ঘূণে ধরা নষ্ট মানসিকতায় বিবেক যখন বন্দি। গল্প পর্ব-১
লিখেছেন লিখেছেন ইশরাত জাহান রুবাইয়া ০১ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ০৮:০২:০৬ রাত
উদাসমনে ক্লাসরুমের জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে সামিহা। সকালে না খেয়েই ক্লাসে এসেছে। ওর মা অনেক সেধেছেন, কিন্তু চেষ্টা করেও খাওয়াতে পারেননি কিছু। গতকাল রাতেও খায়নি। শখ করে নিজের হাতে রান্না করা খাবারগুলি অমনিই পড়ে ছিল। মানুষ কি করে এমন আচরণ করতে পারে? ভেবে পায়না কিছুতেই। এত ডিগ্রির অধিকারী একটা শিক্ষিত মানুষ কি করে মনের গহীণে এত নীচু মানসিকতা লালন করে! ভগ্ন হৃদয়ের ব্যাথাটা কাকে বুঝাবে সে!! গত কয়েকদিনে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলি থেকে থেকেই মনে পড়ছে।
বেশ কিছুদিন ধরে বিয়ে নিয়ে বেশ তোড়জোড় চলছে। সে কেমন ছেলে পছন্দ করে জিজ্ঞেস করেছিলেন মা। সে জানিয়েছে, যে ছেলে দ্বীনদার এবং দ্বীনি ও দুনিয়াবী উভয়দিকের জ্ঞান অর্জনে সচেষ্ট, এমন কাউকে বিয়ে করতে ইচ্ছুক সে। বলেছে, তার খুব বেশি অর্থশালী মানুষ প্রয়োজন নেই, মোটামুটি চলার মত হলেই হবে। সে একজন আল্লাহভীরু মানুষকে স্বামী হিসেবে চায়, কারণ সে বিশ্বাস করে, যে মানুষ আল্লাহকে ভয় করে, সে কারো ক্ষতি করতে পারেনা বরং সকলের হক আদায়ে সচেষ্ট থাকে।
আল্লাহ সামিহার মত একটা মেয়েকে তাঁর গর্ভে দিয়েছেন বলে প্রায়শঃই আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করেন মিসেস রাদিয়া। কি পারেনা এই মেয়ে! মেধাবী, সব পরীক্ষায় সর্বোচ্চ রেজাল্ট, ধার্মিক, পর্দানশীন, দ্বীনি ইলমের পাশাপাশি দুনিয়াবী জ্ঞান অর্জনেও পিছিয়ে নেই, প্রচুর বই পড়ুয়া, রান্নায় পারদর্শী, বক্তৃতা-কবিতা-গল্প লেখা, গান গাওয়া, গোছালো স্বভাব, সত্যবাদিতা, কর্মঠ, বুদ্ধিমতি, জ্ঞানী, কি গুণ দেননি আল্লাহ ওকে!
আরেকটা গুণ আছে ওর, যেখানেই যায়, কিছুক্ষণের মধ্যে সেখানের মানুষের প্রিয় হয়ে উঠে। দুঃখী মানুষের ক্ষতে সান্তনার প্রলেপ লাগাতে চেষ্টা করে সে। প্রায়ই ওর বন্ধু বান্ধবরা এমনকি টীচাররাও বিভিন্ন বিষয়ে ওর পরামর্শ নেন।
মিসেস রাদিয়া গর্ব করেই বলেন, সামিহা আমার বংশের গৌরব। যে ওকে পাবে সে নিঃসন্দেহে ভাগ্যবান। কিন্তু সামিহার মত এমন একটা মেয়েকে যে পেতে আসবে, তাঁর ও ওকে পাওয়ার মত যোগ্যতা থাকতে হবে!
....দিন দশেক আগে ছোট খালামনি একটা বিয়ের প্রস্তাব এনেছিলেন ওর জন্য। ছেলে অনেক শিক্ষিত, বড় বড় ডিগ্রির অধিকারী, কানাডায় থাকে, দ্বীনদার, ফ্যামিলি ও বেশ ভালো। পাত্রও দেখতে ভালই, তবে তেমন একটা লম্বা নয়, সম্ভবত সামিহার চাইতে ১ ইঞ্চি লম্বা হবে। পাত্রপক্ষ যখন এলাকার মানুষের কাছ থেকে খোঁজ নিয়ে মেয়ের এত গুণ জানলো, তারা এইরকম একটি মেয়েকে কিছুতেই হাতছাড়া করতে চাইলোনা! পারলে আজই তারা আত্মীয়তা করে ফেলে! ছেলের মায়ের অত্যধিক আগ্রহ আর জোড়াজুড়ির কারণে সামিহার খালামনি কথা দিলেন দুই একদিনের মধ্যেই তিনি এ ব্যাপারে আলোচনা শুরু করবেন।
সামিহার ছোটখালু আর মামা পাত্রপক্ষের ব্যাপারে সব খোঁজ খবর নেয়ার পর সামিহার বাবা মাকে জানালেন। সব শুনে তাঁদের ও পছন্দ হল। পরদিন বিকেলে মিসেস রাদিয়া সামিহার কাজিন তাসফিয়াকে বললেন ছেলের বায়োডাটা সামিহাকে দিয়ে আসতে, সাথে এও বললেন, ওকে বলিস, আমরা সব খোঁজ খবর নিয়েছি। ভালোই মনে হচ্ছে। এখন সামিহা অনুমতি দিলে আমরা সামনে এগুবো ইনশা আল্লাহ।
সামিহা তখন পড়ালেখা করছিল। তাসফি ঘরে ঢুকেই দুষ্টুমি হাসি হেসে বলল,
- আপু দেখোতো! খালামনি বলেছেন কি, আগে এটা পড়তে! পাঠ্যবই আর গল্পের বইয়ের চেয়েও এটা পড়া জরুরী!
- কি এটা?
- আরে দেখোইনা! অনেক গুরুত্বপূর্ণ কিছু একটা, তবে এখান থেকে কিন্তু একসময় নতুন গল্পের শুরু হতে পারে।
- আচ্ছা, তাই নাকি! দাও তো দেখি, কি এমন দরকারী লেখা, পড়েই দেখি!
- দিচ্ছি, তবে আগে তুমি চোখ বন্ধ কর।
সামিহা চোখ বন্ধ করতেই কাগজটা উল্টে টেবিলের উপর রেখেই এক দৌড়ে চলে গেল তাসফিয়া.....
'
(চলবে)
বিষয়: বিবিধ
২০০৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন