ইসলামিস্ট ভাই ও বোন এবং শাহবাগের তরুণদের প্রতি
লিখেছেন লিখেছেন ডুবোজাহাজ ০১ মার্চ, ২০১৩, ১১:২৬:০৫ সকাল
ক্ষমা করুন
আর ক্ষমা করার অভ্যাস গড়ে তোল, সৎকাজের নির্দেশ দাও এবং মূর্খ জাহেলদের থেকে দূরে সরে থাক। ( সূরা আরাফ 199)
ক্ষমা করুন এজন্যে না যে ক্ষমা দুর্বলের সান্তনা বরং ক্ষমা শক্তিমানের শ্রেষ্ঠ রায়। ক্ষমা করে দেখুন, আপনার ভালো লাগবে।
অনেক মানুষ মারা যাচ্ছে, এরা শুধু সংখ্যা না, রক্তমাংসের মানুষ - কারো পিতা, কারো সন্তান, কারো ভাই। জামাতের যে ছেলেটা মাত্র ২০ বছর বয়সে মারা যাচ্ছে তাকে বাঁচার সুযোগ দিন - চল্লিশ বছর বয়সে সে হয়তো বুঝতে পারবে যে সহিংসতায় কোনো আদর্শবাদ মানুষের মনে জায়গা পায় না। যে পুলিশ গতকাল ঘরে ফেরে নি, সে হয়তো আগামী বছর বুঝতে পারতো - অনেক বাড়াবাড়ি হয়ে গিয়েছিলো। রাজীব হয়তো আর ৫ বছর পরেই বুঝতে পারতো মুহাম্মাদ (স কে এভাবে তার আক্রমণ করা উচিত হয় নি।
আপনি যদি শাহবাগের তরুণ হয়ে থাকেন, তাহলে বঙ্গবন্ধুর কথা মনে করে জামাত-শিবিরকে ক্ষমা করুন - বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, বাঙালি ক্ষমা করতে জানে। আর আপনি যদি ইসলামিস্ট হয়ে থাকেন তাহলে একবার রাসুল (সা এর কথা মনে করে এই সরকার ও পুলিশকে ক্ষমা করুন - তিনি সারা জীবন তার শত্রুদের ক্ষমা করেছিলেন, যখন শক্তিহীন ছিলেন তখন করেছিলেন, যখন ক্ষমতা পেয়েছিলেন তখনও করেছিলেন। একবার আয়নার সামনে দাড়িয়ে নিজের চেহারাটা দেখুন এবং বলুন - ক্ষমা করে দিলাম।
প্রিয় ইসলামিস্ট ভাই ও বোনেরা
দয়া করে ভাববেন না যে শাহবাগের তারুণ্য আপনাদের শত্রু। এরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আপনাদের মতোই। আমার বন্ধু অমি রোহিঙ্গার নির্যাতিত মুসলমানদের পক্ষে দাড়ায়, তাদের ছবি তুলে সচেতনতা তৈরী করে। আপনাদের মতো ওরও হয়তো মনটা কাঁদে এই নিরুপায় মানুষদের জন্যে। সুযোগ দিন - একদিন হয়তো সে আপনাদের ছবিও তুলবে। আমার আরেক বন্ধু মাহবুব রশীদ শাহবাগে দাড়িয়ে ঠিক আপনাদের মতোই স্বপ্ন দেখছে ইনসাফের - দুর্নীতি-মুক্ত বাংলাদেশের। আমাদের আদর্শ ভিন্ন কিন্তু ভালোবাসাটা ভিন্ন নাও হতে পারে। সানা ভাই কিংবা বিদিতদা সারা দিন হয়তো আপনাদের গাল দিচ্ছে, কিন্তু মনের কোনো এক কোণে এই দেশের মানুষগুলোকে ঠিক আপনার মতো করেই ভালবাসে। আপনি কি নিশ্চিত এই তরুণরা কোনদিনও আপনার পক্ষে এসে দাড়াবে না - রাসুল কি ভেবেছিলেন যে উমর তাঁর পাশে এসে দাড়াবে? আপনাদের যারা হিন্দুদের মন্দির ভাঙ্গাকে সমর্থন দিচ্ছেন - একবার ভেবে দেখুন রাসুল কি তার অনুমোদন দিতেন? এ দেশে এখনো অনেক মানুষ আছে যারা আপনাদের ওপর সংঘটিত নিপীড়নের বিরুদ্ধে, তারা ফেসবুকে আপনার পক্ষ না নিলেও মনে মনে চিন্তিত ও ক্ষুব্ধ - এদেরকে দূরে ঠেলে দেবেন না। আমি জানি আপনি রেগে আছেন সরকারের অত্যাচারে, আমি জানি আপনাদের বহু কর্মী মারা গেছে গত সপ্তাহে, গত কয়েক বছরে। একবার মনে করুন আপনি দাড়িয়ে আছেন রাসুল (সা এর সামনে - তিনি কি আপনাদের ক্ষমা করতে বলতেন না?
প্রিয় শাহবাগের তরুণেরা
আপনারা রেগে আছেন রাজাকারদের ওপর, জামাতের ওপর এবং সম্ভবত সব ইসলামিস্টদের ওপর। আপনি মনে করছেন এরা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ করেছে - করে যাচ্ছে। একবার শুধু ভেবে দেখুন - যখনই আপনি ধরে নিলেন অপরাধটি ক্ষমার অযোগ্য নিজেকে ছোটো করে ফেললেন একটু তখনই - স্বীকার করে নিলেন আপনার সীমাবদ্ধতার কথা। আপনার ক্ষমতা আছে ক্ষমা করবার - এটাই আপনার শ্রেষ্ঠত্ত, এটাই আপনার শক্তি। কেন সেটা কাজে লাগাবেন না? একবার ইসলামিস্টদের সাথে কথা বলে দেখুন, এদের অনেকেই অসাধারণ মানুষ। আসিফ সিব্গাত ভূইয়াঁর মতো ছেলে আপনি কোথায় পাবেন যার কাছে আপনি আপনার সর্বস্ব আমানত রাখতে পারবেন। আমার বন্ধু ওয়াহিদুজ্জামান এপোলো, তাওসিফ ইসলামিস্ট না কিন্তু আপনাদের হয়তো মনে হচ্ছে তারা আপনাদের শত্রু - না এরা এই দেশটাকে ঠিক বঙ্গবন্ধুর মতো করেই ভালোবাসে। এরা আপনাদের সবচেয়ে কাছের মানুষ - একবার শুধু ক্ষমা করে দেখুন এদেরকেই সবচেয়ে কাছে পাবেন আপনি। জামাত-শিবির মাত্রেই খারাপ মানুষ না, পাকিস্তানে বিশ্বাসী মানুষ না, হিংস্র মানুষ না। এই মুহুর্তে আপনি আমাকে বিশ্বাস করবেন না জানি কিন্তু এদের ক্ষমা করে দেখুন - অন্তত আপনি নিজেকে আরেকটু ভালোবাসার রসদ পাবেন।
আজকের এই সময়টা ঘৃণার না, ক্ষমার। "কে শুরু করেছিল" - এই কথা মনে করে পৃথিবীতে কোনোদিন শান্তি আসে নি, আসবেও না। পরমত সহিষ্ণুতা শর্ত-সাপেক্ষে হয় না। আপনাকে বড় হতে হবে, হতেই হবে - এটাই মনুষত্বের শ্রেষ্ঠ প্রকাশ। এই প্রকাশটিকে নিজের করে নিন।
এই দেশটা খুবই দুঃখী দেশ। কে এখানে ভিকটিম না বলুন? এই মুহুর্তে ফেসবুক ও ব্লগকে আপনার রাগ ও ঘৃণার প্ল্যাটফর্ম বানাবেন না। আপনার ক্ষোভের প্রতিটি কারণই যথাযথ কিন্তু রাগ ও ঘৃণার উপরে মনুষ্যত্বকে স্থান দিন। শুধু একটা কথা মনে রাখুন - অনেকগুলো মানুষ মারা যাচ্ছে।
লেখা : ফাহাম আবদুস সালাম
এখান থেকে পাওয়া
বিষয়: বিবিধ
১৩২২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন