হযরত মুহাম্মদ (সা) এর বিবাহ সমূহ ও তার কারণ

লিখেছেন লিখেছেন ডুবোজাহাজ ১০ এপ্রিল, ২০১৩, ১১:১৬:৪৫ রাত

রাসূলুল্লাহর পারিবারিক জীবণে তিনি ১১টি বিয়ে করেছিলেন ও উনার দুইজন দাসী ছিল ।ক্রমান্বয়ে তাদের সম্পর্কে জেনে নিই ।

১. খাদিজা বিনতে খুয়াইলেদ (রা) : মুহাম্মদ (সা) এর চারিত্রিক গুণাবলিতে মুগ্ধ হয়ে খাদিজা (রা) তাঁকে বিয়ের প্রস্তাব দেন এবং উভয় পরিবারের সম্মতিতে বিবাহ সম্পন্ন হয় । বিয়েতে খাদিজা (রা) এর চাচা আমর ইবনে আসাদের প্রস্তাবে দেনমোহর ৫০০ দিরহাম নির্ধারণ করা হয় । বিয়ের সময় মুহাম্মদ (সা) এর বয়স ছিল ২৫ আর খাদিজা (রা) এর বয়স ছিল ৪০ বছর ।

তার ঘরে রাসূলুল্লাহ (সা) এর দুই পুত্র ও চার কন্যা জন্ম লাভ করেন । তাদের নাম যথাক্রমে কাসেম ও আবদুল্লাহ এবং কন্যাদের নাম জয়নব, রুকাইয়া, উম্মে কুলসুম ও ফাতিমা (রা) ।

খাদিজা (রা) এর জীবিতাবস্থায় তিনি আর কোন স্তী গ্রহণ করেননি ।

২. সাওদা বিনতে যাম'য়া আল আমেরিয়া (রা) : খাদিজা (রা) এর মৃত্যুর পর সন্তান সন্ততি ও ঘর সংসারের দায়িত্ব রাসূলুল্লাহর কাধে হঠাৎ চলে আসলে তিনি দিশেহারা হয়ে পড়েন । অপরদিকে সাওদা (রা) এর স্বামী মারা যাওয়ায় তিনিও অসহায় হয়ে পড়েছিলেন । তাই খাওলাহ বিনতে হাকীম নাম্মী মুহাম্মদ (সা) এর এক খালার মধ্যস্থতায় উনাদের বিবাহ সম্পন্ন হয় । মোহরানা ছিল চারশ মোহর যা সাওদা (রা) এর পিতাই বহন করেন । বিয়ে সম্পন্ন হয়ে হিজরতের তিন বছর পূর্বে । সাওদা (রা) এর বয়স তখন ৫৫ বছর ।

৩. আয়েশা বিনতে আবু বকর (রা) : সাওদা (রা) এর সাথের বিয়ের পনের দিন পর খাওলা (রা) এর মধ্যস্থতাতেই আয়েশা (রা) এর সাথে মুহাম্মদ (সা) এর বিবাহ সম্পন্ন হয় । বিবাহের মূল কারণ অবান্চিত কুসংস্কারের মূলোৎপাটন । কুসংস্কারটি ছিল বন্ধুর কন্যা বন্ধু বিয়ে করতে পারত না । মুহাম্মদ (সা) তার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু আবু বকর (রা) এর কন্যা আয়েশা (রা) কে বিয়ে করে এ কুসংস্কারের মূলোৎপাটন করেন ।

বিয়ের সময় আয়েশা (রা) এর বয়স নিয়ে মত পার্থক্য আছে । কেউ বলেন ৬, কেউ ৭ আবার কেউ বলেন ৯ বছর ।

৪. হাফসা বিনতে উমর (রা) : হাফসা (রা) এর স্বামী বদর যুদ্ধে আহত হয়ে মদীনায় মারা যাবর পর তিনি পিতা ওমর (রা) এর কাছে এসে পড়েন । উমর (রা) তার এই যুবতী বিধবা কন্যার ভবিষ্যতের জন্য চিন্তিত হন ও তাকে বিয়ে দিতে চেষ্টা করেন । কিন্তু হাফসা (রা) এর স্বভাবও পিতার মত একটু কড়া হওয়ায় তা অনেকের ভাবনার কারণ ছিল । ওসমান (রা) ও প্রস্তাব প্রত্যাখান করেন যা ওমর (রা) কে ব্যথীত করে । আবু বকর (রা) এ ব্যপারে একদম নিশ্চুপ থাকেন । কন্যাদায়গ্রস্হ ওমর (রা) রাসূলুল্লাহর নিকট ঘটনা বর্নণা করলে রাসূলুল্লাহ (সা) হাফসা (রা) কে বিয়ে করে ওমর (রা) কে চিন্তা হতে মুক্তি দেন এবং ওমর (রা) খুব খুশি হন । বিবাহ সম্পন্ন হয় হিজরি ৩ সনে । তার বয়স তখন ২১ বছর ।

৫.যয়নব বিনতে খুযাইমা (রা) : যয়নব (রা) এর স্বামী ওহুদের যুদ্ধে শাহাদাত বরণ করায় তিনি শোকাহত হয়ে পড়েন , তার চেয়েও তার পিতা বেশি শোকাহত হয়ে পড়েন তাকে নিয়ে । এ ঘটনা রাসূলুল্লাহর নিকট পৌছালে তিনি কতিপয় নাহাবীদের কে বিয়ের জন্য রাজী করাতে চেষ্টা করেন কিন্তু সকলেই নানা ওজর দেখিয়ে পিছিয়ে যান । তাই তিনি (সা) নিজেই যয়নব (রা) কে বিয়ে করে নেন। বিয়ে হয় ৩ হিজরি সনে । যয়নব (রা) এর বয়স তখন ৩০ বছর । বিয়ের মাত্র তিন মাস পর তিনি ইন্তেকাল করেন ।

৬. উম্মে সালামা হিন্দা বিনতে আবী উমাইয়া (রা) : ওহুদ যুদ্ধে আবু সালামা (রা) শাহাদাত বরণের পর উম্মে সালামা (রা) চরম অর্থকষ্টে পতিত হন। তখন তিনি অন্তঃসত্বা ছিলেন । সন্তান প্রসবের পর আবু বকর (রা) তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিলে তিনি তা ফিরিয়ে দেন । এটা দেখে আর কেউ বিয়ের প্রস্তাব দিতে সাহসী হলেন না । ফলে উম্মে সালামা (রা) এর সংসারে অচলাবস্থা দেখা দেয় । তখন এই অনাথ মহিলা ও তার এতীম সন্তানদের দায়িত্ব রাসূলুল্লাহ নিতে চান ও বিয়ের প্রস্তাব পাঠান । উম্মে সালামা (রা) এতে রাজি হন ও আল্লাহর ইচ্ছায় তার সকল দুঃখ বেদনা লাঘব হয় ।

৪ হিজরি সনের শাওয়াল মাসে বিবাহ সম্পন্ন হয় । বিয়ের সময় বয়স ছিল ৩৫ বছর ।

৭. যয়নব বিনতে জাহাশ (রা) : তৎকালিন আরবের একটি কুসংস্কার ছিল পালিত পুত্রকে নিজের পুত্র ভাবা হত ও তার পরিত্যাজ্য বা বিধবা স্ত্র্রীকে বিয়ে করা গর্হিত কাজ মনে করা হত । এই কুসংস্কার দূর করার জন্য সরাসরি আল্লাহর নির্দেশ মুহাম্মদ (সা) তার পালিত পুত্র যায়েদ ইবনে হারেসা (রা) এর তালাক দেয়া স্ত্র্র্রী যয়নব (রা) কে বিবাহ করেন । তিনি মুহাম্মদ (সা) এর ফুফাত বোন ছিলেন । হিজরি ৫ সনে বিয়ে সম্পন্ন হয় ।

৮. জুয়ায়রিয়া বিনতে হারেস (রা) : বনু মুসতালিকের সাথে যুদ্ধে তিনি মুসলিমদের হাতে বন্দী হন ও সাবিত বিন কায়েস (রা) এর ভাগে পড়েন । তিনি ছিলেন সর্দারের কন্যা তাই তিনি নিজের মুক্তিপণ সাবিত (রা) এর সাথে আলোচনা করে নয় আওকিয়া স্বর্ণ ধার্য করেন । তার কাছে এ অর্থ না থাকায় তিনি রাসূলুল্লাহর কাছে যান ও রাসূলুল্লাহ (সা) তাকে অর্থ দান করে মুক্ত করে দেন । এই মহানুভবতায় মুগ্ধ হয়ে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন । কিন্তু এতে তার পরিবারের সাথে তার সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন হয় ও সমস্যায় পড়েন । তখন রাসূলুল্লাহ তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে বিয়ে করে নেন । তখন মুসলিমদের কাছে বনু মুসতালিকের ছয়শ বন্দী ছিল । কিন্তু যে বংশে রাসূল (সা) বিয়ে করেছেন তাদের কাউকে বন্দী রাখা সাহাবীরা রাসূলুল্লাহর জন্য অপমান জনক মনে করে সকলকে মুক্তি দিয়ে দেন । তখন তার বয়স ২০ বছর ছিল ।

৯. উম্মে হাবীবা বিনতে আবু সুফিয়ান (রা) : আবিসিনিয়ায় হিজরতের পর উম্মে হাবীবা (রা) এর প্রথম স্বামী খ্রিস্টান হয়ে যায় ও অতিরিক্ত মদ্যপানের কারণে মারা যায় । অপর দিকে তার পিতা তখন মক্কার কাফেরদের সর্দার । ফলে তিনি চরম অসহায় হয়ে পড়েন ও অভাব অনটনের মধ্যে কাটাতে থাকেন আবিসিনিয়ায় । এ খবর পেয়ে রাসূলুল্লাহ বিয়ের প্রস্তাবসহ ইবনে উমাইয়া (রা) কে বাদশা নাজ্জাশির নিকট পাঠান । নাজ্জাশী রাসূলুল্লাহর পক্ষ হতে মোহরানা আদায় করে বিয়ে পড়িয়ে দেন এবং এর কিছুদিন পর উম্মে হাবীবা (রা) জাহাজে করে মদিনায় চলে আসেন । বিয়ে হয় হিজরি ৬ সনে । বিয়ের সময় বয়স আনুমানিক ৩৬ বছর ।

১০. মায়মুনা বিনতে হারেস (রা) : মায়মুনা (রা) পূর্বে দুইবার বিয়ে করেছিলেন । প্রথম স্বামী কর্তৃক পরিত্যাক্ত হন ও পরে দ্বিতীয় স্বামী রোগাক্রান্ত হয়ে মারা যান । এতে তিনি জীবণের প্রতি বিতৃষ্ণ হয়ে পড়েন ও আর বিয়ে করবেন না স্থির করেন । তার কিছু হিতাকাঙ্খী আপন লোক তার দুঃখ কষ্ট দেখে রাসূলুল্লাহকে অনুরোধ করেন তাকে বিয়ে করার ও মায়মুনা (রা) কেও আগ্রহান্বীত করে তুলেন । তাদের অনুরোধে সারা দিয়ে হিজরি ৭ সনে তাকে বিয়ে করে নেন ।

১১. সুফিয়া বিনতে হুয়াই (রা) : ৭ হিজরিতে খায়বর যুদ্ধে বন্দী হয়ে তিনি মুসলিমদের কাছে আসেন । তখন সাহাবী দাহিয়া কালবী (রা) রাসূলুল্লাহর নিকট দাসী চেয়ে আবেদন করলে তিনি সুফিয়াকে নিতে বলেন । তখন জনৈক সাহাবী প্রতিবাদ করে বলেন বনু নাজির ও বনু কুরাইজার সর্দার কন্যাকে কেবল রাসূলুল্লাহর জন্যই শোভনীয় । তখন তিনি দাহিয়া (রা) কে অন্য একটি দাসী দেন ও সুফিয়াকে গ্রহণ করেন । সুফিয়া (রা) ইসলাম গ্রহণ করায় তাকে মুক্তি দিয়ে তিনি উম্মুল মুমিনিনের মর্যাদা দান করেন ।

রাসূলুল্লাহর দুজন দাসী ছিলেন

১. মারিয়া আল কিবতীয়া (রা) : ৭ হিজরিতে আফ্রিকার শাসনকর্তা মিকাউকাস শুভেচ্ছা স্বরূপ বহু সম্পদ সহ স্বীয় চাচাতো ভগ্নী মারিয়াকে উপঢৌকন স্বরূপ রাসূলুল্লাহর দরবারে প্রেরণ করেন । আন্তর্জাতিক রীতি অনুযায়ী তিনি তখন মারিয়া (রা) কে গ্রহণ করেন । অধিকাংশ ঐতিহাসিকের মতে ইসলাম গ্রহণের পর রাসূলুল্লাহ তাকে বিয়ে করে নেন ও উম্মুল মুমিনিনের মর্যাদা দেন । এরপর ওহী যোগে নতুন স্ত্রী গ্রহণ ও বর্জন বন্ধ করে দেওয়া হয় । তার ঘরে মুহাম্মদ (সা) এর শেষ সন্তান ইব্রাহীম (রা) জন্মলাভ করেন কিন্তু শৈশবেই মারা যান ।

বলা হয় ইবরাহীম (আ) এর জন্য যেমন হাজেরা (আ) তেমনি মুহাম্মদ (সা) এর জন্য মারিয়া (রা) , দুজনই বাদশাহের পক্ষ হতে নবীর প্রতি উপহার ।

২. রায়হানা বিনতে আল কুরাযীইয়া : বনু কুরাইযা হতে বন্দী হয়ে তিনি দাসী হয়ে আসেন । রাসূলুল্লাহ তাকে ইসলামের দাওয়াত দিলে তা প্রত্যাখান করেন । কেউ বলেন পরে ইসলাম গ্রহণ করলেও দাসী হিসেবেই মারা যান । তার সম্পর্কে খুব কম জানা যায় ।

এখান হতে পাওয়া

বিষয়: বিবিধ

২৩৮০ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

321473
২১ মে ২০১৫ রাত ০১:৫৪
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : ভালো লাগল, ধন্যবাদ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File