Roseঘূণে ধরা নষ্ট মানসিকতায় বিবেক যখন বন্দি।Rose গল্প পর্ব-৫

লিখেছেন লিখেছেন ইশরাত জাহান রুবাইয়া ১৩ অক্টোবর, ২০১৩, ০৩:৫২:১৯ দুপুর

দুরু দুরু বুকে ভেতরে প্রবেশ করে সালাম দিল সামিহা। কেমন একটা অস্বস্থি ঘিরে ধরেছে তাকে। ফাইজ সাহেব বিছানায় বসে আছেন, তাঁর সাথে তাঁর মা, দাদী আর ছোটবোন বসা। সামিহা ঢুকতেই উনার মা বলে উঠলেন

- জারিফা, তোমরা দুজন পাশাপাশি একটু দাঁড়াও, ফাইজ আগে সামিহার উচ্চতাটা দেখে নিক।

জারিফা সামিহার পাশাপাশি দাঁড়ালো।

- ফাইজ, দেখো সামিহা যথেষ্ট লম্বা, আমাদের জারিফার চাইতেও!

জবাবে ফাইজ কিছুই বললেননা। তিনি শুধু তাকিয়েই আছেন! উচ্চতা দেখার পরে উনার মা ওকে সামনের চেয়ারটাতে বসতে বললেন।

সামিহা চুপচাপ বসে আছে। ফাইজ সাহেব অপলক সামিহার দিকে তাকিয়ে চুপ করে দেখছেন। সামিহার একপাশে তাশফি দাঁড়িয়ে আছে, সে নিবিড়ভাবে পাত্রের ভাবভঙ্গি পর্যবেক্ষণ করে যাচ্ছে, কারণ পরে আবার ওকে সবকিছু বর্ণণা করতে হবে কিনা! নিরবতা ভাঙলেন পাত্রের দাদী।

- কি হলো ফাইজ? কথা বলো ওর সাথে!

- কি যে বলবো তাই তো বুঝতে পারছিনা!

- এটা একটা কথা হলো? কিছু প্রশ্ন করো!

- কি যে জিজ্ঞেস করবো তাও তো খুঁজে পাচ্ছিনা! তুমিই প্রশ্ন করোনা আমার পক্ষ থেকে!

আজব তো! এ কি ধরণের পুরুষ মানুষ যে তার প্রশ্ন আরেকজন করে দেবে! রাগ লাগে সামিহার। দাদীই প্রশ্ন শুরু করেন। পুরো নাম কি, কোথায় পড়াশোনা করে, জীবনের লক্ষ্য কি, বাবা কি করেন, কয়ভাইবোন ইত্যাদি ইত্যাদি কিছু প্রয়োজনীয় এবং সেইসাথে কিছু অপ্রয়োজনীয় অনর্থক প্রশ্ন। আর কিছু প্রশ্নের ধরণ একেবারে মান্ধাতা আমলের, অর্থাত্‍ বহুকাল আগে যখন মেয়ে দেখতে আসলে পাত্রপক্ষের মহিলারা কিছু ফাউল মার্কা প্রশ্ন করত, তেমন। বিরক্তি চেপে রেখে সামিহা প্রয়োজনীয় প্রশ্ন গুলির জবাব দেয়। অপ্রয়োজনীয় প্রশ্নগুলির কিছুর জবাব দেয় আর কিছুর ক্ষেত্রে নিশ্চুপ থাকে।

তারপর আরো জিজ্ঞেস করলেন বিয়ে হয়ে গেলে এ মূহূর্তে সে দেশের বাইরে যেতে রাজী হবে কিনা। সামিহা জানায় পড়াশোনা শেষ করার আগে সে দেশের বাইরে যেতে ইচ্ছুক নয়। একপর্যায়ে দাদী বললেন, সামিহা তোমার চোখই তো দেখা যাচ্ছেনা! সেইযে ঢোকার পর থেকেই মাটির দিকে তাকিয়ে আছো! মুখটা উঁচু করে একটু সরাসরি তাকাওনা! অনেক কষ্টে সামিহা মুখ তুলে তাকাতেই ফাইজের চোখে চোখ পড়ে তার। সামিহার মনে হল ওগুলো চোখ তো না যেন ক্যামেরার লেন্স! যেন বিরতিহীনভাবে ২০ মিনিট ধরে তার মুখটা ভিডিও করেই যাচ্ছে! একছুটে কোথাও লুকিয়ে যেতে ইচ্ছে হয় তার! অস্বস্থিতে চোখ বন্ধ করে ফেলে সে। জারিফা উঠে এসে সামিহার পাশে দাঁড়ায়। কিছু বুঝে উঠার আগেই হঠাত্‍ করেই একটানে সামিহার মাথার কাপড়টা ফেলে দিয়ে চুল ছড়িয়ে দেয়! সামিহার মাথা, ঘাড়, গলা সব অনাবৃত হয়ে পড়ে। ঘটনার আকস্মিকতায় হতবুদ্ধি হয়ে পড়ে সে। সম্বিত ফিরে পেতেই তাড়াতাড়ি আবার আবৃত করে নেয় নিজেকে।

- ভাবী, কি হবে মাথায় কাপড়টা একটু ফেললে! বলে জারিফা।

সামিহার চেহারায় এবার কাঠিন্যতা ফুটে উঠে। মেজাজ খারাপ হয়ে যায় তার। নিজেকে সামলে রেখে উত্তর দেয়,

- দেখুন, বিয়ের উদ্দেশ্যে যখন কোন ছেলে কোন মেয়েকে দেখে, তখন ইসলাম শুধু চেহারা আর দুহাতের কব্জির বাইরে আর কিছু দেখার অনুমতি দেয়না। এখনো আমার চুল দেখার অধিকার ইসলাম উনাকে দেয়নি। আমার মাথার কাপড় ফেলার আগেই আমাকে কথাটা জিজ্ঞেস করা উচিত ছিল আপনার। কাজটা মোটেও ঠিক করেননি। আমি এবার আসি। বলে সালাম দিয়ে উঠে আসে সামিহা।

ভিতরের রুমে এসে ঢুকতেই সামিহার মুখের দিকে চেয়ে থমকে যান মিসেস রাদিয়া। সদা হাসিখুশী মেয়েটার মুখ রাগে থমথম করছে।

- কিরে, রেগে আছিস বোধহয়! কি হয়েছে?

- কিচ্ছুনা!

- ছেলেটার সাথে কথা হয়েছে?

- না!

- মানে কি! কেন?

- কথাবলার মত পরিবেশ পেয়েছি নাকি? আর কিছু জিজ্ঞেস করোনা এখন, প্লীজ। কথা বলতেও ভালো লাগছেনা!

- আচ্ছা। ছেলেটার উচ্চতা দেখেছিলি?

- দেখার সুযোগ পেয়েছি নাকি?

- রাগ করিসনা সামি, মেহমান বিদায় নিক, কি হয়েছে আমি সব শুনবো। আর ছেলের উচ্চতা দেখার ব্যবস্থা করছি আমি। আমরা তোর ইচ্ছের বাইরে কিছু করবোনা ইনশা আল্লাহ।

মিসেস রাদিয়া উঠে মেহমানদের কাছে গেলেন। তাশফি এসে বসলো পাশে।

- ফাইজ সাহেব আর উনার দাদা খাচ্ছে। বেড়াতে এসে এত খায়! লজ্জাও নেই একটু! আর উনার দাদা, বয়স এত হলে কি হবে! ৫টা কাবাব একাই শেষ করেছে! বাবারে বাবা! আবার বলে কিনা "বুড়ো হলে কি হবে খেতে পছন্দ করি, খেতেও পারি বেশ"! আচ্ছা সামিপু, ঐ ফাইজটা যখন এভাবে তোমাকে দেখতেই ছিলো, তুমি সহ্য করেছো কিভাবে? আমার নিজেরই তো লজ্জা লাগছিলো! কিভাবে যে তাকিয়ে ছিল! উফ! আর লোকটা কেমন যেন, একটা কথাও বললোনা কেন? এহ, যেন কত লজ্জা! এত লজ্জা লাগলে সবার সামনে এভাবে তাকিয়ে ছিল ক্যামনে! যত্তসব! তবে দেখতে কিন্তু সুন্দর আছে!!

- তাই নাকি, পটপটি বেগম! তোমার খুব পছন্দ হয়েছে বুঝি! তাহলে তোমার জন্য দেখতে বলি?

- ইয়া আল্লাহ! এইটা তুমি কি বললা!

- তাহলে চুপ করো তাশফি, আমার কিছু ভালো লাগছেনা!

-সামি এদিকে আয় তো! পাশের রুম থেকে মিসেস রাদিয়ার ডাকে ওদের আলাপে ছেদ পড়লো। সামিহা উঠে পাশের রুমে গেল।

- কি হয়েছে?

- এখানে দাঁড়া, আমার পাশে। বলে লাইট অফ করে দিয়ে তাশফিকে সামনের রুমে পাঠালেন ফাইজ সাহেবের মাকে ডেকে আনতে। তাশফি গিয়ে বলতে ফাইজ সাহেবের মা সামনের রুম থেকে উঠে আসলেন।

- আপা, আমার মেয়ে আপনার ছেলেকে ভালোভাবে দেখতে পারেনি, ওর উচ্চতাও দেখতে পারেনি। আপনার ছেলেকে বলুন বিছানা থেকে নেমে মাটিতে দাঁড়াতে। সামিহা এখান থেকে ভালোমত দেখে নিক।

- ঠিক আছে আপা, বলছি।

ফাইজ সাহেবের মা গিয়ে তার ছেলেকে বললে, তিনি বিছানা থেকে নেমে দরজার সামনাসামনি দাঁড়ালেন। সামিহা এইরুম থেকে তাকে দেখে নিলো। মিসেস রাদিয়াও একপলক দেখলেন।

মেহমান বিদায় নেয়ার সময় হলো। পাত্রের মা এসে বললেন

- আপা, আপনাদের মেয়ে, ফ্যামিলি, আপনাদের আতিথীয়তা-আপ্যায়ন সবই আমাদের খুবই পছন্দ হয়েছে। এখন আমরা বাসায় গিয়ে ছেলের সাথে আলোচনা করে তার মতামত জেনে কালকেই আপনাদেরকে ফোন দেব।

- ঠিক আছে, আমরাও আগে মেয়ের সাথে আলোচনায় বসে ওর মতামত জেনে নেই।

'

'

(চলবে)

বিষয়: বিবিধ

২৯৪১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File