এক ফোঁটা সুখের বৃষ্টি
লিখেছেন লিখেছেন ধ্রুব নীল ১৯ জানুয়ারি, ২০১৪, ১২:৩০:০৮ রাত
*
মাঝে মাঝে ঐ দূরের আকাশটাকে অনেক কাছের মনে হয়। সব ছেড়ে সেখানে হারিয়ে যেতে ইচ্ছা করে। মেঘের ভাঁজে ভাঁজে যদি ছোট্ট ঘর থাকত তবে ঐ ঘরে বাসা বাঁধতাম আমি। আকাশের বিশালতা নিশ্চয় স্বার্থপরের মত আচরন করতো না।
ও আচ্ছা আমার পরিচয় দেয়াই হয়নি। আমি তানজিম। একটি ব্যাংকে কর্মরত আছি। পরিবারের বড় ছেলে বলে বাড়ি থেকে বারবার চাপ দিচ্ছে বিয়ের জন্য। মেয়েও খোঁজা হচ্ছে। জীবন সঙ্গীনি বেছে নিতে এত বিড়ম্বনায় পড়তে হবে আগে বুঝিনি। মেয়ে খোঁজা অনেকটা মরিচীকার মত। পানি মনে করে কাছে গেলেই বালি হয়ে যায়।
একজন আধুনিক মেয়ে খুঁজছি আমি। যে মেয়ে তার পারিবারিক ও ধর্মীয় শিক্ষাকে প্রকৃতরূপে ব্যবহার করতে শেখেনি, বাবা মা ভালবাসার সবটুকু নিংড়ে দিয়ে বড় করার পর যে মেয়টি নিজের পছন্দের ছেলের সাথে বাড়ি ছেড়ে চলে যায়, আমার সঙ্গায় সে মেয়ে আধুনিক নয়। বড়জোর তাকে অবাধ্য ও বেয়ারা মেয়ে বলা যেতে পারে।
আমি যেহেতু অবাধ মেলামেশায় নিজেকে জড়াতে পারিনি, ছোটবেলা থেকে আমার পরিবার এভাবে মিশতে শেখায়নি, ইসলাম আমাকে প্রেম ভালবাসা থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছে তাই একমাত্র ঐ মহানুভবতার কাছে ভরসা করা ছাড়া আমার তেমন কোন উপায় নেই।
মনের আকাশের সাথে ঐ দূরের আকাশের বেশ মিল খুঁজে পাই। দূরের আকাশে যেমন রঙ বদলায়, আলো অন্ধকার আসে ঠিক মনের আকাশেও এরূপ ঘটে। এ কারনেই বোধ হয় সুবিশাল আকাশের প্রতি আমার মায়ার হাহাকার।
**
অফিসে যাওয়ার জন্য বের হয়েছি এমন সময় বাড়ি থেকে আব্বার ফোন এল। তিনি যা বললেন তার সরমর্ম হল- 'আমাদের পাশের গ্রামের এক মেয়েকে গতকাল তিনি দেখে এসেছেন। মেয়েকে আব্বার খুবি পছন্দ হয়েছে। তাই আমাকে বৃহশ্পতিবার রাতের বাসে বাড়ি যেতে বললেন। শুক্রবার সকালে মেয়ে দেখতে যাব। যদি পছন্দ হয়, তবে বিকালেই বিয়ে হবে"।
আপনারা হয়তো ভাবছেন এত তাড়াহুরোর কি আছে। বাবার যুক্তি হচ্ছে যেহেতু আর এক সপ্তাহ পরেই রমাদ্বান মাস শুরু হবে তাই তিনি চাচ্ছেন এর আগেই বিয়ে দিতে। অফিস করে এসে ইফতার তৈরী ও রান্না করা সত্যিই অনেক পরিশ্রমের।
কিন্তু মেয়েকে দেখে যদি আমার পছন্দ না হয় তাহলে বাবা খুব কষ্ট পাবেন। কারন মেয়েকে তিনি নিজে পছন্দ করে এসেছেন। ছোটবেলা থেকে বাবার কথায় কখনো দ্বিমত পোষণ করিনি, করার প্রোয়োজনও পড়েনি। তিনি যেভাবে চেয়েছেন সেভাবেই বেড়ে উঠেছি, সাজিয়েছি নিজেদের জীবনকে। কারন আদর্শ ও মনুষ্যত্বের যে শিক্ষা দিয়ে তিনি আমাদের বড় করেছেন সেখানে প্রশ্ন উঠার কোন সুযোগ ছিলনা। একটি ঘটনা বলি-
"ছোটবেলায় একবার স্কুল মাঠে ৫০০টাকা কুড়িয়ে পেয়েছিলাম। বাড়িতে আসলে আব্বা মাথায় হাত দিয়ে বললেন 'এ টাকায় তোমার হক নেই বাবা। আল্লাহ তায়ালা মাঝে মাঝে তোমার সততার পরীক্ষা নেবেন। যদি নিজের লোভকে সংবরন করতে না পারো তবে পরীক্ষায় ফেল করবে। তখন তোমার ঠিকানা হবে আজাবের স্থান জাহান্নাম। তুমি কি সেটা চাও"?
আমি সেটা চাইনি। আর তাই পরদিন খুঁজে খুঁজে টাকার মালিক আমাদের বাংলা স্যারকে টাকাটা ফিরিয়ে দিয়েছিলাম। স্যার ছোট্ট একটা ছেলের এমন সততায় কি পরিমান অবাক আর খুশি হয়েছিলেন তা মনে হলে আজও আনন্দে মনটা ভরে ওঠে।
এমন সততার শিক্ষা যার কাছে পেয়েছি তার পছন্দকে আমি কোনভাবেই এড়িয়ে যেতে পারিনা। অনেক ভেবেচিন্তে আব্বার কাছ থেকে মেয়ের বাড়ির ফোন নম্বর নিলাম। রুমে ফিরে ফোন দিয়ে শুধু জানতে চাইলাম "সে এমন জীবন যাপন করতে আগ্রহী কিনা যে জীবনে কুরআনের বিধান রয়েছে, নবীর আদর্শ রয়েছে"। উত্তরে যখন শুনলাম সেও মনে মনে একজন ধর্মীয়মনা ছেলেকে চাইছিল, তখন আর ভাবনার অবকাশ রইল না।
আব্বাকে ফোন দিয়ে বললাম "আমাকে মেয়ে দেখতে হবেনা। আপনি বিয়ের আয়োজন করুন। আপনার যেহেতু পছন্দ হয়েছে ইনশাল্লাহ আমারো পছন্দ হবে। আব্বা "তা কি করে হয়" বলতে যাচ্ছিল; আমি শুনিনি। নির্ভার চিত্তে অফিসে গেলাম। মনের আকাশ থেকে কালো মেঘের খন্ডটি যেন ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে। প্রশান্তি পাচ্ছি মনে।
***
আজ শুক্রবার। আমার বিয়ের দিন। রাতের বাসে বাড়িতে এসে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। এখনো তেমন কাউকে বিয়ের কথা জানানো হয়নি। পরিচিত কয়েক জনকে জানানোর পর জুম্মার সালাহ আদায় করলাম।
ভাবছি মেয়ের মনটাকে কোন ক্যাটাগরিতে ফেলব। এখনকার মেয়েরা যেখানে মনের মত ছেলেকে খুঁজে পাওয়ার আগে বিয়ে করতে নারাজ সেখানে এমন উচ্চ শিক্ষিতা মেয়ে (রাবি,মার্স্টাস) ছেলেকে না দেখেই বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিল? তবে কি আমার মতই আরেকজনকে পেতে যাচ্ছি....।
বিকালের মধ্যে সবাই মেয়ের বাড়ি পৌছিঁলাম। বিয়ে রেজিস্ট্রি হল। ধর্মীয় সব বিধান মেনে বিয়েও হল। অচেনা মেয়েটি আমার জীবন সঙ্গিনী হওয়ার পরও তাকে দেখার সুযোগ পাচ্ছিনা। মনের আকুলতাকে কতক্ষণ আর অবজ্ঞা করা যায়? প্রতিক্ষার বৃষ্টি অবশেষে নামল, যখন রাতের প্রথম প্রহরে দুজনকে একত্রিত করা হল। আড়চোখে তার পানে একবার চাইতেই মন থেকে বেড়িয়ে এল 'আলহামদুলিল্লাহ'। প্রতিমার বদনখানি থেকে চোখ সরাতে পারছিনা। তবে কি 'পাইলাম, আমি উহাকে পাইলাম'!
আব্বা কখন যেন এসে কাঁধে হাত রেখেছেন। দরদভরা কন্ঠে বললেন "বাবা, মানুষের কাছে আমার যতখানি সম্মান ছিল, তোমার কারনে আমার সেই সম্মান দ্বিগুন হয়ে গেল"।
আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি। ভরাট পূর্ণিমা আকাশকে যেন তারার মালা দিয়ে সাজিয়ে রেখেছে। তারই একটি তারা আজ আমার পাশে এসে বসেছে। হাতে হাত রেখে কথা দিয়েছে বাকি জীবন পাশে থাকার।
দূরের মাঠে জোনাকগুলো খেলায় মেতেছে ঘাসফুলের উপর। মনের আকাশে আজ সুখের মেঘ করেছে। মেঘমালা থেকে এক ফোঁটা বৃষ্টি সুখ হয়ে ঝড়ছে আমার জীবনে...।।
[গল্পের উত্স: গল্পের ঘটনাটি আমার এক ভাইয়ার জীবনে ঘটেছে। আমি শুধু নিজের মত করে রঙ ছড়িয়েছি। বিয়ের প্রায় মাস খানিক পর (রমাদ্বানের শেষের দিকে) ভাইয়ার বাসায় গিয়েছিলাম। বললাম- 'এমন করে বিয়ে করলেন, সংসার জীবন যাচ্ছে কেমন? উনি বললেন- 'যদি এক কথায় উত্তর চাও তাহলে বলব, আলহামদুলিল্লাহ। আমি সত্যিই ভাগ্যবান]
বিষয়: বিবিধ
২২৮৩ বার পঠিত, ৪২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মহান রবের উপর ভরসাকারীদের তিনি যে বিমুখ করেননা , তার প্রমান অগণন ৷ দোয়া রইলো প্রিয় নীল ভাইয়ার জন্য , আল্লাহ যেন তার কল্পনার চেয়েও সুন্দর এক বাস্তবের সাথে ভাইয়ার পরিচয় ঘটিয়ে দেন !
আলহামদুলিল্লাহ আপনার শব্দভাণ্ডার বেশ শক্তিশালী
এগিয়ে চলুন ইসলামিক সাহিত্য নিয়ে।
অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া
+++++++++++++
আপনি নিয়মিত লিখতে থাকুন। আমি মাঝে মাঝে চেষ্টা করব। দুয়া করতে ভূলবেননা কিন্তু।
ভালো লাগলো || ধন্যবাদ || পিলাচ || মাইনাস || অনেক ধন্যবাদ || স্বাগতম ||
কুইক কমেন্ট তৈরি করুন
কেন এমন করলাম তা বুঝানোর জন্য এই ১১নং কমেন্টটা দিলুম
তোমার জন্য দোয়া ও শুভকামনা রইলো।
থ্যাঙ্কু আপু।
আপা আমকে তুমি সম্বোধন করবেন।
এখন গল্পের কথায় আসি। ভাইয়ার বাবা একটি ইসলামী রাজনৈতিক দলের জেলা আমির এবং এলাকায় অত্যন্ত সম্মানিত ব্যক্তি।। উনি নিজেও চাননি ছেলে না দেখে বিয়ে করুক। কিন্তু ছেলে নিজেই জোর করে বিয়ের ব্যবস্থা করেছে। বিয়ের আগে মেয়ের পক্ষ থেকে মেয়ের বড় ভাই এসে ভাইয়াকে দেখে গিয়েছিলেন।
এভাবেই বিয়ে হয়েছিল।
আপা আমি নিজেও জানি, ইসলাম যেসব অনুমতি দিয়েছে তা না মানাটাও এক ধরনের বাড়াবাড়ি। তাছাড়া রমাদ্বানের সময় ব্যস্ততাও অনেক বেশি ছিল। যাই হোক সবকিছুর উপর ওনারা সুখে আছেন আমার গল্প লেখার সাহস হয়েছিল। দুয়া করবেন ভাইয়াদের জন্য।
আর আমাকেও তুমি'র স্নেহে বাঁধবেন। জাজাকিল্লাহ আপা।
http://www.bdtomorrow.org/blog/blogdetail/detail/6229/Zurich/36728
ভাইয়াদের মত আপনার জীবনেও খুব শীঘ্রই উত্তম কিছু ঘটুক সেই শুভকামনা রইলো
মন্তব্য করতে লগইন করুন