"স্বপ্নের মন্জিলে" পর্ব-১

লিখেছেন লিখেছেন ইশরাত জাহান রুবাইয়া ৩০ মার্চ, ২০১৩, ১২:১৪:৩৬ রাত

১.

ব্যাপারটা কি? পাঁচ মিনিট পর পার্টি শুরু হয়ে যাবে অথচ মাসউদটা এখনো এলনা!! মোবাইলটাও অফ করে রেখেছে! বলতে বলতে মাসউদের মোবাইলে আবারো কল দেয় আবিদ। আবারো ওপাশ থেকে ভেসে আসে, আপনার ডায়ালকৃত নাম্বারটি এই মূহুর্তে সংযোগ দেয়া সম্ভব হচ্ছেনা....

নাহ! ওর বাসাতেই যেতে হবে দেখছি, ভাবতে ভাবতে হলরুম থেকে বেরিয়ে আসে আবিদ।

- ভাইয়া, এততা চককেত দাওতো! বলে আবিদের ছোট বোন উমামা।

-যাতো উমা, এক ঝামেলার মাঝে আরেক ঝামেলা পাকাতে আসিসনা!

সিড়ি দিয়ে নামতে থাকে আবিদ...

-আম্মি...ও আম্মি ভাইয়া আমাকে মেলেছে। কাঁদতে কাঁদতে ছুটে যায় ছুটে যায় উমামা। মেয়ের কান্না শুনে রুম থেকে বেরিয়ে আসেন রুখসানা বেগম। হন্তদন্ত হয়ে সিড়ি দিয়ে আবিদকে নামতে দেখে খমকে দাঁড়ান তিনি।

-আবিদ, এই আবিদ দাঁড়া। শুনে যা।

-কি হয়েছে মা?

-এই অসময়ে কোথায় যাচ্ছিস?

-আর বলোনা, কয়েক মিনিট পর পার্টি শুরু হবে অথচ মাসউদের কোন খবর নেই! আমি ওদের বাসায় যাচ্ছি।

মাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বেরিয়ে গেল আবিদ।

২.

উমামাকে নিয়ে রুমে প্রবেশ করেন রুখসানা। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখেন রাত প্রায় দশটা বাজে। মেয়েকে ঘুম পাড়িয়ে রেখে বারান্দায় এসে বসেন। আজ তার একমাত্র ছেলে আবিদের জন্মদিন। এ উপলক্ষে কয়েকদিন থেকেই ব্যাপক আয়োজন চলছে। গেইট থেকে নিয়ে পুরো বাড়ি আলোকসজ্জা করা হয়েছে, ব্যান্ড পার্টি আনা হয়েছে, আবিদের সব বন্ধু বান্ধবীদেরকে নিমন্ত্রন করা হয়েছে। এ বারান্দা থেকে বাড়ির মেইন গেইট দেখা যায়। গেইট দিয়ে অসংখ্য তরুণ তরুণী প্রবেশ করছে, এদের অধিকাংশই আবিদের সাথে পড়ে।

নীচ থেকে বাজনার আওয়াজ ভেসে আসছে। তারমানে পুরোদমে পার্টি শুরু হয়ে গেছে। সারা বাড়িতে আনন্দ উত্‍সবের আমেজ। কিন্তু এইসব আনন্দ রুখসানা বেগমকে স্পর্শ করতে পারছেনা। বাজনার আওয়াজে মাথাব্যাথার উপক্রম হয়েছে তাঁর। এককাপ চা খাওয়া দরকার, ভাবেন তিনি। ডাক দেন কাজের বুয়া মতির মাকে।

-মতির মা...এই মতির মা...

কোন সাড়াশব্দ নেই। এবার একটু গলা চড়িয়ে ডাকেন তিনি।

-শুনছো নাকি, মতির মা!

এবারো কারো সাড়া পাওয়া গেলনা। চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ান তিনি।

-নাহ! আর সওয়া গেলনা! শেষমেষ কাজের বুয়াকেও বোধদয় নাচতে পাঠিয়েছে!! হায়রে মানুষ! চিরকালই কি বেঁচে থাকবে! আনমনে কথাগুলি বলতে বলতে কিচেনের দিকে যান তিনি....

৩.

ক্রিং...ক্রিং...ক্রিং...

কলিংবেলের শব্দে দৌঁড়ে গিয়ে দরজা খোলে মাসউদের ক্লাসটুতে পড়ুয়া বোন আফরা।

-আসসালামু আলাইকুম, ভাইয়া। ভেতরে আসুন।

-ওয়ালাইকুমুসসালাম। না, এখন ভেতরে আসবনা। মাসউদ কোথায় আফরা?

-মোহাম্মদপুরে গেছে। ওখানে নাকি আজ একটা তাফসীর মাহফিল হচ্ছে।

-কি! তাফসির মাহফিলে! এইসব ওয়াজ মাহফিলে কবে থেকে যাওয়া শুরু করেছে?

আবিদের রক্তচক্ষু দেখে অপ্রস্তুত হয়ে যায় আফরা। কি উত্তর দেবে ভেবে পায়না।

-কি হলো? আর কে কে সাথে গেছে?

-আমি তো সেটা বলতে পারবো না, তবে শুনেছি মাহী, আনোয়ার আর রেজা ভাইয়া গেছে।

-ঠিক আছে। আসলে বলবে আমাদের ওখানে যেতে, ওর সাথে কিছু বোঝাপড়া আছে।

-আচ্ছা ভাইয়া, আল্লাহ হাফিজ।

মাসউদটা দিন দিন এমন হয়ে যাচ্ছে কেন! একি সেই মাসউদ যে কিনা প্রতি মাসে অন্তত দুইবার ডিজে পার্টি দিত! অথচ আজ কিনা প্রিয়বন্ধুর জন্মদিনের পার্টির চাইতে তাফসীর মাহফিলটাই ওর কাছে বড় হয়ে গেল! নাহ! এবার একটা বোঝাপড়া করতেই হবে! ভাবতে ভাবতে বাড়ির দিকে পা বাড়াল আবিদ....(চলবে)

(আগে বেশকিছু কবিতা, প্রবন্ধ লিখা হয়েছে কিন্তু কখনো গল্প লিখা হয়নি। হয়ত শুরু করেছিলাম কখনো কিন্তু যোগ্যতার অভাবে শেষ করার সাহস হয়নি। আজ আবার দুঃসাহস দেখিয়ে লিখা শুরু করলাম। জানিনা শেষ করতে পারব কিনা। বিজ্ঞ পাঠকগণ গঠণমূলক সমালোচনা করলে অনুপ্রাণিত হব।)

বিষয়: বিবিধ

১৭৯৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File