"স্বপ্নের মন্জিলে" পর্ব-২

লিখেছেন লিখেছেন ইশরাত জাহান রুবাইয়া ০৩ এপ্রিল, ২০১৩, ১২:১৮:২৮ রাত

৪.

এক মগ চা নিয়ে বারান্দার দিকে আসছিলেন রুখসানা। অন্ধকার করিডোর পেরিয়ে সামনে আসতেই আবছা অন্ধকারে দুটি ছায়ামূর্তিকে নড়তে দেখলেন। চমকে উঠলেন তিনি। ওগুলো মানুষ নাকি অন্য কিছু! ওদিকে তো তাঁর বড় মেয়ে আফরিনের ঘর, কিন্তু ওরা তো সবাই নিচে পার্টিতে, তাহলে এরা কারা! দুআ-দরুদ পড়তে পড়তে সামনে এগুলেন। সুইচবোর্ড হাতড়ে লাইট জ্বালালেন। ততক্ষণে ছায়ামূর্তিগুলি উধাও। সুইচ অফ না করেই বেড়িয়ে এলেন রুম থেকে। দক্ষিণের বারান্দায় এসে ইজি চেয়ারে বসলেন। বারবার দৃশ্যটা চোখের সামনে ভেসে উঠছে। মাথা ঝাড়লেন কয়েকবার। ঘটনাটা ভুলে যেতে চাইছেন তিনি।

চা খেতে খেতে নিচে মেইন গেইটের দিকে তাকালেন। আবিদকে ঝড়ের বেগে ঢুকতে দেখলেন। দারোয়ান আবুল গেইটটা বন্ধ করে দিল।

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলেন রুখসানা। এসব গান বাজনা তিনি একদম পছন্দ করেননা। চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ান তিনি। বারান্দার গ্রিলের ফাঁক দিয়ে আকাশের দিকে তাকান। বিস্তৃত আকাশে হালকা হালকা মেঘের আনাগোনা...তার ফাঁকে ফাঁকে উঁকি দেয়া পূর্ণ চাঁদ...ঝিরি ঝিরি বাতাসে দোলা নারিকেল গাছের পাতা...বাগান থেকে ভেসে আসা হরেক রকম ফুলের ঘ্রাণ তাঁকে নস্টালজিক করে দেয়। অতীতের নানা স্মৃতি দোলা দিয়ে যায় মনে...

সেই ছোট্টকালের তিনি দৌড়ে বেড়াতেন মাঠে মাঠে, সমবয়সী মেয়েদের সাথে কত গোল্লাছুট, বৌছি খেলেছেন! বৈশাখ মাসে ঝড়ের রাতে আম কুঁড়ানো, করিম চাচার আমের বাগানে দুপুর বেলায় চুরি করে আম পাড়া আর লবন আর ঝাল মরিচ মিশিয়ে খাওয়া, বাবুদের পুকুরে ডুবসাঁতারের পাল্লা দেয়া, প্রতি সপ্তাহয় একদিন বাড়ির পাশের জঙ্গলে জোলাবাতি খেলা, মসজিদে দল বেঁধে পড়তে গিয়ে আসার পথে চুরি করে লেবুদের গাছের তেঁতুল পেড়ে আনা, এসব কি কখনো ভুলে যাবার! তারপর একসময় শিক্ষাজীবনে প্রবেশ, ইসলামী জীবন ব্যবস্হায় গড়ে উঠা....বাবা মার সাথে শহরে চলে আসা...অতঃপর হঠাত্‍ একদিন জীবনে নেমে আসা এক কালবৈশাখী ঝড়...যা বদলে দিল জীবনের মোড়...

তখন তিনি দশম শ্রেণীতে পড়েন। বৈশাখ মাসে মা বাবা বেড়াতে যান নানাবাড়ীতে। ফেরার পথে প্রচন্ড ঝড়ে মেঘনা নদীতে লন্চ ডুবে যায়। ১০৭ জন মানুষ মারা যান। কূলে উঠতে সক্ষম হন ২৬ জন মানুষ। নদীর তীরে চাচার সাথে তিনিও ভীড় জমান। বাবা মাকে পান মৃতদের সাঁড়িতে। মূহুর্তে সাজানো পৃথিবীটা যেন এলোমেলো হয়ে যায়...

ভাইয়ের একমাত্র সন্তানকে লালন পালনের দায়িত্ব চাচাই নিজ কাঁধে তুলে নেন। নিয়ে আসেন নিজের বাসায়। একসময় এস. এস. সি পরীক্ষা সামনে চলে আসে। মানসিকভাবে বিপর্যস্ত রুখসানার পরীক্ষা খুব একটা ভাল হয়না। চাচা ঠিক করেন বিয়ে দিয়ে দেবেন। যথারীতি বিয়েও হয়ে যায় বিত্তশালী আহসান সাহেবের সাথে। এ বাড়ীতে এসে সবই পান তিনি, শুধু ইসলাম ছাড়া। ইসলামী বিধান মানতে পদে পদে বাঁধার সম্মুখীন হতে হয় তাঁকে।

বিয়ের কিছুদিন পরেই স্বামীর আসল রূপ ধরা পড়ে। আহসান সাহেব নামাজের ধারের কাছ দিয়ে ও যাননা, কেবলমাত্র দুই ঈদের নামাজ পড়ে নিজের মুসলিম নামের সার্থকতা ধরে রাখেন। রুখসানা আর মতির মা ছাড়া এ বাড়ীর কোন সদস্য রমজানের রোজা রাখেনা। পর্দা করার কারণে আজ পর্যন্ত কত আনকালচার্ড, সেকেলে, গোঁড়া মৌলবাদি উপাধি পেতে হয়েছে তাঁকে!! তবুও কারো রক্তচক্ষুকে ভয় করে তিনি আল্লাহর হুকুম মানা ছেড়ে দেননি....

(চলবে)

বিষয়: বিবিধ

২২৩৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File