Roseঘূণে ধরা নষ্ট মানসিকতায় বিবেক যখন বন্দি।Rose গল্প পর্ব-৩

লিখেছেন লিখেছেন ইশরাত জাহান রুবাইয়া ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ০৯:৪৬:৪০ রাত

মনটা ভালো লাগছেনা সামিহার। কাল এস্তেখারা করেছিল, কিছু দেখেনি, কিন্তু মনটা খারাপ হয়ে আছে। যাহোক স্পষ্ট দিকনির্দেশনা না পাওয়া পর্য্ন্ত ৭ দিন একাধারে এস্তেখারা করে যাবে। দেখা যাক আল্লাহ কি ফায়সালা দেন। অনেক রাত পর্য্ন্ত মা পিঠে বানিয়েছেন। সেও সাথে সাহায্য করেছে, তবে একটু বিরক্তি লাগছিল। তাই আপত্তি করে বলেছিল এত পিঠে বানানোর দরকারটা কি! উত্তরে মিসেস রাদিয়া হেসে বলেছেন, মা যখন হবে, তখন বুঝবে!

ফজরের পর মেঝো মামা এলেন ওদেরকে নিয়ে যেতে। বাবা ব্যস্ততার কারণে যেতে পারলেননা। ছোট খালামনি আর মেঝো মামা এক এলাকাতেই থাকেন। পাত্রের বাড়ি তাদের পাশের এলাকায়। সামিহা আবার বাস জার্নি তেমন একটা সহ্য করতে পারেনা। পেটের ভেতরে যা আছে সব উগড়ে ফেলে। তারপর গন্তব্যে পৌঁছতে পৌঁছতে একদম কাহিল হয়ে পড়ে। খালামনির বাসায় পৌঁছতে দেড় ঘন্টা লাগলো। তাহমীদ আর তাশফিয়া কেউ বাসায় নেই। গিয়েই বিছানায় পড়লো সে, তারপর ঘুম। দুঘন্টা পর খালামনির ধাক্কাধাক্কিতে ঘুম ভাঙলো। নাস্তা খেয়ে কিচেনে গিয়ে চুলায় চা বসিয়ে এসে দেখে, বাড়ির সামনের খোলা জায়গাটায় বসে মা আর খালামনি গল্প করতে করতে তরকারী কাটছেন।

- কিরে নাস্তা খাওয়া হলো?

- হুম। খালামনি তাশফি আসবে কখন?

- তাশফির ক্লাস শেষ হবে ১২:৩০ এ তাহমিদের ১:৩০ এ।

- আমি একা একা এতক্ষণ কি করবো? আপনাদেরকে কাজে সাহায্য করি?

- না লাগবেনা। তুই হাটাহাটি ঘুরোঘুরি কর।

- কি মুসিবত! এখানে হাটার জায়গা কই! আর ঘুরোঘুরি করবো ক্যামনে, চরকির মত?

ওর বলার ধরণে হেসে ফেললেন খালামনি।

- তাহলে বসে থাক!

- আমার হাত পা গুটিয়ে বসে থাকতে ভালো লাগেনা তো!

- আচ্ছা এক কাজ কর, পুরো বাড়িটা গুছিয়ে ফেল, ঠিক আছে?

- ওকে!

চা খেয়ে পুরো বাড়ির সবগুলি রুম গোছগাছ করলো সে। তখনো তাশফি ফেরেনি। তাশফির কাছে বহু তথ্য পাওয়া যাবে জানে সে। কি করে কাটাবে বাকি সময়টা? পাশের ফ্ল্যাটের আন্টির সাথে গিয়ে কিছুক্ষণ গল্প করে আসা যাক।

দরজাটা খোলাই ছিল। ড্রইংরুমে বসে কাজ করছিলেন নাবিলা আন্টি।

-আসসালামু আলাইকুম, আসতে পারি?

- ওয়ালাইকুমুস সালাম, এসো এসো। আমিই ভাবছিলাম তোমার সাথে দেখা করতে যাব।

- আপনি আমাকে চেনেন নাকি আন্টি? আগে তো কখনো দেখা হয়নি! আর জানলেনই কিভাবে আজ যে আসবো? বসতে বসতে বললো সামিহা।

- তোমার সম্পর্কে এত কথা শুনেছি যে চিনতে অসুবিধা হয়নি। আর কবে আসবে, আর কি উদ্দেশ্যে, সবই তাশফির আম্মু বলেছেন।

- ও। আপনাদের সম্পর্কে তাশফি প্রায়ই গল্প করে। তা কেমন আছেন আন্টি? রাশেদ কেমন আছে?

- আল্লাহ যেমন রেখেছেন, তেমনই আছিরে, মা! তারপর একে একে তাঁর নিজের জীবনের অনেক কথাই বললেন। হৃদয় নিংড়ানো দুঃখের কাহিনীগুলি শুনে সান্তনা দেয়া আর ধৈর্য ধরার পুরস্কারের কথা বলা ছাড়া আর কিছুই করার ছিলনা সামিহার।

গল্প করার মাঝেই দূর থেকে তাশফির চিত্‍কার শোনা গেল,

- আম্মুউউউ আপু কোথায়!

- আরে, আরে! জুতা নিয়ে ঘরে ঢুকছিস কেন!

- তুমি আগে বলো আপু কই! ধুপধাপ করে ঘরে ঢুকে সব রুম খুঁজতে লাগলো সে। তার সেই হইচই এর আওয়াজ সামিহা এখান থেকে বসেও শুনতে পাচ্ছে।

- আরে আছে তো! জুতা খুলে, ড্রেস খুলে সুস্থির হয়ে নে আগে!

- না, আগে বলো আপু কই! তুমি বলেছো আজকে আপু আসবে! কিন্তু নেই কেন?

- এসেছে তো! তোরা কেউ বাসায় নেই দেখে নাবিলা আপার সাথে গল্প করতে ওদের ফ্ল্যাটে গেছে।

তাশফিকে দৌড়ে আসতে দেখে নাবিলা আন্টির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে দরজার কাছে আসতেই সামিহাকে জড়িয়ে ধরলো তাশফি। তারপর দুজনে তাশফিদের বাসায় ঢুকলো।

- জানো জানো, ছেলের ছোট বোনটা না, আমাদের স্কুলেই ক্লাস টেনে পড়ে! এত্ত মুডি, কি আর বলবো! আর বড় বোনটা না একদম...

ওর বলার ভঙ্গিতে হেসে ফেললো সামিহা।

- হয়েছে হয়েছে, এসব পরেও শোনা যাবে, আরে ফ্রেশ হয়ে কিছু খেয়ে নাও দেখি।

সামিহার চাপে পড়ে কিছু খেয়ে নিয়েই, আবার তার তথ্যের ঝাঁপি খুলে বসলো তাশফি। ছেলের মা কেমন, বাবা কেমন, বড় বোনটা কেমন, ছোট বোন, ছোট ভাই, সবার সম্পর্কে একে একে বর্ণনা করে গেল সে। এমনকি ছেলেদের বাড়ি কেমন, কয় রুম, বাড়ির সামনে একটা পুকুর আছে, ঐ পুকুরে আবার পাকা ঘাট ও আছে, ইত্যাদিও বাদ পড়লোনা! বলা বাহুল্য, ছেলের ছোট দুইবোন আর ভাইটাকে নিয়ে তার বিস্তর অভিযোগও বাদ গেলনা!

দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পর সামিহা ঘুমাতে গেল। কিন্তু ঘুম আসছেনা কিছুতেই। বিকেলে পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে। কেমন যেন একটা অস্বস্থি ঘিরে রেখেছে তাকে। কোন গাইরে মাহরাম ছেলের সামনে তাকে কিছুক্ষণ বসে থাকতে হবে, ছেলেটা তার দিকে তাকাবে, ভাবতেই টেনশনে তার হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসে! কখন যে দুচোখের পাতা এক হয়ে এলো জানেনা, মায়ের ডাকে ঘুম ভাঙলো। তখনো আসরের আজান দেয়নি। মিসেস রাদিয়া ওকে বললেন নামাজ পড়ে তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নিতে।

নামাজ শেষে কিচেনে উঁকি দিতেই দেখে মা, খালামনি, মামী আর খালামনির কাজে সহায়তাকারী মেয়েটার সে কি ব্যস্ততা! কয়েক পদের নাস্তা তৈরী। শরবত, আপেল, মালটা, খেজুর, বেদানা, কমলা, মিষ্টি, দই, ডালের পাকন পিঠা, ডিমের পিঠা, গোস্তের সমুচা , কাবাব, নুডুলস, সেমাই, থরে থরে প্লেটে সাজানো।

- এত কষ্ট করে এত কিছু করতে গেলেন কেন? বিরক্তি নিয়ে কথাটা বলতেই মিসেস রাদিয়া হায় হায় করে উঠলেন!

- কয়টা বাজে দেখেছিস? এখনো ড্রেস চেন্জ করে রেডি হোসনি!

- কোন ড্রেস পড়বো?

- তোর গোলাপি রঙের সালোয়ার কামিজটা পড়। ওটায় তোকে বেশ মানায়।

ড্রেস পাল্টে ফ্রেশ হয়ে আসতেই শুনলো খালামনি বলছেন

- আপা, সামিকে আমার একটা শাড়ি পড়াই? শাড়িতে ওকে খুব ভালো লাগে।

- আচ্ছা, তোর ইচ্ছে হলে পড়তে বলি।

একটা জাম কালার শাড়ি পড়েছে সামিহা। ঘন্টাখানেক মা আর খালামনির অত্যাচার সইতে সইতে যখন অতিষ্ঠ হয়ে গেল, তখন শাড়ি পড়ানোটা তাঁদের মনমত হলো। মায়ের কথামত চুলে একটু উঁচু করে খোঁপা বেঁধে, সামনে এসে পড়া অবাধ্য চুলগুলিকে ক্লিপ দিয়ে আটকে রেখেছে। মিসেস রাদিয়া কিছু হালকা গয়নাও পড়িয়ে দিয়েছেন। সামিহা কখনোই জমকালো সাজ দেয়না, তাই হালকা একটু প্রসাধন মেখে নিল মুখে। চোখের আর ঠোঁটের হালকা সাঁজ, মেয়েদের পুরো চেহারাটাকেই পরিবর্তন করে দেয়! নিজের সাঁজ শেষ হলে তাশফির অনুরোধে ওকে সাঁজিয়ে দিতে বসলো, এখন সময় মামাতো বোন সারা এসে জানালো, মেহমান চলে এসেছেন...

'

'

(চলবে)

বিষয়: বিবিধ

৩৯৬০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File