ভালোবাসার রঙধনু........পর্ব-১, ২
লিখেছেন লিখেছেন ইশরাত জাহান রুবাইয়া ১০ জানুয়ারি, ২০১৪, ০৬:২৩:৩৪ সন্ধ্যা
.........এই শয়তান! চুপ করো! ভাগো তো এখান থেকে!
- কাকে ও কথা বলছো জুমানা? শয়তান ই বা এলো কোত্থেকে? ফোনের এ প্রান্ত থেকে জিজ্ঞাস করলো রুমাইসা।
- কাকে আবার! আমার উনাকে!
- দেখো জুমা, শয়তান হলো অভিশপ্ত। পবিত্র কুরআনেও এমন অর্থেই এই শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। তাই কোন মুমিনকে দুষ্টুমির ছলেও এমন শব্দ বলতে নেই। আর স্বামীকে তো নয়ই।
- সরি, আমি দুষ্টুমি করে বলেছিলাম। আর বলবোনা।
- তা উনি কি এমন করলেন যে এত কষে ধমক দিলে?
- এই যে তোমার সাথে কথা বলতে দিচ্ছেনা! আমি কথা বলছি আর উনি মুখে কিছু বলছেনা, কিন্তু চোখ বন্ধ করে, নানা অঙ্গভঙ্গি করে ইশারায় ফোন রাখতে বলছে! কেমন যে লাগে, উফ! বললেই হলো! আমি অন্তত আরো আধঘন্টা তো কথা বলবোই! হুহ!
জুমানার কথা শেষ হতেই রাশেদ ভাইয়ের গলার আওয়াজ পাওয়া গেল, রুমাইসা, আপনি জুমানাকে কি মন্ত্রবলে বশ করেছেন, আমাকেও একটু শিখিয়ে দিন! ওযে সারাদিন আপনার সাথেই কথা বলে, আমার সাথে না!
এই আবারো! গেলেনা এখনো এখান থেকে! নিজেতো খুব বন্ধুদের সাথে আড্ডা দাও, আমি আড্ডা দিতে গেলে বাগড়া দাও কেন!
কে বললো আমি সারাদিন আড্ডা দিয়েছি? আমি তো অফিসে ছিলাম!
অফিস তো শেষ হয়েছে নয়টা বাজেই, বাকি দেড় ঘন্টা কই ছিলে?
আমি তো তোমাকে বলেছিই আজ অফিস শেষ হওয়ার পরে জাবের ভাইদের বাসায় নতুন ব্যবসাটা নিয়ে আমাদের পার্টনারদের একটা মিটিং ছিল!
হুম, ঐটাই আড্ডা!
স্বামী স্ত্রীর ঝগড়া চলছে। ফোনের এই প্রান্তে নিশ্চুপ হয়ে আছে রুমাইসা। ঝগড়া থামতে একটু পর জুমানার গলার আওয়াজ পাওয়া গেল।
- বিয়ে তো করোনি এখনো, করলে বুঝবে! স্বাধীনতা সব হরণ করে নেয়! এই যে দেখো আগে যখন ইচ্ছে তখন বান্ধবীরা একসাথে সীমাহীন আড্ডা দিয়েছি, কিছু বলার কেউ ছিলনা, আর এখন একটু শান্তিমত কথাও বলতে পারিনা উনার জ্বালায়!
স্বামীর প্রতি বিষোদগার উগড়ে দিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললো জুমানা।
- দেখো জুমা, বিয়ের আগের আর পরের জীবনে আসলেই অনেক তফাত্। ছেলে মেয়ে উভয়ের ক্ষেত্রেই। বিশেষ করে একটা মেয়ের জীবন অনেকটাই বদলে যায়। আসলে বদলে যায় বলতে নিজেকে বদলে নিতে হয়, মানিয়ে নিতে হয়। বিয়ের আগে প্রত্যেক মানুষের জীবনটা শুধু তাঁর একারই থাকে। কিন্তু বিয়ের পর এক প্রাণে আরো প্রাণ জড়ায়। তখন দায়িত্ববোধ কাঁধে চাপে। আগে তোমরা দুজন আলাদা ছিলে। কারো প্রতি কারো দায়িত্ববোধ ছিলনা। কারো উপর কারো অধিকার ছিলনা। এখন আল্লাহপ্রদত্ত বিধান অনুযায়ী তোমরা একে অপরের সাথে জীবনকে জড়িয়েছো। স্বভাবই তোমাদের উভয়ের, উভয়ের উপরে কিছু অধিকার তৈরী হয়েছে। একে অপরকে সময় দেয়াটাও সেই অধিকার সমূহের একটি।
তুমি যখন তাঁর সাথে সময় কাটাতে চাইবে, তিনি যদি তখন তাঁর অন্য এক বন্ধুর সাথে অনর্থক দীর্ঘক্ষণ খোশালাপে লিপ্ত থাকেন, তোমার খারাপ লাগবেনা, বলো?
- হ্যাঁ তাতো লাগবেই।
- হুম..খারাপ লাগাটাই স্বাভাবিক। কেননা তোমার স্বামীর সঙ্গলাভ করাটাও তোমার প্রাপ্য অধিকার। এখন তিনি যখন তোমার সঙ্গ চান, তুমি যদি তখন অনুরূপ করো, তাঁরও কি খারাপ লাগবেনা?
- হুম...তা বটে...
- তাহলে একটু ভেবে দেখো তো, তুমিও কি তাঁর অধিকার থেকে তাঁকে বঞ্চিত করছো না?
- মানে তুমি বলতে চাইছো.....
- হ্যাঁ আমি বলতে চাইছি সারাদিন পরিশ্রম শেষে একজন স্বামী যখন বাসায় আসেন, তখন তিনি চাননা বাড়ির কাজের মানুষটি তাঁকে বিরক্তকর মুখে দরজা খুলে দিক। তিনি আশা করেন স্ত্রী এসে হাসিমুখে তাঁকে দরজা খুলে দেবে, আর স্ত্রীর হাসিমাখা মুখ দেখেই তিনি তাঁর সারাদিনের ক্লান্তি অনেকটাই ভুলে যাবেন। তিনি বাসায় আসার পর থেকে তাঁর সঙ্গ দেয়া উচিত ছিল, কিন্তু তুমি কি করেছো একটু ভেবে দেখো তো! তুমি সেই কখন থেকে আমার সাথে গল্প করছো, প্রায় আধ ঘন্টা হয়ে গেছে উনি এসেছেন, অথচ তুমি খানিকটা কুশলও জিজ্ঞেস করোনি। তাঁর মন খারাপ হওয়াটা তো স্বাভাবিক, তাইনা?
- কিন্তু তিনিও তো দেরি করে বাসায় এসেছেন। তিনিও তো আমার হক্ব আদায় করেননি!
- তিনি কি প্রতিদিনই এত দেরি করে ফিরেন? আমি তোমার কাছ থেকে তাঁর সম্পর্কে যতটুকু জেনেছি, তিনি প্রতিদিন বেশ কিছুটা সময় তোমার সাথে একান্ত আলাপচারিতায় কাটান। তুমিই তো বলেছিলে বিয়ের পর থেকে তিনি বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয়াই কমিয়ে দিয়েছেন। যতটুকু অবসর পান, তার সিংহভাগই তোমার সাথে কাটান। এমনকি বলেন তার বউয়ের সাথে আড্ডা দিতেই নাকি বেশি ভালো লাগে!
হেসে ফেললো জুমানা।
- তুমি ঠিকই বলেছো। কিন্তু তাঁকে সময় দিতে গিয়ে কি বাকি সবার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেব?
- না, তা কেন! ভাইয়া যে সময়টা বাসায় থাকেননা, বা কাজে ব্যস্ত থাকেন, সে সময়টাতে অন্যদের সাথে যোগাযোগ করলেই পারো। সম্পর্কগুলির ক্ষেত্রে অহেতুক জটিলতা তৈরী করা তো নিঃস্প্রয়োজন, তাইনা?
- ধন্যবাদ, রুমাইসা। আমি এভাবে ভেবে দেখিনি আসলে।
- বুঝতে পেরেছো বলে শুকরিয়া, আলহামদুলিল্লাহ। এখন গিয়ে তোমার আচরণের জন্য তাঁকে সরি বলো। আর এরপর থেকে এ ব্যাপারে খেয়াল রেখো, কেমন?
- ইনশা আল্লাহ! ওকে আমি রাখছি। ফি আমানিল্লাহ। আল্লাহ হাফিজ।
- মাআস সালাম।
ভালোবাসার বন্ধনগুলির মাঝে আরো ভালোবাসার রঙধনু ছড়িয়ে অন্যরকম সুখ অনুভব করে রুমাইসা। কোথায় যেন পড়েছিল সম্পর্ক হলো পাখির মত। শক্ত করে ধরলে মরে যায়, আর হালকা করে ধরলে উড়ে যায়। কিন্তু এটাকে সম্পর্কের যথাযথ সংজ্ঞা মনে হয়না রুমাইসার কাছে। ওর কাছে মনে হয়, সম্পর্কের বন্ধনগুলি যত মজবুত ভালোবাসার বাঁধনে বাঁধা যায়, ততই স্থায়ীত্ব লাভ করে।
সম্পর্কের বন্ধনগুলি আরো শক্ত করে এটে দিয়ে তৃপ্তি অনুভব করে সে। বিশেষ করে স্বামী স্ত্রীর বন্ধন। বর্তমানে স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কের অবস্থা বিস্মিত করে তাকে। বিয়ে হলো আত্মার স্থিরত্ব, অন্তরের প্রশান্তি। কিন্তু বর্তমানে অধিকাংশ স্বামী স্ত্রী যেন একে অপরের প্রতিদ্বন্দীর মত বাস করে!
পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা, শ্রদ্ধাবোধ, দায়িত্ববোধ, দায়িত্বশীলতা, সেক্রিফাইসিং মনোভাব তো নেই ই, বরং তুচ্ছাতিতুচ্ছ বিষয়ে মনোমালিন্যতা, রাগারাগি, ঝগড়াঝাটি এমন কি ক্ষেত্র বিশেষে মারামারিও হয়! দুজন মানুষকে যখন শুধুমাত্র প্রয়োজনের তাগিদে বাধ্য হয়ে আমৃত্যু একে অন্যের সাথে জীবন যাপন করতে দেখে, তখন কেমন যেন দম বন্ধ করা অনুভূতি হয় রুমাইসার।
একে অপরের প্রতি ট্রাস্ট, রেসপেক্ট, সেক্রিফাইস, কম্প্রোমাইজ ছাড়া সারাক্ষণ ঝগড়াঝাটি করে নিতান্ত বাধ্য হয়ে সংসার করছে, যেন নিছক সামাজিকতার খাতিরে সামাজিক সম্পর্ক বজায় রেখে যাচ্ছে, অথচ চেষ্টা করছেনা, উপযুক্ত পরিচর্যার দ্বারা সংসারটাকে সুন্দর করে তুলতে! আসলে তারা বুঝতেই পারছেনা, তারা কি রূপে জীবন কাটাচ্ছে!
চলবে.......
পর্ব-২
click here
বিষয়: বিবিধ
৩১২২ বার পঠিত, ৮৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
অন্যকে বোঝানোর পদ্ধতিটি ও দারুন .....
পরস্পরের প্রতি দায়িত্ব বোধ সুন্দরভাবেই পরিস্ফুটিত এ লেখাটিতে ....
কিন্তু .... কথা হচ্ছে ....
রুবাইয়া মনি ডাবল হবার আগেই এমন টু দ্যা পয়েন্ট বুঝলেন কি করে !
তবে কি .....!!!!
রুবাইয়া বুঝেনি, রুমাইসা বুঝেছে! আর ওর একটা উপাধি আছে, সেটা হলো, "প্রবীণা তরুণী"
কোনকিছুকে উপলব্ধি করতে সবসময় বাস্তব অভিজ্ঞতার প্রয়োজন নেই! - মেইড ইন আফরোজা!
এই বিয়ে বিয়ে করে মডু সবার মাথা খেয়েছেন!
সময়ে স্বল্পতার কারণে আসা হয়না!
পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
আপনার জন্যও অন্নেক শুভকামনা সুপ্রিয় ভাই।
দেখোনা আপি ব্লগ একটার কি অবস্থা? খালি বিয়ে বিয়ে করে সব মাথায় তুলসে! মনে করে বিয়ে হলো একটা রূপকথার গল্প! করলো আর অতঃপর তাহারা সুখে শান্তিতে বসবাস করিতে লাগিলো টাইপ! সবাই খালি বিয়ে বিয়ে করছে, বিয়ের পরের ক্যাচাল নিয়ে তো লিখছেনা!
তাই একখানা লেকচার ঝাড়লাম আরকি! ঝাড়াঝাড়ি কয়েক পর্ব পর্যন্ত চলতে থাকবে বোধহয়!
তবে এটা আমি ব্লগে প্রতিযোগিতা বিভাগে দেইনি।
আপনার অবগুন্ঠিত আলাপন সেদিন পড়লাম।
ভাল লাগল৷
আমার অনুভূতিগুলির সাথে পরোক্ষভাবে আমার বৃক্ষাপুরাও জড়িত আছেন যে! পারিবারিক বন্ধনগুলি নিয়ে তাঁদের লেখালেখি আমার চিন্তার জগতকে আগের চাইতে বিকশিত করেছে বলে আমার ধারণা।
আপু আপনি একটি গল্প লিখে পুরস্কারটি আমার নামে উৎসর্গ করে দিন
নইলে কাদায় কি এত সুবাস পাইতে!
তবে তেমনটি না হোক, আল্লাহ আপনাদেরকে টেনশনমুক্ত রাখুক দোয়া করি।
কিন্তু ছেলেটি অতিরিক্ত ট্রান্সপারেন্ট হতে গিয়ে তার স্ত্রীর সাথে বিষয়টি বলে দিল। আর অমনি তার স্ত্রী ভুল বুঝে বসল। সে বলল-তুমি অন্য মেয়েদের সাথে সম্পৃক্ত এবং এভাবে মেয়েদের লিফট দিতে তোমার ভাল লাগে ইত্যাদী। ....
ঘটনা যখন এমন ,তখন উক্ত মেয়েটি তার বৌকে ফোন করল এবং বলল-আপু আমরা একসাথে পড়তাম,আমি বিবাহিত এবং অঅমার ৫ বছরের একটি ছেলে আছে। আমি বাস,সিএনজি কিছুই পাচ্ছিলাম না,তাই সে আমাকে বাড়ির গেটে নামিয়ে দিয়েছে।...কিন্তু মেয়েটি এটা বুঝতে চাইল না।....
আমার পরামর্শ হল, আমাদের ক্ষেত্রে কখনও কখনও কিছু কিছু ঘটনা ঘটে যায়,যা না বললেও বা প্রকাশ না করলেও চলে। বরং প্রকাশ করলে সন্দেহ সৃষ্টি হতে পারে শুধু শুধু।
সকলে এক রমক নয়। সকলের বোঝার ক্ষমতা এক নয়। আমাদেরকে হিসেব করতে হবে,কখন কি বলল এবং কতটুকু বলব।
আমিও একমত আপনার এই কথার সাথে।
অনেক ধন্যবাদ সুপ্রিয় ভিশুজ্বীকে।
সুন্দর পরিবেশনা ও লেখার গাথুনী । ভাল হয়েছে ।
ভালো লাগার জন্য ধন্যবাদ।
১০০% সঠিক বলেছে রুমাইসা। সব মেয়েরা যদি রুমাইসার মত এমন হতো, বান্ধবীদের এমন সুন্দর সুন্দর পরামর্শ দিতো আর অন্য মেয়েরাও বিতর্ক না করে জুমানার মত সহজেই মেনে নিত তবে পৃথিবীটা জান্নাতের একটি অংশ হয়ে যেত।
ঝগড়া থামতে একটু পর জুমানার গলার আওয়াজ পাওয়া গেল।
- বিয়ে তো করোনি এখনো, করলে বুঝবে!
জুমানা ঠিকই বলেছে যারা বিয়ে করেনি তারা কি করে বুঝবে? বুঝতে হলে বিয়ে করতে হবে।
একটি সুন্দর গল্পের জন্য ধন্যবাদ লেখিকাকে।
"জুমানা ঠিকই বলেছে যারা বিয়ে করেনি তারা কি করে বুঝবে? বুঝতে হলে বিয়ে করতে হবে।"
ঠিক ঠিক! চটজলদি বিয়ে করে ফেলে ব্লগে একটা পোস্ট দিয়ে দিন! জামাল ভাই আর কে কে যেন আপনাকে নিয়ে আফসোস করে দেখি!:
মনোযোগের সহিত পড়া এবং উপলব্ধির জন্য আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া।
আমি বায়তুল্লাহর মুসাফির বইটি সংগ্রহ করেছি আপনার প্রিয় বই জেনে। অবশ্য মাসিক আল কাউসার এ কিছু পড়েছি নতুন আরেকটা সিরিজ লেখা আল কাউসার ছাপিয়েছিলো বায়তুল্লাহর ছায়ায়। সেটা কি বই হয়েছে আপনি জানেন?
আপনি যেখান থেকে বায়তুল্লাহর মুসাফির বইটি সংগ্রহ করেছেন, ওখানে একটু জিজ্ঞেস করে দেখতে পারেন। আমার মনে হয় উনারা বলতে পারবেন।
প্রথমটি ঘটিত বিষয় নিয়ে
দ্বিতীয়টি কল্পিত কাহিনী নিয়ে
ইহা কোনটি আমি বুঝতে পারিনি এখনও
তবে আমার দারুন লেগেছে
ধন্যবাদ পড়ার জন্য।
ধন্যবাদ আপনাকে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন