অবশেষে... (একটি ছোট গল্প)
লিখেছেন লিখেছেন ইশরাত জাহান রুবাইয়া ০৫ অক্টোবর, ২০১৩, ১১:৩৬:০৪ রাত
- কি খাবে?
- কিচ্ছুনা! আগে বলো এত দেরী করলে কেন?
- বাবারে, এখনি এত জেরা..বিয়ের পরে বাসায় ফিরতে দেরী হলে কিযে করবে..
- পরের কথা পরে! এখন বলো কেন এত দেরী করেছো!
অভিমানে বাচ্চাদের মত গাল ফুলিয়ে মুখ ভার করে বসে রইলো দীপ্তি। যেন শ্রাবণের আকাশের একরাশ মেঘ!
- সরি, সরি, সরি..একটা কাজে আটকা পড়েছিলাম। তাছাড়া দেখতেও চাইছিলাম আমার প্রতি তোমার কতটা টান! তাই..
- কিহ! এটা দেখার জন্য আমাকে এভাবে কষ্ট দেবে! চোখে অশ্রু টলমল করে দীপ্তির।
- আর করবোনা প্রিয়া...মাফ করে দাও, প্লীইইইজ! এইযে দুই কানে ধরলাম, দেখো!
শান্তকে সত্যি সত্যি কানে ধরতে দেখে স্কুলের পড়া না পারা ছাত্রের কথা মনে পড়লো দীপ্তির। কান্নাভেজা চোখ মেলে হাসে সে। মেয়েরা যখন কান্নাভেজা চোখে হেসে ফেলে, তখন নাকি দেখতে অনেক সুন্দর দেখায়! দীপ্তির দিকে অপলক চেয়ে থেকে সে কথাটাকে সত্য মনে হয় শান্তের।
- কি দেখছো এমন হা করে?
- তোমাকে দেখছি, রাজকন্যা! যতই দেখি সাধ মেটেনা..
- হুহ! ঢং কত! তোমার কল্পনার রাজকন্যার সাথে মিলেছে?
- কল্পনার চাইতেও অনেক সুন্দর! আচ্ছা, আমাকে কেমন লাগলো বললেনাতো!
- সব কথা কি মুখে বলতে হয়! চোখ দেখে বোঝোনা? চোখ যে মনের কথা বলে! অবশ্য চোখের ভাষা পড়তে পারার ক্ষমতাও সবার থাকেনা!
....রং নাম্বার থেকে প্রেম। আজ ওদের প্রথম দেখা। প্রথম যেদিন একটা রং নাম্বার থেকে দীপ্তির মোবাইলে একটা অচেনা ছেলের কল এসেছিল, তখন শুরুতে উপেক্ষা করেছিল সে। কিন্তু হাল না ছেড়ে অবিরত তাকে ফোন দিয়ে গেছে শান্ত নামের এই ছেলেটি। মেসেজে রোমান্টিক নানা কথা আর ছোট ছোট কবিতা পাঠিয়ে দীপ্তিকে আস্তে আস্তে দূর্বল করে ফেলেছিল। তারপর একসময় কথা বলতে শুরু করে দীপ্তি। সেই থেকে শুরু। রাতের পর রাত ফোনে গল্প, মেসেজ আদান প্রদান, মান অভিমান আর খুনসুঁটিতে দিন দিন বাড়ছিল হৃদয়ের টান। অতঃপর বন্ধুত্ব থেকে প্রেম। তিনমাসে তাদের স্বপ্ন এগিয়েছে অনেকদূর..
দীপ্তি অনার্স ১ম বর্ষে পড়ছে। বিত্তশালী পিতার একমাত্র সন্তান। তাই তার পিতা তার সাতখুনও মাফ করে দিতে রাজী আছেন! আর শান্ত মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। দুইভাই একবোনের মধ্যে দ্বিতীয়। পড়ালেখা শেষ করে একটি বেসরকারী কোম্পানীতে চাকুরী করছে। এমনটাই বলেছে সে।
তিনমাসে শুধু দিনরাত কথাবলায় সীমাবদ্ধ ছিল প্রেম। তারপর দেখা করার সিদ্ধান্ত নেয় ওরা। অবশেষে আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। শান্তর প্রিয় রং নীল। তাই নীল রংয়ের শাড়ি পড়েছে দীপ্তি, মনের মত সেঁজেছে। খোঁপায় গুঁজেছে নীল গোলাপ, কপালে নীল টিপ, নীলে নীলে নীলপরী। আর শান্ত পড়েছে দীপ্তির পছন্দের কালো পান্জাবী। দেখা করার জন্য যে রেষ্টুরেন্ট ঠিক করেছিল, তাতে আগেই পৌঁছেছে দীপ্তি। আধঘন্টা লেট করে হাজির হয়েছে শান্ত। তাতেই অভিমানে গাল ফুলিয়েছে সে।
প্রথম দেখা, অন্যরকম অনুভূতি! আর প্রথম দিনই ইচ্ছে করে এমন করলো শান্ত! যাক এভাবে সরি বলার পর মাফ করে দেয়া উচিত, তাই অভিমান ভুলে গিয়ে অনেক মজা করেছে। দুপুরে একসাথে লাঞ্চ করেছে, একসাথে রিকশায় করে ঘুরেছে, নৌকায় চড়েছে, তার পছন্দের গানগুলি গেয়ে শুনিয়েছে শান্ত, অবশেষে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে যে যার বাড়ি ফিরেছে। আজ সারাদিন মনটা খুব ফুরফুরে লাগছে দীপ্তির। সে শুনেছে প্রেমে পড়লে নাকি নিজেকে অনেক সুখী মনে হয়! দীপ্তির আজ নিজেকে সুখী সুখী লাগছে।
বাইরে অনেক সুন্দর চাঁদ উঠেছে। ইশ! এখন যদি শান্ত পাশে থাকতো! নিজের বেডরুমে এসে কাপড় পাল্টে শোবার পোশাক পড়ে সে। বিছানায় শুয়ে মোবাইলটা হাতে নিতেই দেখে শান্তর মেসেজ। "মিসিং ইউ...বড় ভালো হত, কিছু কিছু সময় যদি থমকে থাকতো...যখন তুমি আমি পাশাপাশি থাকি..." মেসেজের রিপ্লাই দিয়ে লাইট অফ করে চোখ বুঁজে দীপ্তি। দুচোখে তখন স্বপ্নের ঘোর..
...আজ এই নিয়ে চারবার দেখা হলো আমাদের, তাইনা! আনমনে দাঁত দিয়ে ঘাসের ঢগা ছিড়তে ছিড়তে বলে দীপ্তি।
- হ্যাঁ। মাত্র চারদিন! খুব অল্প সময়! আমি তো চাই জনম জনম তুমি পাশে থাকো!
- তাহলে বিয়ে করে ফেলো! বলেই লজ্জায় মুখ লুকায় দীপ্তি।
- তাতো করবোই, কটা দিন পরেই করবো! চলো এবার উঠি।
- সেকি মাত্র না এলাম! এখনই উঠছো?
- অন্য এক জায়গায় নিয়ে যাব আজ তোমাকে।
- কোথায়?
- উহু..বলা যাবেনা, সারপ্রাইজ দেব তোমাকে!
- না! আগে বলো!
আহত দৃষ্টি মেলে দীপ্তির দিকে তাকায় শান্ত।
- তুমি কি আমাকে বিশ্বাস করোনা রাজকন্যা?
- করি!
- তাহলে ভয় পাচ্ছো কেন! আমি তো আছি সাথে! আপত্তি করছো কেন? চলোনা!
..এটা কার বাড়ি? শান্তের হাত ধরে গেট দিয়ে ঢুকতেই প্রশ্ন করে দীপ্তি। হাসে শান্ত। এটা আমার অফিস। আমি ঠিক করেছি আজ আমার সব কলিগদের সাথে আমার রাজকন্যার পরিচয় করিয়ে দেব। ভেতরে ঢুকতেই বেশ কয়েকজন মানুষ এগিয়ে আসে। ২/১টা মেয়েও আছে। দীপ্তিকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় শান্ত। কলিগ রাশেদ হাসতে হাসতে বলে, "শান্ত ভাই, হুবু ভাবীকে আনলেন, কিন্তু মিষ্টি কই? মিষ্টি না খাওয়ালে বিয়ের পর কিন্তু সংসারে ঝগড়া হবে, বলে দিলাম!" তাই নাকি! হাসে শান্ত।
দীপ্তি শান্তর কলিগ নাসরিনের সাথে আড্ডায় মেতে গেছে।
- দীপ্তি তুমি সবার সাথে গল্প করতে থাকো, আমি খাদ্যরসিক রাশেদ ভাইকে নিয়ে মিষ্টির দোকানে যাচ্ছি! আসতে বড়জোর ২০ মিনিট সময় লাগবে।
- ওকে শান্ত যাও, কোন অসুবিধা নেই। বলে দীপ্তি।
রাশেদকে নিয়ে বাইরে বেরোয় শান্ত।
- রাশেদ ভাই আমার কাজ সমাপ্ত করেছি আমি। এবার আমার পাওনা দিন।
- এইনিন ১ লক্ষ টাকা। আর ঐ মেয়েটা কিছু বোঝার আগেই কেটে পড়ুন। আমিই একটা ট্যাক্সি ডেকে দিচ্ছি। আর মেয়েটার আত্মীয় স্বজন কেউ আপনাকে চেনে?
- না।
- ভালো করেছেন। তারপরও সিমটা চেন্জ করে ফেলুন।
- ওকে।
- আচ্ছা এবার আসুন। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, এত সুন্দর একটা মেয়ে এনে দেয়ার জন্য। অনেক লাভ হবে আমাদের।
ট্যাক্সিতে উঠে বসে শান্ত। বিড়বিড় করে বলে, বিদায় রাজকন্যা, এই ই আমার বেসরকারী কোম্পানীর চাকুরী। প্রেমের অভিনয় করে নারী অপহরণ, পাচার আর পতিতাবৃত্তিতে নিয়োগের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করাই আমার পেশা। জানি তোমার ভাগ্যে কি ঘটবে। আসলে তুমি বড়ই নির্বোধ!
(চরিত্রগুলি কাল্পনিক হলেও বাস্তবে এমন অহরহই ঘটে চলেছে। বিবাহপূর্ব অবৈধ প্রেমের নানা ক্ষতিকর দিক থেকে একটি ভয়াবহ দিক তুলে ধরার চেষ্টা করেছি মাত্র)
- ইশরাত জাহান রুবাইয়া
বিষয়: বিবিধ
৩৮৬২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন