের কৌতূহল জাগে। আর এতেই বেরিয়ে আসে রাজীবসহ চক্রটির অন্য সদস্যদের ইসলাম ও মুসলিমবিদ্বেষী কার্যকলাপের চিত্র। রাজীব ওরফে থাবা বাবা, আসিফ মহিউদ্দীন, ইমরান সরকার, ইব্রাহীম খলিল সবাক, অমি রহমান পিয়াল, আরিফুর রহমান ওরফে নিতাই ভট্টাচার্যসহ আরও বেশ কয়েকজন স্বঘোষিত নাস্তিক ব্লগার মহান আল্লাহ, মহানবী হজরত মোহাম্মাদ (সা), তাঁর স্ত্রী হজরত খাদিজা (রহ), সাহাবী, ইসলামের বিভিন্ন ইবাদত, পরিভাষা ইত্যাদি নিয়ে অকথ্য ও অপ্রকাশযোগ্য ভাষায় গালাগাল, কুত্সা, অশ্লীল ও বানোয়াট কাহিনী নিয়মিত লিখে তা প্রচার করছে। কোনো সাধারণ ব্লগার এসবের প্রতিবাদ করলে তাদের প্রতিও চরম আপত্তিকর আচরণ ও হুমকি দিচ্ছে। তাদের এরকম আচরণে ধর্মপ্রাণ মুসলমান মাত্রেই চরমভাবে আহত হয়েছেন।

কিন্তু এতকিছুর পরও এই গুটিকয়েক ধর্মদ্রোহীকে শায়েস্তা বা দমন করার পরিবর্তে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা তাদেরকে প্রকাশ্যে আশকারা দিয়ে যাচ্ছেন। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্লগার নামধারী এই দুর্বৃত্তদের অপকর্ম নির্বিঘ্ন করতে তাদের নিরাপত্তা দেয়ার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন (সূত্র : বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক)। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েও আল্লাহ-রাসুল-ইসলামের প্রতি এতো মারাত্মক কটাক্ষকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা না নিয়ে তাদেরকে আগলে রাখায় সাধারণ মানুষ বিস্মিত হয়েছেন।

আরেকটি বিষয় তাদেরকে অবাক করেছে, এ সরকারের আমলেই বেশ কয়েকজন প্রখ্যাত আলেমকে ‘রাসুলের অবমাননা’ করে মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল। অথচ নাস্তিক ব্লগারদের ক্ষেত্রে তা হচ্ছে না।

নিচের উদাহরণগুলোই সরকারের দ্বিমুখী নীতির স্পষ্ট প্রমাণ।

প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কটূক্তি করায় জাবি শিক্ষকের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মৃত্যু কামনা করে ফেসবুকে মন্তব্য লেখায় ২০১১ সালের ২ অক্টোবর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোহাম্মদ রুহুল আমিন খন্দকারের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে মামলা করা হয়। খণ্ডকালীন শিক্ষা ছুটিতে অস্ট্রেলিয়ায় থাকা রুহুল আমিন মামলার শুনানির নির্দিষ্ট তারিখে আদালতে হাজির হতে না পারায় ওই বছরের ১২ ডিসেম্বর হাইকোর্ট তার বিরুদ্ধে রুল জারি করেন। কিন্তু রুহুল আমিন ওই রুলেরও জবাব না দেয়ায় ২০১২ সালের ৪ জুন হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ আদালত অবমাননার দায়ে তাকে ৬ মাসের কারাদণ্ড দেন।

রুহুল আমিন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজি বিষয়ের প্রভাষক। তিনি টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল থানার দিঘর গ্রামের খন্দকার মো. মতিয়ার রহমানের ছেলে। অভিযুক্ত শিক্ষক ওই বছরের ১৩ আগস্ট তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে মন্তব্যে লেখেন, ‘পরীক্ষা ছাড়া ড্রাইভিং লাইসেন্স দেয়ার ফল, সবাই মরে শেখ হাসিনা মরে না কেন?্থ

পাঁচবিবিতে ইমামের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা : জয়পুরহাটের পাঁচবিবিতে ওয়াজ মাহফিলে রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও মন্ত্রিপরিষদ সম্পর্কে ‘অশালীন ও কটূক্তিপূর্ণ’ বক্তব্য দেয়ার অভিযোগে সাতক্ষীরা ব্রহ্মরাজপুর বাজার জামে মসজিদের ইমাম ও জেলা ইমাম সমিতির সদস্য মাওলানা মনিরুল ইসলাম ফারুকীর বিরুদ্ধে ২০১১ সালের ৫ ডিসেম্বর রাতে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা করা হয়। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আইন শাখা-১-এর সহকারী সচিব আবু সাঈদ মোল্লার নির্দেশে পাঁচবিবি থানায় মামলাটি দায়ের করেন এসআই আনিছুর রহমান। মাওলানা ফারুকী সাতক্ষীরা উপজেলার কালেরডাঙ্গা গ্রামের রজব আলী ছেলে। তিনি সে বছর ১০ নভেম্বর পাঁচবিবিতে একটি ওয়াজ মাহফিলে নিজের বক্তব্যে রাষ্ট্রপতিকে কার্টুন বলে আখ্যায়িত করেন। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রীকে নাস্তিক, বেইমান, বেহায়া ও মন্ত্রিপরিষদকে অবৈধ, দেশ ধ্বংসকারী বলে অভিহিত করেছিলেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আনিছুর রহমান তখন সাংবাদিকদের জানান, রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশে মামলাটি দায়ের করা হয়েছিল।

রাবিতে সাংবাদিক আটক : ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে কটূক্তি করায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এক সাংবাদিককে আটক করে পুলিশ। সূত্র জানায়, দৈনিক খবরপত্রের রাজশাহী ব্যুরো প্রধান মো. হুমায়ূন কবীর পত্রিকায় বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফাঁসি কার্যকরের সংবাদ পড়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গালিগালজ ও তার সম্পর্কে কটূক্তি করেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহায়তায় মতিহার থানা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।

নেত্রকোনায় শিক্ষিকা বরখাস্ত : নেত্রকোনার স্থানীয় সাংসদকে জড়িয়ে প্রধানমন্ত্রীকে কটূক্তি করায় ২০১২ সালের ৯ আগস্ট কেন্দুয়া উপজেলার এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোক্তার হোসেন সরকার তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেন।

বরখাস্ত হওয়া রোকেয়া আক্তার গড়াডোবা ইউনিয়নের বিদ্যাবল্লভ রওশন ইজদানী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা। ওই শিক্ষিকার অপরাধ ছিল, তিনি নেত্রকোনা-৩ (কেন্দুয়া-আটপাড়া) আসনের সাংসদ মঞ্জুর কাদের কোরাইশী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে কটূক্তি করে ক্লাসে পাঠদানের সময় ছড়ায় ছড়ায় বলেছিলেন, ‘নোটন নোটন পায়রাগুলি ঝুটন বেঁধেছে, ওপারেতে হাসিনা-কোরাইশী নাইতে নেমেছে।’ (সূত্র বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম)।

জবিতে শিবিরকর্মী গ্রেফতার : ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কটূক্তি করার দায়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের দ্বিতীয় সেমিস্টারের ছাত্র শিবিরকর্মী শফিকুল ইসলামকে ২০১১ সালের ১৯ অক্টোবর আটক করে পুলিশ। আগের দিন সে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ‘খুনি হাসিনার বিচার চাই’ বলে একটি স্ট্যাটাস পোস্ট করায় তাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের আগে শফিকুলকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কয়েক দফা বেধড়ক পিটিয়ে গুরুতর আহত করে ছাত্রলীগ কর্মীরা। ছাত্রলীগ কর্মীদের হাত থেকে তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর মোহাম্মদ মনিরুজ্জামানকে তখন প্রশাসন ও ছাত্রলীগের চাপের মুখে পদত্যাগ করতে হয়েছিল। (সূত্র : ঢাকানিউজ২৪ডট কম)।

যশোরে যুবক আটক : প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কটূক্তি ও হত্যার হুমকি দেয়ায় ২০১২ সালের ২৬ এপ্রিল যশোরে জোহর আলী (২৮) নামে এক যুবককে আটক করে নরেন্দ্রপুর ফাঁড়ির পুলিশ। সে সদর উপজেলার শ্রপদ্দী ঘোড়াগাছা গ্রামের আজিজুল মোড়লের ছেলে। গ্রেফতারের আগে ২৩ এপ্রিল স্থানীয় একটি দোকানে টিভিতে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রচারের সময় জোহর আলী অশ্লীল ভাষায় কটূক্তি এবং ‘প্রধানমন্ত্রীকে সামনে পেলে গুলি করার’ হুমকি দিয়েছিলেন। পরে পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরির্দশক (এসআই) আবদুল মালেক কোতোয়ালি মডেল থানায় জোহর আলীর বিরুদ্ধে একটি জিডি করেন।

কটূক্তিপূর্ণ প্যারোডি গান রাখার অভিযোগে যুবক আটক: প্রধানমন্ত্রীকে কটূক্তি করে তৈরি প্যারোডি গান মোবাইলে ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগে ২০১২ সালের ২০ অক্টোবর পাবনার চাটমোহরে আবদুল আলিম নামের এক যুবককে আটক ও একটি কম্পিউটার জব্দ করে পুলিশ। আলিম উপজেলার ডিবিগ্রাম ইউনিয়নের কাঁঠালবাড়ীয়া গ্রামের লুত্ফর রহমানের ছেলে। এ ঘটনায় আলিমের বিরুদ্ধে ২০১২ সালের পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা দায়ের করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়।

বুয়েট শিক্ষকের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা : ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘হত্যার হুমকি’ দেয়ায় বুয়েটের শিক্ষক আন্দোলনের নেতা ও মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রভাষক হাফিজুর রহমান রানার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের পর তার বিরুদ্ধে ২০১২ সালের ১৯ জুন গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে আদালত। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৪ আগস্ট রানা হাইকোর্টে আত্মসমর্পণ করেন। বুয়েটের বিতর্কিত বর্তমান ভিসি এসএম নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে শিক্ষকদের আন্দোলন চলাকালে ২০ এপ্রিল রানা তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন, ‘হায়েনা, ওই হায়েনা, তুই দেশকে খেয়েছিস, এখন তুই বুয়েটকে খাবি... পারবি না... আমরা বুয়েটের শিক্ষকরা ও সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা হচ্ছি শিকারি। প্রথমে তোর মাথাতে গুলি করব, তারপর তোর পেটে। তারপর তোর মাথা কেটে বুয়েটের গেটের সামনে টাঙিয়ে রাখব। যাতে আর কোনো হায়েনার আক্রমণে বুয়েট আক্রান্ত না হয়।’

ছাত্রের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা : সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে কটূক্তি করার অভিযোগে জাতীয় কবি কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রের বিরুদ্ধে ২০১২ সালের জুনে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করে সরকার। ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের ছাত্র সোহেল মোল্লা রাজ ওরফে সোহেল রানা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে তার ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর নিখোঁজের ঘটনার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীকে জড়িয়ে কটূক্তি ও আপত্তিকর মন্তব্য করেন।

বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি করায় সা. কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে ৪ মামলা : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে আপত্তিকর বক্তব্য দেয়ার অভিযোগে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে দায়ের করা পৃথক ৪টি মামলা করে সরকারদলীয় নেতাকর্মীরা। ২০০৯ সালের ১৪ আগস্ট জাতীয় প্রেস ক্লাবে তিনি বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে ‘আপত্তিকর’ বক্তব্য দেন। এরই সূত্র ধরে খুলনা, নড়াইল, পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁওয়ে তার বিরুদ্ধে মানহানির মামলা দায়ের করা হয়।

ফরিদপুরে ৫ বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে মামলা : ফরিদপুরে যুবদলের বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে কটূক্তি করায় জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক, যুবদলের সভাপতি-সম্পাদকসহ পাঁচ নেতাকর্মীর নামে মামলা হয় ২০১২ সালের ৫ সেপ্টেম্বর। জেলা আওয়ামী লীগ নেতা কেএম সেলিম একটি মামলা দায়ের করেন।

কটূক্তি করায় সিরাজগঞ্জে কলেজ শিক্ষক থানায় : ২০০৯ সালের ১৬ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে কটূক্তি করায় ছাত্রলীগ কর্মীদের প্রতিবাদের মুখে সিরাজগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষককে পুলিশে দেন অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. এসআইএমএ রাজ্জাক।

বিক্ষুব্ধ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা মো. আতাউর রহমান নামের ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দেয়াসহ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাকে অপসারণের দাবি জানায়। ক্লাশে পাঠদানের সময় আতাউর রহমান বলেছিল, শেখ মুজিবুর রহমান কখনওই স্বাধীনতার ঘোষক ছিলেন না। তিনি বরং ফাঁসির ভয়ে আত্মরক্ষার জন্য পালিয়েছিলেন।’

ছাতকে গ্রেফতার ১ : ছাতকে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি ও লিফলেট বিতরণ করার অপরাধে পুলিশ ২০১২ সালের ২৮ আগস্ট সাইদুল ইসলাম নামের এক যুবককে গ্রেফতার করে। সে উপজেলার নোয়ারাই ইউনিয়নের পাটিবাগ গ্রামের মৃত আবদুস সোবহানের ছেলে।

সুনামগঞ্জে স্কুলশিক্ষক আটক : বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তিপূর্ণ বক্তব্য দেয়ায় সুনামগঞ্জে ২০১২ সালের ১৫ আগস্ট এক স্কুলশিক্ষককে আটক করে পুলিশ। তিনি সুনামগঞ্জ সরকারি সতীশচন্দ্র বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক। এক শোক সভায় শিক্ষক আবুল ওয়ালা মওদুদ বলেন, ‘১৯৭৫ সালে যদি বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা না হতো, তাহলে হয়তো বা জনগণই তাকে সরানোর জন্য হত্যা করত। সাদ্দাম, গাদ্দাফির প্রতিকৃতিকে মানুষ সম্মান করেছিল, আবার লাথিও মেরেছে। বঙ্গবন্ধুর ক্ষেত্রেও হয়তো এমনটাই হতো!

রাজীবের বাসায় প্রধানমন্ত্রী, সংসদে প্রশংসার তুফান : উপরের ঘটনাগুলোতে দেখা যাচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী বা তার বাবাকে নিয়ে কটূক্তিকারীদের স্বয়ং সরকার অথবা সরকারি দলের ক্যাডারদের মামলা-হামলা ও নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। কিন্তু রাসূল (স.) ও ইসলাম ধর্মকে নিয়ে ভয়ঙ্কর সব অশ্লীল উক্তিকারী (যার তুলনায় প্রধানমন্ত্রী ও তার বাবার প্রতি করা কটূক্তিগুলো অনেকটা সাধারণ) রাজীবের ক্ষেত্রে ঘটেছে ঠিক উল্টোটা! খুন হওয়ার পর রাজীবের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে তার কৃতকর্মের স্বীকৃতি হিসেবে তাকে ‘দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের প্রথম শহীদ’ উপাধিতে ভূষিত করেছেন প্রধানমন্ত্রী নিজে! সেখান থেকে ফিরে পুলিশ ও গোয়েন্দাদের ডেকে রাজীবের ১৯ জন ব্লগার সহযোদ্ধার তালিকা দিয়ে তাদের বিশেষ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কঠোর নির্দেশও দেন।

পাশাপাশি গত রোববার জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগ ও বাম এমপিরা ধর্মদ্রোহী রাজীবকে জাতীয় বীরের মর্যাদা দিয়ে তাকে নিয়ে শোকপ্রস্তাব পেশ করেন। সংসদ ও সংসদের বাইরে মহাজোট এমপিদের প্রশংসার বন্যায় ভেসে যান রাজীব।

রোববার সংসদ অধিবেশনের পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা তোফায়েল আহমদ বলেন, ‘শাহবাগের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছে। আর এই যুদ্ধের প্রথম শহীদ হচ্ছেন ব্লগার রাজীব।’

তিনি আরও বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে অবস্থান নিয়ে নির্মমভাবে নিহত হয়েছেন প্রজন্ম চত্বরের অন্যতম সংগঠক ও ব্লগার রাজীব আহমেদ। তাই রাজীবের নিহত হওয়ার ঘটনায় সংসদের পক্ষ থেকে ১ মিনিটের নীরবতা পালনের দাবি জানাচ্ছি।’

জবাবে স্পিকার অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ বলেন, ‘সংসদ তার নির্দিষ্ট নিয়মের মধ্যে পরিচালিত হয়। এক মিনিট নীরবতা পালনের নিয়ম নেই। তবে আমি হাউজের সেন্টিমেন্ট বুঝি। আমি সংসদের পক্ষ থেকে হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। আমি সংসদের পক্ষ থেকে শোক প্রকাশ করছি।’

শনিবার বিকালে টঙ্গীতে এক সমাবেশে রাজীবের হত্যার প্রতিশোধ নেয়ার ঘোষণা দিয়ে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেছিল। সে চেয়েছিল যুদ্ধাপরীদের ফাঁসি হোক। আমরা তার হত্যার প্রতিশোধ নেবই নেব।’

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের এই স্ববিরোধী ভূমিকায় দেশের প্রতিটি সাধারণ মানুষ বিস্মিত। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে তাদের প্রশ্ন, রাজীবদের ক্ষেত্রে এমন ব্যতিক্রমী আবেগ প্রদর্শন কি শুধুই তাদের ইসলামবিদ্বেষী পরিচয়ের জন্য?

প্রথম পাতা

অমর একুশে আজ

শাহবাগে আকাশের ঠিকানায় চিঠি : এখন আজান ও নামাজের বিরতি দেয়া হচ্ছে

ফুঁসে উঠছে ধার্মিক জনগোষ্ঠী : শুক্রবার সাড়ে ৪ লাখ মসজিদ থেকে বিক্ষোভের ঘোষণা

ইসলাম ধর্ম অবমাননাকারী ব্লগগুলো বন্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে : তথ্যমন্ত্রী

ব্লগারদের অপকীর্তি জানাতে গিয়ে বিপাকে এক বিচারপতি

শাহবাগ আন্দোলন এক ইস্যুতে সীমাবদ্ধ থাকা উচিত নয় : ব্রিটিশ মন্ত্রী ওয়ার্সি

সদস্য লগইন

ইউজার আইডি :

পাসওয়ার্ড :

সাইন আপ

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন ?

বিষয়: বিবিধ

১২১০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File